রূপসী বাংলা হোটেলের চেহারাটা অন্যদিনের চেয়ে বেশ খানিকটা অন্য রকম।
পুলিশের পোশাক গায়ে অনেকের ভিড়। খাকি, লাল, নীলসহ বিভিন্ন রঙের পোশাক দেখে
বোঝা যাচ্ছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশের উপস্থিতি
সেখানে। তবে পোশাকে অমিল থাকলেও এক জায়গায় মিল: তারা সবাই নারীপুলিশ। এশিয়া
অঞ্চলের প্রথম নারীপুলিশের সম্মেলনে যোগ দিতে সবাই এসেছেন। এদিক-ওদিক
চাইতেই পাওয়া গেল পরিচিত এক মুখ। জানা ছিল না, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুটি
পুলিশে যোগ দিয়েছেন। সেই বন্ধু সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফাতিহা ইয়াসমিন
বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঘর, সংসার, সন্তান এসব নিয়েও কথা হলো। তাঁর মতে, এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং পেশায়
কাজ করার ফলেই হয়তো তাঁর সন্তানটির দিকে স্বামী, শ্বশুরবাড়ির সবাই একটু
বাড়তি নজর দেন। এভাবে সবার সহযোগিতায় কর্মক্ষেত্রে অনেকটাই নিশ্চিন্ত মনে
কাজ করছেন তিনি।
৭ ও ৮ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘এশিয়ায় নারীপুলিশের নেতৃত্ব’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘প্রথম এশিয়া অঞ্চল নারী পুলিশ’ শীর্ষক সম্মেলনে মোট ১১টি দেশের ৩৯ জন নারীপুলিশ অংশ নেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে রূপসী বাংলা হোটেলে কথা হয় ফাতিহা ইয়াসমিনের সঙ্গে। এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেনস নেটওয়ার্ক।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল পুলিশ কমিশনার মিলি বিশ্বাস বাংলাদেশ থেকে ২০০০ সালে শান্তিরক্ষী মিশনে প্রথম নেতৃত্ব দেওয়া নারীপুলিশ। তখন মিশনে যাওয়ার জন্য নারীপুলিশ তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। বর্তমানে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের নারীপুলিশদের অবস্থান সবচেয়ে ভালো। শুধু নারীপুলিশদের নিয়ে দুটি দলও গঠন করা হয়েছে।
মিলি বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম পছন্দের তালিকায় নারীরা পুলিশের নাম লিখছে। আগে নারীপুলিশদের শাড়ি পরতে হতো, বর্তমানে নারী-পুরুষ সবাই একই পোশাক পরে কর্মক্ষেত্র সামলাচ্ছেন। সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা ও পেশাদারি মনোভাব কাজ করছে।
নারীপুলিশদের এ ধরনের নেতৃত্বের ফলেই ঢাকায় সম্মেলনটি করা সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত।
সম্মেলন ও অর্জন নিয়ে কিছু কথা
এশিয়া অঞ্চলের নারীপুলিশ সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের বোর্ড অব ডিরেক্টরদের বৈঠকও প্রথমবারের মতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি ১৮টি অঞ্চলে বিভক্ত। এশিয়া হচ্ছে অঞ্চল-১৫-এর সদস্য। ২০১৩ সাল পর্যন্ত অঞ্চল-১৫-এর সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর বিভাগ) উপকমিশনার আমেনা বেগম বলেন, যে দেশ থেকে সমন্বয়কারী নির্বাচিত হন সে দেশের ওপর দায়িত্ব বর্তায় সেই দেশে অঞ্চলটির একটি সম্মেলন করা। এর আগে ভারত সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করলেও সম্মেলন করতে পারেনি। সেদিক থেকে বাংলাদেশের নারীপুলিশ সফলভাবেই একটি সম্মেলন করতে পেরেছে।
কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে
বাংলাদেশে নারীপুলিশদের আজকের অবস্থানে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ১৯৭৪ সালে নারীরা প্রথম পুলিশ হিসেবে নিয়োগ পান। তবে তখন তাঁরা কাজ করতেন বিশেষ শাখায় সাধারণ পোশাকে। তাঁদের দায়িত্ব ছিল শুধু গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নারীদের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করা। ১৯৭৬ সালে নারীরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে নিয়োগ পান। ১৯৮৬ সালে প্রথম এএসপি (সুপারভাইজারি) পদে নারীপুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে সুপারভাইজারি পদে নারীদের বদলে শুধু পুরুষদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালে অষ্টম বিসিএস থেকে ১৭তম বিসিএস পর্যন্ত এ পদে নারীদের নিয়োগ বন্ধ ছিল। ফলে তৈরি হয় বিশাল শূন্যতা, যার জের বহন করতে হচ্ছে এখনো। বর্তমানে চার হাজার ৭১৪ জন নারীপুলিশ কর্মরত, যা মোট পুলিশের মাত্র চার শতাংশ। আরও ৯৩১ জন নিয়োগের অপেক্ষায়। সব মিলে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতে, পুলিশে ১০ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করতে হলেও কমপক্ষে ১৩ হাজার নারীপুলিশ থাকা প্রয়োজন ছিল।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কম
বর্তমানে চার হাজার ৭১৪ জন নারীপুলিশের মধ্যে কনস্টেবল পদেই আছেন চার হাজার ১৭ জন। আইজি এবং এডিশনাল আইজিপি পদে কোনো নারী নেই। ডিআইজি পদে আছেন দুই জন। এডিশনাল ডিআইজি পদে তিনজন, এসপি পদে পাঁচজন, এডিশনাল এসপি পদে ২৯ জন, এএসপি পদে ১০০ জন, ইন্সপেক্টর পদে ২৭ জন, এএসআই পদে ২৮৪ জন নারীপুলিশ কর্মরত। নারীপুলিশদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেনস নেটওয়ার্ক।
সম্মেলনের ঢাকা ঘোষণা
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে পুলিশিং ব্যবস্থাপনা, নারীপুলিশদের অবস্থান, নেতৃত্ব তৈরি, পেশাদারি ও মান উন্নয়ন, পারিবারিক নির্যাতন, নারীপাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রশিক্ষণে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। সম্মেলনের শেষ দিনে ঢাকা ঘোষণায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের প্রেসিডেন্ট জেন টাউনসলি এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ স্কুলের (ডিটিএস) কমান্ড্যান্ট ও নারীপুলিশ নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট রওশন আরা বেগম স্বাক্ষর করেন।
ঢাকা ঘোষণায় নারীপুলিশদের নেটওয়ার্ক জোরদারকরণ ও নেতৃত্ব বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নারীপুলিশদের পেশাদারি ও দক্ষতা বাড়ানোর প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়। নারীনির্যাতন প্রতিরোধ ও বৈষম্য বিলোপ করে নারীর মানবাধিকার রক্ষায়ও অঙ্গীকার করা হয় এ ঘোষণায়। নারীপুলিশ হিসেবে পুরষপুলিশের তুলনায় বেশি সুবিধা না নেওয়ার জন্যও সাবধানবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে এতে। পাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারকরণ, বিভিন্ন দেশের ভালো উদ্যোগগুলো গ্রহণ, নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র তৈরি, অবহেলিত সবার বিচারপ্রাপ্তিতে সহায়তা, নারীপুলিশ কেন প্রয়োজন তা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা ও নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করা, সর্বোপরি জেন্ডার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে এ ঘোষণায় মতৈক্য প্রকাশ করা হয়।
যেতে হবে আরও বহুদূর
১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম এএসপি পদে নিয়োগ পান ফাতেমা বেগম। তিনি বর্তমানে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল। সে সময়ের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ইতিবাচক। তার পরও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতার কারণে নারীপুলিশদের আরও সংগ্রাম করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত। তাঁদের মতে, একজন পুরুষপুলিশের চেয়ে বহুগুণ বেশি পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা দেখানোর সুযোগ পান নারীরা। ও তো নারী, ও কি পারবে, এত বড় ঘটনায় ওকে পাঠানো ঠিক হবে কি না—এ ধরনের ধারণা প্রথম বাধা হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে নারীচিকিৎসক বা অন্য পেশার নারী কর্মক্ষেত্রে রাত-দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করলেও কেউ প্রশ্ন তোলে না তাঁর সংসার কীভাবে চলছে। পুরুষপুলিশ বউ-বাচ্চা-সংসারে সময় দিয়ে কাজ করতে পারলেও নারীপুলিশের বেলায় সবাই আঙুল উঁচিয়ে জানতে চাইছে, সে পরিবারে কীভাবে সময় দেবে।
সাব-ইন্সপেক্টর পদের নিয়োগ বিধিমালায় বিয়েসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞায় নারীরা এ পদে কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এরও পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপমহাপরিদর্শক ইয়াসমিন গফুর, মিলি বিশ্বাস বা আমেনা বেগম তাঁদের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে পরিবার ও স্বামীর সহযোগিতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলেন। তাঁদের মতে, পরিবারের সহযোগিতা পাওয়াটা জরুরি। এই তিনজন বর্তমানের প্রতিযোগিতার বাজারে নারীপুলিশ হিসেবে দক্ষতা বাড়ানো ও তা প্রমাণ করার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিলেন। পুলিশের অপরাধ বিভাগ বা পুরষদের জন্য প্রযোজ্য যে বিভাগগুলোকে মনে করা হয় তাতে নারীদের নিজের যোগ্যতাতেই কাজ পেতে হবে এবং টিকে থাকতে হবে।
৭ ও ৮ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘এশিয়ায় নারীপুলিশের নেতৃত্ব’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘প্রথম এশিয়া অঞ্চল নারী পুলিশ’ শীর্ষক সম্মেলনে মোট ১১টি দেশের ৩৯ জন নারীপুলিশ অংশ নেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে রূপসী বাংলা হোটেলে কথা হয় ফাতিহা ইয়াসমিনের সঙ্গে। এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেনস নেটওয়ার্ক।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল পুলিশ কমিশনার মিলি বিশ্বাস বাংলাদেশ থেকে ২০০০ সালে শান্তিরক্ষী মিশনে প্রথম নেতৃত্ব দেওয়া নারীপুলিশ। তখন মিশনে যাওয়ার জন্য নারীপুলিশ তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। বর্তমানে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের নারীপুলিশদের অবস্থান সবচেয়ে ভালো। শুধু নারীপুলিশদের নিয়ে দুটি দলও গঠন করা হয়েছে।
মিলি বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম পছন্দের তালিকায় নারীরা পুলিশের নাম লিখছে। আগে নারীপুলিশদের শাড়ি পরতে হতো, বর্তমানে নারী-পুরুষ সবাই একই পোশাক পরে কর্মক্ষেত্র সামলাচ্ছেন। সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা ও পেশাদারি মনোভাব কাজ করছে।
নারীপুলিশদের এ ধরনের নেতৃত্বের ফলেই ঢাকায় সম্মেলনটি করা সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত।
সম্মেলন ও অর্জন নিয়ে কিছু কথা
এশিয়া অঞ্চলের নারীপুলিশ সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের বোর্ড অব ডিরেক্টরদের বৈঠকও প্রথমবারের মতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি ১৮টি অঞ্চলে বিভক্ত। এশিয়া হচ্ছে অঞ্চল-১৫-এর সদস্য। ২০১৩ সাল পর্যন্ত অঞ্চল-১৫-এর সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর বিভাগ) উপকমিশনার আমেনা বেগম বলেন, যে দেশ থেকে সমন্বয়কারী নির্বাচিত হন সে দেশের ওপর দায়িত্ব বর্তায় সেই দেশে অঞ্চলটির একটি সম্মেলন করা। এর আগে ভারত সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করলেও সম্মেলন করতে পারেনি। সেদিক থেকে বাংলাদেশের নারীপুলিশ সফলভাবেই একটি সম্মেলন করতে পেরেছে।
কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে
বাংলাদেশে নারীপুলিশদের আজকের অবস্থানে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ১৯৭৪ সালে নারীরা প্রথম পুলিশ হিসেবে নিয়োগ পান। তবে তখন তাঁরা কাজ করতেন বিশেষ শাখায় সাধারণ পোশাকে। তাঁদের দায়িত্ব ছিল শুধু গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নারীদের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করা। ১৯৭৬ সালে নারীরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে নিয়োগ পান। ১৯৮৬ সালে প্রথম এএসপি (সুপারভাইজারি) পদে নারীপুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে সুপারভাইজারি পদে নারীদের বদলে শুধু পুরুষদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালে অষ্টম বিসিএস থেকে ১৭তম বিসিএস পর্যন্ত এ পদে নারীদের নিয়োগ বন্ধ ছিল। ফলে তৈরি হয় বিশাল শূন্যতা, যার জের বহন করতে হচ্ছে এখনো। বর্তমানে চার হাজার ৭১৪ জন নারীপুলিশ কর্মরত, যা মোট পুলিশের মাত্র চার শতাংশ। আরও ৯৩১ জন নিয়োগের অপেক্ষায়। সব মিলে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতে, পুলিশে ১০ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করতে হলেও কমপক্ষে ১৩ হাজার নারীপুলিশ থাকা প্রয়োজন ছিল।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কম
বর্তমানে চার হাজার ৭১৪ জন নারীপুলিশের মধ্যে কনস্টেবল পদেই আছেন চার হাজার ১৭ জন। আইজি এবং এডিশনাল আইজিপি পদে কোনো নারী নেই। ডিআইজি পদে আছেন দুই জন। এডিশনাল ডিআইজি পদে তিনজন, এসপি পদে পাঁচজন, এডিশনাল এসপি পদে ২৯ জন, এএসপি পদে ১০০ জন, ইন্সপেক্টর পদে ২৭ জন, এএসআই পদে ২৮৪ জন নারীপুলিশ কর্মরত। নারীপুলিশদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেনস নেটওয়ার্ক।
সম্মেলনের ঢাকা ঘোষণা
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে পুলিশিং ব্যবস্থাপনা, নারীপুলিশদের অবস্থান, নেতৃত্ব তৈরি, পেশাদারি ও মান উন্নয়ন, পারিবারিক নির্যাতন, নারীপাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রশিক্ষণে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। সম্মেলনের শেষ দিনে ঢাকা ঘোষণায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের প্রেসিডেন্ট জেন টাউনসলি এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ স্কুলের (ডিটিএস) কমান্ড্যান্ট ও নারীপুলিশ নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট রওশন আরা বেগম স্বাক্ষর করেন।
ঢাকা ঘোষণায় নারীপুলিশদের নেটওয়ার্ক জোরদারকরণ ও নেতৃত্ব বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নারীপুলিশদের পেশাদারি ও দক্ষতা বাড়ানোর প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়। নারীনির্যাতন প্রতিরোধ ও বৈষম্য বিলোপ করে নারীর মানবাধিকার রক্ষায়ও অঙ্গীকার করা হয় এ ঘোষণায়। নারীপুলিশ হিসেবে পুরষপুলিশের তুলনায় বেশি সুবিধা না নেওয়ার জন্যও সাবধানবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে এতে। পাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারকরণ, বিভিন্ন দেশের ভালো উদ্যোগগুলো গ্রহণ, নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র তৈরি, অবহেলিত সবার বিচারপ্রাপ্তিতে সহায়তা, নারীপুলিশ কেন প্রয়োজন তা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা ও নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করা, সর্বোপরি জেন্ডার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে এ ঘোষণায় মতৈক্য প্রকাশ করা হয়।
যেতে হবে আরও বহুদূর
১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম এএসপি পদে নিয়োগ পান ফাতেমা বেগম। তিনি বর্তমানে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল। সে সময়ের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ইতিবাচক। তার পরও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতার কারণে নারীপুলিশদের আরও সংগ্রাম করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত। তাঁদের মতে, একজন পুরুষপুলিশের চেয়ে বহুগুণ বেশি পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা দেখানোর সুযোগ পান নারীরা। ও তো নারী, ও কি পারবে, এত বড় ঘটনায় ওকে পাঠানো ঠিক হবে কি না—এ ধরনের ধারণা প্রথম বাধা হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে নারীচিকিৎসক বা অন্য পেশার নারী কর্মক্ষেত্রে রাত-দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করলেও কেউ প্রশ্ন তোলে না তাঁর সংসার কীভাবে চলছে। পুরুষপুলিশ বউ-বাচ্চা-সংসারে সময় দিয়ে কাজ করতে পারলেও নারীপুলিশের বেলায় সবাই আঙুল উঁচিয়ে জানতে চাইছে, সে পরিবারে কীভাবে সময় দেবে।
সাব-ইন্সপেক্টর পদের নিয়োগ বিধিমালায় বিয়েসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞায় নারীরা এ পদে কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এরও পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপমহাপরিদর্শক ইয়াসমিন গফুর, মিলি বিশ্বাস বা আমেনা বেগম তাঁদের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে পরিবার ও স্বামীর সহযোগিতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলেন। তাঁদের মতে, পরিবারের সহযোগিতা পাওয়াটা জরুরি। এই তিনজন বর্তমানের প্রতিযোগিতার বাজারে নারীপুলিশ হিসেবে দক্ষতা বাড়ানো ও তা প্রমাণ করার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিলেন। পুলিশের অপরাধ বিভাগ বা পুরষদের জন্য প্রযোজ্য যে বিভাগগুলোকে মনে করা হয় তাতে নারীদের নিজের যোগ্যতাতেই কাজ পেতে হবে এবং টিকে থাকতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন