সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

প্রথম স্ট্রিং বিপ্লব

গ্যাব্রিয়েল ভেনেজিয়ানো, লিওনার্ড সাসকিন্ড, ইয়িচিরো নাম্বু। ছবি: সংগৃহীতগ্যাব্রিয়েল ভেনেজিয়ানো, লিওনার্ড সাসকিন্ড, ইয়িচিরো নাম্বু। ছবি: সংগৃহীতআশির দশকের শুরুর দিকে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হিসেবে স্ট্রিং তত্ত্ব নিজের জায়গা করে নেয়। ওই সময় প্রমাণিত হয়, স্ট্রিং তত্ত্ব গাণিতিকভাবে বিশুদ্ধ একটি তত্ত্ব এবং এ বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে একটা জোয়ার আসে, যাকে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে ‘প্রথম স্ট্রিং বিপ্লব’ বলা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুরুর দিকে স্ট্রিং তত্ত্ব পদার্থবিদদের মনোযোগ ঠিক সেভাবে কাড়তে পারেনি। কিন্তু এই আশির দশক থেকেই মূলত স্ট্রিং তত্ত্ব তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে গবেষণার গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। আজকে এই স্ট্রিং বিপ্লবের সূত্রপাতের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করব।
আমি ইতিহাস বেশ পছন্দ করি, যদিও এই বিষয়টিতে আমার তেমন দক্ষতা নেই। সত্যি বলতে কি, পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস আমাকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি বিষণ্নও করে। বিখ্যাত সব পদার্থবিদের নানা অর্জনের কথা পড়ে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়। আগের লেখাটিতে বলেছিলাম  স্ট্রিং তত্ত্ব তিনটা বিষয়কে একীভূত করে । এক, পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব; দুই, প্রকৃতির মৌলিক বলসমূহ; তিন, প্রকৃতির মৌলিক কণাসমূহ। এর মধ্যে মৌলিক কণার একীভূতকরণ নিয়ে গত লেখায় কিছুটা ব্যাখ্যা দিয়েছি। আজকে স্ট্রিং–এর জন্মকথা দিয়ে শুরু করা যাক। তারপর আলোচনা করব তত্ত্ব একীভূতকরণ বিষয়টা নিয়ে।
Ispahani Tea
১৯৬৮ সালে গ্যাব্রিয়েল ভেনেজিয়ানো নামের ইতালির একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ‘Strong Interaction’ (স্ট্রং ইন্টারঅ্যাকশন) বলে একটা বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন। ভেনেজিয়ানো ‘accelerator’ নামের একধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করছিলেন। তিনি খুবই কৌতূহলোদ্দীপক একটা বিষয় লক্ষ করেন। গণিতে ‘অয়লার বেটা ফাংশন’ বলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাংশন আছে। ভেনেজিয়ানো দেখলেন, চার–কণার scattering প্রক্রিয়ার অনেক বৈশিষ্ট্যকে এই অয়লার বেটা ফাংশন দিয়ে গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তবে এটা নিয়ে সেই সময় ভেনেজিয়ানো তেমন কোনো আলোকপাত করতে পারেননি। তিনি কল্পনাও করেননি কী দানবীয় একটা তত্ত্বের জন্ম হতে যাচ্ছে।

এরপর ১৯৭০ সালের দিকে মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী লিওনার্ড সাসকিন্ড, ড্যানিশ পদার্থবিজ্ঞানী হলগার নিয়েলসন ও জাপানি পদার্থবিজ্ঞানী ইয়িচিরো নাম্বু দেখান যে ভেনেজিয়ানোর দেওয়া গাণিতিক বর্ণনাটা আরও যথার্থ হয় যদি কণার বদলে স্ট্রিং কল্পনা করা হয়। বিষয়টাকে একটু সহজভাবে বলার চেষ্টা করি। ধরা যাক, দুটি কণা একটি আরেকটিকে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা দিল, তারপর দুদিকে চলে গেল। এই প্রক্রিয়াকে বলা যেতে পারে চার-কণার scattering। এখানে চার-কণা বলছি এই কারণে যে ধাক্কার পরে কণাগুলোর বৈশিষ্ট্যে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। এখন দুটি কণার বদলে রাবার ব্যান্ডের মতো দুটি সুতা বা তন্তু (স্ট্রিং) চিন্তা করলে তাদের একে অপরকে ধাক্কা দেওয়ার ব্যাপারটা অনেকটাই অন্য রকম হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই এই দুই প্রক্রিয়াকে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করলে তা-ও ভিন্ন হবে।
কণার scattering স্ট্রিং scattering থেকে ভিন্ন। ছবি: ড. সাজিদ হককণার scattering স্ট্রিং scattering থেকে ভিন্ন। ছবি: ড. সাজিদ হকমজার বিষয় হলো, সাসকিন্ডদের এই প্রস্তাব সে সময় কেউ অতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। এটাকে কেবলই একটা interesting পর্যবেক্ষণ হিসেবে দেখা হতো। আসলে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা ফ্যাশন দুনিয়ার মতোই ট্রেন্ডি। আর সেই সময় কণাতত্ত্বই ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে। কাজেই কয়েক বছরের মধ্যে এই ব্যাপারটা একরকম চাপা পড়ে গেল।
তবে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (Caltech) তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী জন শোয়ার্জের বিশ্বাস ছিল, এই কণার পরিবর্তে স্ট্রিং নেওয়ার বিষয়টি বেশ সাহসী ধারণা এবং এটা একটি বড় তত্ত্বের ইঙ্গিতবাহী। তিনি ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকলেন এবং তাঁরাই একসময় এটাকে একটা তত্ত্ব হিসেবে দাঁড় করালেন। আরও পরিষ্কার করে বলা যায়, তাঁরা এই তত্ত্বকে মহাকর্ষীয় বলের একটা কোয়ান্টাম তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে আবার আসব।
দুঃখজনক বিষয় হলো, তারপরও স্ট্রিং তত্ত্ব পদার্থবিদদের মনোযোগ কাড়তে পারল না। মূল কারণ ছিল, তত্ত্বটিতে ‘Anomaly’ নামের একধরনের গাণিতিক সমস্যা ছিল। যা হোক, একপর্যায়ে ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল গ্রিন শোয়ার্জের সঙ্গে যোগ দিলেন। তাঁরা প্রায় ১০ বছর ধরে তত্ত্বের এই Anomalyগুলো দূর করার চেষ্টা করে ১৯৮৪ সালে এসে সফল হলেন। এই কাজ Green-Schwarz mechanism নামে পরিচিত। এর ফলে স্ট্রিং তত্ত্বের গবেষণার ধারা সম্পূর্ণরূপে বদলে গেল। আশির দশকে স্ট্রিং তত্ত্ব হয়ে দাঁড়াল পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়গুলোর একটি। এই Green-Schwarz mechanism প্রথমবারের মতো স্ট্রিং তত্ত্বের গবেষণার ক্ষেত্রে একধরনের বিপ্লবের সূচনা করে, যা প্রথম স্ট্রিং বিপ্লব নামে পরিচিত।
যেহেতু মাইকেল গ্রিন এবং জন শোয়ার্জের প্রসঙ্গ এল, তাই এঁদের নিয়ে একটা গল্প বলার লোভ সামলাতে পারছি না। আমি যখন পিএইচডি করছিলাম, তখন স্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে বাজারে খুব বেশি পাঠ্যবই ছিল না। যে দু–একটা বই ছিল, তার ভেতর একটা ছিল মাইকেল গ্রিন, জন শোয়ার্জ ও এডওয়ার্ড উইটেনের লেখা। বইটার কভার পেজ সবুজ রঙের। বইটা নিয়ে একটা রসিকতা চালু আছে। বলা হয়, বইটার সবচেয়ে ভালো অংশগুলো এডওয়ার্ড উইটেনের লেখা। বাকি অংশ লেখা জন শোয়ার্জের। আর সবুজ (গ্রিন) কভার পেজটা মাইকেল গ্রিনের অবদান। পাঠকের জন্য জানাচ্ছি, এডওয়ার্ড উইটেন হচ্ছেন এই সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত ও অসাধারণ মেধাবী একজন পদার্থবিজ্ঞানী। উনিই Fields Medal পাওয়া একমাত্র পদার্থবিজ্ঞানী। Fields Medal হচ্ছে গণিতে অসাধারণ অবদানের জন্য দেওয়া সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এটি নোবেল পুরস্কারের মতোই সম্মানজনক। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ‘দ্বিতীয় স্ট্রিং বিপ্লব’ এডওয়ার্ড উইটেনের হাত ধরেই আসে। এ বিষয়ে অন্য কোনো দিন বলব।
এখন আবার ফিরে আসি তত্ত্ব একীভূতকরণ প্রসঙ্গে। প্রায়শই তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উন্নতি নির্ণয় করার জন্য তা ভিন্ন ভিন্ন তত্ত্বকে একীভূত করতে পারছে কি না, তা একটা বড় সূচক হিসেবে কাজ করে। একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক। বহু বছর ধরে বিদ্যুৎ ও চৌম্বকত্বকে সম্পর্কহীন ভিন্ন ভিন্ন বিষয় হিসেবে দেখা হতো। পরে ১৮৬৫ সালে জেমস ক্লার্ক মাক্সওয়েল নামের একজন স্কটিশ পদার্থবিদ চারটি অতি সাধারণ কিন্তু নান্দনিক সমীকরণ দিয়ে এই বিষয়ে আমাদের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ বদলে দিলেন। তিনি এই দুটি আপাতভিন্ন বিষয়কে একটা সাধারণ গাণিতিক কাঠামোর ভেতর নিয়ে এলেন। তা ছাড়া এই সমীকরণগুলো তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা দেয়। এখানে একটা বিষয় বলে নেওয়া ভালো, এই বিদ্যুৎ ও চৌম্বকত্বকে একীভূতকরণ তথা মাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো কিন্তু কোনো ঐচ্ছিক ব্যাপার নয়। এটা ছাড়া বিদ্যুৎ ও চৌম্বকত্বের ধারণাটাই অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
মাইকেল গ্রিন, জন শোয়ার্জ ও এডওয়ার্ড উইটেন। ছবি: সংগৃহীতমাইকেল গ্রিন, জন শোয়ার্জ ও এডওয়ার্ড উইটেন। ছবি: সংগৃহীতএর প্রায় চল্লিশ বছর পর পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে মানুষের চিন্তার ক্ষেত্রে আরেকটা যুগান্তকারী পরিবর্তন (change of paradigm) সূচিত হয়। এটাও আসে একধরনের একীভূতকরণের চেষ্টা থেকে। আইনস্টাইন নামের মাত্র ২৬ বছরের এক পেটেন্ট অফিসের কেরানি ‘স্থান’ ও ‘কাল’ মূলত একই—এটা বলে পদার্থবিদদের একেবারে চমকে দিলেন। এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো, আইনস্টাইন বয়সে তরুণ ছিলেন তা ঠিক, কিন্তু তিনি ক্র্যাক পট তা ছিলেন না। তাঁর আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পড়াশোনার বিষয়ই ছিল পদার্থবিজ্ঞান। এরও প্রায় ১০ বছর পরে ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন আপেক্ষিকতাবাদের ধারণাকে একটি বিশেষ ক্ষেত্র থেকে সাধারণ তত্ত্বে (General theory of Relativity) পরিণত করেন। সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ নিঃসন্দেহে পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত তত্ত্ব। এর আবিষ্কারক হিসেবে আইনস্টাইন পেয়ে যান রকস্টারদের মতো খ্যাতি।
প্রকৃতির নিয়মগুলো বুঝতে উক্ত তত্ত্বগুলো আমাদের চিন্তার ক্ষেত্রে অসাধারণ পরিবর্তন আনে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শতকের প্রথম দুই-তিন দশকে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে আরেকটা খুব বড় ওলট–পালট হয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যার হাত ধরে। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা হলো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগতের পদার্থবিদ্যা। কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে অনেক সময় তত্ত্ব না বলে বলা হয় ‘চিন্তাকাঠামো’। এটা মূলত কিছু নিয়মের অবতারণা করে, যে নিয়ম মেনে তত্ত্বগুলোকে ব্যবহার করা হয়। উদ্দেশ্য হলো এর থেকে physical prediction করা। মজার ব্যাপার হলো, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ (যাকে মহাকর্ষীয় বলের তত্ত্ব বলা হয়) এই দুটি অতি বিখ্যাত তত্ত্ব একটি আরেকটিকে একদমই পছন্দ করে না। আর সেই জন্যই প্রয়োজন পড়ে স্ট্রিং তত্ত্বের। এখানে লক্ষণীয়, এই সমস্যাটা কিন্তু তড়িৎ চুম্বকীয় বলের কোয়ান্টাম তত্ত্বের ক্ষেত্রে হয় না, বা বলা ভালো সমস্যাটা ততটা প্রকট না। সে ক্ষেত্রে আমরা Photon-কণা পাই, কিন্তু মহাকর্ষ বলের জন্য Graviton-কণা পাওয়া যায় না।
এই অতি জটিল গাণিতিক সমস্যাটা সমাধানে আমাদের দরকার হয় স্ট্রিং তত্ত্বের। স্ট্রিং তত্ত্ব সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ (মহাকর্ষীয় বলের তত্ত্ব) এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এই দুটি পরস্পরবিরোধী বিষয়কে একীভূত করে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক, সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ একটা ক্ল্যাসিক্যাল তত্ত্ব এবং এই তত্ত্বের কোয়ান্টাম রূপ দেওয়া অসম্ভব কঠিন একটা ব্যাপার। বলা ভালো, এরা একে ওপরের জন্য ঠিক তৈরি না। কিন্তু সমস্যা হলো মহাকর্ষীয় বলের কোয়ান্টাম তত্ত্ব আমাদের দরকার, এটা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একদম শুরুর অবস্থা অথবা কৃষ্ণ বিবরের (Black Hole) ভেতরে কী হচ্ছে, তা জানার জন্য অন্য কোনো উপায় নেই। ধরা যাক কেউ একজন বোকার মতো কৃষ্ণ বিবরের ভেতরে লাফ দিল। এখন সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যতীত বলা সম্ভব নয়, তার ভাগ্যে কী ঘটবে। আর আমরা যদি সাবধানতা অবলম্বন করি, কখনো কৃষ্ণ বিবরের ধারে–কাছে না যাই, তাহলে এই তথ্য আমাদের কাছে অধরাই থেকে যাবে। কেন যেন প্রকৃতি আমাদের কাছ থেকে এই ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখতে চায়। গত লেখাতেই প্ল্যাঙ্ক স্কেল সম্পর্কে বলা হয়েছে। ব্ল্যাক হোলের রহস্য জানতে হলে এই প্ল্যাঙ্ক স্কেলে প্রকৃতি কোন সূত্র বা নিয়ম মেনে চলে, তা আমাদের জানতে হবে। আর সেই সূত্র হতে হবে মহাকর্ষীয় বলের কোয়ান্টাম তত্ত্ব। স্ট্রিং তত্ত্ব হচ্ছে এমনই একটা তত্ত্ব।

ড. সাজিদ হক: শিক্ষক ও গবেষক, স্ট্রিং থিওরি অ্যান্ড কসমোলজি, ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসর, কানাডা
ই-মেইল: shajidhaque@gmail.com

‘থিওরি অব এভরিথিং’

সহজ ভাষায় বলতে হয় স্ট্রিং তত্ত্ব হচ্ছে সবকিছুর তত্ত্ব। বিবৃতিটাকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর বলেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সংগৃহীতসহজ ভাষায় বলতে হয় স্ট্রিং তত্ত্ব হচ্ছে সবকিছুর তত্ত্ব। বিবৃতিটাকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর বলেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সংগৃহীতপপুলার কালচারে একটা কথা প্রচলিত আছে যে ‘স্ট্রিং থিওরি ইজ দ্য থিওরি অব এভরিথিং’। অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে হয়, স্ট্রিং তত্ত্ব হচ্ছে সবকিছুর তত্ত্ব। তবে এই বিবৃতি আমার সব সময় বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়। কেন? সেটা ব্যাখ্যা করা যাক।
আমার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে ডাইনোসরের মহাভক্ত। একদিন সে আমার কাছে এল ডাইনোসর-বিষয়ক একটা বই হাতে নিয়ে। সেখান থেকে সে আমাকে একটা বিশেষ ডাইনোসরের ছবি দেখাল, যার নাকে একটা গোলাপি রঙের শুণ্ড (Snout) আছে। সে আমার কাছে জানতে চাইল, এটা কেন আছে? পাঠক নিশ্চয় অনুমান করতে পারছেন আমার থিওরি অব এভরিথিংয়ের জ্ঞান সেদিন তেমন কোনো কাজে আসেনি। তবে আমি বাচ্চাদের সঙ্গে যতটা সম্ভব সৎ থাকার চেষ্টা করি। তাই আমি ওকে কোনো মনগড়া কাল্পনিক উত্তর দিইনি। শুধু বলেছিলাম, আমি জানি না। সে এরপর চলে গেল তার মায়ের কাছে এবং প্রশ্নের বিভিন্ন ধরনের উত্তর পেল। তবে কোনো উত্তরই তার পছন্দ হলো না। শেষমেশ সে নিজে ভেবে একটা উত্তর দাঁড় করাল। ‘এই প্রজাতির ডাইনোসররা ফুল খুব পছন্দ করে। যেহেতু বেশির ভাগ ফুলই গোলাপি রঙের হয়, তাই এই ডাইনোসরদের গোলাপি রঙের শুণ্ড আছে।’
Ispahani Tea
এই যুক্তি আমার মেয়ের নিজের কাছেই খুব যুক্তিসংগত বলে মনে হলো। কাজেই পাঠক নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারছেন, স্ট্রিং তত্ত্বকে কেন আমি থিওরি অব এভরিথিং বলতে চাই না।

স্ট্রিং থিওরি বলে আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হলো এক মাত্রার সুতা বা তন্তুর মতো বস্তু, যার দৈর্ঘ্য প্ল্যাঙ্কের দৈর্ঘ্যের কাছাকাছি। ছবি: সংগৃহীতস্ট্রিং থিওরি বলে আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হলো এক মাত্রার সুতা বা তন্তুর মতো বস্তু, যার দৈর্ঘ্য প্ল্যাঙ্কের দৈর্ঘ্যের কাছাকাছি। ছবি: সংগৃহীতআসলে এই বিভ্রান্তি সম্ভবত তৈরি হয়েছে আইনস্টাইনের শেষ দিকের গবেষণাকে কেন্দ্র করে। আইনস্টাইন চেষ্টা করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের একটা সম্মিলিত তত্ত্ব দাঁড় করাতে। প্রশ্ন হলো, এই সম্মিলিত তত্ত্ব বলতে ঠিক কী বোঝায়? সহজ ভাষায় সম্মিলিত তত্ত্ব হলো সেই তত্ত্ব, যা অন্য অনেক খণ্ড খণ্ড তত্ত্ব বা ধারণাকে একটি তত্ত্বে একীভূত করতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানের একটি সম্মিলিত তত্ত্ব বের করার যে প্রচেষ্টা, তার সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে সফল ফলাফল বলা যেতে পারে স্ট্রিং তত্ত্বকে।
স্ট্রিং তত্ত্ব মূলত তিনটি বিষয়কে একীভূত করতে চায়। এক. পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব; দুই. প্রকৃতির মৌলিক বলসমূহ এবং তিন. প্রকৃতির মৌলিক কণাসমূহ।
আমি আজ তিন নম্বর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। কারণ, বিষয়টি স্ট্রিং তত্ত্বের কেন্দ্রীয় ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করে। এ ছাড়া এটাই সম্ভবত স্ট্রিং তত্ত্বের জন্ম নিয়ে কথা বলার জন্য আদর্শ জায়গা।
ড. সাজিদ হকড. সাজিদ হকপদার্থবিজ্ঞান রিডাকশনাজম (খণ্ডতাবাদ) ব্যবহার করে। আমি এখানে প্রক্রিয়াগত খণ্ডতাবাদের কথা বলছি। মূল কথা, একটা বস্তুকে ভাঙতে থাকলে আমরা একসময় বিন্দুর মতো কণা পাব। কণাতত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে এই কণা। লক্ষ করার বিষয় হলো এ ক্ষেত্রে আমরা একটা আদর্শীকরণ করি। এই কণাগুলোকে ধরি বিন্দুর মতো যার কোনো ‘মাত্রা’ নেই, শুধু ভর আছে। এখন ধরা যাক, একটা বিন্দু কণা সৃষ্ট মহাকর্ষীয় প্রভাব বলয়ের (পটেনশিয়াল) কথা, যা কিনা দূরত্বের প্রতি-সমানুপাতিক। এখান থেকে খুব দ্রুতই আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে দূরত্ব যখন শূন্য হয়ে যায়, তখন এই পরিমাপকটা অসীম হয়ে যায়। পদার্থবিজ্ঞান অসীম পছন্দ করে না। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসীম পাওয়ার অর্থ হচ্ছে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হচ্ছে, পদার্থবিজ্ঞান তা বুঝতে পারছে না।
তাহলে প্রশ্ন হলো এটা কি প্রমাণ করে যে সমীকরণটা ভুল? ঠিক তা না আসলে।
আরও গোড়া থেকে শুরু করা যাক। পদার্থবিজ্ঞানে আসলে আমরা কী করি? গণিত ব্যবহার করে আমরা কতগুলো পরিমাপক সংজ্ঞায়িত করি, যাদের কিছু গাণিতিক আর কিছু ভৌত। ভৌত পরিমাপকগুলো আমরা পরীক্ষাগারে মাপতে পারি। যখন আমরা পরিমাপ করি, তখন এটা জানা আবশ্যক যে পরিমাপের স্কেলটা কী। ম্যাকক্রোসকপিক ইভেন্টে আমরা আসলে মাইক্রোসকপিক্যালি পরিমাপকের সংজ্ঞাটা ব্যর্থ হলো কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না। কিন্তু দিন শেষে এটা একটা প্র্যাকটিক্যাল স্ট্যান্ড পয়েন্ট। ধরা যাক, আমরা আসলে জানতে চাই মাইক্রোসকপিক্যালি কী হচ্ছে? লক্ষ করুন যে ‘অসীম’টা আমরা পাচ্ছি, তা আসলে কণাকে বিন্দুর মতো চিন্তা করার জন্য হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে আমাদের ধরে নিতে হবে, প্রকৃতির একটা সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্য আছে। এটাকে আমরা প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্য বলি। এটি ১০ টু দ্য পাওয়ার-৩৩ সেন্টিমিটার (দশমিকের পর ৩২টা শূন্য তারপর এক) বা শক্তি এককে ১০ টু দ্য পাওয়ার ১৯ জিইভির (গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট) সমান। এখানেই স্ট্রিং থিওরির ব্যুৎপত্তি। স্ট্রিং থিওরি বলে আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হলো এক মাত্রার সুতা বা তন্তুর মতো বস্তু, যার দৈর্ঘ্য প্ল্যাঙ্কের দৈর্ঘ্যের কাছাকাছি।
প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে শুধুই এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র তন্তু (স্ট্রিং)। এই তন্তুর বিভিন্ন ধরনের কম্পনের ফলে ভিন্ন ভিন্ন কণার উৎপত্তি হয়। ছবি: সংগৃহীতপ্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে শুধুই এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র তন্তু (স্ট্রিং)। এই তন্তুর বিভিন্ন ধরনের কম্পনের ফলে ভিন্ন ভিন্ন কণার উৎপত্তি হয়। ছবি: সংগৃহীতকণাতত্ত্ব (আরও নির্দিষ্ট করে বললে স্টান্ডার্ড মডেল) থেকে আমরা দেখতে পাই, প্রকৃতিতে ৬০ টির মতো মৌলিক কণা আছে। এই সংখ্যা ‘কণা’কে আমাদের প্রাকৃতিক মৌলিক বিল্ডিং ব্লক দাবি করার জন্য বেশ বড়। মোদ্দা কথা হলো, যা মৌলিক তার সংখ্যা কম হওয়ায় যুক্তিযুক্ত। এই কণার চিড়িয়াখানা মৌলিক বিল্ডিং ব্লক ধারণার পরিপন্থী। ঠিক এই ব্যাপারে স্ট্রিং তত্ত্ব এগিয়ে আসে।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে শুধুই একধরনের অতি ক্ষুদ্র তন্তু (স্ট্রিং), আর কিছু না। এই তন্তুর বিভিন্ন ধরনের কম্পনের ফলে ভিন্ন ভিন্ন কণার উৎপত্তি হয়। এভাবেই স্ট্রিং সব কণাকে এক মালায় গাঁথে। আগেই বলা হয়েছে, এই স্ট্রিং খুবই ছোট (১০ টু দ্য পাওয়ার-৩২ বা শক্তি এককে ১০ টু দ্য পাওয়ার ১৪ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট)। পাঠকের সুবিধার্থে এই সংখ্যাগুলো সম্পর্কে একটু অন্যভাবে ধারণা দেওয়া যাক। আমরা সবাই আমাদের সৌরজগৎ সম্পর্কে জানি। আমাদের সৌরজগতের দৈর্ঘ্য (ব্যাস) কী হতে পারে, তার একটা ধারণা আমরা পাই পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব চিন্তা করলে। এখন এ ধরনের বিলিয়ন বিলিয়ন সৌরজগৎ মিলে একটা গ্যালাক্সি হয়। কাজেই তাঁর দৈর্ঘ্য কী হতে পারে, তা কল্পনা করাও কঠিন। এখন এ রকম প্রায় এক বিলিয়ন গ্যালাক্সির দৈর্ঘ্য আমাদের হাতের নখের দৈর্ঘ্যের তুলনায় যে রকম বড়, হাতের নখটা একটা স্ট্রিংয়ের তুলনায় সে রকমই বড়। কাজেই পর্যবেক্ষণ করার কোনো প্রশ্নই আপাতত আসে না।

ড. সাজিদ হক: শিক্ষক ও গবেষক, স্ট্রিং থিওরি অ্যান্ড কসমোলজি, ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসর, কানাডা
ই-মেইল: shajidhaque@gmail.com

২০১৯ সালে চমক দেবে যে ৬ ফোন

২০১৮ সালকে অভিনব ফিচার আর উদ্ভাবনী স্মার্টফোনের বছর বলা যায়। তবে ২০১৯ সালে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে আরও বেশি অভিনব ফিচার ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি চোখে পড়বে। স্মার্টফোনে যুক্ত হবে অধিক শক্তিশালী প্রসেসর, উন্নত ক্যামেরা প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমান সফটওয়্যার। স্মার্টফোনের বাজারে অ্যাপল, স্যামসাং ও গুগল নতুন চমক দেওয়ার জন্য তৈরি। নতুন বছরে চমক হয়ে আসতে পারে—এমন ৬টি ফোন সম্পর্কে জেনে নিন:
সম্ভাব্য নতুন আইফোনসম্ভাব্য নতুন আইফোন
আইফোন ১১
আইফোন এক্স বা টেনের পর কি আইফোন ১১? অ্যাপল এখনো এ রকম কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে নতুন বছর মানেই নতুন আইফোন। ২০১৯ সালেও নতুন আইফোন বাজারে ছাড়বে অ্যাপল। ২০১৮ সালে ‘বিশ্বের এক নম্বর স্মার্টফোন’ বাজারে আনার দাবি করেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক। গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এক অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের জন্য তিনটি নতুন মডেলের আইফোনের ঘোষণা দেন তিনি। নতুন এ আইফোন ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই প্রযুক্তি বিশ্বে গুঞ্জন ছিল। আইফোন এক্সএস, এক্সএস ম্যাক্স, আইফোন এক্সআর নামের তিনটি নতুন মডেলের আইফোন এনে চমক দেয় অ্যাপল। ২০১৯ সালেও নতুন আইফোন এনে চমক দেবে অ্যাপল। ২০১৯ সালের আইফোনের মডেলগুলোয় উন্নত ক্যামেরা আর বেজেলহীন ডিসপ্লেতে গুরুত্ব দিতে পারে মার্কিন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।
Ispahani Tea
সম্ভাব্য গ্যালাক্সি এস১০সম্ভাব্য গ্যালাক্সি এস১০
গ্যালাক্সি এস১০
আগামী বছর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং বাজারে আনবে গ্যালাক্সি সিরিজের নতুন চমক। আগামী ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে গ্যালাক্সি সিরিজে ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন হিসেবে এস১০-এ এস১০ প্লাসের ঘোষণা দিতে পারে বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। নতুন স্মার্টফোনে উদ্ভাবনী ফিচারের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি ডিসপ্লে যুক্ত করবে স্যামসাং। কবে আসবে ভাঁজ করা স্মার্টফোন? এ প্রশ্ন অনেকেরই। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভাঁজ করা যাবে—এমন ফোন তৈরি করছে বলে অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু এখনো সে ‘চমক’ বাজারে ছাড়েনি। তবে বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, খুব বেশি দেরি নেই, আগামী বছরেই চমক দেবে স্যামসাং। ২০১৯ সালে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ওই ফোনের ঘোষণা দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য ভাঁজ করা ওই স্মার্টফোন মডেল বাজারে আসার আগে স্যামসাংয়ের আরেকটি ‘চমক’ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। সেটি হচ্ছে গ্যালাক্সি সিরিজে এস৯-এর পরবর্তী সংস্করণ, অর্থাৎ এস১০ মডেল। প্রতিষ্ঠানটির ডিসপ্লে উন্নয়ন ও উৎপাদন বিভাগ নতুন ধরনের ডিসপ্লে তৈরি করছে, যা শব্দ নির্গত করতে পারে। অর্থাৎ একে বলা হচ্ছে ‘সাউন্ড-এমিটিং’ ডিসপ্লে প্রযুক্তি। আগামী বছরের নতুন স্মার্টফোনে এ প্রযুক্তির ডিসপ্লে ব্যবহৃত হতে পারে। নতুন ডিসপ্লে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে স্মার্টফোনে বেজেল কমানো যাবে এবং স্ক্রিনে আরও জায়গা বাড়বে। ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন গ্যালাক্সি এস১০-এ এটি দেখা যেতে পারে।

ওয়ানপ্লাসের ৫জি ফোনওয়ানপ্লাসের ৫জি ফোন
ওয়ানপ্লাস ৫জি স্মার্টফোন
চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা ওয়ানপ্লাস আগামী বছর চমক নিয়ে হাজির হতে পারে। প্রতিবছরই স্মার্টফোন নির্মাতা ওয়ানপ্লাস দুটি করে ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ে। এ ফোনগুলোকে ফ্ল্যাগশিপ কিলার বলা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ওয়ানপ্লাস তাদের নতুন একটি ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন রিলিজ করবে, যার নাম হবে ওয়ানপ্লাস ৭। ফোন অ্যারেনার প্রতিবেদনে অনুযায়ী, আগামী বছরের সম্ভাব্য ওয়ানপ্লাস ৭ স্মার্টফোনটি হবে পৃথিবীর প্রথম ৫জি নেটওয়ার্ক-সমর্থিত স্মার্টফোন। ২০১৮ সালে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ওয়ানপ্লাসের প্রধান নির্বাহী পিট লাউ বলেন, মার্কিন টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৫জি স্মার্টফোন তৈরিতে কাজ করছেন তাঁরা।
নকিয়া ৯-এর পেছনে থাকবে ৫ ক্যামেরানকিয়া ৯-এর পেছনে থাকবে ৫ ক্যামেরা
নকিয়া ৯
২০১৮ সালটি নকিয়ার ব্র্যান্ডের জন্য দুর্দান্ত একটি বছর। এ বছর ফিনল্যান্ডের এইচএমডি গ্লোবাল নকিয়া ব্র্যান্ডের এক ডজন স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। আগামী বছরে স্মার্টফোনের বাজারে আরও চমক দেখাতে চাইছে ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটি। আগামী বছর নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন হিসেবে নকিয়া ৯ বাজারে ছাড়বে এইচএমডি গ্লোবাল। এ ফোনের পেছনে ৫ ক্যামেরা সেটআপ থাকবে, যা বিশ্বের প্রথম। নকিয়ার হাত ধরেই ফোনের পেছনে ৫ ক্যামেরার শুরু হতে চলেছে আগামী বছর।
৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা শাওমি ফোন৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা শাওমি ফোন
শাওমি রেডমি প্রো ২
স্মার্টফোনের ক্যামেরা নিয়ে আগামী বছর চমক দেওয়ার অপেক্ষায় আছে চীনের আরেক স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমি। ফোনের পেছনে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে শাওমি। তাদের ফ্ল্যাগশিপ ফোন রেডমি প্রো ২ মডেলে যুক্ত হবে এ ফিচার। এই ফোনে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৬৭৫ মডেলের চিপসেট ব্যবহৃত হবে। নতুন রেডমি ফোনের একটি টিজার প্রকাশ করেছে শাওমি। এই টিজার অনুযায়ী, রেডমি প্রো ২ মডেলের ফোনের মূল আকর্ষণ হলো এর ৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। চীনের একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই টিজার অনুযায়ী, এই ফোনের ডিজাইনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে চলেছে শাওমি। ফোনটির সেলফি ক্যামেরার ডিজাইনেও কিছু পরিবর্তন করা হতে পারে। ডুয়েল রিয়ার ক্যামেরার এ ফোনে উচ্চমানের ছবি তোলার জন্য থাকবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সমর্থন। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর আর ফেস আনলক ফিচার।

