বিশালকায় এই কাগজের বিমানটির নাম ‘আর্তুরোস ডেজার্ট ঈগল’। কাগজের বিমানটি ওড়াতে অবশ্য হেলিকপ্টারের সাহায্য নিতে হয়েছে। সিকোরস্কি এস৫৮টি হেলিকপ্টারের সঙ্গে একটি শিকল বেঁধে কাগজের এই বিমানকে দুই হাজার ৭০৩ ফুট ওপরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর কাগজের বিমানটি ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতিতে ছুটতে শুরু করে। কিন্তু ১০ সেকেন্ড পরেই বাতাসের তোড়ে কাগজের এই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
IT IS HOT NEWS. Some information and news unknown to everyone. Which is only possible in F S S T S T L. SO keeps watching and keeps telling others.
শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১২
আকাশে উড়ল সুবিশাল কাগজের বিমান
বিশালকায় এই কাগজের বিমানটির নাম ‘আর্তুরোস ডেজার্ট ঈগল’। কাগজের বিমানটি ওড়াতে অবশ্য হেলিকপ্টারের সাহায্য নিতে হয়েছে। সিকোরস্কি এস৫৮টি হেলিকপ্টারের সঙ্গে একটি শিকল বেঁধে কাগজের এই বিমানকে দুই হাজার ৭০৩ ফুট ওপরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর কাগজের বিমানটি ঘণ্টায় ১০০ মাইল গতিতে ছুটতে শুরু করে। কিন্তু ১০ সেকেন্ড পরেই বাতাসের তোড়ে কাগজের এই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
বিশ্বের প্রথম পুরো হীরার আংটি!
এত দিন হীরার আংটিতে মূল্যবান কোনো ধাতুর কাঠামোর কেন্দ্রে হীরার টুকরো
বসানো হতো। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত অলংকার-নির্মাতা প্রতিষ্ঠান
সাউইশ জুয়েলারি আস্ত একটি হীরা ব্যবহার করে একটি আংটি তৈরি করেছে, যাতে
শুধু হীরাই ব্যবহূত হয়েছে। ১৫০ ক্যারেট হীরার তৈরি এ আংটির দাম সাত কোটি
ডলার। এটিই বিশ্বের প্রথম পুরো হীরার আংটি।
ফ্যাশন-বিষয়ক ওয়েবসাইট স্টাইলিট জানিয়েছে, ১৫০ ক্যারেটের এ আংটি বিখ্যাত সব হীরার আংটিকে টেক্কা দিতে সক্ষম হবে। বিখ্যাত হীরার আংটির মধ্যে রয়েছে জে-জির কাছ থেকে বিওন্সি নোলসের পাওয়া ১৮ ক্যারেটের হীরার আংটি বা রিচার্ড বার্টনের কাছ থেকে এলিজাবেথ টেলরের পাওয়া ৩০ ক্যারেটের আংটি।
সাউইশের প্রধান নির্বাহী মোহামেদ সাওয়েশ জানিয়েছেন, আস্ত একটি হীরার টুকরো লেজার দিয়ে কেটে এ আংটিটি তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরিতে লেজার ছাড়াও প্রচলিত পলিশ ও কাটিং পদ্ধতি ব্যবহূত হয়েছে। আর এর আকার তৈরিতে সময় লেগেছে পুরো এক বছর।
জানা গেছে, আংটি তৈরির বিষয়টি কপিরাইট করিয়ে নিয়েছে সাউইশ।
ফ্যাশন-বিষয়ক ওয়েবসাইট স্টাইলিট জানিয়েছে, ১৫০ ক্যারেটের এ আংটি বিখ্যাত সব হীরার আংটিকে টেক্কা দিতে সক্ষম হবে। বিখ্যাত হীরার আংটির মধ্যে রয়েছে জে-জির কাছ থেকে বিওন্সি নোলসের পাওয়া ১৮ ক্যারেটের হীরার আংটি বা রিচার্ড বার্টনের কাছ থেকে এলিজাবেথ টেলরের পাওয়া ৩০ ক্যারেটের আংটি।
সাউইশের প্রধান নির্বাহী মোহামেদ সাওয়েশ জানিয়েছেন, আস্ত একটি হীরার টুকরো লেজার দিয়ে কেটে এ আংটিটি তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরিতে লেজার ছাড়াও প্রচলিত পলিশ ও কাটিং পদ্ধতি ব্যবহূত হয়েছে। আর এর আকার তৈরিতে সময় লেগেছে পুরো এক বছর।
জানা গেছে, আংটি তৈরির বিষয়টি কপিরাইট করিয়ে নিয়েছে সাউইশ।
উচ্চ ঘনত্বের গ্রহের সন্ধান
ফরাসি
জ্যোতির্গবেষকেরা সম্প্রতি উচ্চ ঘনত্বের একটি গ্রহের সন্ধান লাভ করেছেন।
পৃথিবী থেকে চার হাজারের কিছু বেশি আলোক বর্ষ দূরের এই গ্রহের নাম রাখা
হয়েছে কোরোট-২০বি। গবেষকেরা গ্রহের বর্ণালি পরীক্ষার মাধ্যমে গ্রহের
আকার-প্রকৃতি নির্ণয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বৃহস্পতি গ্রহের চার-পঞ্চমাংশ
আকারের এই গ্রহ পুরোটাই গ্যাসীয় প্রকৃতির। বৃহস্পতি থেকে আকারে ক্ষুদ্র
হলেও গ্রহটির ঘনত্ব চার গুণ বেশি বলে ধারণা করছেন জ্যোর্তিবিদেরা। সূর্যের
