রবিবার, ১ জুলাই, ২০১২

শরীরের তাপেই চলবে গ্যাজেট

শরীরের তাপেই চলবে গ্যাজেট

এই সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের গ্যাজেট প্রদর্শনীতে পার্পেচুয়ার মার্কেটিং-এর প্রধান জেরি ওয়েন্ট উপস্থিত হয়েছিলেন হাতে একটি কালো ব্যান্ড এবং পুরনো হাতঘড়ি নিয়ে। তারা সেখানে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা দিয়ে গ্যাজেটে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের উপায় দেখিয়েছেন। খবর ফক্স নিউজ-এর।

এ প্রযুক্তিটি অবশ্য নতুন নয়। দুই শতক আগেই পদার্থবিদ টমাস জোহান সিবেক মানুষের শরীরের তাপ ব্যবহার করে শক্তি সরবরাহের এ উপায়টি আবিষ্কার করেছিলেন।

মানুষের শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়। পার্পেচুয়া একটি ব্যান্ড বানিয়েছে, যা শরীরের তাপ থেকে শক্তি উৎপাদন করতে পারবে। এ শক্তি দিয়ে অল্প শক্তির যন্ত্র চালানো সম্ভব। স্মার্টফোন বাদে ব্লুটুথ ডিভাইস বা এ ধরনের আরো যন্ত্র এভাবে চালানো সম্ভব বলেই জানিয়েছে পার্পেচুয়া। এ ব্যান্ড শরীরের তাপমাত্রা থেকে ৩-৪ ভোল্ট পর্যন্ত শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। যেখানে ব্লুটুথ ডিভাইস চালাতে লাগে ২ ভোল্ট।

এছাড়াও এ ডিভাইসের মাধ্যমে ঘড়ি এবং মেডিক্যাল ডিভাইস যেমন হার্ট মনিটরও চালানো সম্ভব।

ইউএফওতে বিশ্বাসী এক-তৃতীয়াংশ মার্কিনী

ইউএফওতে বিশ্বাসী এক-তৃতীয়াংশ মার্কিনী

৩৬ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি আমেরিকান বিশ্বাস করেন, আন আইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট (ইউএফও) বা ভিনগ্রহ থেকে আসা এলিয়েন স্পেসক্র্যাফটের অস্তিত্বে। সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের ‘চেসিং ইউএফও’ অনুষ্ঠানটির জন্য চালানো এক জরিপে এ তথ্য জানতে পারেন গবেষকরা। আর নিজের চোখে ইউএফও দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে দাবি করেন শতকরা ১০ ভাগ মার্কিন নাগরিক। খবর এবিসি নিউজের।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওই জরিপে গবেষকরা জানতে পারেন, দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান ইউএফও-ও অস্তিত্বে বিশ্বাস না করলেও তাদের অর্ধেকই নিজের মতামত নিয়ে ছিলেন অনিশ্চিত। আর ৮০ ভাগেরও বেশি মার্কিন নাগরিক মনে করেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই ইউএফও-র অস্তিত্বের প্রমাণ লুকিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার চেয়ে জরিপটি নিয়ে গবেষক দলের মজা করার উদ্দেশ্যটাই বেশি ছিলো বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড ড্যান্সার। তিনি বলেন, ‘জরিপটি করার সময় আমরা গুরুগম্ভীর বিষয়গুলোর চেয়ে মজা করার চেষ্টাই করেছি বেশি। পপ সংস্কৃতি এলিয়েন আর ইউএফও নিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের ওপর কতোটা প্রভাব ফেলেছে সেটাই খুঁজে বের করতে চেয়েছি আমরা।’

ন্যাট-জিও গবেষক দলের এই জরিপের মজার প্রশ্নগুলোর একটি ছিলো পৃথিবীতে এলিয়েনরা আক্রমণ করলে তাদেও ঠেকাতে কে বেশি সফল হবেন- প্রেসিডেন্ট ওবামা নাকি ওবামার রিপাবলিকান প্রতিদ্ব›দ্বী মিট রমনি। এ প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে রমনিকে হারিয়েছেন ওবামা।

মজার ব্যপার হচ্ছে, এলিয়েন আক্রমণ থেকে বাঁচতে কোন সুপার হিরোর সাহায্য চাইবেন, এ প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন নাগরিকদের প্রথম পছন্দ ‘দি ইনক্রেডিবল হাল্ক’। মহাকাশের দানবদের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে ব্যাটম্যান আর স্পাইডান ম্যানের চেয়ে ‘দি ইনক্রেডিবল হাল্ক’-ই বেশি সফল হবেন বলে মতামত দিয়েছে আমেরিকানরা।



৫ম জন্মদিনে অ্যাপল আইফোন

৫ম জন্মদিনে অ্যাপল আইফোন


টেক বোদ্ধাদের মতে, একুশ শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় কনজিউমার ইলেকট্রনিক পণ্য অ্যাপল আইফোন। শুরুতে একটি অভিজাত পণ্য হিসেবে বাজারে এলেও ধীরে ধীরে সবধরণের পেশাজীবী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই স্মার্টফোনটি। প্রয়াত টেক গুরু স্টিভ জবসের তত্ত্বাবধানে অ্যাপলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনি আইভ-এর ডিজাইন করা এই স্মার্টফোনটি গত ৫ বছরে পাল্টে দিয়েছে হ্যান্ডহেল্ড ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের চিত্র; শুরু করেছে নতুন এক টেকনোলজি বিপ্লবের।

২০০৭ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন নির্মাতার স্থানটি দখলে ছিলো নোকিয়ার। আর কর্পোরেট অফিসারদের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের জায়গা করে নিয়েছিলো ব্ল্যাকবেরি। কিন্তু এ সবই পাল্টে যায় ২০০৭ সালের ৩০ জুন অ্যাপল আইফোন বাজারে আসার পর। ৬০০ ডলার দামের আইফোনটি তখন অনেকের কাছেই মনে হয়েছে ধনীদের জন্য তৈরি একটি মোবাইল ফোন মাত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভুল প্রমাণিত হয়েছে এই ধারণা। এখনও বিশ্বব্যাপী ২০ কোটিরও বেশি মানুষ ব্যবহার করছেন আইফোন। কনস্ট্রাকশন সাইটে ইঞ্জিনিয়াররা ব্লু-প্রিন্টে নজর রাখতে ব্যবহার করছেন আইফোন, রোগীদের চিকিৎসায় হাসপিটালে চিকিৎসকদের সঙ্গী হচ্ছে আইফোন, এমনটি বাচ্চাদের মধ্যেও জনপ্রিয় আইফোন। আইফোন বর্তমান হ্যান্ডহেল্ড গ্যাজেট টেকনোলজিকে এতোভাবে বদলে দিয়েছে যা হয়তো শতাব্দীতে একবারই ঘটে।


টাচ স্ক্রিন বিপ্লব
আইফোনের আগেও বাজারে টাচস্ক্রিন ছিলো, কিন্তু টাচ স্ক্রিন বিপ্লব সম্পন্ন করেছে অ্যাপল এই আইফোন দিয়েই। ২০০৭ সালের আগে নিউম্যারিকাল ফুল সাইজ কিবোর্ডে টেক্সট টাইপ করতে করতেই ক্লান্ত হয়ে পড়তেন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী। কিন্তু অ্যাপল নিউম্যারিকাল কিবোর্ড এড়িয়ে বেছে নেয় ফুল টাচ স্ক্রিন কিবোর্ড। রাতারাতি ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের মনও জয় করে নেয় অ্যাপলের এই সিম্পল ইউজেবিলিটি। আইফোনের প্রথম মডেলটি নিয়ে টেক বোদ্ধাদের একমাত্র আপত্তিটিও ছিলো এই টাচ স্ক্রিন নিয়ে। ব্ল্যাকবেরির মতো দ্রুত গতিতে আইফোনে টাইপ করা না যাওয়ায় এর সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু বাজারে আসার ৩ মাসের মধ্যেই ১০ লাখের বেশি আইফোন বিক্রি করে টেক বোদ্ধাদের ওই শঙ্কা মিথ্যে প্রমাণ করে অ্যাপল।

এরপর স্পেল চেক সফটওয়্যার, টেক্সট প্রেডিক্টিভ সফটও্যার আর কাট-পেস্ট অপশন দিয়ে হাই স্পিড কিবোর্ডের অভাব মিটিয়েছে আইফোন। আর এখন সিরি ভয়েস অ্যাসিসটেন্ট ফিচারের বদৌলতে ব্যবহারকারীর ভয়েস কমান্ড থেকেই টেক্সট টাইপ করে নিচ্ছে স্মার্টফোনটি। অ্যাপল আইফোন টাচ স্ক্রিনের এই সাফল্যই মূল শক্তি জোগায় টাচ স্ক্রিন মোবাইল ফোন যুগের।