গুগল পিক্সেল ফোনগুগল পিক্সেল ফোন
গুগল পিক্সেল ফোন
অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে প্রতিবছর নতুন ফিচারের ফোন বাজারে ছাড়ছে গুগল। আগামী বছরেও দেখা যাবে গুগলের পিক্সেল ফোন। গুগল অবশ্য নতুন পিক্সেল ফোন সম্পর্কে এখনো কিছু জানায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর ক্যামেরা সুবিধা নিয়ে আগামী বছর নতুন পিক্সেল ফোন দেখা যাবে।

আইফোনের চাহিদা আরও কমছে

আইফোন এক্সএস ম্যাক্সআইফোন এক্সএস ম্যাক্সবিশ্বজুড়ে আইফোনের চাহিদা কমছে। ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে আইফোনের চাহিদা আরও কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিটি রিসার্চের বিশ্লেষণে আইফোনের চাহিদা কমতে দেখা হেছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে আইফোন এক্সএস ম্যাক্সের চাহিদা কমবে।
চিটি রিসার্চ জানিয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে আইফোনের চাহিদার যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে তা কমে যাবে। ওই সময় পাঁচ কোটি ইউনিটের পরিবর্তে সাড়ে চার কোটি ইউনিট আইফোনের চাহিদা থাকবে। এর মধ্যে সাড়ে ছয় ইঞ্চি মাপের আইফোন এক্সএস ম্যাক্সের চাহিদা ৪৮ শতাংশ কমবে।
Ispahani Tea
চিটির বিশ্লেষক উইলিয়াম ইয়াং বলেছেন, আইফোনের চাহিদা কমবে, যা সাপ্লাই চেইন ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর নয়।

আইফোন এক্সএস ম্যাক্স অ্যাপলের সবচেয়ে দামি ফোন। এর দাম শুরু হচ্ছে ১ হাজার ৯৯ মার্কিন থেকে।
এর আগেও আইফোনের চাহিদা কমার খবর প্রকাশ করেছিল প্রযুক্তিবিষয়ক সাইটগুলো। এর আগে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপলের পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম জাপান ডিসপ্লে। প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্বের অর্ধেকের বেশি আসে অ্যাপলের কাছে সরঞ্জাম বিক্রির মাধ্যমে। আইফোনের চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি তাদের রাজস্ব পূর্বাভাস কমিয়েছে। এ ছাড়া আইফোনের ফেসিয়াল রিকগনিশন সেন্সর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লুমেনটাম হোল্ডিংসও তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রাজস্ব পূর্বাভাস কমিয়েছে।
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক উ জিন হো বলেন, অ্যাপলের ওপর তাঁদের পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি নির্ভরশীল। এর ফলে সাপ্লাই চেইনে ক্রমবর্ধমানভাবে ঝুঁকি বাড়ছে।
গত নভেম্বরে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাশ্রয়ী দামের আইফোন হিসেবে বাজারে আসা এক্সআর মডেলের চাহিদা কম। নতুন আইফোনের নির্মাতা ফক্সকন ও পেগাট্রনকে উৎপাদন কমাতে বলেছে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি প্রয়োজনে ছোট প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রেখেছে অ্যাপল। শুরুতে আইফোন এক্সআর মডেলের জন্য ৬০টি প্রডাকশন লাইন প্রস্তুত রেখেছিল ফক্সকন। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে ৪৫টি প্রডাকশন লাইনে কাজ হচ্ছে।
শুধু আইফোন এক্সআর মডেল নয়, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে যে নতুন তিন মডেলের আইফোনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সব কটির উৎপাদন কমিয়েছে অ্যাপল।
ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকেরা নতুন আইফোনের চাহিদা সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, অ্যাপল তার চেয়েও কম ডিভাইস বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের জন্যও সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। নতুন ফোনের চাহিদা কমে যাওয়ায় স্ক্রিন নির্মাতা জাপান ডিসপ্লে ইনকরপোরেশন তাদের পুরো বছরের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছে।

অ্যাপলের তিনটি মডেলের নতুন আইফোনের মধ্যে সবচেয়ে চাহিদা কম আইফোন এক্সআরের। অ্যাপল এ মডেলের আইফোনের উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমিয়েছে। গত অক্টোবর মাস থেকে এই মডেলের আইফোন বিক্রি শুরু করে অ্যাপল। সেপ্টেম্বর থেকে বিক্রি শুরু হয় আইফোন এক্সএস ও আইফোন এক্সএস ম্যাক্সের।

ফেসবুকে যে প্রতারণা বেড়েই চলেছে

ফেসবুকে যে প্রতারণা বেড়েই চলেছে
ফেসবুক মেসেঞ্জারে এভাবে বার্তা দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত।ফেসবুক মেসেঞ্জারে এভাবে বার্তা দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত।ফেসবুকের মেসেঞ্জারে কেউ টাকা চাইলে তার পরিচয় আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। এখন সাইবার দুর্বৃত্তরা ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে রেখেছে। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে ঘনিষ্ঠ ও পরিচিতজনের ছদ্মবেশে ফেসবুক মেসেঞ্জারে টাকা চাওয়ার হার বেড়ে গেছে। ফেসবুকের এই স্ক্যাম ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এত দিন এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পড়ছিলেন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে এ ধরনের প্রতারণা বেড়ে গেছে। যুক্তরাজ্যের দ্য সান ডটকো ডটইউকে অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারের ঘনিষ্ঠজনের ছদ্মবেশে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে অর্থ চাইছে। তারপর যেকোনো মাধ্যমে জরুরি কিছু টাকা পাঠাতে বলছে।
প্রতিবদেনে বলা হয়, দুর্বৃত্তদের টাকা চাওয়ার ধরন একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। কারও কাছে বান্ধবীর ভান ধরে বা কারও কাছে পরিবারের সদস্যদের ছদ্মবেশ ধরে জরুরি প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও লটারিতে অংশ নেওয়ার কথা বলে বা কোথাও থেকে অর্থ পাওয়ার লোভ দেখিয়ে কিছু বিনিয়োগের কথাও বলা হচ্ছে।
কুইন্সল্যান্ডের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু পরিচিতজনের কাছ থেকে বার্তা আসে, তাই অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যান। তাঁরা বিশ্বাস করে বসেন। কিন্তু এ ধরনের বার্তা পাঠায় স্ক্যামার বা সাইবার প্রতারকেরা। যে অ্যাকাউন্ট থেকে বার্তা পাঠানো হয়, সেটি তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বা ছবি ও তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে তারা এ অপকর্ম করে।
গত বছর শুধু অস্ট্রেলিয়া থেকেই রেকর্ড পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। গত বছর ১৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার সাইবার অপরাধীদের পকেটে গেছে। ফেসবুকের সাম্প্রতিক স্ক্যাম নিয়ে তাই দেশটিতে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকেই ফেসবুক মেসেঞ্জারে আলাপের সময় কার সঙ্গে কথা বলছেন, তা বুঝতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট থেকে দুর্বৃত্তরাও ছদ্মবেশে কথা বলতে পারে। অনেক সময় দুর্বৃত্তরা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে ই-মেইলে ভুয়া লিংক পাঠিয়ে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে বলে। পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়ে অন্য বন্ধুদের কাছে কৌশলে অর্থ চাইতে থাকে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে তাদের নির্দিষ্ট টিম আছে। ফেসবুকের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এ খাত ক্রমেই উন্নতি করে যাচ্ছে তারা।
প্রতারণা থেকে সুরক্ষা পেতে পরামর্শ 
Ispahani Tea
এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে ফেসবুকে ‘টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ যোগ করা যেতে পারে, যা অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কঠিন করে তুলবে। ফেসবুকে এ সুবিধা থাকলেও তা ডিফল্ট আকারে নেই। ম্যানুয়ালি ঠিক করে নিতে হবে।


বন্ধু বা ঘনিষ্ঠ কারও পরিচয়ে টাকা চাইলে আগে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বা অন্য কোনো উপায়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিন। তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে কি না, জেনে নিন।
যাঁদের কোনো অ্যাকাউন্ট নিয়ে সন্দেহ হবে, তাঁরা অবশ্যই ফেসবুককে অভিযোগ জানাবেন। কখনো নিশ্চিত না হয়ে অর্থ পাঠাবেন না।
ফেসবুকের কোনো পোস্ট বা বার্তা যদি কৌশলে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করে বা অর্থ চায়, তবে https://www.facebook.com/help/reportlinks এই লিংকে অভিযোগ করা যাবে।
যাঁদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হবে তাঁরা যাবেন এই লিংকে facebook.com/hacked
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে যেতে পারেন https://newsroom.fb.com/news/ 2015/07/enhancing-security-with-a-quick-checkup/
ফেসবুকের সেটিংস পরীক্ষা করতে যেতে পারেন facebook.com/settings
তথ্যসূত্র: এবিসি নিউজ।

ফেসবুকের বড় বড় কাজ পাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো

ফেসবুকের বড় বড় কাজ পাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো
  
ফেসবুকফেসবুকফেসবুকের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের প্ল্যাটফর্মে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দেশে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটিকে। তাদের এ সমস্যা সমাধানে এবার ভারতের কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিকে কাজ দিচ্ছে ফেসবুক।
Ispahani Tea
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন থেকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুকের কনটেন্ট সম্পাদনার পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণ বা ডেটা অ্যানালাইসিস, ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে মানি লন্ডারিংবিরোধী কার্যক্রম চালাবে। বিশ্বজুড়ে ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে গুজব ও প্রতারণা বেড়ে যাওয়ায় সমালোচনা ঠেকাতে ফেসবুক এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে ফেসবুক থেকে তথ্য নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কাজে লাগানোর অভিযোগ ওঠে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে। পরে যা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফেসবুকের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কনটেন্ট পর্যালোচনার জন্য ২০ হাজার কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান জাকারবার্গ। 
ভারতে ভুয়া খবর ছড়ানো ঠেকাতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করে এবং এ বিষয়ে উদ্বেগ জানায় দেশটির সরকার। দেশটিতে ২৯ কোটি ৪০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ভারতের গ্যাজেটস নাউ ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচসিএল টেকনোলজিস, উইপ্রো ও টেক মাহিন্দ্রাকে কনটেন্ট মডারেশন বা ফেসবুকের বিভিন্ন কনটেন্ট সম্পাদনার জন্য কাজ দিতে যাচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্সিং কাজ হিসেবে কনটেন্ট সম্পাদনার কাজ দেওয়া হতে পারে।
কয়েক মাস আগে ধরেই ভারতীয় কোম্পানি জেনপ্যাক্ট ও অ্যাকসেঞ্চারে সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে ফেসবুক। ভারতীয় একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ৪০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থমূল্যের চুক্তি করেছে ফেসবুক। শুরুতে প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল ফেসবুক। কিন্তু তাতে সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এখন ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন কর্মীর মাধ্যমে ভুয়া খবর ধরার কাজ করতে চাইছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে অবশ্য ফেসবুক বা ভারতের কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা কোনো মন্তব্য করা হয়নি।