আ ন ম আমিনুর রহমান
গত বছরের অক্টোবরে এক দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের দিকে যাচ্ছিলাম। প্রাণিচিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ অনুষদ ভবন থেকে সাত-আট মিনিটের পথ। প্রখর রোদ। সঙ্গে ক্যামেরাটা নিতে ভুলিনি। মিনিট চারেক হাঁটার পর যে মরা গাছটায় একবার একসঙ্গে ৭৫টি তিলামুনিয়া দেখেছিলাম, তার মগডালে দেখলাম ছোট একটা পাখি। কিন্তু প্রখর রোদের ঝলকে কোন প্রজাতির পাখি, তা শনাক্ত করা গেল না। পটাপট দুটো ছবি তুললাম। মনে হলো, যেন কাঠশালিক। বাসায় ফিরে সেদিন আর পিসিতে আপলোড করা হয়নি। দিন পনেরো পর যখন আপলোড করলাম, তখন ছবি দুটো নজরে এল। না, এগুলো কাঠশালিক নয়। ভালো করে পরীক্ষা করতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠল। এটি একনজর দেখার জন্য কত না ঘুরেছি; আর এখন সে আমার পিসিতে।
এর পর থেকে প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এর খোঁজ করতে লাগলাম। কিছুদিন পর এক পড়ন্ত বিকেলে অনুষদের সামনের আমলকী বাগানে ওর দেখা পেলাম। বুলবুলির তাড়া খেয়ে পালানোর সময় গ্র্যাজুয়েট ফ্যাকাল্টির সামনে আরেক দিন ও আমার ক্যামেরায় ধরা পড়ল। সাধারণত ছোট দলে ঘুরে বেড়ালেও আমি ওকে সব সময় একাই দেখেছি।
এতক্ষণ যার কথা বললাম, সে হলো শঙ্খশালিক বা বামনশালিক (Brahminy starling or mynah)। এ দেশের বিভিন্ন প্রজাতির শালিকের মধ্যে এরা অত্যন্ত দুর্লভ। মাথার ওপর ছোট্ট কালো টুপি ও ঝুঁটি থাকায় কালো-মাথা ময়না (Black-headed mynah) নামেও পরিচিত। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কোনো কোনো এলাকার গ্রামীণ পরিবেশে কদাচ দেখা মেলে। শঙ্খশালিকের বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus pagodarum।
প্রথম দর্শনে কাঠশালিক মনে হলেও মাথার কালো পালক দেখে সহজেই কাঠশালিক থেকে আলাদা করা যায়। এরা লম্বায় ২০-২২ সেন্টিমিটার। ওজনে ৪০-৫৪ গ্রাম। মাথার পালক ফোলালে ঝুঁটিটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্ত্রীর তুলনায় পুরুষের মাথার টুপি ও ঝুঁটি বড়। এদের চিবুক, ঘাড়, গলা, বুক ও পেট লালচে কমলা রঙের। পিঠ, ডানা ও লেজ ধূসর। লেজের আগা ও নিচটা সাদাটে। ঠোঁটের আগা হলুদ ও গোড়া নীলচে। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে পা, পায়ের নালা ও নখ হলুদ। বাচ্চাদের মাথার পালক ধূসর।
শঙ্খশালিক চষা জমি, ঘাসবন, ফলের বাগান, পাতাঝরা বন ও ঝোপ-জঙ্গলময় এলাকা পছন্দ করে। বিচরণ-উপযোগী জায়গা থাকলেও রহস্যজনক কারণে এ দেশে খুব অল্প সংখ্যায় দেখা মেলে। প্রধানত চার-সাতটির ছোট দলে বিচরণ করলেও এ দেশে সাধারণত একাকী বা জোড়ায় চরতে দেখা যায়। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এরা মানুষের আবাস এলাকা, বাগান, জমিতে ঘোরাফেরা করলেও মানুষের খুব কাছাকাছি আসে না। শঙ্খশালিক পাকা ফল, ফুলের নির্যাস ও কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। এরা মাটিতে ও ফুল-ফলের গাছে, এমনকি বিচরণরত গরু-মহিষের পেছন পেছন হেঁটে হেঁটে খাবার জোগাড় করে। শঙ্খশালিক ‘গু-উ-উইর-কুরতি-কেউই-আহ’ স্বরে ডাকে।
মে থেকে আগস্ট এদের প্রজননকাল। এরা ১২-২৫ ফুট উচ্চতার মধ্যে জুতসই কোনো গাছের খোঁড়লে বাসা বাঁধে। স্ত্রী শঙ্খশালিক তিন-চারটি হালকা নীল বা নীলচে সবুজ রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ মিলে ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ১২-১৪ দিনে।
গত বছরের অক্টোবরে এক দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের দিকে যাচ্ছিলাম। প্রাণিচিকিৎসা ও প্রাণিসম্পদ অনুষদ ভবন থেকে সাত-আট মিনিটের পথ। প্রখর রোদ। সঙ্গে ক্যামেরাটা নিতে ভুলিনি। মিনিট চারেক হাঁটার পর যে মরা গাছটায় একবার একসঙ্গে ৭৫টি তিলামুনিয়া দেখেছিলাম, তার মগডালে দেখলাম ছোট একটা পাখি। কিন্তু প্রখর রোদের ঝলকে কোন প্রজাতির পাখি, তা শনাক্ত করা গেল না। পটাপট দুটো ছবি তুললাম। মনে হলো, যেন কাঠশালিক। বাসায় ফিরে সেদিন আর পিসিতে আপলোড করা হয়নি। দিন পনেরো পর যখন আপলোড করলাম, তখন ছবি দুটো নজরে এল। না, এগুলো কাঠশালিক নয়। ভালো করে পরীক্ষা করতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠল। এটি একনজর দেখার জন্য কত না ঘুরেছি; আর এখন সে আমার পিসিতে।
এর পর থেকে প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এর খোঁজ করতে লাগলাম। কিছুদিন পর এক পড়ন্ত বিকেলে অনুষদের সামনের আমলকী বাগানে ওর দেখা পেলাম। বুলবুলির তাড়া খেয়ে পালানোর সময় গ্র্যাজুয়েট ফ্যাকাল্টির সামনে আরেক দিন ও আমার ক্যামেরায় ধরা পড়ল। সাধারণত ছোট দলে ঘুরে বেড়ালেও আমি ওকে সব সময় একাই দেখেছি।
এতক্ষণ যার কথা বললাম, সে হলো শঙ্খশালিক বা বামনশালিক (Brahminy starling or mynah)। এ দেশের বিভিন্ন প্রজাতির শালিকের মধ্যে এরা অত্যন্ত দুর্লভ। মাথার ওপর ছোট্ট কালো টুপি ও ঝুঁটি থাকায় কালো-মাথা ময়না (Black-headed mynah) নামেও পরিচিত। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কোনো কোনো এলাকার গ্রামীণ পরিবেশে কদাচ দেখা মেলে। শঙ্খশালিকের বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus pagodarum।
প্রথম দর্শনে কাঠশালিক মনে হলেও মাথার কালো পালক দেখে সহজেই কাঠশালিক থেকে আলাদা করা যায়। এরা লম্বায় ২০-২২ সেন্টিমিটার। ওজনে ৪০-৫৪ গ্রাম। মাথার পালক ফোলালে ঝুঁটিটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্ত্রীর তুলনায় পুরুষের মাথার টুপি ও ঝুঁটি বড়। এদের চিবুক, ঘাড়, গলা, বুক ও পেট লালচে কমলা রঙের। পিঠ, ডানা ও লেজ ধূসর। লেজের আগা ও নিচটা সাদাটে। ঠোঁটের আগা হলুদ ও গোড়া নীলচে। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে পা, পায়ের নালা ও নখ হলুদ। বাচ্চাদের মাথার পালক ধূসর।
শঙ্খশালিক চষা জমি, ঘাসবন, ফলের বাগান, পাতাঝরা বন ও ঝোপ-জঙ্গলময় এলাকা পছন্দ করে। বিচরণ-উপযোগী জায়গা থাকলেও রহস্যজনক কারণে এ দেশে খুব অল্প সংখ্যায় দেখা মেলে। প্রধানত চার-সাতটির ছোট দলে বিচরণ করলেও এ দেশে সাধারণত একাকী বা জোড়ায় চরতে দেখা যায়। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এরা মানুষের আবাস এলাকা, বাগান, জমিতে ঘোরাফেরা করলেও মানুষের খুব কাছাকাছি আসে না। শঙ্খশালিক পাকা ফল, ফুলের নির্যাস ও কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে। এরা মাটিতে ও ফুল-ফলের গাছে, এমনকি বিচরণরত গরু-মহিষের পেছন পেছন হেঁটে হেঁটে খাবার জোগাড় করে। শঙ্খশালিক ‘গু-উ-উইর-কুরতি-কেউই-আহ’ স্বরে ডাকে।
মে থেকে আগস্ট এদের প্রজননকাল। এরা ১২-২৫ ফুট উচ্চতার মধ্যে জুতসই কোনো গাছের খোঁড়লে বাসা বাঁধে। স্ত্রী শঙ্খশালিক তিন-চারটি হালকা নীল বা নীলচে সবুজ রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ মিলে ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ১২-১৪ দিনে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন