ভালো মেয়ে না খারাপ মেয়ে ?
আমাদের মেয়েদের একটা করে নরম হৃদয় থেকে থাকে , যার কারণে ছোট থেকেই আমরা চাই আমাদের চারপাশের মানুষ জন যেন খুশি থাকে | এই লোকজনদের খুশি রাখতে আমরা অনেক রকমের ত্যাগ স্বীকার করতে ও পিছুপা হই না | এই কথা গুলো ঠিক আমি বলছি না , বলছেন জিল .পি . ওয়েবার নামের এক নামি মনোবিদ , থাকেন আমেরিকার ওয়াশিংটনে |
তিনি আরো বলেছেন , মেয়েরা আসলে নিজেদের খুশি রাখতেই বাকি সবাইকে খুশি রাখতে চায় | অন্যদের খুশি রেখে যে প্রশংসা পাওয়া যায় তাতেই তারা আনন্দ পায় | কিন্তু অন্য রকমের মেয়েও যে চোখে পরে না , তা নয় | আর তারা নিজের খুশি , নিজের আনন্দে থাকা টাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে | আমরা তাদের ঠিক পছন্দ করি না |প্রথম দলের মেয়েরা যদি হয় ” ভালো মেয়ে ” তো এই অন্য দলের মেয়েরা হয় ” খারাপ মেয়ে “| কিন্তু বাস্তবে ঠিক কি হয় এই দুই ধরণের মেয়েদের সাথে চলুন জানি …
১) ঘুম
ভালো মেয়ে : ঘরের -বাইরের সব কাজ মুখ বুজে সামলাতে চেষ্টা করে | সব কাজ করার ফলে খুবই ক্লান্ত হয়ে পরে |
খারাপ মেয়ে : নিজেদের বিশ্রাম, ঘুম , সৌন্দর্য সব কিছুকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নিজের বিশ্রামকেই প্রাধান্য দেয় | তারা ভাবে ঘুম কম হলে দিনের ক্লান্তি কাটবে না |
ফল : ক্যালিফর্নিয়া উনিভার্সিটির রিসার্চের দাবি , সত্যি করেই যারা ঘুমকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে তারাই খুশি থাকে | দিনের পর দিন কম ঘুম , মানুষকে খিটখিটে করে তোলে | যার চাপ পরে তার শরীরে , মনে এমনকি সম্পর্কে ও |
২) শখ
ভালো মেয়ে : হয়তো তার ভালো লাগে কোনো ক্লে-মডেলিংয়ের শো দেখতে কিন্তু বাকি লোকেরা মজা করবে বলে সকলের দেখাদেখি কোনো রিয়ালিটি শো ই দেখবে |
খারাপ মেয়ে : তারা নিজেদের পছন্দ অন্যদের জানাতে দ্বিধা করে না | লোকেদের বিচার করার ভয় সরিয়ে নিজের পছন্দের শো ই সে দেখে থাকে |
ফল : লিওনার্ড রেইনেকে নামের মনোবিদ , মেইঞ্জ উনিভার্সিটির , এই স্বভাবের বিচার করে বলছেন , নিজের পছন্দকে সব সময় লুকিয়ে রাখতে থাকলে নিজেদেরই ইচ্ছা-শক্তির ক্ষয় হয় | তাই দোষবোধ থেকে মুক্ত হয়ে নিজের শখ কে পূরণ করাই হলো আসল আনন্দ |
৩) প্রতিদানহীন
ভালো মেয়ে : যদি কাউকে ভালোবাসে তবে নিজের খুবই আবেগ দিয়ে ভালোবাসে | তাই কখনো যদি তার প্রতিদানে সম পরিমান ভালোবাসা না পায় , বা কখনো যদি ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যাতও হয় তবে তাদের পক্ষে ঘটনাটা থেকে বেরিয়ে আসতে খুবই কষ্টদায়ক হয় |
খারাপ মেয়ে : ভালোবাসেনা তা নয় কিন্তু নিজেদের সবটুকু বিকিয়ে দিয়ে নয় | তাই কখনো প্রতিদান না পেলে তা বোঝে নিশ্চয় কিছু কম ছিল দু পক্ষেই | তাই একই জিনিস নিয়ে পরে না থেকে , নিজেকে ব্যস্ত করে তোলে | অন্য সম্পর্কের খোঁজেও লেগে পরে |
ফল : রিসার্চারদের দাবি , সমাজের এই তথাকথিত ” ভালো মেয়ে” দের ছোট থেকেই শেখানো হয় তাদের একমাত্র কাজ হলো অন্যদের খুশি করে চলা | বড়ো হয়েও তারা এটাই বিশ্বাস করে তাই ভালোবাসায় প্রতিদান না পেলে তারা নিজেদেরকেই দোষী করে আর হতাশা গ্রস্ত হয়ে যায় | অন্যদিকে ” খারাপ মেয়ে”দের এই চিন্তা থাকে না | তাই তারা সহজেই সেই সম্পকের খোঁজে বেরিয়ে পরে যেখানে ভালোবাসা আসবে বিনা চেষ্টায় |
৪) অপেক্ষা
ভালো মেয়ে : কারোর জন্য বা কোনো বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে হলে অপেক্ষা করে থাকে | এমনকি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো বিরক্তি না দেখিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে |
খারাপ মেয়ে : ঠিক যে সময় বলেছে তার থেকে বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করে না কারোর জন্য |
ফল : বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন , সময় খুবই দামি | যদি কোনো কারণে ঠিক সময়ে আসতে না পারা যায় তবে অবশ্যই কাউকে অপেক্ষা না করিয়ে জানিয়ে দেয়া ভালো | দরকারে অন্য দিনের ব্যবস্থাও করে নেয়া ভালো | তাই দেখা যাচ্ছে ,এই একগুঁয়ে খারাপ মেয়েরা ঠিক ই করে সময়কে সকলের থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে |
৫) বিরক্তি
ভালো মেয়ে : নিজের মত প্রকাশে অন্য লোকের কেমন লাগতে পারে তা নিয়ে ভেবে ভেবে আর কিছু বলেই না , তা ব্যাপারটা যত খারাপি লাগুক না কেন | মত প্রকাশের ভয়ে তারা পালিয়ে বেড়ায় |
খারাপ মেয়ে : মনে যা মুখেও তাই ধরণের | কারোর কেমন লাগবে সেটা নিয়ে ভাববার সময় থাকে | নিজেরা বিরক্ত হলে তা দেরি না করেই জানিয়ে দেয় |
ফল : মনোবিদদের মতে , নেগেটিভ ইমোশন বয়ে বেড়ানো খুবই খারাপ , আমাদের ডিপ্রেসেড করে তোলে | শরীর-মন, চারপাশের মানুষদের, সম্পর্ক সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয় | সমস্যা থেকে পালিয়ে না গিয়ে সেটার সাথে খোলাখুলি লড়লেই নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ে |
৬) ঝগড়া
ভালো মেয়ে : এই ধরণের মেয়েরা সকলের সাথেই সম্পর্ক ভালো রাখতে চায় তাই পারত পক্ষে ঝগড়া করতেই চায় না | এদের , মা-মেয়ের সম্পর্কেও , মায়েরা অনেক সময় জোর করে মেয়ের উপর অনেক কিছু চাপিয়ে দেয় | আর এরা মুখ বুঝে সব মেনে নেয় |
খারাপ মেয়ে : এরা সকলেই অন্যকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা , সম্মান দিয়ে থাকলে ও নিজের সিদ্ধান্তে বেশ জেদি হয় | অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজেরদের স্বাধীনিতাকেই বড়ো করে দেখে | দরকারে মায়ের সাথেও ঝগড়া করে |
ফল : কইরা বিরদিত নামের সমাজ বিশেষজ্ঞের , মিশিগান ইউনিভার্সিটির , দাবি যে এই স্বাধীনতা প্রিয় মানসিকতাই মানুষকে হারতে দেয় না | নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে , তার ভালো ফল না হলেও তারা মনের জোর বাড়িয়ে নিতে পারে সহজেই | তাতে এই ” খারাপ মেয়ে” রা খুব তাড়াতাড়ি সমঝদার হয়ে ওঠে |
৭) চিন্তা -ভাবনা
ভালো মেয়ে : সুযোগের অপেক্ষায় থাকে | নিজের নতুন কোনো চিন্তা-ভাবনাকে কার্যে রূপ দিতে অনেক কিছুর উপর ভরসা করে বসে থাকে | যেমন ধরুন , কোনো রান্নার প্রতিটা জিনিস পাওয়া গেলে তবেই সেটা বানানোর চেষ্টা করবে | কারণ সেই এক , যাতে লোকে ভালো বলে প্রশংসা করে |
খারাপ মেয়ে : চিন্তা- ভাবনা আঁকড়ে বসে না থেকে কি করে তাকে গড়ে তোলা যায় তাই চেষ্টা করবে | হয়তো রান্নার কিছুই জানে না , কিন্তু বাড়িতে যা আছে তাই দিয়েই একটা কিছু বানিয়ে ফেলবে | পুরো ঘটনাটা ই সে খুব উপভোগ করে, ফলটা নয় |
ফল : অলিভিয়া রেমিস নামের কেমব্রিজ উনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞর দাবি , যদি কোনো জিনিস নিয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তা করতে থাকেন তবে নিজের ক্ষমতার উপর সন্দেহ হওয়া শুরু হয় | আর এই সন্দেহ আবার আমাদের আত্ম-মর্যাদা বোধকেও কম করে দেয় |
আচ্ছা এই যে এতকিছু জানালাম , এর পর কি মনে হচ্ছে ? আসলে আমরা ছোট করে যাদের ” খারাপ মেয়ে ” বলে ভেবে থাকি তারা ঠিক রাগী বা উদ্ধত নয় | নিজেদের জন্য নিজেরাই যথেষ্ট , দৃঢ় মানসিকতার একজন মানুষ | তারা আসলে সাহসী , তারা নিজেদের কে ভালোবাসে আর সম্মান করে |ফলে তারাই সব থেকে খুশি থাকে | এবার চট করে বলে ফেলুন তো , আপনি ঠিক কোন ধরণের ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন