বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

এই শীতে জয়েন্টে ব্যথা হলে

এই শীতে জয়েন্টে ব্যথা হলে...
ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন

এই শীতে জয়েন্টে ব্যথা হলে...
অ- অ অ+

শীতকালে জোড়া বা বাতের ব্যথা মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পায়। বয়স্ক লোকজন, বিশেষ করে যাঁরা আর্থ্রাইটিস, রিওমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ক্ষয় রোগে ভুগছেন, তাঁদের কষ্ট বহুলাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া পেশি, লিগামেন্ট, হাড় ও স্নায়ুর ব্যথা তীব্র হয়। তাই এ সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

কারণ
♦ শীতকালে স্বাভাবিক নড়াচড়া কম হয় এবং বায়ুর চাপ কম থাকে বলে মানুষের টিস্যুগুলো ফুলে যায়। ফলে জয়েন্ট বা জোড়া জমে যায়; তখন ব্যথার উদ্রেক করে।

♦ শীতের প্রকোপে রক্তনালির খিঁচুনি ও সংকোচন হলে জোড়া, পেশি ও হাড়ে রক্ত চলাচল আগের চেয়ে বেশ কমে যায়; তখন ব্যথা-বেদনা বেড়ে যায়।

♦ শীতে স্নায়ুর সহ্যক্ষমতা কম থাকে এবং অল্পতেই উত্তেজিত হয় বিধায় ব্যথার অনুভূতি বেড়ে যায়।

লক্ষণ
শীতকালে জয়েন্টগুলো, বিশেষ করে ঘাড়, কোমর ও হাঁটুতে ব্যথা বেশি বাড়ে। এ ছাড়া কটি, গোড়ালি, কাঁধ, কনুই ও কবজিতে ব্যথা হয়, জমে যায়। হাত সামনে-পেছনে নেওয়া ও হাত দিয়ে কিছু তোলাও কষ্টকর হয়। হাঁটু ও কোমর সোজা অবস্থা থেকে ভাঁজ করতে এবং বসতে-উঠতে ভীষণ অসুবিধা হয়।

চিকিৎসা
♦ কুসুম কুসুম গরম পানির সেঁক (ময়েস্ট হিট) আর্থ্রাইটিসের ব্যথার জন্য খুবই কার্যকর। এর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসের অন্যান্য ওষুধ সেবন করতে হবে।

♦ ব্যথানাশক জেল বা মলম দিয়ে হালকাভাবে জোড়ায় ম্যাসাজ করলে ব্যথা নিরাময় হয়।

♦ ব্যথা নিরাময়ে জয়েন্টে ইনজেকশন (স্টেরয়েড ও হায়ালুরোনিক এসিড) পুশেরও প্রয়োজন হয়।

প্রতিরোধে করণীয়
♦ যথেষ্ট গরম কাপড় পরিধান করে শীত থেকে হাড় জোড়াকে রক্ষা করতে হবে।

♦ এক অবস্থায় (বসা, দাঁড়ানো) আক্রান্ত জোড়াকে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না।

♦ সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা কম করতে হবে। প্রয়োজনে হাতে স্টিক, পায়ে কুশনযুক্ত জুতা এবং গোড়ালি, হাঁটু, কোমর, ঘাড়, কাঁধ, কনুই ও কবজিতে সাপোর্ট বা ব্রেচ ব্যবহার করতে হবে।

♦ হালকা ব্যায়াম জোড়া ব্যথা উপশমে বেশ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে শীতকালে কঠোর ব্যায়াম আক্রান্ত জোড়ায় রক্ত চলাচল কমিয়ে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। জোড়ার স্বাভাবিক নড়াচড়া এবং পেশি, টেনডন ও লিগামেন্টের নমনীয়তা জোড়াকে ব্যথামুক্ত রাখে।

♦ শীতকালে উপযুক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথার তীব্রতা কমে আসে। এ জন্য সতেজ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত। গাজর, শসা, মুলা ইত্যাদি সবজি ব্যথা সৃষ্টিকারী পদার্থকে শরীর থেকে সহজেই বের করে দেয়।

♦ ফলের রস সেবন জোড়াকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

♦ সকালে খালি পেটে রসুন খেলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জোড়ায় রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে বলে ব্যথা অনেকাংশে কম অনুভূত হয়।

♦ আদা ও লেবুর রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সকালে এবং রাতে সেবন করলে আর্থ্রাইটিস ব্যথা আস্তে আস্তে কমে আসে।

♦ এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’, ‘এ’ ও ‘সি’ সেবন করতে হবে। এতদসত্ত্বেও ব্যথা উপশম না হলে উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

লেখক : হাড়, ট্রমা ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং অর্থ্রোস্কোপিক সার্জন
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা।

ঈমান জাগানিয়া গল্প বনি ইসরাঈলের তিন ব্যক্তির পরীক্ষা নিতে ফেরেশতা পাঠালেন আল্লাহ

ঈমান জাগানিয়া গল্প
বনি ইসরাঈলের তিন ব্যক্তির পরীক্ষা নিতে ফেরেশতা পাঠালেন আল্লাহ
মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ

বনি ইসরাঈলের তিন ব্যক্তির পরীক্ষা নিতে ফেরেশতা পাঠালেন আল্লাহ
অ- অ অ+

আল্লাহ তাআলা মানুষকে নানাভাবে পরীক্ষা করেন। কাউকে পরীক্ষা করেন রোগ-ব্যাধি ও বিপদ-আপদ দিয়ে, আবার কাউকে করেন সম্পদ-প্রাচুর্য দিয়ে। তবে সর্বাবস্থায় একজন মুমিনের কর্তব্য হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টিদায়ক কাজে অবিচল থাকা। সুখ-দুঃখ যেকোনো পরিস্থিতি হোক, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা চাই। সুসময় হলে তা অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা করবে। আর কঠিন সময়ের সম্মুখীন হলে তা থেকে পরিত্রাণের দোয়া করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে আমি তোমাদের অবশ্যই বাড়িয়ে দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠিন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

প্রিয়নবী (সা.) মুমিনকে প্রাচুর্য ও বিপদের সময় কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্যের শিক্ষা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটা বিস্ময়কর। তার সব কাজে কল্যাণ নিহিত। মুমিন ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে এমন নয়। মুমিন আনন্দের মুহূর্তে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। এতে তার কল্যাণ হয়। আবার বিপদের মুহূর্তে সে ধৈর্য ধারণ করে। এটাও তার কল্যাণ বয়ে আনে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, বনি ইসরাঈলের মধ্যে তিনজন লোক ছিল। তাদের একজন ছিল কুষ্ঠরোগী, অপরজনের টাকমাথা এবং অন্যজন অন্ধ। মহান আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাদের কাছে একজন ফেরেশতা পাঠালেন।

কুষ্ঠরোগীর কাছে এসে ফেরেশতা বলল, তোমার সবচেয়ে পছন্দের বস্তু কী? সে বলল, সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া এবং যে রোগের কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে তা থেকে মুক্তি লাভ করা। ফেরেশতা তার দেহ মুছে দিল। এতে তার গায়ের রোগ দূর হয়। তাকে সুন্দর রূপও দেওয়া হলো। অতঃপর ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, কোন সম্পদ তোমার কাছে খুব প্রিয়? সে বলল, উট অথবা গরু (বর্ণনাকারীর সন্দেহ আছে)। তাকে ১০ মাসের গর্ভবতী একটি উটনি দেওয়া হয়। ফেরেশতা বলল, আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত দিন।

অতঃপর ফেরেশতা টেকো মাথার লোকের কাছে এলো। তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কী? সে বলল, সুন্দর রং এবং টাক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া, যার কারণে মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। ফেরেশতা তার মাথা মুছে দিল। তার টাক ভালো হয়ে গেল। তার মাথায় সুন্দর চুল গজাল। ফেরেশতা প্রশ্ন করল, কোন সম্পদ তোমার কাছে খুব প্রিয়? সে বলল, গরু। তাকে একটি গর্ভবতী গাভি দেওয়া হলো। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত দান করুন।

অতঃপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে এলো। তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কী? সে বলল, আল্লাহ যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন, যেন আমি মানুষকে দেখতে পারি। ফেরেশতা তার চোখ স্পর্শ করল। তার চোখের দৃষ্টি আল্লাহ ফিরিয়ে দিলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করল, কোন ধরনের সম্পদ তোমার কাছে খুব প্রিয়? সে বলল, ছাগল। তাকে বেশি বাচ্চা দেয় এমন ছাগি দেওয়া হলো।

অল্প দিনের ভেতর উট, গাভি ও ছাগলের বাচ্চা হলো। প্রত্যেকের একেকটি প্রান্তর ভরে গেল উট, গরু ও ছাগল দিয়ে। অতঃপর আগের ফেরেশতা কুষ্ঠরোগীর কাছে প্রথম বেশ ধারণ করে এসে বলল, আমি একজন অসহায় ব্যক্তি। এবারের ভ্রমণে আমার সব কিছু ফুরিয়ে গেছে। এখন আল্লাহ ও তোমার সহায়তা ছাড়া এমন কেউ নেই, যার সাহায্যে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারব। মহান আল্লাহর নামে তোমার কাছে আমি একটা উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং, সুন্দর অবয়ব ও অঢেল সম্পদ দিয়েছেন। তা দিয়ে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারব। এ কথা শুনে কুষ্ঠরোগী বলল, আমার অনেক ঋণ হয়েছে। ফেরেশতা বলল, তোমাকে তো আমি চিনি। তুমি কুষ্ঠরোগী ছিলে, মানুষ তোমাকে ঘৃণা করত, তাই না? তুমি তো নিঃস্ব ছিলে, আল্লাহ তোমাকে প্রাচুর্য দিয়েছেন। কুষ্ঠরোগী বলল, এই সম্পদ তো আমি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। তিনি বললেন, তুমি মিথ্যাবাদী হলে আল্লাহ যেন তোমাকে আগের মতো করে দেন। অতঃপর ফেরেশতা টাক মাথার ব্যক্তির কাছেও আগের বেশ ধারণ করে এলো। ফেরেশতা তার কাছেও প্রথম ব্যক্তির মতো সাহায্যের আবেদন করল। সে-ও আগের ব্যক্তির মতো উত্তর দেয়। তাই ফেরেশতা তাকে বলল, তুমি মিথ্যাবাদী হলে আল্লাহ যেন তোমাকে আবার আগের মতো করে দেন।

অতঃপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে আগের বেশে এসে বলল, আমি একজন অসহায় পথিক। আমার সফরের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন গন্তব্যে পৌঁছতে আল্লাহ ও তোমার সহায়তা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আল্লাহর নামে তোমার কাছে একটি ছাগল চাচ্ছি, যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। লোকটি বলল, হ্যাঁ, আমি তো অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। কাজেই তোমার ইচ্ছামতো তুমি নিয়ে যাও। আর যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহর শপথ! আজ তুমি যা নেবে তাতে তোমাকে কোনো বাধা দেব না। ফেরেশতা বলল, তোমার সম্পদ তোমার কাছে থাক। তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তোমার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট আছেন এবং তোমার অপর দুজন সঙ্গীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬৪, মুসলিম, হাদিস : ২৯৬৪)

অতএব, একজন মুমিনের প্রাচুর্যের সময় সাধ্যমতো অন্যের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত। কারণ অর্থ-বিত্ত সবই মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। আমাকে তা দিয়েছেন সঠিক ব্যবহারের জন্য। কাজেই সহায়-সম্পদ ও অর্থবিত্তের অন্যায় ব্যবহার হলে আল্লাহ তা ছিনিয়ে নেবেন।

দুর্লভ সূর্যগ্রহণে কুসুফ নামাজ অনুষ্ঠিত হবে আমিরাতে


দুর্লভ সূর্যগ্রহণে কুসুফ নামাজ অনুষ্ঠিত হবে আমিরাতে


দুর্লভ সূর্যগ্রহণে কুসুফ নামাজ অনুষ্ঠিত হবে আমিরাতে
অ- অ অ+

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুর্লভ সূক্ষ্ম সূর্যগ্রহণ দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে সারা দেশের মসজিদে সালাতে কুসুফ অনুষ্ঠিত হবে।

আরব আমিরাতের ইসলামিক বিষয় ও যাকাত কর্তৃপক্ষের জেনারেল অথরিটি জানিয়েছে যে ২৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা ৪০ মিনিটে আবুধাবীর শেখ জায়েদ মসজিদ এবং অন্যান্য প্রধান মসজিদে 'কুসুফ' নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

বিরল এই সুর্যগ্রহণটি সর্বশেষে ১৮৪৭ সালে হয়েছিল। ইসলামী গবেষক ড. শেখ মোহাম্মদ আশমাউয়ের মতে, যখন সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ ঘটে, তখন মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুসুফের নামাজ পড়তেন।
নবীজির সময়, যখন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, তখন তিনি উদ্বিগ্নভাবে মসজিদে ছুটে গেলেন এবং তাঁর চাদরটি পেছনে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং লোকদের নামাজে নিয়ে গেলেন। তিনি যখন গ্রহণের ঘটনা ঘটে তখন লোকদের প্রার্থনা করার আদেশ করেছিলেন।

মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, গ্রহণগুলি মানুষের ধার্মিক হওয়ার জন্য অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে।

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাসিন্দারা আমিরাত স্পেস এজেন্সি কর্তৃক বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষকের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় বিনামূল্যে বিভিন্ন ইভেন্টে বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে পারবেন। দেখার স্টেশনগুলো আল দাফরার মদিনাত জায়েদের নিকটে লিওয়া হিলস হোটেলে, কসর আল সরব মরুভূমি রিসর্ট এবং আবুধাবিতে মেরিনা মলে। দুবাইয়ের মুশরিফ পার্কের আল থুরায়া জ্যোতির্বিজ্ঞান কেন্দ্রেও আংশিক গ্রহণ দেখতে পারবেন বাসিন্দারা।

হাদিসের নির্দেশনা কতটুকু খাবেন? ইসলাম যা বলে

হাদিসের নির্দেশনা
কতটুকু খাবেন? ইসলাম যা বলে
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

কতটুকু খাবেন? ইসলাম যা বলে
অ- অ অ+

বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এই যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞান সদর্পে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান জীবনযাত্রা সহজ ও সাবলীল করেছে। কিন্তু নানা কারণে মানুষের মধ্যে রোগব্যাধি ও অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধের উপাদানগুলো দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ব্লাড প্রেসার, শ্বাসকষ্ট, অনিদ্রা ইত্যাদি রোগ আধুনিক মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ভাইরাস ও অদ্ভুত রোগব্যাধি। এসব রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডাক্তার ও হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু মানুষ আসলে কী পরিমাণ সুস্থ হচ্ছে বা সুস্থ থাকতে পারছে বা মানুষ কতটা ডাক্তারের ওপর আস্থা রাখতে পারে—সেটি এক অমীমাংসিত অধ্যায়। এসব রোগ ও রোগীর কূলকিনারা করতে না পেরে বর্তমানে এ কথার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে যে কম আহার করুন, বেশিদিন বাঁচুন। আর মানুষকে বারবার এ কথা বলা হচ্ছে যে বেশি খেলে বহু রোগ সৃষ্টি হয়। প্রফেসর রিচার বার্ড এই মর্মে একটি তালিকাও প্রণয়ন করেছেন। তিনি লিখেছেন, বেশি খেলে কী কী ক্ষতি হতে পারে—

১. মস্তিষ্কের ব্যাধি, ২. চক্ষুরোগ, ৩. জিব ও গলার রোগ, ৪. বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি, ৫. হূদেরাগ, ৬. যকৃত্ ও পিত্তের রোগ, ৭. ডায়াবেটিস, ৮. উচ্চ রক্তচাপ, ৯. মস্তিষ্কের শিরা ফেটে যাওয়া, ১০. দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা, ১১. অর্ধাঙ্গ রোগ, ১২. মনস্তাত্ত্বিক রোগ, ১৩. দেহের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া। (‘সান’ উইকলি, সুইডেন)

গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে এই তালিকা প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর তালিকা, যা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত ও হাদিসের প্রতি লক্ষ করুন। তাঁর খাদ্যবিধি পাঠ করুন। তিনি বলেছেন, ‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৪৯)

পেটের এক-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে পূর্ণ করতে বলার কারণ হলো, পানির মধ্যেও বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে—

পানির উপকারিতা নিম্নরূপ
শরীরে পানির অভাব পূরণ করা, রক্তের তরলতা বজায় রাখা, শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় দূষিত জিনিস নির্গত করতে সাহায্য করা, খাদ্যদ্রব্য হজম করতে সাহায্য করা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, শরীরের অম্ল-ক্ষারের স্বাভাবিকতা ঠিক রাখা, হরমোন তৈরি করতে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করা।

একজন ঈমানদার শুধু নামাজ-রোজায়ই তাঁর জীবনকে সীমাবদ্ধ রাখেন না; তাঁর আহার-বিহার, নিদ্রা-জাগরণ—সব কিছুই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ মোতাবেক পরিচালিত হতে হবে।

মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রহ.) নাফে (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইবনে ওমর (রা.) ততক্ষণ পর্যন্ত আহার করতেন না, যতক্ষণ না তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্য একজন মিসকিনকে ডেকে আনা হতো। একবার আমি তাঁর সঙ্গে বসে খাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে এলাম। লোকটি খুব বেশি পরিমাণে আহার করল। তিনি বলেন, নাফে! এমন মানুষকে আমার কাছে নিয়ে আসবে না। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মুমিন এক পেটে খায়। আর কাফির সাত পেটে খায়। (মুসলিম, হাদিস : ২০৬০, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫২২০)

বর্তমানে মিক্সড ফুড, পাঁচমিশালি সবজির প্রতি জোর দেওয়া হয়। বিশেষভাবে সকালের নাশতায় পাঁচমিশালি সবজি রাখার তাগিদ দেওয়া হয়। এ ধরনের খাবারের পুষ্টিগুণই শুধু বেশি নয়, বরং স্বাদেও অসাধারণ। এ বিষয়ে একটি হাদিস স্মরণীয়। সালামাহ (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে খাদ্যের অভাব দেখা দিল। অবশেষে আমাদের কিছু সওয়ারির বাহন জবাই করার কথা ইচ্ছা করেছিলাম। তখন নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশে আমরা আমাদের খাদ্যদ্রব্য একত্র করলাম। আমরা একটি চামড়া বিছালাম এবং তাতে লোকদের খাদ্যদ্রব্য জমা করা হলো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সেটির প্রশস্ততা অনুমান করার জন্য দাঁড়ালাম এবং আমি আন্দাজ করলাম, সেটি একটি ছাগল বসার স্থানের সমান। আর আমরা সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দ শ জন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সবাই তৃপ্তির সঙ্গে খেলাম। তারপর আমাদের নিজ নিজ খাদ্য রাখার থলে পূর্ণ করে নিলাম...।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৪৩৬৯, ইফা)

এই হাদিসের ভাষ্য মতে, পাঁচমিশালি অল্প খাবার বহু মানুষের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থেকে তাঁর ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।

উপকারী দোয় শত্রুর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া



শত্রুর অনিষ্ট থেকে বাঁচার দোয়া
অ- অ অ+

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম ওয়া নাউজুবিকা মিং শুরুরিহিম।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমরা তাদের মোকাবিলায় তোমাকে যথেষ্ট ভাবছি এবং তাদের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাইছি।’

উপকার : আবু বুরদা ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তার পিতা তাকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সা.) কোনো সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কা করলে এই দোয়া পড়তেন।