জাপানে স্থায়ী হওয়া কতটা যুক্তিসংগত
প্রথমেই ধন্যবাদ ৮৯৯+ আপভোটের জন্য
আমার মামা জাপানে ৬ বছর বসবাসরত, আমিও ২ বছর আগে জাপানে গিয়েছিলাম। শীঘ্রই গোটা পরিবার নিয়ে সেখানে বাস করবো। আমার মামার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার বিচারে জাপানে স্থায়ী হওয়া যুক্তিসংগত ; ভালো ও খারাপ দিক বিচার করে।
চরম সত্য ভালো দিকঃ ( আমার বিচারে)
- গোটা ৮ বছরে কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম একবারও বাড়ে নি।
- ৯৯% দুর্নীতিমুক্ত, এ জন্যই তো ওখানে ১৬ বছরের অধিক হলে ছাত্র-ছাত্রীরা কাজ করতে পারে। কাজের জন্য আজীবন ঘুরতে হয় না। আপনি কোনো রেসটুরেন্টে গেলে দেখবেন যে অনেক ভদ্র, কম বয়সী, সুন্দরী মেয়ে আপনাকে সার্ভ করছেন। ওরা আসলে কোনো না কোনো স্কুল —কলেজের শিক্ষার্থী। এটা ওদের পার্ট টাইম জব।
- আমার কাছে সবচেয়ে পছন্দের জিনিস হচ্ছে, রাস্তাঘাট বিশেষ করে যখন বৃষ্টি পড়ে তখন ইহা যেন আয়না হয়ে আপনার কাছে ধরা দেয়। এতো পরিষ্কার, এতো স্বচ্ছ। আবহাওয়া এতো সুন্দর! প্রকৃতি এতো সুন্দর বলার বাহিরে! নদী এতো পরিষ্কার। প্রকৃতিপ্রেমীকরাই উপভোগ করতে পারবে।
- সাম্যতা সব জায়গায়। যাই কাজ করুন না কেন কেউ অসম্মান করবে না। আপনাকে জিজ্ঞেসাও করবে না আপনার চাকরি। বিয়ের সময় মেয়ের অভিভাবকই যদি এ প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করে, আর কে করবে? যে ব্যক্তিকে আপনি আজকে স্যার বললেন ওই ব্যক্তিই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে আপনাকে স্যার বলবে।
- একটা পুলিশও সরকারি টাকা বাদে কোনো টাকা নেই না। অদ্ভুত বিষয়! তারা যদি একটু গোপন রাখতো তাহলেই কিন্তু তারা সুদ, ঘোষ নিতে পারে। কিন্তু কেন জানি কেউ করে না, একজনও না।
- আমার মামার দীর্ঘ ৬ বছরে তিনি ১৪ বার গাড়ির হর্ন শুনেছেন টোকিওর মতো ব্যস্ত শহরে। পাখির গুনগুনানি শুনেছেন ৬ বছর প্রত্যেক ভোরে।
- অপরাধমুক্ত নয়, কিন্তু উল্লেখযোগ্য কম অপরাধ। জাপানের পত্রিকায় অপরাধের স্থান মাসে বড়জোর একবার মেলে। আর বাংলাদেশের....
- আপনি কাউকে চর দিলেও কেউ খামাখা তার মূল্যবান সময় নষ্ট করে আপনার সাথে তর্ক করবে না
- নীরব দেশ। সব জায়গায় চুপচাপ। কেউ আপনাকে এসে বাধা দিবে না, কেউ আপনার কাছে এসে কথা পাড়ি দিবে না।
- খুব শৃঙ্খল জাতি
- পোশাক, রঙ, সবকিছুর স্বাধীনতা, যখন ইচ্ছা রাস্তা থেকে বের হয়ে খেলতে পারবেন। যা ইচ্ছা করেন কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন অপরের অধিকার হস্তক্ষেপ না হয়। বাংলাদেশে এমন স্বাধীনতা দিলেই রাস্তা হয়ে উঠবে চোর, ডাকাত, নগ্ন নারির বাসস্থান।
- শুধু বিনয়, বিনয় আর বিনয়।
- ওই সমাজে পুরুষ নারীদের পিছনে দৌড়ায় না, নারী দৌড়ায় পুরুষের পিছনে। তার জন্যই না ঘটে ধর্ষণ, না ঘটে নারী নির্যাতন। বিয়ের প্রস্তাবও দেয় মেয়ের পক্ষ থেকে।
- সব কিছু অনেক কিউট।
চরম সত্য মন্দ দিকগুলো
- লিখিত নিয়মের চেয়ে অলিখিত নিয়ম অনেক বেশি। অর্থাৎ যে নিয়ম ভাংলে আপনাকে আইনি ভাবে শাস্তি দেয়া হবে না কিন্তু সমাজ থেকে পাবেন তীব্র নিন্দা। ( যেমন- পাবলিক ট্রান্সপোর্টে কথা না বলা, রাস্তায় কোনো কিছু না ফেলা, উচ্চস্বরে না হাসা, প্রাণখুলে কথা না বলা)
- চাকরি জীবনে আপনাকে গোটা সময় চাকরির কাজেই থাকতে হবে। বউ-বাচ্চার খোঁজখবর নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সকাল ভোরে উঠে কাজে যাওয়া আর রাত ৯-১০ টায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে আসে। এজন্যই তো ওই দেশে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন- ওই দেশের একজন ইংলিশ শিক্ষকের মাসিক বেতন ৩-৬ লাখ কাজ করতে হবে ১৪-১৮ ঘণ্টা । যেখানে অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রের বেতন প্রায় দ্বিগুণ এবং কাজঘণ্টাও কম।
- আপনি যত বছরই থাকেন না কেন, তাদের সংস্কৃতিতে আপনি আজীবন ভিনগ্রহী থাকবেন।
- তাদের কাছে তাদের জাতিই বেস্ট। বাকিরা যেন বৈরাগী। তাদের বাহ্যিক আচরণে তা বোঝা যায় না, কিন্তু এটা শুধু আপনি অনুভবই করতে পারবেন।
বাস, আরো কিছু বলার ছিল লেখার পরিধি অনেক বড় হয়ে গেছে। তাই আর বললাম না, মেইন পয়েন্টগুলা বলে দিলাম।