Wi-Fi, WiFi বা Wifi এর পূর্নরূপ Wireless Fidelity। এই নামকরণের মধ্যে তেমন কিছু নেই, শুধুমাত্র মার্কেটিং টার্ম।
ওয়াইফাই টিভি, রেডিও, সেলফোন এর মতোই রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে ডেটা ট্রান্সমিট করে। রেডিও ওয়েভ হচ্ছে ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক ওয়েভ, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ আলোর বেগে চলে ভ্যাকিউমে এবং পৃথিবীতে আলোর বেগের চেয়ে সামান্য কম বেগে চলে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ১ কিলো হার্জ থেকে ১০০ গিগাহার্জ পর্যন্ত। যা আমাদের ভিজিবল স্পেকট্রামের বাইরে তাই আমরা ওয়াইফাই তরঙ্গ দেখতে পাইনা।
ওয়াইফাই ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য ২.৪ গিগাহার্জ এবং ৫ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে যা মোবাইল, টিভি, রেডিও, ওয়াকি টকি এসব থেকে অনেক বেশি। ২.৪ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে কাভারেজ বেশি পাওয়া যায় কিন্তু গতি কম পাওয়া যায় তবে ৫ গিগাহার্জে কাভারেজ কম থাকলেও গতি অনেক বেশি পাওয়া যায়। ২.৪ গিগাহার্জের সর্বোচ্চ ত্বাত্তিক দূরত্ব ৮২০ ফুট, গতি ৬০০ এম্বিপিএস এবং ৫ গিগাহার্জের সর্বোচ্চ ত্বাত্তিক দূরত্ব ৩৯০ ফুট, গতি ১৩০০ এম্বিপিএস। তবে বাস্তবে দূরত্ব এবং গতি দুটোই অনেক কম পাওয়া যায়।
ওয়াইফাই ফ্রিকোয়েন্সি অন্য সব রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মতোই বাঁধা প্রাপ্ত হয় অন্য যেকোনো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির সাথে। ইট, পাথর, কংক্রিট, গ্লাস, কাঠ এসব ভেদ করতে পারলেও সিগন্যাল দুর্বল হয়ে যায়। তাই ডেটা লস বাড়ে এবং সিগন্যাল স্ট্রেন্থ কমে যায়।
ওয়াইফাই এর কিছু ভার্সন এবং স্টান্ডার্ড আছে। যেমন 802.11b, 802.11a, 802.11g, 802.11n, 802.11ac, 802.11ax, 802.11be. ক্রমান্বয়ে এই ভার্সন গুলোতে ওয়াইফাই এর রেঞ্জ, স্পিড এবং সিকিউরিটি উন্নত করা হয়েছে। ওয়াইফাই ভার্সন এবং স্টান্ডার্ড সহ ফিচার গুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হলে এক্সেস পয়েন্ট বা রাউটার এবং ক্লায়েন্ট ডিভাইস গুলো তা সমর্থন করতে হবে।
ওয়াইফাই রাউটার সাধারণত যেকোনো ডিজিটাল বাইনারি ডেটাকে এনালগ রেডিও ওয়েভে কনভার্ট করে এবং কাভারেজের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। তাই এই ডিভাইস কে এক্সেস পয়েন্ট বলা হয়। কিন্তু আমাদের হোম রাউটারে একসাথে সুইচ, রাউটার, এক্সেসপয়েন্ট, ফায়ারওয়াল সব একসাথে থাকে তাই তারপরেও একে সহজে বুঝার জন্য রাউটার বলা হয়। এক্সেস পয়েন্টে আমাদের ক্লায়েন্ট ডিভাইস গুলো কানেক্ট হয় এবং এক্সেস পয়েন্টের থেকে আসা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ক্যাপচার করে। এবার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কনভার্ট করা হয় ইলেকট্রিকাল বাইনারি সিগন্যালে আর আমরা জানি আমাদের সব ডিজিটাল ডিভাইস কাজ করে বাইনারিতে।
এক্সেস পয়েন্ট বা রাউটার এতগুলো ক্লায়েন্টের মধ্যে কিভাবে বুঝে কার ডেটা কাকে দিতে হবে?
প্রথম যখন আমরা এক্সেস পয়েন্টের সাথে কানেক্ট হওয়ার জন্য আমাদের ডিভাইস থেকে ওয়াইফাই সার্চ করি তখন আমারা ওয়াইফাই এর নাম দেখতে পাই। যাকে বলা হয় SSID. এই SSID রাউটার সবসময় ব্রডকাস্ট করতে থাকে। যখন কোন ডিভাইস সেই SSID তে কানেক্ট হওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠায় তখন রাউটার এর নির্দিস্ট পাসওয়ার্ড দিতে হয়। পাসওয়ার্ড সঠিক হলে রাউটার সেই ডিভাইসের আইপি এবং ম্যাক এড্রেস সেইভ করে নেয়। পরবর্তিতে ডেটা ট্রান্সমিট করার সময় আবার আইপি দিয়ে ব্রডকাস্ট করে। ক্লায়েন্ট গুলো নিজেদের আইপির ডাক পেলে ডেটা রিসিভ করে নেয়।
এক্সেস পয়েন্টের চ্যানেল এবং উইথ কি?
ওয়াইফাই তার ফ্রিকোয়েন্সিকে অনেকগুলো ভাগে ভাগ করে এবং সেগুলোতে সুবিধা অনুযায়ী শিফট করে। এসব ভাগকে বলা হয় চ্যানেল আর উইথ হচ্ছে চ্যানেল গুলো কতটুকু প্রসস্থ সেটা। সহজে বুঝার জন্য মনে করুন ওয়াইফাই থেকে আসা ফ্রিকোয়েন্সি হচ্ছে একটা হাইওয়ে। চ্যানেল হচ্ছে সেই হাইওয়ের লেন এবং উইথ হচ্ছে লেন গুলো কতটুকু চওড়া।
এক্সেস পয়েন্ট সব সময় চেষ্টা করে সেই লেন ব্যবহার করতে যে লেনে ভিড় কম সে এবং বেশি ডেটা কম সময়ে পাঠানো যায়। তবে এলগোরিদম সবসময় অপ্টিমাম সলুশান দিতে পারেনা তাই কেউ চাইলে তার লোকেশনের আশেপাশের সিগন্যাল এনালাইজ করে চ্যানেল এবং উইথ কাস্টমাইজ করতে পারে।
ওয়াইফাই ভালো নাকি কেবল কানেকশন ভালো?
অবশ্যই কেবল কানেকশন ভালো। ওয়াইফাই তে প্যাকেট লস বেশি হয় বার বার কনভার্শন কারণে, সিগন্যাল দুর্বল হলে ল্যাটেন্সি বেড়ে যায়। বেশি কায়েন্ট কানেক্ট হলে রাউটার সবাইকে সার্ভ করতে সময় বেশি নেয়। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সিকিউরিটি। রাউটার হ্যাক করা সম্ভব। হ্যাক করে প্যাকেট এনালাইজ করা সম্ভব। কাস্টম ডিএনএস বসিয়ে সব ক্লায়েন্টের লগ দেখা সম্ভব। যদিও ম্যাক্সিমাম ডেটা এনক্রিপ্টেড থাকে কিন্তু এর মানে এই না যে ক্র্যাক করা যায়না। তবে সময় এবং দক্ষতার প্রয়োজন।
ওয়াইফাই কি শরীরের ক্ষতি করে?
একদমই না। ওয়াইফাই নন আয়োনাইজিং রেডিয়েশন নির্গত করে যা কোনো প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর না। উপরের ছবিতে দেখবেন ভিজিবল আলোর চেয়েও ওয়াইফাই কতটা দূর্বল। যদি ওয়াইফাই রেডিয়েশন আমাদের ক্ষতি করতো তাহলে আমরা সাধারণ লাইট বাল্ব এর রেডিয়েশনে মরে যেতাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন