সুন্দর প্রশ্ন! এটার উত্তর জানার জন্য যেতে হবে রাশিয়া নামক একটা দেশে।
রাশিয়া পুরুষ স্বল্পতার অনেক কারণ রয়েছে।যথাঃ👇
১।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপুল সংখ্যক রাশিয়ান পুরুষের মৃত্যু ও সেসময় থেকে চলে আসা ভারসাম্যহীনতা।
২।রাশিয়ানদের নিম্নজন্মহার
৩।সমাজব্যবস্থায় নারী পুরুষকে সমান গুরুত্ব দেয়া
৪।নারীদের দীর্ঘায়ু ও অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
৫।মদ্যপানের জন্য বিপুল সংখ্যক পুরুষের মৃত্যু।
শুধুমাত্র রাশিয়া নয় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিটি সাবেক রাষ্ট্রেই নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি।
সৌদি আরব,ওমান,দুবাইয়ে পুরুষাধিক্যের কারণ প্রবাসী শ্রমিক।
https://www.washingtonpost.com/news/worldviews/wp/2015/08/19/see-where-women-outnumber-men-around-the-world-and-why/এখন এই অতিরিক্ত নারীদের কি করবেন?
এখন প্রশ্ন থাকতে পারে সার্বিকভাবে নারীদের সংখ্যা তো পুরুষদের তুলনায় কম।হ্যাঁ বিষয়টি সত্যি।কিন্তু মানবসভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত নারীর সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় বেশি ছিলো।এর পিছনে কারণে বিভিন্ন সংঘাত ও জীবিকার প্রয়োজনে পুরুষদের বাইরে প্রতিকূল পরিবেশে মৃত্যু ও নারীদের অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।স্বাভাবিকভাবেই নারীরা সন্তান লালন পালনের জন্য ঘরে থাকতো বলে তাদের মৃত্যুহার কম ছিলো।
উদাহরণ হিসেবে বর্তমান সিরিয়াকেই দেখুন।চলমান যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক পুরুষ মারা যাওয়ায় নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হয়ে গেসে।
আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়াতেও যুদ্ধে প্রচুর পুরুষ মারা যাওয়ায় পুরুষদের বহুবিবাহকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে পুরুষ সংকটের কারণে👇
ইরিত্রিয়ায় প্রতিটি পুরুষকে দুইটি নারীকে বিয়ে করা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু বর্তমানে নারীদের সংখ্যা কমলো কিভাবে?
উত্তর হচ্ছে ভ্রুণহত্যার মতো মহান টেকনোলজির আবিষ্কার ও প্রাচ্যের মানুষদের মহান মানসিকতা।
ভারতের জনসংখ্যা ১৩৫ কোটি,চীনের ১৪৫ কোটি,বাংলাদেশের ১৬ কোটি আর পাকিস্তানের ২১ কোটি।সর্বোমোট ৭৫০ কোটি জনসংখ্যার ৩৫০ কোটি মানুষই চারটা দেশে বাস করে।আর এই চারটা দেশেই নারীর তুলনায় পুরুষকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
এমন কত দম্পতি আছে বাংলাদেশে ১টা পুত্র সন্তানের জন্য ৪-৫টা কন্যাসন্তান জন্ম দিয়ে ফেলে।
আর ভারতের ভ্রুণহত্যা বন্ধে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে "বেটি বাচাও" কর্মসূচি নিতে হয়েছে পরিস্থিতি এতোটাই বাজে।
চীনে এক সন্তান নীতির জন্য সবাই পুত্র সন্তান নিতে মারিয়া।হুমায়ুন আহমেদ চীনে ঘুরতে গেলে তাদের দলে এক পুত্র শিশু আরেক কন্যা শিশু ছিলো,কিন্তু সবাই ব্যস্ত পুত্র শিশুকে কোলে নিতে।আর কন্যা শিশুকে যেন কেউ দেখলোই না।চীনে একটি সন্তান যেন পুত্র হয় তাই তারা মেয়ে হলে গর্ভপাত করে পুত্র সন্তানের জন্য চেষ্টা করে।ফলাফল চীনে চার কোটি ছেলে বেশি নারীর তুলনায়,যা বিয়ের ক্ষেত্রে ব্যপক সমস্যার সৃষ্টি করছে।
বর্তমান সময় বাদ দিলে সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসেই নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি ছিলো।কারণ👇
১।বিভিন্ন যুদ্ধে পুরুষের মৃত্যু
২।ব্যবসা,যাতায়াত শিকার ও ভ্রমণে প্রতিকূল পরিবেশে পুরুষের মৃত্যু
৩।নারীদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
৪।তাছাড়া নারীর তুলনায় পুরুষের আত্মহত্যার প্রবণতা ৪গুণ বেশি।
৫।মদ্যপান থেকে ধুমপান ইত্যাদি কারণে পুরুষের অধিক মৃত্যু।
তাহলে কি ভ্রুণহত্যা বন্ধ হয়ে গেলেই নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে?
হ্যাঁ সত্যি!
বাস্তবে প্রমাণ দেখতে চান?
ভারতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেবার কারণে এখন নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেড়ে গেছে(যদিও নারীর জন্মহার এখনো কম)☝️
নর্ডিক ও ইউরোপের দেশগুলোতে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি কারণ সেখানে ভ্রুণহত্যা হয় না।
তাহলে ১৪০০ বছর আগে কেন মহানবী(স) চারটি বিয়ের অনুমতি দিলেন?
উত্তর সহজ। তখন নারী ও পুরুষের অনুপাত ছিলো ৪ঃ১।বিশ্বাস হচ্ছে না?সত্যি।কেন?কারণ👇
১।পুরুষেরা বাণিজ্য করতে গিয়ে (প্রতিকূল পরিবেশে) মারা যেত।মহানবী(স) এর পিতাও কিন্তু বাণিজ্য করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান।
২।মরু ডাকাতের কাছে হত্যার শিকার হতো,গোত্রের মধ্যকার যুদ্ধে মারা যেতো।
৩।মজার বিষয় প্রাক ইসলামী যুগে মক্কার ক্যালেন্ডারে "রজম" নামক এক মাস ছিলো।রজম মানে নিষিদ্ধ।কি নিষিদ্ধ? যুদ্ধ।আসলে মক্কাবাসী সারাবছর যুদ্ধই করতো।তো তারা ভাবলো সারাবছর এভাবে যুদ্ধ করলে অন্যান্য কাজ করবে কখন?তাই তারা রজম মাসের প্রত্যাবর্তন করে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করার জন্য।এই মাস সরানো যেতো।যুদ্ধের ফলাফল অমীমাংসিত হলে তার রজমের মাসকে ১ মাস সরিয়ে দিতো।তাহলে ভাবুন এসব গোত্রভিত্তিক যুদ্ধে কত পুরুষ মৃত্যুবরণ করতো।
এসকল কারণে মক্কায় পুরুষে অভাব ছিলো আর নারীর সংখ্যা ছিলো পুরুষের চারগুণ।
তখন অনেকেই ১০টা-১১টা বিয়ে করতো।এক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতেই চারটি বিবাহে সীমাবদ্ধ করা হয়।
তাছাড়া ইসলামে তালাক প্রদানের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে পুনরায় বিয়ে করতে পারে।এজন্য সমাজে বিয়ের জন্য পাত্রপাত্রীর প্রবাহ যথাযথ থাকে।সমাজে সবাই বহুবিবাহ করলে নারী পুরুষ সংখ্যা সমান হলেও চক্রাকারে বিয়ের সার্কেল চলায় নারী পুরুষ উভয়ই বহুবিবাহের জন্য পর্যাপ্ত পাত্রপাত্রী পায়।
প্রশ্ন থাকতে পারে একটি বিয়ে কি ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়?
মহানবী(স) খাদিজা(রা) বেচে থাকতে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।আলী(রা) ও ফাতেমা(রা) বেচে থাকতে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।
পুরো আয়াতটা দেখি,
"আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীমদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা। [সুরা নিসা - ৪:৩]"
যদি বলা হয় চারটি বিয়ের আইন এতিমদের জন্য সীমাবদ্ধ তাও ভুল হবে না।আর কুরআনে পূর্বেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে সকল স্ত্রীর সাথে ন্যায়সংগত আচরণ করার জন্য।
ইসলামে চারটি বিয়ে অনুমোদিত,বাধ্যতামূলক নয়।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কাছে দুইজন স্ত্রী আছে; সে ব্যক্তি যদি তাদের মধ্যে সমতা না রাখে তবে কেয়ামতের দিন সে ব্যাক্তি তার দেহের এক পার্শ্ব ভাঙ্গা অবস্থায় উপস্থিত হবে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
সুরা নিসার ১২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা সকল স্ত্রীদের প্রতি সমান আচরণের বিষয়ে সতর্ক করে ও বহুবিবাহে অনুৎসাহিত করে দিয়ে বলেন, ‘তোমরা কখনো স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না যদিও তোমরা তা কামনা করো।’
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, ‘ফজরের নামাজের পর নবী কারিম (সা.) নামাজের স্থানে বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত লোকেরাও তার চারপাশে বসে থাকত। অতঃপর তিনি তার প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে যেতেন, তাদের সালাম দিতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন আর যার দিন থাকত তার কাছে গিয়ে বসতেন।’ (তাবরানি, হাদিস : ৮৭৬৪)
তাছাড়া যৌনতার দিক থেকে👇
১।নারীর তুলনায় পুরুষের যৌনচাহিদা বেশি
২।নারীদের গর্ভাবস্থা থেকে সন্তান প্রসবের পর প্রায় ২ মাস পর্যন্ত যৌনসক্ষম থাকে না।
৩।মাসিকের দিনগুলো যৌনসক্ষম থাকে না।
৪।মেনপোজের পর যৌনসক্ষম থাকে না।
৫।নারীরা দ্রুত বার্ধক্য এর স্বীকার হয়।
৬।যেহুতু নারীদের সন্তান লালন পালনে ব্যস্ত থাকতে হয় ও ভরণপোষণ আয় সন্তান লালন পালনের সাথে করা কষ্টকর এজন্য তাদের স্বামী মারা গেলে সে অন্য ব্যক্তিকে বিয়ে করে নিজের ও সন্তানের খরচ চালাতে পারে।
আচ্ছা নারীদের তাহলে কেন একাধিক বিয়ের সুযোগ নেই?কারণ নারীরা চারজন ছেলের যৌনচাহিদা পূরণ নাও করতে পারে ও সন্তানের পিতাকে তা নির্ধারণ করা যাবে না।কেন ডিএনএ টেস্ট তো আছে।
হুম ডিএনএ টেস্ট তো আছে কিন্তু টয়লেট কি আছে?
পৃথিবীর মানুষের কাছে টয়লেট নেই আর আপনি ডিএনএ টেস্ট নিয়ে পড়ে আছেন?ও সরি ইসলাম ধনীদের ধর্ম নয়।আর ইসলামে ক্লাস সিস্টেম নেই যে ধনীরা ডিএনএ টেস্ট করে বেড়াবে আর গরিবরা ইসলাম ধর্ম পালনে ব্যর্থ হবে।ইসলাম ধনী ও দরিদ্রের জন্য একই।কোনো কাস্ট,ক্লাস,বর্ণ,বৈষম্য,উচুজাত,নিচুজাত ইসলামে স্থান পায় না।
(একটা ছোট্ট তথ্য পৃথিবীর ৪০% মানুষের কাছে বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই)
সুতরাং মেয়েদের মাল্টিপ্লাগ হবার প্রয়োজন নেই।
মনে রাখতে হবে ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যে ধর্মে সসীম সংখ্যক (চারটি) বিয়ে করা যায়।পৃথিবীর বাকি ৪২০০টি ধর্মই অসীম সংখ্যক বিবাহের অনুমতি দেয়।আমি কোনো উদাহরণ টানলাম না।আব্রাহামিক ও নন আব্রাহিক ধর্মেই অসীম সংখ্যক বিয়ে করা যায় ও একই সাথে অসীম সংখ্যক স্ত্রী রাখা যায়।তাছাড়া কোন কোন ইতিহাসবিখ্যাত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী ছিলো তা উল্লেখ করলাম না।
আর হ্যাঁ ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র ধর্ম যে ধর্মে একটি বিবাহে উৎসাহ দেয়া হয়েছে ও বহুবিবাহকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।
আল্লাহ ভালো জানেন।