মতো একটি তারাকে আবর্তিত এই গ্রহকে সন্ধান পাওয়া উচ্চ ঘনত্বের গ্রহগুলোর
একটি বলে মনে করছেন গবেষকেরা। ফ্রান্সের মার্সেই জ্যোতির্পদার্থ
গবেষণাগারের গবেষকেরা ‘ইউরোপীয় কোরোট মিশন’ প্রকল্প পরীক্ষায় এই গ্রহের
সন্ধান লাভ করেন।
সুদীপ্ত দেবনাথ
সুদীপ্ত দেবনাথ
পারমাণবিক দুর্ঘটনার সেকাল-একাল
১১
মার্চ ছিল জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিস্ফোরণের প্রথম
বার্ষিকী। ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনা
হলো সবচেয়ে ভয়াবহ। তবে সময়ের কারণেই দুটি দুর্ঘটনার মধ্যে ফারাক ছিল
বিস্তর। এ দুটি দুর্ঘটনার পার্থক্য তুলে ধরেছেন পরমাণু বিজ্ঞানী জাকিয়া
বেগম
প্রায় ৬০ বছরের পারমাণবিক চুল্লির ইতিহাসে বিশ্বে যে কয়েকটি পারমাণবিক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ১৯৮৬ সালের ২৬ মার্চ রাশিয়ার চেরনোবিলে এবং অন্যটি ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের ফুকুশিমায় সংঘটিত দুর্ঘটনা দুটিকে অন্যতম ভয়াবহ বলে চিহ্নিত করা হয়। এ দুটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। পার্থক্যগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়:
১৯৭১ সালে স্থাপিত ফুকুশিমার চুল্লিটি ৪০ বছরের আয়ুষ্কাল শেষ করে বর্ধিত সময়ের জন্য পরিচালনার অনুমোদনপ্রাপ্ত ছিল। কিন্তু ১৯৭৭ সালে স্থাপিত চেরনোবিলের চুল্লিটি দুর্ঘটনার আগে মাত্র নয় বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
চেরনোবিলের চুল্লিতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল। উপরন্তু, নিরাপত্তাসংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন না করে গবেষণা পরিচালনার সময় ভুলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু চুল্লির নকশায় উচ্চমাত্রার সুনামির সম্ভাবনা বিবেচনায় না রাখায় রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প-পরবর্তী সুনামি ফুকুশিমা দুর্ঘটনার কারণ।
চেরনোবিলের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সময় চুল্লি সক্রিয় থাকায় ফিশনবিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে এবং মুহূর্তে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিস্ফোরিত পারমাণবিক বোমার চেয়ে ভয়াবহ ও মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটে। ফুকুশিমায় ভূমিকম্পের সঙ্গে সঙ্গে ফিশনবিক্রিয়া থেমে গিয়ে চুল্লিগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রে কোনো রকম বিস্ফোরণ ঘটেনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সুনামির আঘাতে শীতলীকরণ পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে পড়ায় চুল্লির কেন্দ্র অতিরিক্ত মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে কোনোটি আংশিকভাবে এবং কোনোটির অধিকাংশই গলে যায়। ব্যবহূত জ্বালানির আধারগুলোর ঠান্ডাকরণ পদ্ধতিও অকার্যকর হয়ে পড়ে।
১ গিগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন চেরনোবিলের চুল্লিটির কেন্দ্র ইদানীংকালের চুল্লিগুলোর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বড় ছিল। এত বিরাট চুল্লি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ায় তা প্রচণ্ডভাবে বিস্ফোরিত হয়। ফুকুশিমারটি ৪ দশমিক ৭ গিগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন।
‘হাইপ্রেশার ওয়াটার রিঅ্যাকটর টাইপ’ চেরনোবিলের চুল্লিতে রিঅ্যাকটর ভেসেল এবং কনটেইনমেন্ট বিল্ডিং ছিল না। ‘বয়েলিং ওয়াটার টাইপ’ ফুকুশিমার চুল্লিতে বর্তমানে ব্যবহূত অন্যান্য চুল্লির মতো জ্বালানিসংবলিত কেন্দ্র খুব পুরু স্টিলের তৈরি চাপযুক্ত আধারের মধ্যে (রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল) আর সম্পূর্ণ চুল্লিটি যেকোনো ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবদ্ধ রাখতে সক্ষম স্টিল ও কংক্রিটের তৈরি বিশেষ ধরনের কাঠামোর মধ্যে স্থাপিত ছিল।
