ফ্রিল্যান্সিংয়ের সেরা কিছু কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন…
ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টঃ এই সময়ে বিশ্বের ছোট-বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রায় সব ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে । সবাই নিজের একটি ভার্চুয়াল ঠিকানা চাচ্ছেন। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান একদিকে যেমন এর গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে, অপরদিকে বিভিন্ন শহরে বা দেশে অবস্থিত নিজ নিজ শাখার সাথে সহজে এবং কম খরচে যোগাযোগ করতে পারে। আর এ কারনেই ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে।
ওয়েব ডিজাইন হচ্ছে একটা ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে তা নির্ধারণ করা। ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে আপনার কাজ হবে একটা পূর্ণাঙ্গ ওয়েব সাইটের টেম্পলেট বানানো। যেমন ধরুন এটার লেআউট কেমন হবে, হেডারে কোথায় মেনু থাকবে, সাইডবার হবে কিনা, ইমেজগুলো কিভাবে থাকবে ইত্যাদি।
একটি সাধারণ ওয়েব পেইজ ডিজাইন করতে সাধারনত ব্যবহার হয় HTML, CSS এর মত মার্ক আপ ল্যাঙ্গুয়েজ। ভাল মানের ওয়েব পেইজ ডিজাইন করতে হলে আরও কিছু ল্যাঙ্গুয়েজ জানা লাগে, যেমন- JavaScript (Basic), JQuery, PHP, HTML5, CSS3 ইত্যাদি । ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে ওয়েবসাইটের জন্য এপ্লিকেশন তৈরী করা। যেমন লগিন সিস্টেম, নিউজলেটার সাইনআপ, ফাইল আপলোড করে ডেটাবেসে সেভ করা,ইমেজ ম্যানিপুলেশন, পেজিনেশন, যদি সাইটে বিজ্ঞাপন থাকে তাহলে প্রতিবার পেজ লোড হওয়ার সময় বিজ্ঞাপনের পরিবর্তন এগুলি এপ্লিকেশন, ওয়েব এপ্লিকেশন ইত্যাদি।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে ওয়েব ডিজাইনার এবং ওয়েব ডেভেলপারদের অনেক চাহিদা রয়েছে। অনলাইনে উপার্জনের যতগুলো মাধ্যম রয়েছে, তার মধ্যে ওয়েব সাইট ডিজাইন ও ডেভলপমেন্ট হচ্ছে সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ ক্ষেত্র। ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভেলপার হতে হলে আপনার প্রচুর ধৈর্য আর সময়ের দরকার ।
গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন বর্তমান সময়ে একটি জনপ্রিয় পেশা। এ কাজটি একই সাথে আনন্দদায়ক এবং সৃজনশীল।নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ, জানতে হবে নিত্য-নতুন কলা-কৌশল। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম হল গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্স ডিজাইন এমনি একটি ক্ষেত্র, যার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে।
আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াম লেবেল এর গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা Free lancer হিসাবে কাজ করে ঘণ্টা প্রতি ২০-৩০ ডলার আয় করতে পারে । যেসব কাজ পাবেন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলিতেঃ লোগো ডিজাইন,বিজনেস কার্ড ডিজাইন, ব্যানার/ পোস্টার ডিজাইন, বুক কাভার ডিজাইন, ওয়েব সাইটের জন্য পিএসডি তৈরি, স্টিকার ডিজাইন, প্রোডাক্ট হলোগ্রাম ডিজাইন, ইমেজ এডিটিংএন্ড রিসাইজ, ফটো রিটাচিং, স্কেচ তৈরি/ড্রয়িং করা ইত্যাদি।
অনলাইনে আয়ের মাধ্যম ডিজাইন প্রতিযোগিতা বিড করে কাজ যোগাড় ডিজাইন বিক্রি। কোথায় কাজ পাবেনঃ ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পত্রিকা/ম্যাগাজিন/প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অনলাইন মার্কেট প্লেইস প্রিন্টিং এবং ডিজাইনিং প্রতিষ্ঠান ডিজাইনের কাজের জন্য প্রয়োজন টুলস এবং সফটওয়্যার । গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য ব্যবহৃত দুটি সফটওয়্যার Adobe Photoshop এবং Adobe Illustrator । আর আপনার যদি আঁকাআঁকি করতে ভালো লাগে তাহলে সেটা অবশ্যই প্লাস পয়েন্ট।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংঃ আপনি যদি অনলাইন থেকে কারো পন্য বিক্রি করে দিতে পারেন তাহলে আপনিও সেই পন্য থেকে কিছু টাকা কমিশন পাবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে একজন দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার হতে হবে। আর আপনি যখন আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং স্কিল টা ব্যবহার করে অন্য কারও প্রডাক্ট অথবা সার্ভিস কমিশন ভিত্তিক প্রমোশন করবেন সেটা হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোডাক্ট মূলত ২ প্রকারের।
1. ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট।
2. ডিজিটাল প্রোডাক্ট।
ফিজিক্যাল প্রোডাক্টের জন্য আদর্শ মার্কেটপ্লেস গুলো হচ্ছে অ্যামাজন, ইবে ইত্যাদি। ডিজিটিাল প্রোডাক্টের জন্য আদর্শ মার্কেটপ্লেস গুলো হচ্ছে ক্লিকব্যাংক, জেভিযু, কমিশন জাংকশন ইত্যাদি।
ব্লগিংঃ ব্লগিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রায় একই বিষয়। ব্লগিং হচ্ছে আপনার আইডিয়া শেয়ারের অন্যতম মাধ্যম। ব্লগ থেকে আয়ের প্রধান উৎসটি হলো বিজ্ঞাপন। একটি ব্লগ খুলে আপনি যদি বেশ ভাল সংখ্যক ভিজিটর আনতে পারেন তাহলে আপনি ব্লগিং করেও বেশ ভাল অর্থ আয় করতে পারেন। এখানে, ভিজিটর হচ্ছে যারা আপনার ব্লগ পড়বে অর্থাৎ আপনার ব্লগের পাঠক। ব্লগ কে আপনি আপনার ডায়েরীর সাথে তুলনা করতে পারেন।
আপনি আপনার প্রতিদিনকার ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা, কবিতা, গান, শখ,তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে সম্পূর্ণ মুক্ত ভাবে লিখে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি নিজেকে,আপনার চিন্তা-চেতনা, আপনার দেশ-সংস্কৃতি-কালচার শেয়ার করছেন সারা পৃথিবীর সাথে। এছাড়া আপনার পণ্য-দ্রব্য- লেখা ও তুলে ধরতে পারেন বিশ্ববাসীর কাছে। ব্লগিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে প্রতিমাসে ২ থেকে ১০ হাজার ডলার আয় করছেন এমন সফল ফ্রিল্যান্সার এর সংখ্যা এখন অনেক।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO): সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কাছে যেকোন কিছু (ওয়েবসাইট/ব্লগ/প্রোডাক্ট ইত্যাদি) জনপ্রিয় করে তোলাই হল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য গুলো এ রকম
1. একটি সাইটকে সকলের কাছে সহজে পৌছে দেওয়া।
2. ওয়েব সাইটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা।
3.সাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি করা।
4.তথ্য বিনিময় ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার শক্ত আবস্থান তৈরি করা।
এসইও ২ ধরনের হয়। হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO): নিয়মনীতি না ভেঙ্গে যদি এসইও করা হয় ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO): সার্চ ইঞ্জিনের নিয়মনীতি ভেঙ্গে যে এসইও করা হয় এসইও এর মাধ্যমে সহজেই আয় করা যায় । কোন প্রোগ্রামিং ভাষা জানার তেমন দরকার নাই বিধায় এই কাজ অতি সহজে রপ্ত করে দ্রুত কাজ শুরু করা যায় বলে বিশ্বব্যাপী এই কাজে নিয়োজিত আছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।
ডাটা এন্ট্রিঃ শুধু মাত্র ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুটা করতে পারেন । ডাটা এন্ট্রি বলতে মুলত টাইপ করা বুঝায়। কাগজে লেখা আছে সেটা দেখে টাইপ করে ডিজিটাল ফাইল তৈরী করবেন। সময়ের সাথে সাথে ডাটা এন্ট্রির ধরনও অনেক পাল্টেছে। বর্তমানে ডাটা এন্ট্রি বলতে মুলত পিডিএফ ফাইল দেখে টাইপ করাই বুঝায়। ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য MS Word, MS Excelএবং MS PowerPoint জানা থাকতে হবে । তবে বিশেষ করে মাইক্রোসফট এক্সেল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হয় । তবে typing speed এবং mouse handling speedএ firstথাকা টা খুব দরকার ।
ইংরেজীতে তে মোটামুটি দক্ষতা থাকতে হয়। তার সাথে রয়েছে ইন্টারনেটে সার্চ করে কোন একটি তথ্য খুঁজে পাবার দক্ষতা এবং বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট, ফোরাম, ওয়েব ডাইরেক্টরী সম্পর্কে ভাল ধারণা। যারা এখনো ভাবছেন কি করা যায়, দ্বিধা-দ্বন্দে দিন কাটাচ্ছেন, তারা যে কোন একটা বিষয় নিয়ে শুরু করে দিন ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ। দেশে বিদেশে আপনার জন্য আনেক কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত রয়েছে।
লেখক: সিরাজুম মুনিরা/ ডিজাইনার ও ফ্রিল্যান্সার
ক্যারিয়ার গড়তে আউটসোসিং এর ক্ষেত্র চিনুন…
আসুন আমরা প্রথমে শব্দ দুটোর সাথে পরিচিত হই।
আপাত দৃষ্টিতে ফ্রীলান্সিং এবং আউটসোর্সিং একই অর্থে ব্যবহার করা হলেও দুটোর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে।
আউটসোর্সিং বলতে আমরা বুঝি ঘরে বসে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কাজ করে আয় করা।
ফ্রীলান্সিং হচ্ছে স্বাধীন ভাবে কোন কাজ করা। মুক্ত পেশা। যেমন ধরুন, ব্যবসায় করা। এখানে আপনার কোন অফিসিয়াল প্রেসার নাই, আপনি নিজেই নিজের বস। এক্ষেত্রে শুধু ফ্রীলান্সিংকে একক ভাবে আউটসোর্সিং বলা চলে না। আবার নিজ দেশের কাজ বা স্থানীয় কাজকেও আউটসোর্সিং বলা যায় না।
তবে যেহেতু ইন্টারনেটে কাজ করা নিজের স্বাধীনতার উপর নির্ভর করে, তাই আউটসোর্সিং ও ফ্রীলান্সিং শব্দ দুটি একই অর্থে ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্র সমুহঃ
• COMPUTER PROGRAMMING,
• WEB DESIGN,
• ৃGRAPHIC DESIGN,
• WEBSITE DEVELOPMENT,
• VIDEO EDITING,
• VIDEO PRODUCTION,
• TRANSLATING,
• ILLUSTRATING
• MUSIC
• JOURNALISM
• PUBLISHING
• SCREENWRITING,
• FILM MAKING,
• ACTING,
• PHOTOJOURNALISM,
• COSMETICS,
• FRAGRANCES,
• EDITING,
• PHOTOGRAPHY,
• EVENT PLANNING,
• EVENT MANAGEMENT,
• COPY EDITING,
• PROOFREADING,
• AUTHOR EDITING,
• INDEXING,
• COPY WRITING,
• WRITING,
• CONSULTING,
• TOUR GUIDING,
• POST-SECONDARY EDUCATION,
ইত্যাদি
ফ্রীলান্সিং মার্কেটপ্লেসে হাজার হাজার কাজ আপেক্ষা করছে আপনার জন্য । ফ্রীলান্সিং এ সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি, সেটি হল আত্মবিশ্বাস । আপনাকে নিজের উপর প্রচুর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে । তার আগে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। হুজুগে নয় বরং নিজেকেই প্রশ্ন করুন আপনার পছন্দের বিষয় কোনটি । তারপর প্রয়োজনীয় ট্রেনিং আর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করুন আজ থেকেই।
আপনি এখন ভাবতে থাকুন আদৌও ফ্রীলান্সিং পেশায় আসবেন কিনা? আর আসতে চাইলে কোন বিষয়টা আপনি মন থেকে পছন্দ করছেন…।
চলবে…
লেখক: সিরাজুম মুনিরা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন