Translate

সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১২

কোথাও কেউ নেই

আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে আর বোন আসমা এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ফলাফলের অপেক্ষায়। এমন সময় ওদের দুজনকে দেখি আমরা। প্রথম দেখায়ই রনি ভাইয়ের নাজু আপাকে ভালো লেগেছিল। অচিরেই আমরা দুই বোন নাজু আপা আর রনি ভাইয়ের ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠলাম। কিন্তু কোন ফাঁকে তাদের দুজনের মধ্যে ভালোবাসা হয়ে গেছে আমরা টেরও পাইনি। কয়েক দিনের পরই নাজু আপা আমাদের সব খুলে বললেন। এমএ পরীক্ষা শেষ করে রনি ভাই চাকরি শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যে মহা ধুমধাম করে তাঁদের বিয়ে হলো। দুই বছরের মাথায় তাঁদের ঘর আলো করে এল আরিয়ান। এত সুন্দর ফুটফুটে ছেলে! কিন্তু ছোট্ট একটা ফুটো তার ছোট্ট হূৎপিণ্ডে। নাজু আপা, রনি ভাই দুজনেই স্বচ্ছল পরিবারের। চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি হয়নি। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা আর নাজু আপার অনেক মমতা আর যত্নে আরিয়ান অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিল। ছোট্ট বয়সে অপারেশনের ধকল নিতে পারবে না, তাই শেষ অস্ত্রোপচারটা একটু দেরিতেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওর বাবা-মা, হ্যাঁ চিকিৎসকের পরামর্শেই।
এর মধ্যে হঠাৎই নাজু আপার আব্বা মারা গেলেন, হার্ট অ্যাটাক। নানা ভাইয়ের জন্য অনেক মন খারাপ করল সাড়ে তিন বছর বয়সী আরিয়ান। বাবার মৃত্যুর শোক সামলে আরিয়ানকে নিয়ে নাজু আপা আর রনি ভাই ভারতে গেলেন। উপমহাদেশের বিখ্যাত শিশু হূদরোগ বিশেষজ্ঞ শেঠী আরিয়ানের অপারেশন করলেন। মা-বাবার সঙ্গে একই বিমানে দেশে ফিরে এসেছিল আরিয়ান কিন্তু হিমশীতল কফিনে করে।
আমরা দুই বোন, একসময় যারা ছিলাম নাজু আপার ছায়াসঙ্গী। দেখতে গেলাম ওঁদের। বিধ্বস্ত দুজনেই। তফাত একটাই, নাজু আপা অনবরত কথা বলছিলেন আর রনি ভাই বাক্রুদ্ধ। এরপর অনেক রাত তাঁরা ঘুমোতে পারেননি। ২৪ ঘণ্টা আলো জ্বালিয়ে রাখতেন। চোখ বন্ধ করতে গেলেই নাজু আপা দেখতেন আরিয়ান বিছানায়...।
সময় চলে যায়। জীবন বহিয়া চলে।
আবারও মা হওয়ার আকুতি রীতিমতো পাগল করে তোলে নাজু আপাকে।
জীবন চলে আপন গতিতে। নাজু আপার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা আত্মার। রক্তের বন্ধন স্থাপনের জন্য আম্মার অপারেশনের সময় জরুরি রক্ত প্রয়োজন। এগিয়ে এলেন আমাদের নাজু আপা। আম্মার প্রতি তাঁর মমতা-শ্রদ্ধা অন্য রকম! আরিয়ানকে ফিরে পাওয়ার জন্য আম্মার কাছে দোয়া চাইতেন, আম্মার কাছে বসে কাঁদতেন। কিছুদিনের মধ্যেই আবদুল্লাহ এল, আরিয়ানের রূপ ধরে। এখন ওর বয়স ছয় বছর। স্কুলে যায়। কিছুদিন আগে ওর আর্ট একজিবিশন হলো।
অনেক দিন নাজু আপার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। মোবাইল ফোনসেটের পরিবর্তন আর ফোন নম্বর না লিখে রাখার কারণে কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে নম্বর খুঁজে পেলাম। ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ফোন করলাম। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার ফোন পেয়ে নাজু আপা কী যে খুশি হয়েছিলেন, তা আমি এই সাত সমুদ্র তেরো নদী দুরে বসেও টের পাচ্ছিলাম। বললেন, আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছি, আমাকে অ্যাড করো। প্রোফাইল ছবি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। মনে হলো ১৮ বছর আগে প্রথম ওঁদের দেখেছিলাম কিন্তু একটুও যেন বদলাননি ওঁরা দুজন।
১ মার্চ দুপুরে বোন আসমার ফোন—রনি ভাই নেই। হার্ট অ্যাটাক! আরিয়ানের পাশেই শুইয়ে দেওয়া হয়েছে তার বাবাকে।
সালমা শফিক
মেলবোর্ন,
অস্ট্রেলিয়া থেকে

কোন মন্তব্য নেই:

FSS blog

FSS TSTL Photo Gallery

FSS TSTL Photo Gallery
Pictures

I like it

  • Bangla Song
  • Love
  • Move

what is love?

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

লেবেল

লেবেল

ভূমি (1) sex (6)

Wikipedia

সার্চ ফলাফল