ফুকুশিমার চুল্লিটি ‘লাইট ওয়াটার’ মডারেটরবিশিষ্ট হওয়ায় এটির কেন্দ্রে দাহ্য গ্রাফাইটের উপস্থিতি ছিল না। চেরনোবিল দুর্ঘটনাটি ভয়াবহ হয়ে ওঠার অন্যতম একটি কারণ, ‘গ্রাফাইট মডারেটেড’ চুল্লিতে গ্রাফাইটের উপস্থিতি, যা এটিকে অত্যন্ত দাহ্য করে তোলে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে আগুন ধরে যায়, যার কারণে তেজস্ক্রিয় মেঘ আকাশে বহু ওপরে বিস্তৃতি লাভ করে, যা প্রায় ১০ দিন পর্যন্ত জ্বলতে থাকে।
ফুকুশিমার ছয়টি চুল্লির মধ্যে চারটি এবং ‘স্পেন্ট ফুয়েলে’র আধার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চেরনোবিলের চারটি চুল্লির মধ্যে মাত্র একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ফুকুশিমার চুল্লিতে জ্বালানির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬০০ টন আর চেরনোবিলে ১৮০ টন।
ফুকুশিমায় অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রায় চুল্লির ভেতরের বাষ্প থেকে হাইড্রোজেন আলাদা হয়ে যায়, যা চুল্লির স্থাপনার ভেতরে জমা হয়ে বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে। ফলে স্থাপনার ছাদের একটি অংশ বিধ্বস্ত হয়, তবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নির্গমনের ক্ষেত্রে এর কোনো ভূমিকা ছিল না। তা ছাড়া চুল্লির ভেতরে বাষ্পীয় চাপ কমিয়ে বিস্ফোরণ ঠেকানোর লক্ষ্যে অপারেটররাও ইচ্ছাকৃতভাবে বাষ্পীয় মেঘ বাতাসে বিমুক্ত করে দেয়। এই বাষ্পের মধ্যস্থ তেজস্ক্রিয় কণাগুলোর অর্ধায়ু মাত্র কয়েক সেকেন্ড হওয়ায় এগুলো বাতাসে মিশে যাওয়ার আগে বিকিরণমাত্রা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর পর্যায়ের নিচে নেমে আসে। তা ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় এবং দুর্ঘটনার সময় বাতাস সাগরের দিকে ধাবিত হওয়ায় এ ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলোর অধিকাংশ সাগরে গিয়ে পড়ে, যা সাগরের পানির সঙ্গে মিশে তরলকৃত হয়ে পড়ে।
পরবর্তী সময়ে প্রচণ্ড উত্তাপে চুল্লি গলিত অবস্থায় চলে যাওয়ায় এবং স্থাপনার ভেতরের কিছুটা অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় এ ফাটল এবং সেই সঙ্গে উত্তপ্ত স্পেন্ট ফুয়েল দিয়ে তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত পানি ও বাষ্প বের হতে থাকে, যা পরিবেশকে দূষণযুক্ত করে তোলে। তা ছাড়া শীতলীকরণের কাজে ব্যবহূত পানি সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়ায়ও বেশ কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাস ও পানিতে মিশে যায়।
যদিও দুটি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার মাত্রা পারমাণবিক দুর্ঘটনার স্কেলে ৭, তাই ফুকুশিমা দুর্ঘটনায় পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমাণ চেরনোবিল দুর্ঘটনার মাত্র ১০ শতাংশ।
ফুকুশিমায় তেজস্ক্রিয়ার কারণে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। চেরনোবিলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ২০০ পিকোবেকারেল তেজস্ক্রিয়ার বিকিরণপাত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজন, পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন মারা যায়। প্রায় ছয় লাখ মানুষ অত্যন্ত উচ্চমাত্রার বিকিরণ দ্বারা সম্পাতিত হয়ে পড়ে। কাছের একটি বনাঞ্চল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়, চারপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাশের ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিরাট এলাকাজুড়ে তেজস্ক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ায় এসব দেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল তেজস্ক্রিয় ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে উত্তর-পশ্চিমে ৬০ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিকিরণমাত্রা বার্ষিক গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ঊর্ধ্বে এবং সর্বোচ্চ তেজস্ক্রিয়া ৩৭০ পিকোবেকারেল পরিলক্ষিত হয়। এ ক্ষেত্রে বিরাট এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
তৎকালীন সোভিয়েত সরকার প্রথম দিকে বাসিন্দাদের দুর্ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা থেকে বিরত থাকে এবং দ্রুত পাশের এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করায় আয়োডিনযুক্ত তেজস্ক্রিয়যুক্ত দুধ গ্রহণের কারণে আক্রান্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার জন পরবর্তী সময়ে থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন মারা যায়।
ফুকুশিমায় ক্ষতিকর আয়োডিন নিঃসরণের পরিমাণ চেরনোবিলের চেয়ে প্রায় সাত গুণ কম। তা ছাড়া জাপান সরকার খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়ায় এবং সময়োপযোগী কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় তেজস্ক্রিয় সম্পাত থেকে অনেকেই রক্ষা পায়। ২০-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় জন্মানো খাদ্যশস্য গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্ক এবং বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এলাকার পশুর দুধ ও দুগ্ধজাতদ্রব্য শিশুদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টোকিও নগরের কলের পানি শিশুখাদ্যের জন্য সাময়িকভাবে উপযোগী নয় বলে সাবধানতা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। তা ছাড়া শিশুদের স্থায়ী আয়োডিন খাইয়ে তেজস্ক্রিয় আয়োডিন থাইরয়েডে জমা হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনায় থাইরয়েড ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও কমানো হয়েছে।
চেরনোবিলে কৃষি এলাকাজুড়ে ৩০ বছর অর্ধায়ুবিশিষ্ট সিজিয়াম-১৩৭ এবং ২৮ বছর অর্ধায়ুবিশিষ্ট স্ট্রনশিয়াম-৯০ ছড়িয়ে পড়ে। ফুকুশিমায়ও প্রায় ২০০ মাইল এলাকাজুড়ে সিজিয়াম-১৩৭ ছড়িয়ে পড়ে।
চেরনোবিলে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার মানুষ সরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়। ফুকুশিমায় দুর্ঘটনাকবলিত স্থাপনা থেকে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়।
ফুকুশিমার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলো বহু তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, যা চেরনোবিলের সময় সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় নানাবিধ পরামর্শ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
লেখক: পরমাণু বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ইউআইটিএস।a
প্রায় ৬০ বছরের পারমাণবিক চুল্লির ইতিহাসে বিশ্বে যে কয়েকটি পারমাণবিক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ১৯৮৬ সালের ২৬ মার্চ রাশিয়ার চেরনোবিলে এবং অন্যটি ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের ফুকুশিমায় সংঘটিত দুর্ঘটনা দুটিকে অন্যতম ভয়াবহ বলে চিহ্নিত করা হয়। এ দুটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। পার্থক্যগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়:
১৯৭১ সালে স্থাপিত ফুকুশিমার চুল্লিটি ৪০ বছরের আয়ুষ্কাল শেষ করে বর্ধিত সময়ের জন্য পরিচালনার অনুমোদনপ্রাপ্ত ছিল। কিন্তু ১৯৭৭ সালে স্থাপিত চেরনোবিলের চুল্লিটি দুর্ঘটনার আগে মাত্র নয় বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
চেরনোবিলের চুল্লিতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল। উপরন্তু, নিরাপত্তাসংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন না করে গবেষণা পরিচালনার সময় ভুলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু চুল্লির নকশায় উচ্চমাত্রার সুনামির সম্ভাবনা বিবেচনায় না রাখায় রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প-পরবর্তী সুনামি ফুকুশিমা দুর্ঘটনার কারণ।
চেরনোবিলের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সময় চুল্লি সক্রিয় থাকায় ফিশনবিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে এবং মুহূর্তে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বিস্ফোরিত পারমাণবিক বোমার চেয়ে ভয়াবহ ও মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটে। ফুকুশিমায় ভূমিকম্পের সঙ্গে সঙ্গে ফিশনবিক্রিয়া থেমে গিয়ে চুল্লিগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রে কোনো রকম বিস্ফোরণ ঘটেনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সুনামির আঘাতে শীতলীকরণ পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে পড়ায় চুল্লির কেন্দ্র অতিরিক্ত মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে কোনোটি আংশিকভাবে এবং কোনোটির অধিকাংশই গলে যায়। ব্যবহূত জ্বালানির আধারগুলোর ঠান্ডাকরণ পদ্ধতিও অকার্যকর হয়ে পড়ে।
১ গিগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন চেরনোবিলের চুল্লিটির কেন্দ্র ইদানীংকালের চুল্লিগুলোর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বড় ছিল। এত বিরাট চুল্লি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ায় তা প্রচণ্ডভাবে বিস্ফোরিত হয়। ফুকুশিমারটি ৪ দশমিক ৭ গিগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন।
‘হাইপ্রেশার ওয়াটার রিঅ্যাকটর টাইপ’ চেরনোবিলের চুল্লিতে রিঅ্যাকটর ভেসেল এবং কনটেইনমেন্ট বিল্ডিং ছিল না। ‘বয়েলিং ওয়াটার টাইপ’ ফুকুশিমার চুল্লিতে বর্তমানে ব্যবহূত অন্যান্য চুল্লির মতো জ্বালানিসংবলিত কেন্দ্র খুব পুরু স্টিলের তৈরি চাপযুক্ত আধারের মধ্যে (রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল) আর সম্পূর্ণ চুল্লিটি যেকোনো ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবদ্ধ রাখতে সক্ষম স্টিল ও কংক্রিটের তৈরি বিশেষ ধরনের কাঠামোর মধ্যে স্থাপিত ছিল।
ফুকুশিমার চুল্লিটি ‘লাইট ওয়াটার’ মডারেটরবিশিষ্ট হওয়ায় এটির কেন্দ্রে দাহ্য গ্রাফাইটের উপস্থিতি ছিল না। চেরনোবিল দুর্ঘটনাটি ভয়াবহ হয়ে ওঠার অন্যতম একটি কারণ, ‘গ্রাফাইট মডারেটেড’ চুল্লিতে গ্রাফাইটের উপস্থিতি, যা এটিকে অত্যন্ত দাহ্য করে তোলে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে আগুন ধরে যায়, যার কারণে তেজস্ক্রিয় মেঘ আকাশে বহু ওপরে বিস্তৃতি লাভ করে, যা প্রায় ১০ দিন পর্যন্ত জ্বলতে থাকে।
ফুকুশিমার ছয়টি চুল্লির মধ্যে চারটি এবং ‘স্পেন্ট ফুয়েলে’র আধার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চেরনোবিলের চারটি চুল্লির মধ্যে মাত্র একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ফুকুশিমার চুল্লিতে জ্বালানির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬০০ টন আর চেরনোবিলে ১৮০ টন।
ফুকুশিমায় অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রায় চুল্লির ভেতরের বাষ্প থেকে হাইড্রোজেন আলাদা হয়ে যায়, যা চুল্লির স্থাপনার ভেতরে জমা হয়ে বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে। ফলে স্থাপনার ছাদের একটি অংশ বিধ্বস্ত হয়, তবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নির্গমনের ক্ষেত্রে এর কোনো ভূমিকা ছিল না। তা ছাড়া চুল্লির ভেতরে বাষ্পীয় চাপ কমিয়ে বিস্ফোরণ ঠেকানোর লক্ষ্যে অপারেটররাও ইচ্ছাকৃতভাবে বাষ্পীয় মেঘ বাতাসে বিমুক্ত করে দেয়। এই বাষ্পের মধ্যস্থ তেজস্ক্রিয় কণাগুলোর অর্ধায়ু মাত্র কয়েক সেকেন্ড হওয়ায় এগুলো বাতাসে মিশে যাওয়ার আগে বিকিরণমাত্রা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর পর্যায়ের নিচে নেমে আসে। তা ছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় এবং দুর্ঘটনার সময় বাতাস সাগরের দিকে ধাবিত হওয়ায় এ ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলোর অধিকাংশ সাগরে গিয়ে পড়ে, যা সাগরের পানির সঙ্গে মিশে তরলকৃত হয়ে পড়ে।
পরবর্তী সময়ে প্রচণ্ড উত্তাপে চুল্লি গলিত অবস্থায় চলে যাওয়ায় এবং স্থাপনার ভেতরের কিছুটা অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় এ ফাটল এবং সেই সঙ্গে উত্তপ্ত স্পেন্ট ফুয়েল দিয়ে তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত পানি ও বাষ্প বের হতে থাকে, যা পরিবেশকে দূষণযুক্ত করে তোলে। তা ছাড়া শীতলীকরণের কাজে ব্যবহূত পানি সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়ায়ও বেশ কিছু তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাতাস ও পানিতে মিশে যায়।
যদিও দুটি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার মাত্রা পারমাণবিক দুর্ঘটনার স্কেলে ৭, তাই ফুকুশিমা দুর্ঘটনায় পরিবেশে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমাণ চেরনোবিল দুর্ঘটনার মাত্র ১০ শতাংশ।
ফুকুশিমায় তেজস্ক্রিয়ার কারণে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। চেরনোবিলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ২০০ পিকোবেকারেল তেজস্ক্রিয়ার বিকিরণপাত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজন, পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন মারা যায়। প্রায় ছয় লাখ মানুষ অত্যন্ত উচ্চমাত্রার বিকিরণ দ্বারা সম্পাতিত হয়ে পড়ে। কাছের একটি বনাঞ্চল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়, চারপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাশের ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিরাট এলাকাজুড়ে তেজস্ক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ায় এসব দেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল তেজস্ক্রিয় ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে উত্তর-পশ্চিমে ৬০ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিকিরণমাত্রা বার্ষিক গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ঊর্ধ্বে এবং সর্বোচ্চ তেজস্ক্রিয়া ৩৭০ পিকোবেকারেল পরিলক্ষিত হয়। এ ক্ষেত্রে বিরাট এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
তৎকালীন সোভিয়েত সরকার প্রথম দিকে বাসিন্দাদের দুর্ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা থেকে বিরত থাকে এবং দ্রুত পাশের এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করায় আয়োডিনযুক্ত তেজস্ক্রিয়যুক্ত দুধ গ্রহণের কারণে আক্রান্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার জন পরবর্তী সময়ে থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন মারা যায়।
ফুকুশিমায় ক্ষতিকর আয়োডিন নিঃসরণের পরিমাণ চেরনোবিলের চেয়ে প্রায় সাত গুণ কম। তা ছাড়া জাপান সরকার খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়ায় এবং সময়োপযোগী কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় তেজস্ক্রিয় সম্পাত থেকে অনেকেই রক্ষা পায়। ২০-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় জন্মানো খাদ্যশস্য গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্ক এবং বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এলাকার পশুর দুধ ও দুগ্ধজাতদ্রব্য শিশুদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টোকিও নগরের কলের পানি শিশুখাদ্যের জন্য সাময়িকভাবে উপযোগী নয় বলে সাবধানতা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। তা ছাড়া শিশুদের স্থায়ী আয়োডিন খাইয়ে তেজস্ক্রিয় আয়োডিন থাইরয়েডে জমা হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনায় থাইরয়েড ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও কমানো হয়েছে।
চেরনোবিলে কৃষি এলাকাজুড়ে ৩০ বছর অর্ধায়ুবিশিষ্ট সিজিয়াম-১৩৭ এবং ২৮ বছর অর্ধায়ুবিশিষ্ট স্ট্রনশিয়াম-৯০ ছড়িয়ে পড়ে। ফুকুশিমায়ও প্রায় ২০০ মাইল এলাকাজুড়ে সিজিয়াম-১৩৭ ছড়িয়ে পড়ে।
চেরনোবিলে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার মানুষ সরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে বেলারুশ, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়। ফুকুশিমায় দুর্ঘটনাকবলিত স্থাপনা থেকে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়।
ফুকুশিমার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলো বহু তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, যা চেরনোবিলের সময় সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় নানাবিধ পরামর্শ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
লেখক: পরমাণু বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ইউআইটিএস।a
সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১২
কোথাও কেউ নেই
আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে আর বোন আসমা এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে
ফলাফলের অপেক্ষায়। এমন সময় ওদের দুজনকে দেখি আমরা। প্রথম দেখায়ই রনি ভাইয়ের
নাজু আপাকে ভালো লেগেছিল। অচিরেই আমরা দুই বোন নাজু আপা আর রনি ভাইয়ের
ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠলাম। কিন্তু কোন ফাঁকে তাদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসা হয়ে
গেছে আমরা টেরও পাইনি। কয়েক দিনের পরই নাজু আপা আমাদের সব খুলে বললেন। এমএ
পরীক্ষা শেষ করে রনি ভাই চাকরি শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যে মহা ধুমধাম করে
তাঁদের বিয়ে হলো। দুই বছরের মাথায় তাঁদের ঘর আলো করে এল আরিয়ান। এত সুন্দর
ফুটফুটে ছেলে! কিন্তু ছোট্ট একটা ফুটো তার ছোট্ট হূৎপিণ্ডে। নাজু আপা, রনি
ভাই দুজনেই স্বচ্ছল পরিবারের। চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি হয়নি। দেশে-বিদেশে
চিকিৎসা আর নাজু আপার অনেক মমতা আর যত্নে আরিয়ান অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিল।
ছোট্ট বয়সে অপারেশনের ধকল নিতে পারবে না, তাই শেষ অস্ত্রোপচারটা একটু
দেরিতেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওর বাবা-মা, হ্যাঁ চিকিৎসকের পরামর্শেই।
এর মধ্যে হঠাৎই নাজু আপার আব্বা মারা গেলেন, হার্ট অ্যাটাক। নানা ভাইয়ের জন্য অনেক মন খারাপ করল সাড়ে তিন বছর বয়সী আরিয়ান। বাবার মৃত্যুর শোক সামলে আরিয়ানকে নিয়ে নাজু আপা আর রনি ভাই ভারতে গেলেন। উপমহাদেশের বিখ্যাত শিশু হূদরোগ বিশেষজ্ঞ শেঠী আরিয়ানের অপারেশন করলেন। মা-বাবার সঙ্গে একই বিমানে দেশে ফিরে এসেছিল আরিয়ান কিন্তু হিমশীতল কফিনে করে।
আমরা দুই বোন, একসময় যারা ছিলাম নাজু আপার ছায়াসঙ্গী। দেখতে গেলাম ওঁদের। বিধ্বস্ত দুজনেই। তফাত একটাই, নাজু আপা অনবরত কথা বলছিলেন আর রনি ভাই বাক্রুদ্ধ। এরপর অনেক রাত তাঁরা ঘুমোতে পারেননি। ২৪ ঘণ্টা আলো জ্বালিয়ে রাখতেন। চোখ বন্ধ করতে গেলেই নাজু আপা দেখতেন আরিয়ান বিছানায়...।
সময় চলে যায়। জীবন বহিয়া চলে।
আবারও মা হওয়ার আকুতি রীতিমতো পাগল করে তোলে নাজু আপাকে।
জীবন চলে আপন গতিতে। নাজু আপার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা আত্মার। রক্তের বন্ধন স্থাপনের জন্য আম্মার অপারেশনের সময় জরুরি রক্ত প্রয়োজন। এগিয়ে এলেন আমাদের নাজু আপা। আম্মার প্রতি তাঁর মমতা-শ্রদ্ধা অন্য রকম! আরিয়ানকে ফিরে পাওয়ার জন্য আম্মার কাছে দোয়া চাইতেন, আম্মার কাছে বসে কাঁদতেন। কিছুদিনের মধ্যেই আবদুল্লাহ এল, আরিয়ানের রূপ ধরে। এখন ওর বয়স ছয় বছর। স্কুলে যায়। কিছুদিন আগে ওর আর্ট একজিবিশন হলো।
অনেক দিন নাজু আপার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। মোবাইল ফোনসেটের পরিবর্তন আর ফোন নম্বর না লিখে রাখার কারণে কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে নম্বর খুঁজে পেলাম। ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ফোন করলাম। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার ফোন পেয়ে নাজু আপা কী যে খুশি হয়েছিলেন, তা আমি এই সাত সমুদ্র তেরো নদী দুরে বসেও টের পাচ্ছিলাম। বললেন, আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছি, আমাকে অ্যাড করো। প্রোফাইল ছবি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। মনে হলো ১৮ বছর আগে প্রথম ওঁদের দেখেছিলাম কিন্তু একটুও যেন বদলাননি ওঁরা দুজন।
১ মার্চ দুপুরে বোন আসমার ফোন—রনি ভাই নেই। হার্ট অ্যাটাক! আরিয়ানের পাশেই শুইয়ে দেওয়া হয়েছে তার বাবাকে।
সালমা শফিক
মেলবোর্ন,
অস্ট্রেলিয়া থেকে
এর মধ্যে হঠাৎই নাজু আপার আব্বা মারা গেলেন, হার্ট অ্যাটাক। নানা ভাইয়ের জন্য অনেক মন খারাপ করল সাড়ে তিন বছর বয়সী আরিয়ান। বাবার মৃত্যুর শোক সামলে আরিয়ানকে নিয়ে নাজু আপা আর রনি ভাই ভারতে গেলেন। উপমহাদেশের বিখ্যাত শিশু হূদরোগ বিশেষজ্ঞ শেঠী আরিয়ানের অপারেশন করলেন। মা-বাবার সঙ্গে একই বিমানে দেশে ফিরে এসেছিল আরিয়ান কিন্তু হিমশীতল কফিনে করে।
আমরা দুই বোন, একসময় যারা ছিলাম নাজু আপার ছায়াসঙ্গী। দেখতে গেলাম ওঁদের। বিধ্বস্ত দুজনেই। তফাত একটাই, নাজু আপা অনবরত কথা বলছিলেন আর রনি ভাই বাক্রুদ্ধ। এরপর অনেক রাত তাঁরা ঘুমোতে পারেননি। ২৪ ঘণ্টা আলো জ্বালিয়ে রাখতেন। চোখ বন্ধ করতে গেলেই নাজু আপা দেখতেন আরিয়ান বিছানায়...।
সময় চলে যায়। জীবন বহিয়া চলে।
আবারও মা হওয়ার আকুতি রীতিমতো পাগল করে তোলে নাজু আপাকে।
জীবন চলে আপন গতিতে। নাজু আপার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা আত্মার। রক্তের বন্ধন স্থাপনের জন্য আম্মার অপারেশনের সময় জরুরি রক্ত প্রয়োজন। এগিয়ে এলেন আমাদের নাজু আপা। আম্মার প্রতি তাঁর মমতা-শ্রদ্ধা অন্য রকম! আরিয়ানকে ফিরে পাওয়ার জন্য আম্মার কাছে দোয়া চাইতেন, আম্মার কাছে বসে কাঁদতেন। কিছুদিনের মধ্যেই আবদুল্লাহ এল, আরিয়ানের রূপ ধরে। এখন ওর বয়স ছয় বছর। স্কুলে যায়। কিছুদিন আগে ওর আর্ট একজিবিশন হলো।
অনেক দিন নাজু আপার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। মোবাইল ফোনসেটের পরিবর্তন আর ফোন নম্বর না লিখে রাখার কারণে কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে নম্বর খুঁজে পেলাম। ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ফোন করলাম। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার ফোন পেয়ে নাজু আপা কী যে খুশি হয়েছিলেন, তা আমি এই সাত সমুদ্র তেরো নদী দুরে বসেও টের পাচ্ছিলাম। বললেন, আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছি, আমাকে অ্যাড করো। প্রোফাইল ছবি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। মনে হলো ১৮ বছর আগে প্রথম ওঁদের দেখেছিলাম কিন্তু একটুও যেন বদলাননি ওঁরা দুজন।
১ মার্চ দুপুরে বোন আসমার ফোন—রনি ভাই নেই। হার্ট অ্যাটাক! আরিয়ানের পাশেই শুইয়ে দেওয়া হয়েছে তার বাবাকে।
সালমা শফিক
মেলবোর্ন,
অস্ট্রেলিয়া থেকে
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)