বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

কবি আসিফ মেহ্দী

কবিতার জোরে বেচারার নামই হয়ে গেছে ‘কবি’! বাবা-মায়ের দেওয়া নামে কেউ আর তাকে ডাকে না। ‘বেচারা’ বলার কারণ, গ্রামের মানুষ তাকে খ্যাপানোর জন্যই ‘কবি’ শব্দটা ব্যবহার করে; যেন যার কাজকর্মের যোগ্যতা নেই, সে-ই হয় কবি!
আমাদের কবি তারাশঙ্করের কবি উপন্যাসের ‘নিতাই কবি’র মতো নয়। গ্রামের অ্যানালগ পরিবেশে থাকলেও শহরের ডিজিটাল হাওয়া তার চারিত্রিক সনদপত্রের বারোটা বাজিয়েছে। লাভ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কবি যেন শেয়ারবাজারের রাঘববোয়ালদের মতোই পাকা! ‘পিক আওয়ারে’ প্রেম করে একজনের সঙ্গে আর ‘অফ-পিক আওয়ারে’ গল্প জমায় আরেকজনের সঙ্গে। তবে তার ফেসবুকের প্রোফাইলে দেখা যায়, ‘ইন এ রিলেশনশিপ উইথ কবিতা’। ‘কবিতা’ তারই আরেকটি ফেক আইডি হয়তো!
ঘটনা ঘটল গত মাসের ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে। অনেক হিসাব কষে কবি ঠিক করল, মীনার সঙ্গে দেখা করবে সকালে, পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির উত্তর দিকের পুকুরপাড়ের ডাব গাছতলায়। আর টুনুর সঙ্গে দেখা করবে বিকেলে, কাজলা বুড়ির বাঁশবাগানের কাছে।
শীতের সকালে পিঠা আর খেজুরের রস খেয়ে, গায়ে সোয়েটারের ওপর পাঞ্জাবি চাপিয়ে, শরীরে বিলেতি খুশবু মেখে কবি রওনা দিল পুকুরপাড়ের উদ্দেশে। সেখানে সময়মতো উপস্থিত হয়ে ভালোবাসার প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো কবি। অচিরেই ভালোবাসার দ্বিতীয় পরীক্ষারও মুখোমুখি হলো সে। মীনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সে নাকি জীবন পর্যন্ত কোরবান করে দিতে পারবে। মীনা তাকে জীবন উৎসর্গ করার মতো বড় কোনো পরীক্ষায় ফেলল না। শুধু গাছ থেকে তার জন্য একটা ডাব পেড়ে দিতে বলল। এ যুগে চাঁদে যাওয়ার জন্য আগ্রহী মানুষের অভাব আছে বলে মনে হয় না; কিন্তু গাছ থেকে ডাব পাড়ার জন্য মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কবি নিজেও গাছবিদ্যায় পারদর্শী নয়। অথচ কবির নিজেরই একটা অণুপ্যারোডি আছে, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর বৃক্ষগত ডাব, নহে বিদ্যা নহে ডাব হইলে অভাব’! প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার হল থেকে পালিয়েছিল কবি, কিন্তু এই পরীক্ষা থেকে পালিয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
হঠাৎ গুগল কর্তৃপক্ষের ওপর তার ভয়ানক রাগ চাপে। লোকে বলে, গুগলে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর! তবে গুগল কেন এমন করছে না, সার্চ করলে আস্ত জিনিসই এসে হাজির হবে! যা হোক, ডাবের বদলে ফুল দিয়ে যদি কিছুটা মেকআপ করা যায়! কবি পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ বের করল। তারপর চোখ বন্ধ করে, এক হাঁটু মাটিতে গেড়ে কাব্যিক ভঙ্গিতে মীনাকে গোলাপ নিবেদন করল। সে সময় হঠাৎ ‘সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন’ টাইপের এক চড় এসে পড়ল কবির গালে! চোখ খুলে খানিকক্ষণ বেচারা কিছুই দেখতে পেল না। দৃষ্টি পরিষ্কার হলে দেখল, চড় মেরেছে টুনু! কী আশ্চর্য, টুনু এ সময় এখানে এল কী করে! মেয়েটার সময়-স্থান জ্ঞান নেই দেখছি!
টুনু মীনার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপু, দুষ্ট প্রেমিকের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।’ মীনাও একমত হলো, ‘ঠিকই বলেছিস টুনু। দুর্জন বিশ্বপ্রেমিক হলেও পরিত্যাজ্য। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ১০-২০টা ভুলও ক্ষমা করে দেওয়া যায়, কিন্তু প্রেমের পরীক্ষায় প্রেমিকের ভুল ক্ষমা করা অসম্ভব! চল যাই।’
দু-দুটো পোষা ময়না পাখি চোখের সামনে দিয়ে উড়ে চলে গেল! ঘটনার আকস্মিকতায় কবি হাসবে না কাঁদবে, ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। প্রেমের ঘানি টানতে যে খরচাপাতি হয়েছে, সেগুলোর জন্যও মন ভারী হয়ে উঠল। কবি নিজেকে সান্ত্বনা দিল এই বলে, সে তো হূৎপিণ্ডের চার ভাগের দুই ভাগ দুজনকে দিয়েছিল। আরও দুই ভাগ তো অক্ষতই রয়েছে!

নতুন স্টাইলের ঝগড়া

বিয়ের পর ঝগড়া অতি কমন একটা ব্যাপার। বিভিন্ন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া হয়ে থাকে। সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে একই স্টাইলের ঝগড়া। সবকিছুতেই পরিবর্তন আসছে। তাই এই ঝগড়ায়ও কিছু পরিবর্তন আনা দরকার।
ঝগড়ার নতুন কিছু স্টাইল নিয়ে এবার গবেষণা করেছেন আলিম আল রাজি

জাতীয় সংসদ স্টাইল
স্বামী: মাননীয় অর্ধাঙ্গী, প্রথমেই অন্তরের অন্তস্তল থেকে আপনাকে ধন্যবাদ যে আমাকে আপনি কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। সুযোগ না পেলে অনেক কথাই অব্যক্ত থাকত।
স্ত্রী: মাননীয় অর্ধাঙ্গ, আপনার প্রশ্নটি করুন।
স্বামী: এই মহান বেডরুমে বসে আমি কিছু বলতে চাই। আপনি মহান। আপনি এই পরিবারের কান্ডারি। আপনি না থাকলে এই পরিবারের আলো নিভু নিভু করে।
স্ত্রী: মাননীয় অর্ধাঙ্গ, আপনার প্রশ্নটি করুন।
স্বামী: আপনি যেন হতাশার মাঝে এক বিন্দু আশার আলো। আপনার অনুপস্থিতিতে এই সংসারের সবার হিয়া কাঁপাকাঁপি করে। কাঁপতে কাঁপতে উলটে পড়ে যায়।
স্ত্রী: আপনার প্রশ্নটি করুন।
স্বামী: আমি এখানে কথা বলছি। কিন্তু আমার মন পড়ে আছে অতীতে। এককালে আপনি আর আমি কত কিছু করতাম। প্রিয় অর্ধাঙ্গী, অতীত হোক, বর্তমান হোক, আপনার গুণের কথা কখনোই বলে শেষ করা যাবে না। আপনি যেন জয় করেছেন সকল অতীত।
স্ত্রী: অর্ধাঙ্গ সাহেব, আপনার প্রশ্নটি করুন।
স্বামী: ইয়ে মানে...চিনির কৌটাটা আপনি কোথায় রেখেছেন?

