রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

হারিয়ে যাওয়া টাইটানিক, খুঁজে পাওয়া টাইটানিক

বলো তো, পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত জাহাজ কোনটা? কেন, টাইটানিক। যে জাহাজটিকে বলা হচ্ছিল কখনোই ডুববে না, সেই জাহাজটিই কিনা ডুবে গিয়েছিল প্রথমবারের মতো সাগরে ভেসেই। টাইটানিক কবে ডুবে গিয়েছিল, মনে আছে? ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল। মানে, এই বছর ১৫ এপ্রিল টাইটানিক ডুবে যাওয়ারও ১০০ বছর হয়ে যাচ্ছে। তবে এ বছর টাইটানিক প্রেমীদের জন্য একটা সুখবরও আছে- এ বছরই টাইটানিকের ডুবে যাওয়া ধ্বংসাবশেষকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। মানে, এখন আর চাইলেই কেউ টাইটানিক দেখতে গিয়ে টাইটানিকের ক্ষতি করতে পারবে না। আর টাইটানিকের মালপত্র সরানো তো যাবেই না।
টাইটানিক হারিয়ে যাওয়ার গল্প
টাইটানিকের গল্প তো তোমরা জানোই, কী বিশালই না ছিল এই টাইটানিক। প্রায় তিন-তিনটা ফুটবল মাঠের সমান। শুধু কী তাই? সেই কবেকার এই জাহাজটিতে ছিল একটা বিশাল সুইমিং পুল, যেখানে গরম পানিরও বন্দোবস্ত ছিল। ছিল আরাম-আয়েশ আর বিলাস-এর সব ব্যবস্থাই। সব মিলিয়ে যাকে বলে এক ভাসমান সুরম্য প্রাসাদ। আর তাই দেখ না, টাইটানিক সিনেমায় যখন জাহাজটিকে দেখ, মনেই হয় না ওটা সেই ১৯১২ সালের জাহাজ। বাজারে তো এমন কথাও রটে গেল, স্বয়ং ঈশ্বরও এই জাহাজকে ডোবাতে পারবেন না, এমনই মজবুত এই টাইটানিক!

এমন একটা জাহাজ, আর তাতে রাজ্যের যতো বড়লোকরা চড়বে না, তাই কী হয়? রীতিমতো হুড়োহুড়ি করে বিক্রি হল টাইটানিকের প্রথম যাত্রার টিকিট। প্রথম যাত্রার রুট ছিল ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন শহর থেকে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর। ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে রওয়ানা হল তখনকার সবচাইতে বড় আর সবচাইতে বিলাসী জাহাজ। যারা জাহাজটির প্রথম ভ্রমণে যাত্রী হতে পারলো, তাদের তো খুশি আর ধরে না। সারাদিনই যেন জাহাজে পার্টি হচ্ছে, এমন অবস্থা। এমনি করেই পার হয়ে গেল কয়েকটি দিন।

১৪ এপ্রিল, রাত প্রায় ১২টা। আটলান্টিক সাগরের বুকে ভেসে যাচ্ছে টাইটানিক। তখন টাইটানিক আমেরিকার কাছাকাছি চলে এসেছে, গ্র্যান্ড ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ডে। আবহাওয়া খুবই খারাপ; ভীষণ ঠাণ্ডা আর জমাট বাঁধা কুয়াশা। নিউফাউন্ডল্যান্ড পার হয়ে যাওয়া জাহাজগুলো এর মধ্যেই এখানকার ভাসমান বরফ, মানে আইসবার্গ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে টাইটানিককে। কিন্তু টাইটানিকের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ আর অন্যান্য ক্রুরা তো তাদের এসব কথাকে পাত্তাই দেননি। তাদের ভাবখানা এমন- কোথাকার কোন বরফ নাকি টাইটানিককে ডোবাবে! টাইটানিক আগের মতোই ২১ নটিক্যাল মাইলে (২৪ মাইল) চলতে লাগলো। ২১ নটিক্যাল মাইলকে আবার কম ভেবো না; তখন টাইটানিক ছিল অন্যতম দ্রুতগতির জাহাজ, আর তার সর্বোচ্চ গতিই ছিল ২৪ নটিক্যাল মাইল। 
ওদিকে জাহাজের সামনে কোনো বাধা আছে কিনা দেখার জন্য জাহাজের ডেকে একটা উঁচু টাওয়ারের মতো থাকে। সেখানে পালা করে কয়েকজন চোখ রাখে। তখন সেখানে ছিলেন ফ্রেডরিক ফ্লিট। হঠাৎ তিনি দেখলেন, কুয়াশার আড়াল থেকে বের হয়ে এল এক বিশাল আইসবার্গ। আইসবার্গ হল সাগরের বুকে ভাসতে থাকা বিশাল বিশাল সব বরফখণ্ড। এগুলোর সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এগুলোর মাত্রই আট ভাগের এক ভাগ পানির উপরে থাকে। মানে, এর বড়ো অংশটাই দেখা যায় না। আর বরফের রংও তো কুয়াশার মতোই সাদা, তাই ফ্লিটও প্রথমে ওটাকে আলাদা করে চিনতে পারেনি। যখন দেখতে পেল, ততোক্ষণে আইসবার্গটি অনেক কাছে চলে এসেছে।

ফ্লিট তো আইসবার্গ দেখেই খবর দিতে ছুটলো। ফার্স্ট অফিসার উইলিয়াম মারডক শুনেই জাহাজ পিছনের দিকে চালাতে বললেন। আর মুখ ঘুরিয়ে দিতে বললেন অন্যদিকে। যাতে কোনভাবেই বিশাল ওই আইসবার্গটির সঙ্গে টাইটানিকের সংঘর্ষ না হয়। কিন্তু লাভ হলো না। টাইটানিকের স্টারবোর্ডে আইসবার্গ ধাক্কা খেল। আর তাতে টাইটানিকের পানির নিচে থাকা অংশে অনেকগুলো গর্ত হলো। পানি ঢুকতে লাগলো দৈত্যাকার জাহাজের খোলের ভেতর।

কিছুক্ষণের মধ্যেই এটা পরিস্কার হয়ে গেল, লোকজন যে জাহাজকে ভাবছিল কখনোই ডুববে না, সেই জাহাজই ডুবে যাচ্ছে তার প্রথম যাত্রাতেই। এবার যাত্রীদের লাইফবোটে তুলে পার করে দেওয়ার পালা। কিন্তু কেউ তো এ নিয়ে ভাবেই নি। লাইফবোট যা আছে, তা দিয়ে বড়োজোর মোট যাত্রীদের তিন ভাগের এক ভাগকে বাঁচানো যাবে। তখন এক বিশেষ নীতি অনুসরণ করা হলো- শিশু এবং নারীদেরকে প্রথমে লাইফবোটে করে পাঠানো হতে লাগলো।

এমনি করে কোনো রকমে বিশাল টাইটানিকের মোটে ৩২ শতাংশ যাত্রীদের বাঁচানো গেল। মাত্র ঘণ্টা চারেকের মধ্যে ডুবে গেল সুবিশাল টাইটানিক, ১৫ এপ্রিল রাত ২টায়। টাইটানিকের সঙ্গে আটলান্টিকে ডুবে গেল প্রায় ১৫ শ' মানুষ। মানুষের ইতিহাসেই এরকম বড়ো দুর্ঘটনা আর ঘটেছে কিনা সন্দেহ।

টাইটানিক তো ডুবে গেল আটলান্টিকে, কিন্তু আটলান্টিকের বুকে তার কী হলো? কেউ কেউ বললো, টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কেউ বললো, টুকরো টুকরো হবে কেন, দু’ভাগ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু যতো গভীরে আছে, সেখান থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। উদ্ধার কেন, চিহ্নিত করাই তো অসম্ভব। এমনি করেই আড়ালে চলে গেল হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানির জাহাজটি।
টাইটানিক খুঁজে পাওয়ার গল্প
কিন্তু টাইটানিককে বেশিদিন চোখের আড়ালে থাকতে দিলেন না রবার্ট বালার্ড। ফরাসি এই বিজ্ঞানীর ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল টাইটানিককে খুঁজে বের করবেন। বড়ো হয়ে তিনি সেই কাজেই নামলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি জাহাজ নিয়ে ঘাঁটি গাড়লেন গ্রেট ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ডে, যেখানে ডুবে গিয়েছিল টাইটানিক। সঙ্গে নিলেন নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি। আর্গো নামের একটি আন্ডারওয়াটার ক্র্যাফট পাঠিয়ে দিলেন সাগরতলে। আর্গো সাগরতলের দৃশ্য ভিডিও করে নিয়ে আসতো।

কিন্তু কিছুতেই পাওয়া গেল না টাইটানিককে। হতাশ হয়ে পড়লেন বালার্ড। এদিকে টানা পরিশ্রমে তার শরীরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। একটু বিশ্রাম দরকার তার। কিন্তু কীসের বিশ্রাম! যেই একটু ঘুমুতে গেলেন, অমনি তার ডাক পড়লো। আর্গোর ভিডিওতে মেটাল অবজেক্ট পাওয়া গেছে, যেগুলো শুধু কোনো জাহাজ থেকেই ভেসে আসা সম্ভব। উত্তেজনায় যা ঘুম ছিল, সব চলে গেল বালার্ডের। একটু খোঁজাখুজির পর জাহাজটিকে পাওয়া গেল। হ্যাঁ, এটাই টাইটানিকের দৈত্যাকৃতির ধ্বংসাবশেষ। 
এবার আর্গোকে দিয়ে নানা দিক দিয়ে টাইটানিকের ছবি তুললেন বালার্ড। দেখলেন টাইটানিকের যাত্রীদের নানা স্মৃতিচিহ্ন- বিছানা, সুটকেস, কাপ- প্লেট, আর অসংখ্য জুতো। যেন সাগরতলের এক জাদুঘরের ভিডিও দেখছেন তিনি।

কিন্তু সময় ফুরিয়ে এল। তাকেও ফিরে যেতে হলো। তখনই ঠিক করলেন, আবার আসবেন টাইটানিকের কাছে। পরের বছরই আবার এলেন বালার্ড। এবার আরো প্রস্তুত হয়ে।

ছোট্ট একটা সাবমেরিনে চড়ে এলেন বালার্ড। সাথে নিয়ে এলেন সাগরতলে ঘোরাঘুরি করতে পারে, এমন একটি রোবটও; নাম তার জেজে। বালার্ড অবশ্য ওকে বলতেন- সুইমিং আইবল। জেজের সাহায্যে তিনি দেখলেন পুরো টাইটানিককে; এর বিশাল সিঁড়িটা এখন কেমন আছে, কেমন আছে ওর জিম, চেয়ার, ঘর, সব।
বালার্ডের টাইটানিক আবিষ্কার তো হলো, কিন্তু তিনি জানতে চাইলেন, কীভাবে ডুবে গেল টাইটানিক। আর তা বোঝার জন্য আবারো তিনি গেলেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে, ২০০৪ সালের জুন মাসে। এবার গিয়ে কিন্তু তার মনই খারাপ হয়ে গেল।

বালার্ড টাইটানিক আবিষ্কার করার পর থেকেই মানুষ সাবমেরিনে করে সেখানে ঘুরতে যায়। এই সাবমেরিনগুলো টাইটানিকের যে সব জায়গায় ল্যান্ড করে, সেসব জায়গাতে দাগ তো পড়েছেই, অনেক জায়গায় গর্তও হয়ে গেছে। আর মানুষ জাহাজ থেকে প্রায় ৬ হাজার জিনিস নিয়ে গেছে। এমনকি অনেকে নিয়ে গেছে জাহাজের টুকরোও!

তখন থেকেই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের দাবি ওঠে। আর এ বছর তো ইউনেস্কো টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষকে আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেই ঘোষণা করে দিয়েছে।

১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ, আমাদের ভীষণ আনন্দের দিন। সেদিন তো খুব আনন্দ করবে। কিন্তু পরের দিন মনে করে টাইটানিকের সাথে ডুবে যাওয়া ১৫শ’ মানুষের কথাও স্মরণ করো। ঠিক ঠিক করে বললে ১৫১৪ জন।
 

মানব ভ্রুণের তৈরি ক্যাপসুল!

 
ক্ষিণ কোরিয়া, মে ৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- চীনে মানব ভ্রুণ থেকে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের ক্যাপসুল। আর সেখান থেকে তা দক্ষিণ কোরিয়ায় চোরাচালান হচ্ছে বলে দাবি করেছে দেশটির শুল্ক বিভাগ।

এই ক্যাপসুলগুলোতে সুপারবাগ রয়েছে এবং তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে সতর্ক করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।

মৃত মানব ভ্রুণের গুঁড়া মাংস দিয়ে ক্যাপসুলগুলো তৈরি এবং চীনের উত্তরপূর্বাঞ্চলে এগুলো তৈরি করা হয় বলেই ধারণা করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এ ক্যাপসুল খেলে প্রাণশক্তি বাড়ে- এমন ধারণার ভিত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু চীনা শ্রমিক ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ক্যাপসুলটি খেয়ে থাকে।

দক্ষিণ কোরীয় শুল্ক কর্মকর্তারা গত আগস্টে প্রথম এ ক্যাপসুলের সন্ধান পান।

এরপর থেকে দিন দিনই এগুলোর চোরাচালান বাড়ছে। গত রোববারও বিপুল সংখ্যক ক্যাপসুল আমদানির প্রচেষ্টা ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার শুল্ক বিভাগ জানায়, খদ্দেরদের অনুরোধে চীনের অন্তত ৪ টি নগরী থেকে ক্যাপসুলগুলো পাঠানো হয়। তবে সেগুলো বিমানবন্দরে তল্লাশির সময়ই ধরা পড়ে।

দক্ষিণ কোরিয়া এ ওষুধের উৎস চীন বলে দাবি করলেও বেইজিং কর্তৃপক্ষ এখনো এর কোনো প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানিয়েছে চীন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, “ক্যাপসুলগুলোতে সুপার-ব্যাকটেরিয়াসহ মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়েছে।”

তাই এগুলোর চোরাচালান রোধে আরো কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ-কোরিয়ার শুল্ক বিভাগ।

উচ্চ রক্তচাপের নতুন চিকিৎসা দেশেই

 
নূরুল ইসলাম হাসিব
স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদক

ঢাকা, মে ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রেনাল ডিনার্ভেশন নামে নতুন এক পদ্ধতি ব্যবহার করে ‘জটিল’ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চালু হয়েছে দেশে।

শনিবার জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট রক্তচাপের চিকিৎসার এ পদ্ধতি চালু করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা তিনজন রোগীর উপর নতুন এই কৌশলের সফল প্রয়োগ করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাংলাদেশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ জীবন-যাপনে পরিবর্তন ও পর্যাপ্ত হারে সর্বোচ্চ পরিমাণ ওষুধগ্রহণ করেও এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। চিকিৎসকরা এ অবস্থাকে জটিল উচ্চ রক্তচাপ আখ্যা দিয়েছেন।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ‘একমাত্র’ আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে তিন বছর আগে ইউরোপে নতুন এ পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে। এরকম উচ্চ রক্তচাপের কারণে রোগীরা স্ট্রোক, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া, কিডনি অকেজো হওয়া এবং চোখের জটিল রোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

নতুন এ পদ্ধতির প্রশিক্ষক ডা. ধীমান বণিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি সরু টিউব বা ক্যাথেটার কুঁচকির ধমনীতে প্রবেশ করানো হয় এবং কিডনির ধমনীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।”

“ওই ক্যাথেটার পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি কিডনির ধমনীতে প্রবেশ করে এবং কিডনির স্নায়ুগুলোকে নিঃসাড় করে দেয়। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিকারী গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলোর পথে বাধা তৈরি হয় যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রক্তচাপ কমাতে শুরু করে।”

ডা. ধীমান বলেন, “এই পদ্ধতি প্রয়োগে মাত্র ৩০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয় এবং এক রাতের জন্য হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়।”

উদ্বোধনী দিনে তারা তিনজন রোগীকে বিনা খরচে এই অপারেশন করিয়েছেন বলে জানান তিনি। দামী ক্যাথেটার ও যন্ত্রপাতির কারণে ভর্তুকি দেওয়ার পরেও এ চিকিৎসা নিতে হলে প্রত্যেক রোগীকে দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হবে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ পদ্ধতির চিকিৎসায় বিশ্বের কোথাও কোনো উল্লেখযোগ্য কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।

চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দ্য লাংচেট ২০১০ সালে এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, রেনাল ডিনার্ভেশন পদ্ধতি ‘খুব কার্যকর ও অত্যন্ত নিরাপদ’।

ধরা হয়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত যাদের অধিকাংশই ধনী দেশের মানুষ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে শারীরিক পরিশ্রম বৃদ্ধি, ওজন কমানো ও লবণ খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

 
ঢাকা, মে ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

তাদের বিক্ষোভের কারণে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ফার্মগেটমুখী সড়ক রোকেয়া সরণীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে অবনমন করা হয়েছে দাবি করে বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই খবরটি ঠিক নয়।

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টার দিকে আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।

দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা তালতলায় তাদের ইনস্টিটিউটের সামনে আসে। দুপুর ১টায় সড়ক ছাড়ে তারা। এরপর গাড়ি চলাচল পুনরায় শুরু হয়।

সারাদেশে পলিটেকনিকে এই অসন্তোষ তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আতোয়ার রহমানকে আহ্বায়ক করে একি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বলেছে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদা পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। একটি ভুল তথ্যের ভিত্তিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন স্থানে ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভোলা প্রতিনিধি জানান, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ভোলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।

এক পর্যায়ে তারা ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ গিয়ে তাদের ঠেকায়।

বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, সকালে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একদল ছাত্র বাসটার্মিনালে যানবাহনে ভাংচুর চালায়। তখন ছাত্রদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ লাঠিপেটা করে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এই ঘটনার পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে আগামী ২৮ মে পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া বরগুনায়সহ কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ করেছে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সকালে গাজীপুরে মডেল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (মিস্ট) ছাত্ররা ক্লাস বর্জন ও মিছিল করেছে। এসময় তারা গাজীপুর-শিমুলতলী সড়কে টায়ার জ্বলিয়ে অবরোধ করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ মৃদু লাঠিপেটা করে।

এ সময় আহত কয়েকজনকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক সিরাজুল হক মোল্লা বলেন, এ ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটি থেকে এক সপ্তাহের জন্য গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেওয়া হয়েছে। আগামি ২ জুন খুলবে।

জয়দেবপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের সত্যতা স্বীকার করেছেন।

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বরিশালের বেসরকারি ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। নগরীর সিএন্ডবি সড়কে ইনস্টিটিউটের সামনে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারি পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা তার ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মিছিল করতে উৎসাহিত করে।

এতে ৪০/৫০ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ও একটি অটোরিকশা ভাংচুর করে। পরে খবর পেয়ে সবাইকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

ভাংচুর করা অটোরিকশা মেরামতের জন্য চালককে তাৎক্ষণিকভাবে দুই হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে চার শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

আটকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, বলেন ওসি।

সর্বোচ্চ শৃঙ্গে দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী

দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট চূড়ায় উঠেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহন করেন বলে তার এক সহযোগী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে।

ঠিক এক সপ্তাহ আগেই গত শনিবার বাংলাদেশি প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছিলেন নিশাত মজুমদার। এরপরই চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে এই গৌরবের অংশীদার হলেন ২৯ বছর বয়সি ওয়াসফিয়া।

২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহিম। তার পথ ধরে এই গৌরবের ভাগিদার হন এম এ মুহিত ও নিশাত।

সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাত শৃঙ্গ জয়ে ওয়াসফিয়ার প্রচারসঙ্গী ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ তাদের ফেইসবুক পাতায় দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারীর এভারেস্ট চূড়ায় আরোহনের ঘোষণা দেয়।

তারা বলেছে, কোনো সঙ্গী না নিয়ে একাই এভারেস্ট চূড়ায় ওঠেন ওয়াসফিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আমেরিকার গাইড ক্রিস ক্লিঙ্কে এবং দুজন শেরপা নিমা গুরমে দর্জি ও কুসাং শেরপা।

গত ১৯ মে নিশাতের এভারেস্ট জয়ে সঙ্গী ছিলেন এর আগে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা মুহিত। মুহিত ২০১১ সালের ২১ মে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন।

‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ জানিয়েছে, ওয়াসফিয়া এখন নিচে নামতে শুরু করেছেন এবং সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এক বা দুদিনের মধ্যেই তিনি নেমে আসবেন।

এভারেস্ট জয় করা প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত পর্বত থেকে নেমে এখন কাঠমান্ডুর পথে রয়েছেন।

সবচেয়ে কম বয়সী বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে ওঠা ওয়াসফিয়া স্যাটেলাইন ফোনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিটস দল’কে বলেছেন, “আমাদের দেশ স্বাধীন হলেও আমরা নারীরা এখনো স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এ জয় বাংলাদেশের নারীদের জন্য যারা স্বাধীনতা, শান্তি ও সমতার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করছে।”

এভারেস্টজয়ী ওয়াসফিয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুসা ইব্রাহিম। ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’র ফেইসবুক পাতায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী লিখেছেন, “বাংলাদেশের নারীরা প্রমাণ করেছেন, তারাও পারেন।”

ওয়াসফিয়া সাত মহাদেশের সাতটি চূড়া জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নেমেছেন। হিমালয়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার আগে গত বছর তিনি আফ্রিকার মাউন্ট কিলিমানজারো এবং দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকনকাগুয়ায় আরোহন করেন।