শুক্রবার, ১০ জুন, ২০১৬

বিজনেস প্লান তৈরী করবেন কিভাবে

বিজনেস প্লান তৈরী করবেন কিভাবে..?

BUSINESS-PLANব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হলে কার্যকরী একটি ব্যবসার প্লান করতে হবে। বলা হয় পরিকল্পনা কোন কাজের অর্ধেক। আর তাই সঠিক ও সুন্দর ভাবে প্লানিং তৈরী করা সম্ভব হলে ব্যবসায়ে সফলতা পাওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
উদ্যোক্তার খোঁজে ডটকম আজ আপনাদের জন্য ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বা প্লানিং সম্পর্কে একটি সুষ্পষ্ট ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
ব্যবসা কোন শর্টকাট ব্যবস্থা নয় যেখান থেকে রাতারাতি অনেক অর্থের মালিক হবেন। সুতরাং ব্যবসায়িক প্রোজেক্ট পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ বছরের একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। আপনার ব্যবসার উদ্দেশ্য এবং বিস্তারিত বর্ননা থাকতে হবে অর্থাৎ আপনি কেন, কোন উদ্দেশ্যে, কি লক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করবেন তার বিস্তারিত জানা থাকতে হবে। সেই সাথে কেন ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য সফল করবেন এবং কিভাবে করবেন তাও সুর্নিদিষ্ট করতে হবে।
শুরুতেই আপনি নিজের কাছে প্রশ্ন করুন আপনি কে। আপনার কার্যক্ষমতা কতটুকু? কে কে আপনার ব্যবসার আংশীদার হতে পারে? আপনি বর্তমানে কি করেন? আপনি কি সবার থেকে আলাদা? যদি আলাদা হন তাহলে কেন আপনি অন্য সবার থেকে আলাদা? খুজে বের করার চেষ্টা করুন অন্যের থেকে বাড়তি কি যোগ্যতা আছে আপনার সেই সাথে খুঁজুন সীমাবদ্ধতা।
আপনি যে ব্যবসা করবেন বলে ভাবছেন কিংবা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অন্য কারা তা বর্তমানে করেছে? যে ব্যবসায় করবেন সে ব্যবসার পরিধি বা মার্কেট সাইজ কতটুকু হবে? এই ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আপনার জন্য কি কি সুযোগ অপেক্ষা করছে সেই সাথে আপনার জন্য কি কি হুমকি অপেক্ষা করছে তাও আপনাকে খুজে বের করতে হবে। জানতে হবে বাজারে কারা আপনার প্রতিযোগী। আপনার প্রতিযোগীদের কৌশল ও তাদের আচরন সম্পর্কেও পুর্ন ধারনা নিতে হবে।
আপনি যে পন্য বা সেবাটি নিয়ে ব্যবসায় শুরু করবেন তার সাম্ভাব্য ক্রতা চিহিৃত করার সাথে সাথে তাদের চাহিদা পর্যালোচনা করতে হবে আপনাকে। এক্ষেত্রে আপনার সার্মথ্য এবং দুর্বলতা সমূহ কি কি তা জানার চেষ্টা করুন। কারন সে অনুযায়ী আপনাকে পরিকল্পনার গতিপথ নির্ধারন করতে হবে। আপনার প্রতিযোগীদের থেকে আপনার টার্গেট মার্কেট কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ তা জানার চেষ্টা করুন। কারন সে অনুযায়ী আপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।
c4bc66d7c0da4431ff562390490850c7আপনাকে সুষ্পষ্ট ভাবে ধারনা রাখতে হবে মার্কেট শেয়ার বা মার্কেটের কত অংশ আপনি দখল করবেন। মার্কেটে কি ধরনের নিয়ন্ত্রক বিদ্যমান আছে? এবং তারা কিভাবে অন্যান্যদের নিয়ন্ত্রন করছে। আপনি কি বিক্রি করবেন? অর্থাৎ আপনি যে পন্য বা সেবা বিক্রি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি কি? সেই সাথে যে পন্য বা সেবায় আপনি বিক্রয় করবেন তর নির্দিষ্ট লভ্যংশের হার কত? আপনার মেধা সম্পত্তি কতটুকু?
এ পর্যায়ে এসে আপনার ব্যবসা সম্পর্কিত রিসার্চ এবং উন্নয়ন কার্যক্রম কি কি হবে তা সুস্পষ্ট ভাবে ব্যখ্যা করতে হবে। আপনার ব্যবসায়কে পরিচিত করার জন্য মার্কেটিং পরিকল্পনা কি? ব্যবসায়ের টার্গেট মার্কেটে অনুপ্রবেশের কৌশল কি? ক্রেতা বা টার্গেট মার্কেটে আপনার যোগাযোগ কৌশল কি? বিপনন কৌশল কি? মূল্য নির্ধারন কৌশল কি? পন্য বা সেবার বিক্রয় কৌশল কি? সেই সাথে এ্যাকশন প্লান বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা দরকার তা সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহিৃত করতে হবে।
কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের কাঠামো কি হবে তার পরিকল্পনা করতে হবে আপনাকে। কর্মী সংগ্রহ কৌশল কি হবে? আপনার কর্মী বাহিনীকে দক্ষ করার কৌশল কি? নতুন কর্মীর ক্ষেত্রে যোগ্যতা উন্নয়ন পরিকল্পনা কি? আপনার পন্য তৈরীর জন্য যা যা দরকার তার কতটুকু আছে? কোথা থেকে কিভাবে সংগ্রহ হবে? প্রজেক্ট ব্যয় কত হবে? কত সময় দরকার হবে? কত আয় হবে? কি পরিমান ঝুঁকি নিতে হবে? ঝুঁকি কমানোর জন্য কি ব্যবস্থা করা করা হবে? অর্থায়ন কিভাবে হবে? ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তর কিভাবে কাজ করবে? কিভাবে ম্যানেজ করবেন সবকিছু তা নির্দিষ্ট করতে হবে?
উপরের আলোচনার বিষয় সমুহ সুনির্দিষ্ট করে সংযুক্ত করে ব্যবসার প্লানিং বা পরিকল্পনা করতে পারলে ব্যবসায়ের সফলতার পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। সুন্দর একটি সাজানো গোছানো পথে হাঁটলে ব্যবসায়ের সমৃদ্ধিতো সময়ের ব্যাপার। আর তাই সুষ্ঠ পরিকল্পনা আপনাকে করতেই হবে।

মোটর গাড়ি মেরামত ব্যবসার আইডিয়া ও বিস্তারিত

মোটর গাড়ি মেরামত ব্যবসার আইডিয়া ও বিস্তারিত

ব্যবসা কোন নতুন ধারনা নয়। সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। কত ধরনের ব্যবসায় তো আছে। কিন্তু ব্যবসা শুরু করার জন্য সার্মথ্য আর জ্ঞানেরও দরকার আছে। আপনাদের জন্য উদ্যোক্তার খোঁজে ডটকম বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক আইডিয়া ও সে সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের জানাব একটি সার্ভিসিং বা মেরামত ব্যবসা সম্পর্কে।
মোটর গাড়ির সার্ভিসিং বা মেরামতের ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আমরা আজকের প্রচ্ছদটি সাজিয়েছি। মোটর গাড়ি সার্ভিসিং ব্যবসার জন্য আপনার সর্বপ্রথমে ব্যবসার স্থান নির্বাচন করতে হবে। সাধারনত শহর অঞ্চল এ ধরনের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত স্থান। কারন অধিকাংশ ধনী মানুষেরা শহরাঞ্চলে বসবাস করে। বাসষ্টান্ড বা পেট্রোল পাম্পের আশপাশ এ ব্যবসার জন্য উপযুক্ত স্থান। এছাড়াও যেকোন জনবহুল গাড়ি পার্কিং এলাকা কিংবা হাইওয়ে রাস্তার পাশেও এ ব্যবসার জায়গা নির্ধারন করা যেতে পারে।
মোটর গাড়ি বলতে আপনি মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মিনিবাস, বাস, ট্রাক ইত্যাদি গাড়ি মেরামতের জন্য নির্বাচন করতে পারেন। এ জাতীয় গাড়ির জন্য ইঞ্জিন ও বডির যাবতীয় কাজ সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে সবচেয়ে ভাল করতে পারবেন। আপনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হলে আপনার জন্য এ ব্যবসায়ের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন। আবার আপনি গাড়ি মেরামত না করতে পারলেও কাজ জানা লোক নিয়োগ করে এ ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন।
img_wholesale_epp4মোটরগাড়ি মেরামতের ব্যবসায়ের জন্য আপনাকে প্রাথমিক ভাবে ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানের সুন্দর একটি নাম দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করার পর দোকান বা জায়গা ভাড়া নিতে হবে। অবশ্যই ভাড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট চুক্তিপত্র করে নিতে ভুল করবেন না। দোকানের সামনে খোলা জায়গা পেলে ভাল হয়। তাতে করে আপনি সেখানে গাড়ি রেখে কাজ করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন।
দোকান ভাড়া নেওয়া হয়ে গেলে আপনি এবার গাড়ি মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে নিন। আপনার বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যয় হবে এ যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে। এবার কাজের জন্য লোকবল নিয়োগ দিন। এক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দিন। কারন ব্যবসায়ের শুরুতে কম অভিজ্ঞ কিংবা অনভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দিলে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আপনি কাজ জানলেও আপনার পাশাপাশি অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দিবেন কারনে আপনি কোন কারনে সমস্যায় পড়লে যাতে সমাধান পাওয়া সম্ভব হয়।
সাধারনত ইঞ্জিনের ত্রুটি কিংবা বডি বা ইঞ্জিনের বাইরের আবরনের ত্রুটি ও রংয়ের কাজ মোটর গাড়ির মালিকেরা করিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় আপনাকে কাজের জন্য গাড়ির মালিকদের জানানোর প্রয়োজন পড়বে। নতুন অবস্থায় ভাল সেবা দিতে পারলে স্থায়ী সেবা গ্রাহক পেয়ে যাবেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ও সেবা সম্পর্কে প্রচার অব্যাহত রাখুন। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক যাদের একাধিক গাড়ি আছে তাদেরকে আপনার গ্রাহকে পরিনত করার জন্য মার্কেটিং কৌশল গ্রহন করুন এবং সুসম্পর্ক তৈরী করুন। আপনার দোকানের বাইরেও সেবা প্রদান করার জন্য পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজনে সেবা গ্রাহীতার বাড়িতে অথবা অফিসে উপস্থিত হয়ে সেবা প্রদান করুন।
মোটর গাড়ি মেরামত ব্যবসায় প্রাথমিক ভাবে দুই থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করতে পারবেন। খুবই সল্প পরিসরে শুরু করতে চাইলে এক লক্ষ বা তার কম পরিমান টাকায়ও শুরু করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে মেরামতের কাজ জানতে হবে। এ ব্যবসায়ে প্রতিযোগীতা মোকাবেলা করার জন্য আপনাকে কৌশলী হতে হবে। গ্রাহকের সাথে সুসম্পর্ক ও সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদান নিশ্চিত করে ব্যবসায়ের সফলতা অর্জন করতে পারবেন খুব সহজেই।
একটু হিসেব করে চলতে পারলে এ ব্যবসায় থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারবেন। আর ব্যবসার সাথে বিশ্বাস ও সততার যোগসুত্র স্থাপন করতে পারলে আপনার সুনাম ও বৃদ্ধি পেতে থাকবে দিন দিন। সল্প পরিমান ঝুঁকি মোকাবেলা করে এ ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবেন। সেই সাথে পরবর্তীতে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রয় করে আয় বাড়াতে পারবেন। লেগে থেকে পরিশ্রম করলে নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবেন

আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা কিভাবে তৈরি করবেন

businessplan আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা কিভাবে তৈরি করবেন ?


ব্যবসায় পরিকল্পনার অন্যতম প্রথম পদেক্ষেপ হচ্ছে আপনার অভিষ্ট বাজার নির্ধারণ এবং কেন ক্রেতা আপনার পণ্য ক্রয় করবে তা নির্ধারন করা।
উদাহরনস্বরুপ, যে বাজারে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা বিক্রি করবেন তা আপনার জন্য সর্বোত্তম কিনা? আপনার ব্যবসার সুযোগ-সুবিধাসমূহ এবং রীতিনীতিসমূহ স্বচ্ছ কিনা এবং সেগুলো কি ক্রেতা বা ভোক্তাদের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যর্পূন? যদি আপনি এই প্রশ্নগুলোর একটির ব্যাপারেও সন্দিহান থাকেন তবে একধাপ পিছিয়ে গিয়ে আপনার ব্যবসায় পরিকল্পনার কাঠামো পুর্নবিবেচনা করুন।
নিম্নোক্ত পরামর্শগুলো আপনার ব্যবসায়কে যেসব অফারসমূহ প্রদান করতে হবে তা বিশ্লেষন এবং এর জন্য সঠিক ও কাংঙ্খিত বাজার নির্ধারণ এবং নিজস্ব যথাযোগ্য মর্যাদা তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
নির্দিষ্ট করুন যা আপনাকে প্রদান করতে হবে
নিজেকে প্রশ্ন করুনঃ মূল পণ্য বা সেবার বাইরে আপনি সত্যিকার অর্থে কি বিক্রি করছেন? এই উদাহরনটি বিবেচনা করুনঃ আপনার শহরে বহু সংখ্যক রেস্তোরা রয়েছে যারা সবাই মৌলিক পণ্য- খাবার বিক্রি করছে। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই ভিন্ন চাহিদা তৈরি এবং ভিন্ন শ্রেনীর ক্রেতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জন করছে।
একটি হতে পারে ফাস্টফুড রেস্তোরা, সম্ভবতো অন্যটি সাদামাটা ইটালিয়ান কিচেনে পিৎজা বিক্রি করা রেস্তোরা এবং অন্য আর একটি হতে পারে সামুদ্রিক খাবারের বিশেষায়িত রেস্তোরা যা উড-গ্রিলড মেন্যুর জন্য বিখ্যাত।
এই সকল রেস্তোরাগুলোই খাবার বিক্রি করে, কিন্তু তারা ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা সম্পন্ন ক্রেতাদের কাছে তাদের ভিন্ন ভিন্ন খাবার (ক্রেতাদের নিজস্ব চাহিদানুযায়ী) বিক্রি করছে। প্রকৃতপক্ষে তারা যা বিক্রি করছে তা হলো পণ্য, মূল্য, পরিবেশ এবং ব্র্যান্ড অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ।
যখন একটি ব্যবসায় শুরু করছেন, নিশ্চিত হয়ে নিন যে কি আপনার ব্যবসায়কে অদ্বিতীয় কর তুলবে? আপনার পণ্য বা সেবাকে পরিপূর্নতা দিতে কি প্রয়োজন? কি কি প্রক্রিয়া এবং পার্থক্য সৃষ্টিকারী উপাদান আপনার ব্যবসায়কে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে সাহায্য করবে?
সকল ব্যবসায়ের সবজান্তা হবেন না- কৌশল শিখুন
আপনি কি বিক্রি করছেন তা স্বচ্ছভাবে নির্ধারন করা খুব গুরুত্বপূর্ন। আপনি সকল ব্যবসায়ের সবজান্তা হতে চাইবেন না কারন এতে ব্যবসায় উন্নয়নের উপর একটি খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। একটি ক্ষুদ্রতম ব্যবসায় হিসেবে আপনার পণ্য বা সেবাকে নিয়ন্ত্রনসাধ্য বাজারে যথাযথভাবে বিনস্ত্য করা প্রায়শই একটি সর্বোত্তম কৌশল বা নীতি হতে পারে। ছোট ছোট বিভাজন/অপারেশন পরবর্তীতে বিশেষায়িত পন্য বা সেবা অফার করতে পারে যা নির্দিষ্ট শ্রেনীর সম্ভাব্য ক্রেতাদের নিকট আকর্ষণীয় হবে।
আপনার ব্যবসার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করুন
আপনার ব্যবসার জন্য যথাযোগ্য স্থান নির্বাচন করা ব্যবসায়ের সফলতার জন্য অত্যাবশকীয়। প্রায়শই ব্যবসার মালিকরা তাদের নিজস্ব ব্যবসায়িক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে স্হান নির্বাচন করতে পারেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ন ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে বাজার পর্যালোচনা করে স্থান নির্বাচন করা হলে তা আরো বেশি ফলপ্রসু হতে পারে। আর এতে গুরুত্বপূর্ন ক্রেতাদের অজানা প্রয়োজনগুলো উন্মোচিত হয়। আপনার গবেষনা প্রক্রিয়াতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো চিহ্নিত করুনঃ
  • কোন কোন এলাকায় আপনার প্রতিযোগীরা ইতিমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত
  • কোন এলাকাসমূহ আপনার প্রতিযোগীদের দ্বারা অবহেলিত
  • আপনার ব্যবসার জন্য সম্ভাব্য সুযোগ সুবিধাসমূহ
কোম্পানীর বর্ণনা
ব্যবসায় পরিকল্পনার এই অধ্যায়টি আপনার ব্যবসায়ের সকল উপাদানগুলোর উপর একটি উচ্চ পর্যায়ের পুনর্বিবেচনার সুযোগ প্রদান করবে। ইহা একটি বর্ধিত এলিভেটর পিচ এর সমগোত্রীয় যা পাঠকদের এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদেরকে দ্রুত তাদের ব্যবসায়িক লক্ষ্য এবং এর অনন্য বিবৃতি বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার কোম্পানীর বর্ণনায় যা অন্তভুক্ত করতে হবে
  • আপনার ব্যবসায়ের প্রকৃতি বর্ণনা করুন এবং বাজারের যেসকল চাহিদাসমূহ মেটানোর চেষ্টা করছেন তার একটি তালিকা তৈরি করুন।
  • ব্যাখা করুন কিভাবে আপনার পণ্য বা সেবা এসব চাহিদাসমূহ মেটাবে।
  • আপনার কোম্পানী যেসকল নির্দিষ্ট ভোক্তা, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়কে সেবা প্রদান করছে এবং করবে তাদের একটি তালিকা তৈরি করুন।
  • প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাসমূহ বর্ণনা করুন যা আপনার প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করবে বলে আপনি বিশ্বাস করেন। যেমন- আপনার অবস্থান, অভিজ্ঞ কর্মিবৃন্দ, দক্ষ কার্যবিধি অথবা সামর্থ্য যা আপনার ক্রেতাদের কাছে আপনার মূল্যায়ন এনে দেবে।
বাজার বিশ্লেষন
আপনার ব্যবসায়ের পরিকল্পনায় বাজার বিশ্লেষন অধ্যায়টি আপনার যেকোনো গবেষনালব্ধ বিষয় এবং সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আপনার শিল্প এবং বাজার সংক্রান্ত জ্ঞান বৃদ্ধি করবে।
আপনার বাজার বিশ্লেষনে কি বিষয়সমূহ সংযুক্ত করতে হবে
শিল্পেরবর্ণনা এবং আউটলুক- বতর্মান আয়তন এবং ঐতিহাসিক বৃদ্ধির হার এর পাশাপাশি গতিধারা এবং বৈশিষ্ট্যসহ আপনার শিল্পকে বর্ণনা করুন। যেমন- জীবনচক্রের স্তর, পরিকল্পিত উৎপাদনহার ইত্যাদি। পরবর্তীতে, আপনার শিল্পের গুরুত্বর্পূন ক্রেতাদের তালিকা তৈরি করুন।
আপনার ব্যবসায়ের অভিষ্ট বাজার সর্ম্পকে তথ্য- আপনার ব্যবসায়ের অভিষ্ট বাজারকে একটি নিয়ন্ত্রনসাধ্য আকারে সংকুচিত করুন। অনেক ব্যবসায়-ই অসংখ্য অভিষ্ট বাজারে আবেদন তৈরি করতে গিযে ভুল করে। গবেষনা করুন এবং বাজার সম্পর্কে নিম্নোক্ত তথ্যসমূহ সংযুক্ত করুন।
পার্থক্যসৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্যসমূহ- আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের জরুরী চাহিদসমূহ কি? সেগুলো কি পূরণ করা যাচ্ছে? ঐ শ্রেনীর সংখ্যাতত্ত্বগুলো কি এবং তারা কোথায় বাস করে? আপনার ব্যবসায়কে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো ঋতুভিত্তিক অথবা চক্রাকার ক্রয়ের প্রবনতা সেখানে রয়েছে কিনা?
প্রাথমিক অভিষ্ট বাজারের আয়তন- আপনার বাজারের আয়তনের ব্যাপারে একটু বিস্তারিত বলতে গেলে যা বুঝায়, আপনার শিল্প থেকে বাজার বার্ষিক কি পরিমাণ পন্য বা সেবা ক্রয় করে থাকে তার কি তথ্য আপনি অর্ন্তভুক্ত করতে পেরেছেন? এই শ্রেনীর জন্য ভবিষৎ বাজার প্রবৃদ্ধি কি হবে?
বাজারের কতটুকু অংশ আপনি অর্জন করতে পারবেন?- নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার মধ্যে বাজারের শতকরা কতটুকু অংশ এবং ক্রেতার সংখ্যা আপনি অর্জন করতে পারবেন বলে আশা রাখেন? আপনার গণনার পক্ষে যুক্তি প্রর্দশন করুন।
মূল্য নির্ধারণ এবং মোট প্রান্তিক লক্ষসমূহ- মূল্য নির্ধারনী কাঠামো, মোট প্রান্তিক স্তর এবং মূল্য হ্রাসের পরিকল্পনা যা আপনি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা নির্দিষ্ট করুন।
যখন আপনাকে কোনো বাজার এর উপর পরীক্ষা বা গবেষনা সম্পন্ন করতে হবে এবং তথ্য সংযুক্ত করতে হবে তখন আপনি কেবল মাত্র এর ফলাফলের উপর গুরুত্ব দিবেন। এক্ষেত্রে অন্য সব বিস্তারিত বর্নণাগুলো পরিশিষ্ট অংশে সংযুক্ত করা উচিৎ।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণ- আপনার প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষন আপনার প্রতিযোগিতাকে প্রোডাক্ট লাইন অথবা সেবা এবং বাজার বিভাজনের মাধ্যমে চিহ্নিত করা উচিৎ। প্রতিযোগিতামূলক চিত্রের নিন্মোক্ত বৈশিষ্টসমূহ নিরুপন করুনঃ
  • বাজার বিভাজন
  • সবলতা এবং দূর্বলতা
  • আপনার প্রতিযোগীর তুলনায় আপনার অভিষ্ট বাজার কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
  • বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো বাধা আছে কি যা আপনাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে?
  • বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে আপনার “উইন্ডো অব অপরচ্যুনিটি” কি?
  • সেখানে কি কোনো পরোক্ষ বা দ্বিতীয় কোনো প্রতিযোগী রয়েছে যা আপনার সাফল্যকে প্রভাবিত করতে পারে?
  • বাজারে কি ধরনের বাধা রয়েছে (যেমন- পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি, উচ্চ বিনিয়োগ ব্যয়, মানসম্মত কর্মীর অভাব)?
আইনগত সীমাবদ্ধতাসমূহ- কোনো ক্রেতার বা সরকারী আইনগত শর্ত যা আপনার ব্যবসায়কে প্রভাবিত করছে এবং কিভাবে আপনি তাতে সম্মত হবেন তা অর্ন্তভুক্ত করুন। এছাড়াও আপনার ব্যবসায়ের উপর যেকোনো ব্যবহারযোগ্য এবং সম্মত্তি প্রক্রিয়ায় মূল্য প্রভাব উল্লেখ করুন।
সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনা
সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনার এই অংশে অন্তর্ভুক্ত করতে হবেঃ আপনার কোম্পানীর সাংগঠনিক কাঠামো, কোম্পানীর মালিকানার বিস্তারিত বিবরন, ব্যবস্থাপনা দলের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত এবং পরিচালকমন্ডলীদের যোগ্যতার বিবরন।
এছাড়াও আপনার ব্যবসায়ে কে কি করবে? তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি এবং কেন আপনি তাদেরকে আপনার ব্যবসায়ে বোর্ডসদস্য হিসেবে অথবা চাকুরিজীবি হিসেবে নিয়ে এসেছেন? তাদের দায়িত্বসমূহ কি? দু-একজনের কাছে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে কিন্তু যে ব্যক্তি আপনার ব্যবসায় পরিকল্পনা পড়ছে সে জানতেই চাইতে পারে কে দায়িত্বরত আছে?
সুতরাং তাদেরকে বলুন। প্রত্যেক বিভাগের বর্ননা এবং তাদের কার্যাবলীর বিস্তারিত বর্ননা দিন।
এই বিভাগে আপনার পরিচালনা পর্ষদে কারা আছেন (যদি আপনার কোনো উপদেষ্টা পর্ষদ থাকে) এবং তাদেরকে আপনি এখানে রাখার ব্যাপারে কেন আগ্রহী তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ। কি ধরনের বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য সুবিধাদি আপনার কমকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য রেখেছেন? কি ধরনের উৎসাহমূলক ব্যবস্থা রেখেছেন? পদোন্নতিরপদ্ধতি কি হবে? আপনার পাঠকগনকে পুনঃনিশ্চিত করুন যে আপনার স্টাফরা কোম্পানীর জন্য তাদের পদবী থেকেও অনেক বেশী মূল্যবান।
সাংগঠনিক কাঠামো
সাংগঠনিক চার্ট এর সাথে বিস্তারিত বর্ণনা করা কোম্পানীর কাঠামোগত চিত্র তুলে ধরার একটি সহজ অথচ কার্যকরী পদ্ধতি। এটা প্রমাণ করবে যে, কোন কিছু আপনি সুযোগের অপেক্ষায় ফেলে রাখেননি, আপনার কোম্পানীতে কে কি করবে এবং কে সকল কাজকর্মের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে কর্মরত থাকবেন সেটা আপনি সঠিকভবেই ঠিক করেছেন। কোন কিছুতেই ফাকফোকর থাকবেনা এবং কোনো কিছুই তিন বা চার বার করা হবেনা। এটা একজন সম্ভাব্য উদ্যোক্তা অথবা চাকুরীজীবির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।
মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য
এ অধ্যায়ে আইনি কাঠামোর সাথে সাথে আপনার ব্যবসায়ের উত্তরসূরী মালিকানার তথ্যও সংযুক্ত করা উচিৎ। আপনি কি আপনার ব্যবসা নিগমবদ্ধ/সমসংস্থাভুক্ত করিয়াছেন? যদি করে থাকেন, তবে এটা কি সি অথবা এস করপোরেশন? অথবা সম্ভবতো আপনি কারো সাথে অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করেছেন। যদি তাই হয়, এটা কি সাধারন অথবা লিমিটেড অংশীদারি ব্যবসায়? অথবা হয়তো আপনিই এর একমাত্র সত্ত্বাধিকারী।
নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ন মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যগুলো আপনার ব্যবসায় পরিকল্পনার সাথে অর্ন্তুভুক্ত করা উচিৎঃ
  • মালিকদের নাম
  • শতকরা মালিকানার পরিমাণ
  • কোম্পানীর সাথে সম্পৃক্ততার সীমারেখা
  • মালিকানার ধরন (সাধারন স্টক, প্রিফারেড স্টক, সাধারন অংশীদার, সীমাবদ্ধ অংশীদার)
  • অপরিশোধিত সমতুল্য ইক্যুইটি (অর্থাৎ, অপশনস, ওয়ারেন্টস, পরিবর্তনীয় ঋণ)
  • সাধারন স্টক (অর্থাৎ অনুমোদিত অথবা জারিকৃত/ইস্যুকৃত)
  • ব্যবস্থাপনার প্রোফাইল
  • বিশেষজ্ঞগন একমত যে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানীর সফলতার অন্যতম একটি শক্তিশালী উপাদান হলো সক্ষমতা এবং ঐ কোম্পানীর মালিক অথবা ব্যবস্থাপনা দলের ট্রেক রেকর্ড বা কর্মপন্থা, সুতরাং আপনার পাঠকদের আপনার কোম্পানীর গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি এবং তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সর্ম্পকে জানতে দিন। এবং এই গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত তথ্যসংবলিত জীবনবৃত্তান্ত আপনার পাঠকদের নিকট সরবরাহ করুনঃ
  • নাম
  • পদমর্যাদা (প্রাথমিক দায়িত্বসমূহসহ পদমর্যাদার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা অর্ন্তভুক্ত করুন)
  • প্রাথমিক কর্তৃত্ব এবং দায়িত্বসমূহ
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা
  • অনন্য অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাসমূহ
  • পূববর্তী চাকুরির বর্ণনা
  • বিশেষ দক্ষতাসমূহ
  • পূর্ব কর্মপন্থার ইতিবৃত্ত
  • শিল্প স্বীকৃতি
  • সামাজিক সম্পৃক্ততা
  • কোম্পানীতে চাকুরির সময়কাল
  • বেতন কাঠামো এবং স্তর (নিশ্চিত হয়ে নিন এগুলো যেন অবশ্যই খুব কম বা বেশি না হয়)
  • নিশ্চিত হউন যে অর্জনগুলো পরিমাপ করা হয়েছে (যেমন- দশজন সদস্য বিশিষ্ট একটি বিক্রয় দল গঠন করা হয়েছে, পনের সদস্য বিশিষ্ট একটি বিভাগ গঠন করা হয়েছে, প্রথম ৬ মাসের মধ্যে ১৫% আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রত্যেক বছরে ২টি করে খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র বেড়েছে, কাস্টমার সার্ভিসের উন্নয়ন হয়েছে এবং এতে কাস্টমার সংখ্যা ৬০% থেকে ৯০% হারে বেড়েছে)। আপনার আশেপাশের লোকজন কিভাবে আপনার নিজের দক্ষতার প্রশংসা করছে তাও তুলে ধরুন। আর যদি আপনি মাত্র শুরু করে থাকেন, তবে প্রত্যেকের অসাধারন অভিজ্ঞতা কিভাবে আপনার ব্যবসার সাফল্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে তা তুলে ধরুন।
পরিচালক মন্ডলীদের যোগ্যতা
একটি অবৈতনিক উপদেষ্টামন্ডলীর প্রধান সুবিধা হলো এটা কোম্পানীর জন্য যে বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে পারে তা আপনার কোম্পানী অন্য কোথা থেকে সরবরাহ করতে পারবেনা। একটি সুপরিচিত, সফল ব্যবসায়ের মালিকগন বা ব্যবস্থাপকগন এর তালিকা আপনার কোম্পানীর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ব্যবস্থাপনা দক্ষতার উপলদ্ধিকে বৃদ্ধি করতে সুদূর প্রসারী ফলাফল এনে দিতে পারে।
আপনার যদি পরিচালনা পর্ষদ থাকে, তবে আপনার ব্যবসায় পরিকল্পনার রুপরেখা উন্নয়নের সময় নিশ্চিতভাবে নিম্নোক্ত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করে নিন।
  • নামসমূহ
  • পরিচালনা পর্ষদে অবস্থান
  • কোম্পানীর সাথে সম্পৃক্ততার সীমারেখা
  • ব্যাকগ্রাউন্ড/ইতিবৃত্ত
  • কোম্পানীর সফলতার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক এবং ভবিষতব্য অবদান
সেবা বা পন্য সমূহ
আপনার ব্যবসায় পরিকল্পনার সাংগঠনিক এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অধ্যায়ের সমাপ্তির পর পরবর্তী ধাপ হলো বিদ্যমান ও সম্ভাব্য ক্রেতাদের প্রতি সুবিধাসমূহ গুরুত্বারোপ করে কোথায় আপনার পন্য অথবা সেবা’র বর্ণনা করবেন তা নির্ধারন করা। এক্ষেত্রে কেন আপনার পণ্যটি অভিষ্ট ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করবে তার উপর গুরুত্বারোপ করুন।
আপনার পণ্য বা সেবা’র এই অধ্যায়ে যা অর্ন্তভুক্ত করতে হবে
আপনার পণ্য বা সেবার বর্ণনা
আপনার পণ্য বা সেবার সুনির্দিষ্ট সুবিধাসমূহ ক্রেতাদের চাহিদার আলোকে সংযুক্ত করুন। ক্রেতাদের চাহিদা পূরনের জন্য আপনার পণ্য বা সেবার সক্ষমতা, যেকোনো অতিরিক্ত সুবিধা এবং পণ্যের বর্তমান উন্নয়নের ধারা (যেমন- ধারনা, মূলরুপ) ইত্যাদি বিষয়গুলো আপনার বর্ণনা করা উচিৎ।
আপনার পণ্যের জীবনচক্রের বা উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বর্ণনা
আপনার পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া কোথায় হচ্ছে এর পাশাপাশি যেসব উপাদান এই উৎপাদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এই তথ্যসমূহ নিশ্চিতভবে অর্ন্তভুক্ত করুন।
সুনাম
যদি আপনার বিদ্যমান, অমিমাংসিত অথবা কোনো প্রত্যাশিত কপিরাইট অথবা সত্ত্বাধিকার থেকে থাকে তাহলে তাদের একটি তালিকা তৈরি করুন। এছাড়াও পণ্যের যে কোনো একটি প্রধান দিক যা বাণিজ্যিক গোপণীয়তা হিসেবে স্বীকৃত তা প্রকাশ করুন। সবশেষে, বিদ্যমান আইন চুক্তি সমূহের সাথে যে কোনো তথ্য অর্ন্তভুক্ত করুন যেমন- গোপণীয়তা চুক্তি অথবা অপ্রতিদ্বন্দ্বিতা চুক্তি।
গবেষনা এবং উন্নয়নমূলক কার্যাবলী (আর এন্ড ডি)
কোনো গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যাদি যাতে আপনি অর্ন্তভুক্ত আছেন কিংবা ভবিষৎে অর্ন্তভুক্ত থাকার পরিকল্পনা করছেন তা আলোকপাত করুন। ভবিষৎ “আর এন্ড ডি” কার্যাবলী থেকে কতটুকু ফলাফল আপনি আশা করেন? শুধুমাত্র আপনার নিজের ব্যবসার “আর এন্ড ডি” সামর্থ্য নিয়েই বিশ্লেষন নয়, আপনার শিল্পের অন্যান্য সবার “আর এন্ড ডি” সামর্থ্য বিশ্লেষনও নিশ্চিত করুন।
আপনার বাজার বিশ্লেষন
একটি সফল ব্যবসায় পরিচালনা করার জন্য আপনাকে আপনার ক্রেতা, প্রতিযোগী এবং শিল্প সর্ম্পকে জানতে হবে। বাজার গবেষনা হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যা আপনাকে বাজারে কোন পণ্য বা সেবাগুলো চাহিদাপূর্ণ এবং কিভাবে পণ্য বা সেবাকে প্রতিযোগিতামূলক করা যায় তা বিশ্লেষন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বাজার গবেষনা আপনাকে মূল্যবান অর্ন্তদৃষ্টি সরবরাহ করে সাহায্য করতে পারেঃ
  • ব্যবসায়ের ঝুকি কমাতে
  • আপনার শিল্পের চলমান এবং আসন্ন সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করতে
  • বিক্রয় সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে
কিভাবে বাজার গবেষনা পরিচালনা করবেন
আপনার ব্যবসায় শুরু করার পূর্বে নিন্মোক্ত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে বাজার গবেষণার মৌলিক বিষয়গুলো বুঝুন।
১. বাজার এবং শিল্পের সরকারী উৎসের তথ্য চিহ্নিত করা
সরকার ব্যবসা, শিল্প এবং অর্থনৈতিক অবস্থা সর্ম্পকে একটি তথ্যভান্ডার সরবরাহ করে থাকে যা বাজার গবেষণায় সহায়ক হতে পারে। এই উৎসগুলো আপনাকে ক্রেতা এবং প্রতিযোগীদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য সরবরাহ করেঃ
  • আর্থিক সূচক
  • চাকরির পরিসংখ্যান
  • আয় এবং উপার্জন
২. বিশ্লেষনের অতিরিক্ত উৎস খুজে বের করা
বাণিজ্যিক দল, ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন, শিক্ষা প্রথিষ্ঠান এবং অন্যান্য তৃতীয় পক্ষসমূহ ব্যবসায়িক গতিধার সর্ম্পকে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষন এবং গবেষণা করে থাকে। আপনার অবস্থান এবং শিল্প সর্ম্পকে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য ইন্টারনেট এবং তথ্যপুঞ্জ ব্যবহার করুন।
৩. আন্তজার্তিক বাজারকে বুঝতে হবে
আজকের অর্থনীতি হচ্ছে একটি বৈশ্বিক বাজার। সুতরাং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিসমূহ বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা আপনার ব্যবসায়কে প্রভাবিত করবে।

জীবন বদলে নিতে এরকম একটি লেখাই যথেষ্ট


জীবন বদলে নিতে এরকম একটি লেখাই যথেষ্ট….


1660943_650704721699986_3927558007345883469_nসুশান্ত পালের এ লেখাটি আপনারা অনেকেই পড়ে থাকবেন। তারপরও বলছি আবার একবার পড়ুন। ধন্যবাদ সুশান্ত দাদা আপনার অসম্ভব প্রেরণাদায়ক এ লেখাটির জন্য।
২৭ বছর বয়সে যখন হন্যে হয়ে ব্যাংকে চাকরি খুঁজছেন, তখন আপনারই বয়েসি কেউ একজন সেই ব্যাংকেরই ম্যানেজার হয়ে বসে আছেন। আপনার ক্যারিয়ার যখন শুরুই হয়নি, তখন কেউ কেউ নিজের টাকায় কেনা দামি গাড়ি হাঁকিয়ে আপনার সামনে দিয়েই চলে যাচ্ছে। কর্পোরেটে যে সবসময় চেহারা দেখে প্রমোশন দেয়, তা নয়। দিন বদলাচ্ছে, কনসেপ্টগুলো বদলে যাচ্ছে। শুধু বেতন পাওয়ার জন্য কাজ করে গেলে শুধু বেতনই পাবেন। কথা হল, কেন এমন হয়? সবচাইতে ভালটি সবচাইতে ভালভাবে করে কীভাবে? কিছু ব্যাপার এক্ষেত্রে কাজ করে। দুএকটি বলছি।
প্রথমেই আসে পরিশ্রমের ব্যাপারটা। যারা আপনার চাইতে এগিয়ে, তারা আপনার চাইতে বেশি পরিশ্রমী। এটা মেনে নিন। ঘুমানোর আনন্দ আর ভোর দেখার আনন্দ একসাথে পাওয়া যায় না। শুধু পরিশ্রম করলেই সব হয় না। তা-ই যদি হত, তবে গাধা হত বনের রাজা। শুধু পরিশ্রম করা নয়, এর পুরস্কার পাওয়াটাই বড় কথা। অনলি ইওর রেজাল্টস্ আর রিওয়ার্ডেড, নট ইওর এফর্টস্। আপনি এক্সট্রা আওয়ার না খাটলে এক্সট্রা মাইল এগিয়ে থাকবেন কীভাবে? সবার দিনই তো ২৪ ঘণ্টায়। আমার বন্ধুকে দেখেছি, অন্যরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সে রাত জেগে আউটসোর্সিং করে। ও রাত জাগার সুবিধা তো পাবেই! আপনি বাড়তি কী করলেন, সেটাই ঠিক করে দেবে, আপনি বাড়তি কী পাবেন।
আপনি ভিন্নকিছু করতে না পারলে আপনি ভিন্নকিছু পাবেন না। বিল গেটস রাতারাতি বিল গেটস হননি। শুধু ভার্সিটি ড্রপআউট হলেই স্টিভ জবস কিংবা জুকারবার্গ হওয়া যায় না। আমার মত অনার্সে ২.৭৪ সিজিপিএ পেলেই বিসিএস আর আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে যাওয়া যাবে না। আউটলায়ার্স বইটি পড়ে দেখুন। বড় মানুষের বড় প্রস্তুতি থাকে। নজরুলের প্রবন্ধগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন, উনি কতটা স্বশিক্ষিত ছিলেন। শুধু রুটির দোকানে চাকরিতেই নজরুল হয় না। কিংবা স্কুলকলেজে না গেলেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাওয়া যাবে না। সবাই তো বই বাঁধাইয়ের দোকানে চাকরি করে মাইকেল ফ্যারাডে হতে পারে না, বেশিরভাগই তো সারাজীবন বই বাঁধাই করেই কাটিয়ে দেয়।
স্টুডেন্টলাইফে কে কী বলল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আমাদের ব্যাচে যে ছেলেটা প্রোগ্রামিং করতেই পারত না, সে এখন একটা সফটওয়্যার ফার্মের মালিক। যাকে নিয়ে কেউ কোনদিন স্বপ্ন দেখেনি, সে এখন হাজার হাজার মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়। ক্যারিয়ার নিয়ে যার তেমন কোন ভাবনা ছিল না, সে সবার আগে পিএইচডি করতে আমেরিকায় গেছে। সব পরীক্ষায় মহাউত্‍সাহে ফেল করা ছেলেটি এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। আপনি কী পারেন, কী পারেন না, এটা অন্যকাউকে ঠিক করে দিতে দেবেন না। পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাননি? প্রাইভেটে পড়ছেন? কিংবা ন্যাশনাল ভার্সিটিতে? সবাই বলছে, আপনার লাইফটা শেষ? আমি বলি, আরে! আপনার লাইফ তো এখনো শুরুই হয়নি। আপনি কতদূর যাবেন, এটা ঠিক করে দেয়ার অন্যরা কে? লাইফটা কি ওদের নাকি? আপনাকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে কেন? কিংবা ডাক্তারি পাস করে কেন ডাক্তারিই করতে হবে?
আমার পরিচিত এক ডাক্তার ফটোগ্রাফি করে মাসে আয় করে ৬-৭ লাখ টাকা। যেখানেই পড়াশোনা করেন না কেন, আপনার এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করে আপনার নিজের উপর। শুধু ‘ওহ শিট’, ‘সরি বেবি’, ‘চ্যাটিংডেটিং’ দিয়ে জীবন চলবে না। আপনি যার উপর ডিপেনডেন্ট, তাকে বাদ দিয়ে নিজের অবস্থানটা কল্পনা করে দেখুন। যে গাড়িটা করে ভার্সিটিতে আসেন, ঘোরাঘুরি করেন, সেটি কি আপনার নিজের টাকায় কেনা? ওটা নিয়ে ভাব দেখান কোন আক্কেলে? একদিন আপনাকে পৃথিবীর পথে নামতে হবে। তখন আপনাকে যা যা করতে হবে, সেসব কাজ এখনই করা শুরু করুন। জীবনে বড় হতে হলে কিছু ভাল বই পড়তে হয়, কিছু ভাল মুভি দেখতে হয়, কিছু ভাল মিউজিক শুনতে হয়, কিছু ভাল জায়গায় ঘুরতে হয়, কিছু ভাল মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, কিছু ভাল কাজ করতে হয়।
জীবনটা শুধু হাহাহিহি করে কাটিয়ে দেয়ার জন্য নয়। একদিন যখন জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, তখন দেখবেন, পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে। স্কিল ডেভেলাপমেন্টের জন্য সময় দিতে হয়। এসব একদিনে কিংবা রাতারাতি হয় না। “আপনার মত করে লিখতে হলে আমাকে কী করতে হবে? আমি আপনার মত রেজাল্ট করতে চাই। আমাকে কী করতে হবে?” এটা আমি প্রায়ই শুনি। আমি বলি, “অসম্ভব পরিশ্রম করতে হবে। নো শর্টকাটস্। সরি!” রিপ্লাই আসে, “কিন্তু পড়তে যে ভাল লাগে না। কী করা যায়?” এর উত্তরটা একটু ভিন্নভাবে দিই। আপনি যখন স্কুলকলেজে পড়তেন, তখন যে সময়ে আপনার ফার্স্ট বয় বন্ধুটি পড়ার টেবিলে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকত, সে সময়ে আপনি গার্লস স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। এখন সময় এসেছে, ও ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর আপনি পড়ার টেবিলে বসে থাকবেন। জীবনটাকে যে সময়ে চাবুক মারতে হয়, সে সময়ে জীবনটাকে উপভোগ করলে, যে সময়ে জীবনটাকে উপভোগ করার কথা, সে সময়ে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এটা মেনে নিন। মেনে নিতে না পারলে ঘুরে দাঁড়ান। এখনই সময়!
বড় হতে হলে বড় মানুষের সাথে মিশতে হয়, চলতে হয়, ওদের কথা শুনতে হয়। এক্ষেত্রে ভার্সিটিতে পড়ার সময় বন্ধু নির্বাচনটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সাবকনশাস মাইন্ড আপনাকে আপনার বন্ধুদের কাজ দ্বারা প্রভাবিত করে। আমরা নিজেদের অজ্ঞাতসারেই আমাদের চাইতে ইনফেরিয়র লোকজনের সাথে ওঠাবসা করি, কারণ তখন আমরা নিজেদেরকে সুপিরিয়র ভাবতে পারি। এ ব্যাপারটা সুইসাইডাল। আশেপাশে কাউকেই বড় হতে না দেখলে বড় হওয়ার ইচ্ছে জাগে না। আরেকটা ভুল অনেকে করেন। সেটি হল, ধনীঘরের সন্তানদের সাথে মিশে নিজেকে ধনী ভাবতে শুরু করা। মানুষ তার বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। উজাড় বনে তো শেয়ালই রাজা হয়। আপনি কী শেয়ালরাজা হতে চান, নাকি সিংহরাজা হতে চান, সেটি আগে ঠিক করুন।
বিনীত হতে জানাটা মস্ত বড় একটা আর্ট। যারা অনার্সে পড়ছেন, তাদের অনেকের মধ্যেই এটার অভাব রয়েছে। এখনো আপনার অহংকার করার মত কিছুই নেই, পৃথিবীর কাছে আপনি একজন নোবডি মাত্র। বিনয় ছাড়া শেখা যায় না। গুরুর কাছ থেকে শিখতে হয় গুরুর পায়ের কাছে বসে। আজকাল শিক্ষকরাও সম্মানিত হওয়ার চেষ্টা করেন না, স্টুডেন্টরাও সম্মান করতে ভুলে যাচ্ছে। আপনি মেনে নিন, আপনি ছোটো। এটাই আপনাকে এগিয়ে রাখবে। বড় মানুষকে অসম্মান করার মধ্যে কোন গৌরব নেই। নিজের প্রয়োজনেই মানুষকে সম্মান করুন।
সুশান্ত পাল
৩০ তম বিসিএস মেধা তালিকায় ১ম স্থান অধিকারী

সাফল্যের আকাশ ছুয়ে দেখতে চান, লেগে থাকুন অটুট লক্ষে


সাফল্যের আকাশ ছুয়ে দেখতে চান, লেগে থাকুন অটুট লক্ষে…


আমরা সবাই জীবনে সফলতার জন্য মুখিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের অনেকেরই নাই নির্দিষ্ট কোন লক্ষ। জীবনে কোন পর্যায়ে যেতে চাই, বড় হয়ে কি হতে চাই তা অধিকাংশ মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই বলতে পারে না। কারন তদের নির্দিষ্ট কোন লক্ষই নাই। আবার অনেককে পেয়েছি যারা তাদের লক্ষের সাথে কোন ভাবেই কম্প্রোমাইজ করতে রাজি না। তাদের একটাই চাওয়া যা কিছুর বিনিময়ে হোক তাকে লক্ষে পৌছাতে হবে।
আমাদের অনেকের লক্ষ স্থির আবার অনেকের দোদুল্যমান। একটু ঝড়ো বাতাসেই শুকনা পাতার মত উড়ে যায়। ছোট বেলায় জীবনের লক্ষ কখনও ঠিক করে দেওয়া হয় আবার কখনও বা সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে বলা হলেও থাকে কয়েকটি বেঁধে দেওয়া পছন্দ অপছন্দের বিষয়। ফলাফল যে কাজটি করতে ভাল লাগে না তার সাথেই উঠাবসা করতে হয়। কিছুদিন পর শুরু হয় সেখান থেকে ছুঁটে পালানোর চেষ্টা। আর জীবনের লক্ষের স্থান হয় বাংলা বইয়ের রচনা অধ্যায়ে।
ছোট বেলায় যখন যেটা ভাল লাগত সেটাই হতে মনে চাইত। কখন বা বিমান চালানোর ইচ্ছা হত, কখনও আবার ঝালমুড়িওয়ালা আবার কখনও বাসের ড্রাইভার আবার কখনও বন্দুক হাতে পুলিশ হয়ে চোর ধরার প্রচেষ্টা। পড়াশুনার শুরুতে প্রায়ই মনে হত শিক্ষক হব। এমন অজস্র হওয়ার ইচ্ছা থেকে আসলে যে কি হব সেটাই বুঝতে না পারাটা হয়ে দাড়িয়েছে প্রধান সমস্যা।
সাইন্স, আর্টস, কমার্সের বাইরে বের হয়ে আমরা কেন চিন্তা করতে পারছি না। আমাদের তো আরও অনেক কিছু হওয়ার আছে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও তো আরও পেশা আছে। আমাদের চিন্তা ভাবনার যতটুকু পেশার মধ্যেই আটকে থাকছে কেন। আমাদের চিন্তা শক্তির সবটুকু কাজে লাগিয়ে নিজের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে নিজের ভাল লাগার কাজকে কেন গ্রহন করতে পারছি না। হ্যা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারও দরকার আছে। তাই বলে যে সবাইকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য ছুটতে হবে সেটাও নয়।
লক্ষ নির্দিষ্ট করুন কি হতে চান। তারপর কাজ একটাই সেই লক্ষের পানে ছুটতে থাকুন। লক্ষে পৌছাতে হলে লেগে থাকার কোন বিকল্প নেই। আপনাকে খেলতে হলে ১২০ মিনিট খেলার মত দম নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ৯০ মিনিটে খেলা শেষ নাও হতে পারে। ১০-১৫ মিনিট খেলে মাঠ থেকে বিদায় নেয় তো ভীরুর দল। আরে জয় পরাজয় তো পরের ব্যাপার আগে তো মাঠে খেলুন। সেই সাথে পায়ে বল রাখার চেষ্টা করুন যাতে গোলের সাফল্য আপনার কাছ থেকেই আসে।
ছোট বেলা থেকে আমাদেরকে নিজের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। কারও সাথে কোন কিছুর শেয়ার করার বিষয়টি শেখানো হয়নি। যার ফলাফল স্যাররা যা শিখিয়েছে তার বাইরে কিছু শিখতেও পারিনি। আমাদের মা-বাবা ছোট বেলা থেকে শিখাচ্ছে স্কুলে সবার থেকে ভাল করতে হলে কাউকে কিছু দেখানো যাবে না। হোমওয়ার্ক বা নোট কাউকে দেয়া যাবে না। ও যদি তোমার নোট পেয়ে যায় তো তোমার থেকে পরীক্ষায় ভাল করবে। তোমাকে হতে হবে সবার থেকে আলাদা।
কিন্তু এই আলাদা কিছুই যে তাকে নেতিবাচক দিকে টেনে নিচ্ছে তা কি কখনও ভেবে দেখেছি। বড় হয়েও সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তার কর্মস্থলেও সে আলাদা হওয়ার চেষ্টায় থাকছে। কারও সাথে অফিসের কোন কাজের ব্যাপারেও শেয়ার করছে না। কোন কাজে প্রবলেমে পড়লেও তা নিজেই চেষ্টা করছে সমাধান করার। যা তার বস বা সহ কর্মীর সাথে শেয়ার করলে হয়ত সহজেই সমাধান করতে পারত। সেই সাথে নিজেকেও পরবর্তীতে চাকুরি হারানোর মতসমস্যায়ও পড়তে হত না।
পারিবারিক ভাবে জীবনের লক্ষ নির্দিষ্ট না করে দিয়ে তাকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ তার লক্ষ নিয়ে কাজ করার। যে যার ভাল লাগার বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারলে সাফল্য তার সুনিশ্চিত। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা যে ছেলেটি হয়ত তার গ্রামের বাজারের বাইরে আসে নি সেই কিনা ছুটে বেড়িয়েছে বিশ্বের বড় বড় শহর গুলোতে তার লক্ষের শেষ সীমানায় পৌছাতে। যে সুপারির পাতার খোলে চড়ে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখেছে সেই তার লক্ষে পৌছে আকাশ ছুয়েছে।
জীবনে সাফল্য পাওয়া অনেক কঠিন কিছু নয়। যারা সফল হয় তারাও আপনার মত একই কাজ করে কিন্তু লেগে থেকে। তাদের ঘাড়ের ওপর দুইটা মাথা নয় একটাই। লক্ষটাকে স্থির রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যান। সাফল্য আপনার গলায় মালা হয়ে ঝুলবে। জীবনে করেকটা বছর পরিশ্রম করে কাটালে যদি বাকীটা জীবন ভাল থাকা যায় তবে লক্ষ স্থির না করে অবহেলায় সময় কাটানোই বোকামী