টক শো স্টাইল
স্বামী: খাওয়াদাওয়া শেষ। এখন আমি এবং আমার স্ত্রী করব একটা ম্যারাথন লেটনাইট ঝগড়া। ঝগড়ায় আমার শালা-শালি, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই অংশ নিতে পারেন।
এ জন্য আপনাকে আমার ফোনে কল করতে হবে। আর শালিকে বলছি, তোমার কল দিতে হবে না। মিসড কল দিলেই চলবে।
স্ত্রী: ঝগড়া শুরু করো, প্লিজ।
স্বামী: হুঁ। প্রথমে আমি বলি।
স্ত্রী: ফাজলামো পাইছ? তুমি বলবা কেন? তোমার সাহস তো কম না।
স্বামী: ইয়ে... মানে!
ক্রিং ক্রিং... (শালির টেলিফোন)
স্বামী: প্রিয় শালি, আপনার নাম বলে প্রশ্ন করুন, প্লিজ।
শালি: আপা, দুলাভাই আমাকে মিসড কল দেয় কেন? বিচার চাই।
স্বামী: ইয়ে... মানে একটা বিজ্ঞাপন বিরতি নিলে কেমন হয়?

কবিতা স্টাইল
স্বামী: হাজার বছর থেকে আমি মশারি টানাইতেছি
খাটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়াদৌড়ি করিয়া
অনেক চেষ্টা করি আমি।
কিন্তু আমি হালকা খাটো হওয়ায়
প্রায়ই মশারি টানাতে পারি না।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতো
সন্ধ্যা আসে, আর আমার ভয় বাড়তে থাকে,
এই বুঝি টানাতে হবে মশারি।
আমি বলছি না, মশারি টানাতে হবে।
আমি চাই একজন আমাকে সাহায্য করুক।
টুলটা এনে দিক। এতে আমার সুবিধা হবে।
স্ত্রী: ওরে অভাগা, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে,
তবে একলা মশারি টানাও রে।
একলা টানাও, একলা টানাও একলা টানাও রে।

বিতর্ক স্টাইল
স্ত্রী: মাননীয় পিংকির আব্বা, আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। দেখুন, একবিংশ শতক হচ্ছে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার যুগ। বিশ্বায়নের সঙ্গে আমাদের তাল মেলাতে হলে দরকার এটার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা। কিন্তু দৃষ্টি প্রসারিত করলে আমরা কয়েকটা অন্য রকম ব্যাপার প্রত্যক্ষ করি। কী সেগুলো? সেগুলো হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসন আর তৃতীয় বিশ্বের দুরবস্থা। তাই সব চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি বাপের বাড়ি চলে যাব। এ ব্যাপারে আরও যুক্তি উপস্থাপন করবেন আমার দলের দ্বিতীয় বক্তা আই মিন আমাদের বড় মেয়ে পিংকি। ধন্যবাদ, পিংকির আব্বা।

স্বামী: ধন্যবাদ, পিংকির আম্মা। সংক্ষিপ্তভাবে বলার জন্য। দেখুন, সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনশীল। এখানে সব রীতিনীতি আর সভ্যতা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হয়। ইতিহাসের দিকে খেয়াল করলে ব্যাপারটা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে আসে। এই পরিবর্তনশীল সময়ে আপনার বাপের বাড়ি চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না। আপনি চলে গেলে কে রান্না করবে? কে পিংকি আর মজনুকে স্কুলে নিয়ে যাবে? তাই পিংকি ও পিংকির আম্মা, আপনাদের বলছি, কেবল তর্কের খাতিরে তর্ক নয়, আমাদের যুক্তি মেনে নিন। এ ব্যাপারে আরও যুক্তি তুলে ধরবেন আমার দলের দ্বিতীয় বক্তা, মানে আমাদের পুত্র মজনু মিয়া।

চাঁদের গন্ধ কি মিষ্টি-মধুর?

প্রশ্নটা হাস্যকর মনে হতে পারে। চাঁদের আবার গন্ধ কী, তাই না? কিন্তু চাঁদের গন্ধ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। অনেক আগে ধারণা করা হতো, চাঁদের গন্ধ টাটকা পনিরের মতো। কারণ, সদ্য তৈরি পনিরে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ দেখা যায়, মনে হয় যেন চাঁদ। এ রকম তুলনা কাব্যে চলে, বিজ্ঞানে চলে না। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের গন্ধ এক অর্থে বারুদের মতো। নাসা কীভাবে জানল? জানল নভোচারীদের অভিজ্ঞতা থেকে। এ পর্যন্ত মাত্র ১২ জন নভোচারী চাঁদের মাটিতে পা রেখেছেন। অবশ্য তাঁরা বায়ু অভেদ্য মহাশূন্য-পোশাক পরেছিলেন। তাই তাঁদের পক্ষে চাঁদের গন্ধ নেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু চাঁদের ধুলোবালি সহজেই তাঁদের পোশাকে লেগে যায় এবং প্রচুর ধূলিকণা নিয়ে তাঁরা চাঁদ থেকে মহাশূন্যযানে ফিরে আসেন। তাঁরা বলেছেন, চাঁদের ধূলিকণা ধরলে তুষারের মতো লাগে, গন্ধ শুঁকলে মনে হয় বারুদ, আর স্বাদ মন্দ নয়! নাসার একটি ছোট দল আছে, যারা মহাশূন্য থেকে ফিরে আসা প্রতিটি যানের যন্ত্রপাতি শুঁকে দেখে। আন্তর্জাতিক মহাশূন্য স্টেশনের আবহাওয়া-পরিবেশের সূক্ষ্ম ভারসাম্য নষ্ট করার মতো কোনো কিছু যেন নভোযানে ঢুকে না পড়তে পারে, সে জন্য এটা করা হয়। সুতরাং চাঁদের গন্ধ মিষ্টি-মধুর তো নয়ই বরং কিছুটা ঝাঁজালো।

সাহারার বদলের দিন

সাহারা। কজনই বা চিনত তাঁকে। মাত্র কয়েক বছর আগের কথা। এফডিসিতে পা দিয়েই তিনি বুঝতে পারেন, এ জায়গায় তাঁর কোনো কদর নেই। শুটিং শেষ করে রাতে বাসায় ফিরবেন কী করে? সেদিকেও কোনো খেয়াল নেই যেন কারও। এফডিসির ভেতরে অপেক্ষা করতে করতে একটি অটোরিকশা মিললে, তবেই না ঘরে ফেরা হতো।
ছবিতে কাজ শুরুর পর আকস্মিকভাবেই বাবা মারা গেলেন। মেয়েটি এসএসসির পর আর পড়াশোনা করতে পারলেন না। যেন একাই সংসারের সব দায়িত্ব তুলে নিলেন। তিন-চার মাস পরে দ্বিতীয় সারির নায়কদের সঙ্গে একটি ছবি পেলেন। সেটিই যেন আকাশের চাঁদ তাঁর কাছে। ছবিতে যখন খুব কষ্টের দৃশ্যে কাজ করতেন, তখন মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা সব কষ্ট অনুভব করে কাঁদতেন। রূপসজ্জাকর এক দিন বললেন, ‘এই মেয়ে, তুমি কান্নার দৃশ্যের সময় চোখে গ্লিসারিন না দিয়ে কাঁদো কীভাবে?’
সাহারার মুখে তখন বিষণ্ন হাসি। কোনো উত্তর দিতে পারেননি সেদিন।
আজকের দিনগুলোতে সাহারা কী করেন?
পুরো দৃশ্যপটেরই পরিবর্তন হয়েছে। এখন সাহারা দামি গাড়ি চালান, তাঁর দুজন সহকারী আছেন। শুটিংয়ে আসামাত্র তাঁর মাথার ওপর ছাতা ধরা হয়। আলাদা চেয়ার রাখা হয়। তাঁর সেবায় নিয়োজিত থাকেন প্রডাকশন বয়রা।
কিন্তু কীভাবে? সাহারা কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন?
না।
তাহলে?
একটি ছবি বদলে দিয়েছে সাহারার জীবন, প্রিয়া আমার প্রিয়া। একটি ছবির গুণে সাহারা এখন এই সময়ে জনপ্রিয় নায়িকাদের একজন। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই মুক্তি পেল সাহারা অভিনীত ৫০তম ছবি আমার চ্যালেঞ্জ। মুক্তির প্রথম দিন থেকেই ছবিটি পেয়েছে ব্যবসায়িক সাফল্য।
বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছেন তিনি। চলচ্চিত্রের আকালের বাজারে যেখানে অনেক শিল্পী এখন প্রায় বেকার বলা যায়, সেখানে সাহারা মাসের ৩০ দিনের মধ্যে ২০ দিন শুটিং করছেন। প্রতিটি ছবিতেই তাঁর বিপরীতে আছেন শাকিব খান।
জিজ্ঞেস করি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগফল কী?
‘এখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি হয়নি। তবে হয়ে যাবে।’
বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি। হবে, কীভাবে বুঝলেন?
‘আমার ছবিগুলো আমাকে সেই আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। প্রিয়া আমার প্রিয়া ছবির পরে শাকিবের সঙ্গে আমাদের ছোট সাহেব ছবিটি মুক্তি পেল। এই ছবিটি প্রমাণ করল, অভিনয় জানলে যেকোনো চ্যালেঞ্জিং কাজ করা যায়। সেবারই মুক্তি পেয়েছিল শাবনূর আপার ছবি এক টাকার বউ। সেই ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে আমার ছবি। এরপর অনেকেই বলত যে শাকিবের উপস্থিতির জন্যই নাকি আমার ছবিগুলো চলছে। আমি বলেছি, শাকিবের উপস্থিতি যেকোনো ছবি ও শিল্পীর জন্য অনেকটা ইতিবাচক। তাই বলে অন্য শিল্পীরা যদি কাজ না জানেন, তাহলে তো আর সেই কাজটাও শাকিব করবেন না। আমি স্বীকার করব, শাকিব সে সময় আমাকে বন্ধুর মতোই সহযোগিতা করেছেন। আমি কিন্তু ইমন ও মারুফের সঙ্গেও ছবিতে কাজ করেছি এবং সফল হয়েছি। এর পরই আসলে নির্মাতাদের কাছে আস্থার জায়গাটি পেয়েছি,’ বলছিলেন সাহারা।
বর্তমানে সাহারার হাতে যে ছবিগুলো আছে, সেগুলোর কাজ শেষ হতে হতে ২০১২ শেষ হয়ে যাবে। তাঁর লক্ষ্য এখন একটাই, কাজ কম করলেও এমন ছবিতে তিনি অভিনয় করতে চান, যে ছবিগুলোতে তিনি নিজেকে খুঁজে পাবেন। জানালেন, গল্প ভালো না লাগলে তিনি কাজটি মন থেকে করার মতো উৎসাহ পান না। তাই এ নিয়ে দু-একজনের সঙ্গে তাঁর ভুল-বোঝাবুঝিও হয়েছে। তবু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় সাহারা। বললেন, ‘আমি ছোট মানুষ। কোনো কথা বললে কে কী মনে করবে, তাই কাউকে কিছু বলি না। শুধু জানাই যে আমার শিডিউল নেই।’
সাহারার দিন বদলেছে। কিন্তু অতীতের সেই দিনগুলোর কথা ভোলেননি। শুটিং শেষ করে মাঝরাতে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন গাড়ি চালাতে চালাতে মনে পড়ে দুঃসহ দিনগুলোর কথা। কষ্টের কথা। সেই সাহারা কিনা আজ রুপালি পর্দার প্রিয় মুখ। সব কষ্টের স্মৃতির মধ্যেও আনন্দে চোখ ছলছল করে ওঠে তখনই, যখন ছোট্ট ভাইটির কথা মনে পড়ে। নিজে পড়াশোনা না করতে পারলেও, ভাইটিকে সাহারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছেন।

