বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

সাহারার বদলের দিন

সাহারা। কজনই বা চিনত তাঁকে। মাত্র কয়েক বছর আগের কথা। এফডিসিতে পা দিয়েই তিনি বুঝতে পারেন, এ জায়গায় তাঁর কোনো কদর নেই। শুটিং শেষ করে রাতে বাসায় ফিরবেন কী করে? সেদিকেও কোনো খেয়াল নেই যেন কারও। এফডিসির ভেতরে অপেক্ষা করতে করতে একটি অটোরিকশা মিললে, তবেই না ঘরে ফেরা হতো।
ছবিতে কাজ শুরুর পর আকস্মিকভাবেই বাবা মারা গেলেন। মেয়েটি এসএসসির পর আর পড়াশোনা করতে পারলেন না। যেন একাই সংসারের সব দায়িত্ব তুলে নিলেন। তিন-চার মাস পরে দ্বিতীয় সারির নায়কদের সঙ্গে একটি ছবি পেলেন। সেটিই যেন আকাশের চাঁদ তাঁর কাছে। ছবিতে যখন খুব কষ্টের দৃশ্যে কাজ করতেন, তখন মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা সব কষ্ট অনুভব করে কাঁদতেন। রূপসজ্জাকর এক দিন বললেন, ‘এই মেয়ে, তুমি কান্নার দৃশ্যের সময় চোখে গ্লিসারিন না দিয়ে কাঁদো কীভাবে?’
সাহারার মুখে তখন বিষণ্ন হাসি। কোনো উত্তর দিতে পারেননি সেদিন।
আজকের দিনগুলোতে সাহারা কী করেন?
পুরো দৃশ্যপটেরই পরিবর্তন হয়েছে। এখন সাহারা দামি গাড়ি চালান, তাঁর দুজন সহকারী আছেন। শুটিংয়ে আসামাত্র তাঁর মাথার ওপর ছাতা ধরা হয়। আলাদা চেয়ার রাখা হয়। তাঁর সেবায় নিয়োজিত থাকেন প্রডাকশন বয়রা।
কিন্তু কীভাবে? সাহারা কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন?
না।
তাহলে?
একটি ছবি বদলে দিয়েছে সাহারার জীবন, প্রিয়া আমার প্রিয়া। একটি ছবির গুণে সাহারা এখন এই সময়ে জনপ্রিয় নায়িকাদের একজন। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই মুক্তি পেল সাহারা অভিনীত ৫০তম ছবি আমার চ্যালেঞ্জ। মুক্তির প্রথম দিন থেকেই ছবিটি পেয়েছে ব্যবসায়িক সাফল্য।
বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছেন তিনি। চলচ্চিত্রের আকালের বাজারে যেখানে অনেক শিল্পী এখন প্রায় বেকার বলা যায়, সেখানে সাহারা মাসের ৩০ দিনের মধ্যে ২০ দিন শুটিং করছেন। প্রতিটি ছবিতেই তাঁর বিপরীতে আছেন শাকিব খান।
জিজ্ঞেস করি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগফল কী?
‘এখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি হয়নি। তবে হয়ে যাবে।’
বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি। হবে, কীভাবে বুঝলেন?
‘আমার ছবিগুলো আমাকে সেই আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। প্রিয়া আমার প্রিয়া ছবির পরে শাকিবের সঙ্গে আমাদের ছোট সাহেব ছবিটি মুক্তি পেল। এই ছবিটি প্রমাণ করল, অভিনয় জানলে যেকোনো চ্যালেঞ্জিং কাজ করা যায়। সেবারই মুক্তি পেয়েছিল শাবনূর আপার ছবি এক টাকার বউ। সেই ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে আমার ছবি। এরপর অনেকেই বলত যে শাকিবের উপস্থিতির জন্যই নাকি আমার ছবিগুলো চলছে। আমি বলেছি, শাকিবের উপস্থিতি যেকোনো ছবি ও শিল্পীর জন্য অনেকটা ইতিবাচক। তাই বলে অন্য শিল্পীরা যদি কাজ না জানেন, তাহলে তো আর সেই কাজটাও শাকিব করবেন না। আমি স্বীকার করব, শাকিব সে সময় আমাকে বন্ধুর মতোই সহযোগিতা করেছেন। আমি কিন্তু ইমন ও মারুফের সঙ্গেও ছবিতে কাজ করেছি এবং সফল হয়েছি। এর পরই আসলে নির্মাতাদের কাছে আস্থার জায়গাটি পেয়েছি,’ বলছিলেন সাহারা।
বর্তমানে সাহারার হাতে যে ছবিগুলো আছে, সেগুলোর কাজ শেষ হতে হতে ২০১২ শেষ হয়ে যাবে। তাঁর লক্ষ্য এখন একটাই, কাজ কম করলেও এমন ছবিতে তিনি অভিনয় করতে চান, যে ছবিগুলোতে তিনি নিজেকে খুঁজে পাবেন। জানালেন, গল্প ভালো না লাগলে তিনি কাজটি মন থেকে করার মতো উৎসাহ পান না। তাই এ নিয়ে দু-একজনের সঙ্গে তাঁর ভুল-বোঝাবুঝিও হয়েছে। তবু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় সাহারা। বললেন, ‘আমি ছোট মানুষ। কোনো কথা বললে কে কী মনে করবে, তাই কাউকে কিছু বলি না। শুধু জানাই যে আমার শিডিউল নেই।’
সাহারার দিন বদলেছে। কিন্তু অতীতের সেই দিনগুলোর কথা ভোলেননি। শুটিং শেষ করে মাঝরাতে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন গাড়ি চালাতে চালাতে মনে পড়ে দুঃসহ দিনগুলোর কথা। কষ্টের কথা। সেই সাহারা কিনা আজ রুপালি পর্দার প্রিয় মুখ। সব কষ্টের স্মৃতির মধ্যেও আনন্দে চোখ ছলছল করে ওঠে তখনই, যখন ছোট্ট ভাইটির কথা মনে পড়ে। নিজে পড়াশোনা না করতে পারলেও, ভাইটিকে সাহারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছেন।

কোন মন্তব্য নেই: