Translate

রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোম একটি বিব্রতকর সমস্যা তানজিনা হোসেন |

বিব্রত হওয়ার কিছু নেই, যথাযথ চিকিত্সায় এ ধরনের সমস্যায় প্রতিকার পাওয়া যায়হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল।

মেয়েটির আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা। কালো হিজাবের মধ্যে সুন্দর টানা টানা চোখ কেবল দেখা যায়। বয়স ১৫ কি ১৬। মুখের কাপড় সরাতে এই কঠিন পর্দার কারণটা বোঝা গেল। মেয়েটির ঠোঁটের ওপর, চিবুক, কপাল ও জুলপির কাছে ঘন লোমের রেখা; উঠতি বয়সের ছেলেদের যেমনটা দেখা যায়। এর জন্য বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে নিশ্চয় অনেক হেনস্তা হতে হয়েছে তাকে। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতেই তার এই মুখ ঢেকে চলা; স্বীকার করল মেয়েটি ছলছল চোখে। সঙ্গে রয়েছে আরেক উপদ্রব—অনিয়মিত মাসিক। এক মাস হয় তো দুই মাস হয় না। বাড়িতে মা দুশ্চিন্তায় অস্থির। শেষ পর্যন্ত দূর-সম্পর্কের এক চিকিৎসক-আত্মীয়ার সঙ্গে কথা বলে মা বুঝেছেন যে হরমোনের সমস্যার কারণে মেয়েদের এসব সমস্যা দেখা দেয়। আর এর সুনির্দিষ্ট সহজ চিকিৎসাও আছে।

অবাঞ্ছিত লোম: কী ও কেন
আর সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো মানুষের শরীর সূক্ষ্ম লোম বা চুলে ঢাকা। এর মধ্যে বিশেষ বিশেষ স্থানে চুলের বৃদ্ধি ও গড়ন হরমোনের ওপর নির্ভরশীল। কৈশোরে পুরুষালি হরমোন এন্ড্রোজেনের প্রভাবে কিশোর ছেলেদের দাড়ি-গোঁফ গজায়; বুক, তলপেট ও ঊরুতে চুল বাড়ে, জুলপি বড় হয়। মেয়েদের শরীরে এন্ড্রোজেন খুবই কম মাত্রায় থাকে বলে এসব স্থানে ছেলেদের মতো চুল গজায় না। তবে মেয়েদের দেহে কখনো পুরুষালি হরমোন এন্ড্রোজেনের আধিক্য দেখা দিলে এমনটা হতে পারে। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মেয়ের এমনিতেই কোনো কারণ ছাড়াই শরীরে বেশি চুল থাকে। এ জন্য পরিবারে মা-বোনদের এ রকম ছিল কি না, তা জানা দরকার। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত লোমের অধিকারী মেয়েরা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত। এরা সাধারণত ওজনাধিক্য বা স্থূলতায় ভোগে, কৈশোরে অবাঞ্ছিত লোম, অনিয়মিত মাসিক ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত হয়, এদের মুখে ব্রণও বেশি হয়। হরমোন পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এদের শরীরে পুরুষালি হরমোন এন্ড্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি, মেয়েলি হরমোনগুলোতেও কিছু তারতম্য আছে। এই মেয়েদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে চর্বির আধিক্য হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। পরবর্তী সময় এদের একটি বড় অংশ বন্ধ্যতা সমস্যায় ভোগে।
যদি অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা খুব দ্রুত সময়ে অনেক মারাত্মক আকারে দেখা দেয়, তবে দেখতে হবে শরীরে এন্ড্রোজেন নিঃসরণকারী কোনো টিউমার বা ক্যানসার হয়েছে কি না। স্টেরয়েড ট্যাবলেট খেলে বা দেহে স্টেরয়েড হরমোনের আধিক্য থাকলেও অবাঞ্ছিত লোম বেশি হয়।
বিব্রত হওয়ার কিছু নেই
সত্যিই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রথমেই দেখতে হবে, অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন এন্ড্রোজেন কোথা থেকে নিঃসৃত হচ্ছে; যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাইরে থেকে ইনজেকশন বা দেহের অভ্যন্তরে কোনো টিউমার নেই, তবে অন্যান্য প্রমাণের নিরিখে পলিসিস্টিক ওভারি আছে বলে ধরে নেওয়া যায়। মজার ব্যাপার, এই কিশোরীরা ওজন কমাতে সমর্থ হলেই নানা সমস্যা আপনাআপনিই সেরে যায়। যথাযথ খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন অনেকখানি কমাতে পারলে মাসিক নিয়মিত হয়, লোম কমে আসে এবং ব্রণও কমে যায়। ওজন ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে অনেক সময় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। মাসিক নিয়মিত করার জন্য কখনো জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা অন্যান্য হরমোনজাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে কৈশোরেই এদের ভবিষ্যৎ ডায়াবেটিস ও রক্তে চর্বির ঝুঁকি সম্পর্কে সাবধান হতে হবে, পরীক্ষা করতে হবে এবং পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে হবে। এই মেয়েরা পরবর্তী সময়ে গর্ভবতী হলে অবশ্যই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
দরকার ধৈর্য ও সঠিক জীবনাচরণ
আমাদের শরীরে একটি চুলের আয়ু প্রায় ছয় মাস। তাই চিকিৎসায় ফল পেতে ছয় মাসের বেশি সময় লেগে যেতে পারে। তাই এই রোগের চিকিৎসায় প্রথমেই দরকার ধৈর্য। অবাঞ্ছিত লোম ওঠানোর অনেক পদ্ধতি আছে, যেমন—থ্রেডিং, ব্লিচিং, শেভ করা, ইলেকট্রলাইসিস বা ডায়াথারমির মাধ্যমে হেয়ার রিমুভ করা। চিকিৎসার পাশাপাশি এসব পদ্ধতিও প্রয়োগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি ওজন কমানো, সঠিক জীবনাচরণ মেনে চলা ও একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা তো চলবেই। কিশোরীর এই ব্রিবতকর সমস্যায় তাই অযথা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা না করে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা ও চিকিৎসা নেওয়াটা জরুরি।

কোন মন্তব্য নেই:

FSS blog

FSS TSTL Photo Gallery

FSS TSTL Photo Gallery
Pictures

I like it

  • Bangla Song
  • Love
  • Move

what is love?

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

লেবেল

লেবেল

ভূমি (1) sex (6)

Wikipedia

সার্চ ফলাফল