সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

FSS TSTL


মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করেছে ইনসাইট

মহাকাশযান ইনসাইট।মহাকাশযান ইনসাইট।দীর্ঘ সাত মাসের যাত্রা শেষে মঙ্গল গ্রহে সফলভাবে অবতরণ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মনুষ্যবিহীন মহাকাশ যান ‘ইনসাইট।’ নাসার গবেষকেরা জানিয়েছেন, সোমবার মার্কিন স্থানীয় সময় বিকেল তিনটা ১০ মিনিটে মঙ্গল স্পর্শ করেছে এই যান। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অবতরণের পর পরই নাসার ইনসাইট মিশনের কাছে সেখানে পৌঁছানোর বার্তা পাঠায় ইনসাইট। এর কিছুক্ষণ পরে অবতরণ স্থানের একটি ছবিও পাঠিয়ে দেয়। নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরি ইনসাইটকে নিয়ন্ত্রণ করছে। মঙ্গলে অবতরণের বার্তা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিজ্ঞানীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
Ispahani Tea
ইনসাইট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এবারের এ মিশনকে ২০৩০ সালের দিকে মঙ্গল গ্রহে মানুষবাহী যান পাঠানোর প্রস্তুতি হিসেবেও দেখছে নাসা।

এই মুহূর্তে ইনসাইট রয়েছে মঙ্গলের বিষুব রেখার কাছে ‘ইলিসিয়াম প্ল্যানিশিয়া’ নামের একটি জায়গায়, যাকে নাসা গ্রহটির ‘সবচেয়ে বড় পার্কিং স্পেস’ বলছে। ২০১৮ সালের ৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ভ্যান্ডেনবার্গ এএফবি থেকে ‘ইনসাইট’কে মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটির চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেমস ব্রাইডেনস্টিন দিনটিকে অসাধারণ বলে অভিহিত করেছেন। এ সাফল্যের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোন করে নাসা টিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জেট প্রপালশন ল্যাবের পরিচালক মাইক ওয়াটকিনস তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, বিজ্ঞানচর্চায় আমাদের সাহসী ও অনুসন্ধানী হতে হবে।

গবেষকেরা বলছেন, মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ বিশ্লেষণ করে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার লক্ষ্যে রোবট যানটিকে পাঠানো হয়েছে। ইনসাইটে রয়েছে ফ্রান্সের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের তৈরি 'সিস' যা মঙ্গলের কম্পনের মাত্রা পরিমাপ করবে। মঙ্গলে কোনো তরল পদার্থ আছে কি না তা পরীক্ষা করবে একটি যন্ত্র। ২০২০ সালে একটি রোভার মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাঠানো হবে। সেই অভিযানের অংশ হিসেবেই কাজ করবে ইনসাইট।

মহাকাশের প্রথম বিলাসবহুল হোটেল


বিলাসবহুল মহাকাশ হোটেল অরোরা স্টেশন।বিলাসবহুল মহাকাশ হোটেল অরোরা স্টেশন।এক দিনে ১৬ বার সূর্যোদয় দেখতে চান? মহাশূন্যে ভেসে বেড়াতে চান? মহাশূন্যে থেকে পৃথিবীকে কেমন দেখায়, সে অভিজ্ঞতা নিতে চান? আর মাত্র চার বছর ধৈর্য ধরুন। গুছিয়ে ফেলুন ৭৮ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা বা ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার। এ টাকা খরচ হবে বিশ্বের প্রথম বিলাসবহুল মহাকাশ হোটেলে থাকা-খাওয়ার বিল হিসেবে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ হোটেল সম্পর্কে নানা তথ্য।
হোটেলের নাম ‘অরোরা স্টেশন’। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান হোসেতে অনুষ্ঠিত স্পেস ২.০ সম্মেলনে ওই মহাকাশ হোটেল তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রযুক্তিবিষয়ক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন স্প্যান ওই হোটেল তৈরি করবে। ১২ দিনের মহাকাশ সফরে এখানে দুজন ক্রু সদস্যসহ একসঙ্গে ছয়জন থাকতে পারবেন। ২০২২ সালে প্রথম অতিথি হিসেবে সেখানে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
Ispahani Tea
ওরিয়ন স্প্যানের প্রধান নির্বাহী ফ্র্যাঙ্ক বাংগার বলেন, সবার জন্য মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্য তাঁদের। মহাকাশে হোটেল চালুর পরপরই কম খরচে সেখানে সবাইকে থাকার সুযোগ দেওয়া হবে। দুই সপ্তাহের ভ্রমণে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচের বিষয়টি অনেকের কল্পনা বাইরে। তবে ওরিয়ন স্প্যানের দাবি, সত্যিকারের মহাকাশচারীর অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে এতে।

বার্গনার বলেন, মহাকাশ স্টেশনে যেতে নভোচারীদের ২৪ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তাঁরা একে তিন মাসে নামিয়ে এনেছেন। ১২ দিনের এ রোমাঞ্চকর যাত্রা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ২০০ মাইল ওপরে লো আর্থ অরবিটে (এলইপি) উড়বেন। সেখান থেকে পৃথিবীর চমৎকার দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এ হোটেল পৃথিবীকে প্রতি ৩০ মিনিটে প্রদক্ষিণ করবে। অর্থাৎ হোটেলের অতিথিরা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। হোটেলে বসে অতিথিরা খাবার উৎপাদনের মতো গবেষণায় অংশ নিতে পারবেন। এসব খাবার তাঁরা উপহার হিসেবে পৃথিবীতে সঙ্গে নিতে পারবেন। উচ্চগতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সিস্টেম থাকবে সেখানে। সরাসরি পৃথিবীতে লাইভ ভিডিও চ্যাট করা যাবে। এ ছাড়া পৃথিবীতে ফেরার পর তাঁদের বিশেষ সম্মান জানানো হবে। ভরশূন্য অনুভূতির মজা নেওয়া ছাড়াও অতিথিরা মুক্তভাবে হোটেলের ভেতর ভেসে থেকে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু প্রভার দৃশ্য দেখতে পাবেন।
যাঁরা এ সুযোগ হারাতে চান না, তাঁদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতে শুরু করেছে ওরিয়ন স্প্যান। ৮০ হাজার ডলার দিয়ে আগাম বায়না করে রাখতে হবে। তবে পরে যদি কেউ পুরো অর্থ না দিতে পারেন, তবে ওই অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
অবশ্য মহাকাশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিতে ওরিয়ন স্প্যানের মতো আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যাক্সিওম স্পেস। টেক্সাসভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সাবেক এক ব্যবস্থাপক। ২০২৪ সালে একটি বাণিজ্যিক স্পেস স্টেশন চালু করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তারা এখনো খরচের কথা প্রকাশ করেনি। তবে আগে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে মহাকাশ ভ্রমণ করা ডেনিস টিটোর চেয়ে তখন মহাকাশ ভ্রমণে খরচ কম হবে বলেই জানিয়েছে তারা। ২০১৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভ্রমণকারীদের পৌঁছে দেবে এক্সিওম। পরে নিজেদের স্টেশনে যাত্রী নিয়ে যাবে।
এদিকে রিচার্ড ব্র্যানসনের ভার্জিন গ্যালাকটিক আড়াই লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ভরশূন্য অভিজ্ঞতা দিতে কাজ করছে। ২০০৯ সালে এটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো প্রথম যাত্রা তারিখ ঠিক হয়নি।

অবশ্য মহাকাশ ভ্রমণে খরচ যা-ই হোক, যাত্রী খুব কম পাওয়া যাবে। তবে বার্গনার বলছেন, অরোরা স্টেশন শুধু হোটেল হিসেবে কাজ করবে না; এটি মহাশূন্যে ভরশূন্য অবস্থায় বিভিন্ন গবেষণা ও মহাশূন্যে কারিগরি কাজে মহাকাশ সংস্থাগুলোর জন্য কাজ করবে। বর্তমান বাজার চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরও সুবিধা ওরিও স্প্যানে বাড়ানো যাবে বলেই জানান বার্গনার।