দুর্লভ শঙ্খশালিক,

 আ ন ম আমিনুর রহমান

গত বছরের অক্টোবরে এক দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের দিকে যাচ্ছিলাম। প্রাণিচিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ অনুষদ ভবন থেকে সাত-আট মিনিটের পথ। প্রখর রোদ। সঙ্গে ক্যামেরাটা নিতে ভুলিনি। মিনিট চারেক হাঁটার পর যে মরা গাছটায় একবার একসঙ্গে ৭৫টি তিলামুনিয়া দেখেছিলাম, তার মগডালে দেখলাম ছোট একটা পাখি। কিন্তু প্রখর রোদের ঝলকে কোন প্রজাতির পাখি, তা শনাক্ত করা গেল না। পটাপট দুটো ছবি তুললাম। মনে হলো, যেন কাঠশালিক। বাসায় ফিরে সেদিন আর পিসিতে আপলোড করা হয়নি। দিন পনেরো পর যখন আপলোড করলাম, তখন ছবি দুটো নজরে এল। না, এগুলো কাঠশালিক নয়। ভালো করে পরীক্ষা করতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠল। এটি একনজর দেখার জন্য কত না ঘুরেছি; আর এখন সে আমার পিসিতে।
এর পর থেকে প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এর খোঁজ করতে লাগলাম। কিছুদিন পর এক পড়ন্ত বিকেলে অনুষদের সামনের আমলকী বাগানে ওর দেখা পেলাম। বুলবুলির তাড়া খেয়ে পালানোর সময় গ্র্যাজুয়েট ফ্যাকাল্টির সামনে আরেক দিন ও আমার ক্যামেরায় ধরা পড়ল। সাধারণত ছোট দলে ঘুরে বেড়ালেও আমি ওকে সব সময় একাই দেখেছি।
এতক্ষণ যার কথা বললাম, সে হলো শঙ্খশালিক বা বামনশালিক (Brahminy starling or mynah)। এ দেশের বিভিন্ন প্রজাতির শালিকের মধ্যে এরা অত্যন্ত দুর্লভ। মাথার ওপর ছোট্ট কালো টুপি ও ঝুঁটি থাকায় কালো-মাথা ময়না (Black-headed mynah) নামেও পরিচিত। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কোনো কোনো এলাকার গ্রামীণ পরিবেশে কদাচ দেখা মেলে। শঙ্খশালিকের বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus pagodarum।
প্রথম দর্শনে কাঠশালিক মনে হলেও মাথার কালো পালক দেখে সহজেই কাঠশালিক থেকে আলাদা করা যায়। এরা লম্বায় ২০-২২ সেন্টিমিটার। ওজনে ৪০-৫৪ গ্রাম। মাথার পালক ফোলালে ঝুঁটিটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্ত্রীর তুলনায় পুরুষের মাথার টুপি ও ঝুঁটি বড়। এদের চিবুক, ঘাড়, গলা, বুক ও পেট লালচে কমলা রঙের। পিঠ, ডানা ও লেজ ধূসর। লেজের আগা ও নিচটা সাদাটে। ঠোঁটের আগা হলুদ ও গোড়া নীলচে। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে পা, পায়ের নালা ও নখ হলুদ। বাচ্চাদের মাথার পালক ধূসর।
শঙ্খশালিক চষা জমি, ঘাসবন, ফলের বাগান, পাতাঝরা বন ও ঝোপ-জঙ্গলময় এলাকা পছন্দ করে। বিচরণ-উপযোগী জায়গা থাকলেও রহস্যজনক কারণে এ দেশে খুব অল্প সংখ্যায় দেখা মেলে। প্রধানত চার-সাতটির ছোট দলে বিচরণ করলেও এ দেশে সাধারণত একাকী বা জোড়ায় চরতে দেখা যায়। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এরা মানুষের আবাস এলাকা, বাগান, জমিতে ঘোরাফেরা করলেও মানুষের খুব কাছাকাছি আসে না। শঙ্খশালিক পাকা ফল, ফুলের নির্যাস ও কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। এরা মাটিতে ও ফুল-ফলের গাছে, এমনকি বিচরণরত গরু-মহিষের পেছন পেছন হেঁটে হেঁটে খাবার জোগাড় করে। শঙ্খশালিক ‘গু-উ-উইর-কুরতি-কেউই-আহ’ স্বরে ডাকে।
মে থেকে আগস্ট এদের প্রজননকাল। এরা ১২-২৫ ফুট উচ্চতার মধ্যে জুতসই কোনো গাছের খোঁড়লে বাসা বাঁধে। স্ত্রী শঙ্খশালিক তিন-চারটি হালকা নীল বা নীলচে সবুজ রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ মিলে ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ১২-১৪ দিনে।