আইওএস ও অ্যাপ স্টোর
টাচ স্ক্রিন মোবাইল ফোনের ব্যবহার ব্যবহারকারীদের কাছে অনেক সহজ করে দিলেও আইফোনের বিশ্বব্যাপী সাফল্যেও মূল রহস্য এটির আইওএস অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর। আইওএস-এর সহজবোধ্যতা আর কম্পিউটিং ক্ষমতা রাতারাতি পার্সোনাল কম্পিউটারের সুযোগ সুবিধা এন দেয় ব্যবহারকারীর হাতের মুঠোয়। আর অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহারকারীদের সুযোগ করে দিয়েছে নিজের প্রয়োজনমতো অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে ব্যবহার করার।

২০০৮ সালে লঞ্চ করার পর থেকে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে একরকম অ্যাপ্লিকেশন স্বর্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব ধরনের ব্যবহারকারীর প্রয়োজনের কথা মাথা রেখেই অ্যাপ স্টোরটি তৈরি করে অ্যাপল। দৈনন্দিন জীবনে থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করার মতো অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে। অ্যাপ স্টোরের এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করে যেমন সূর্য পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব, তেমনি সম্ভব রেস্টুরেন্টের রিজার্ভেসনও। শুধু তাই নয়, এই স্টোরটিতে রয়েছে শপিং লিস্ট সিনক্রোনাইজ করার মতো অ্যাপ্লিকেশন, ক্যাশ রেজিস্টার, মিউজিশিয়ানদের জন্য রয়েছে ড্রাম মেশিনের মতো অ্যাপ্লিকেশন। এমনকি পোষা কুকুর-বেড়ালের জন্যেও রয়েছে পেট ফ্রেন্ডলি অ্যাপ্লিকেশন। বর্তমানে অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে রয়েছে সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি অ্যাপ্লিকেশন, যা মধ্যে রয়েছে একদম ফ্রি থেকে শুরু করে ১০০০ ডলারের স্পেশালাইজড বিজনেস অ্যাপ্লিকেশন।


মোশন ও অরিয়েন্টেশেন সেন্সর
আইফোনের সাফল্যের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এর মোশন এবং অরিয়েন্টেশেন সেন্সরগুলো। আইফোনের বর্তমান মডেলটিতে রয়েছে অ্যাক্সেলোমিটার, জাইরোস্কোপ এবং কম্পাস। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা আইফোনের গেইমস আর অ্যাপ্লিকেশনগুলোর চোখ ধাঁধানো ইফেক্ট তৈরি করতে নির্ভর করেন এই সেন্সরগুলোর ওপর।


পিসি বনাম ম্যাক যুদ্ধে আইফোনের জয়
মাইক্রোসফট পিসি বনাম অ্যাপল ম্যাকিন্টোশ-এর লড়াই চলে আসছে সেই ৮০র দশক থেকে। পিসি ব্যবহারকারীদের অনেকদির ধরেই ম্যাক-এর জগতে টেনে আনার চেষ্টা করে আসছিলো অ্যাপল। পিসি বনাম ম্যাক লড়াই এখনও শেষ না হলেও আইফোন আর আইপ্যাড-এর কারণে অনেকটাই এগিয়ে গেছে অ্যাপল। পিসি ব্যবহারকারীরা সাধারণত অ্যাপলের পণ্যগুলো থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলতেন। কিন্তু আইফোন বাজারে আসার পর এই স্মার্টফোনটি দিয়েই গত ৫ বছরে অ্যাপল এর জগতে অভিষেক হয়েছে অনেক পিসি ব্যবহারকারীর। অ্যাপল আইফোনের অপারেটিং সিস্টেমের সহজবোধ্যতা, সিম্পল ইউজেবিলিটি আর অ্যাপ স্টোরের কয়েক লাখ ইউজার ফ্্েরন্ডলি অ্যাপ্লিকেশনের প্রেমে পড়ে পিসি ছেড়ে অ্যাপল ভক্তের খাতায় নাম লিখিয়েছেন অগণিত পিসি ব্যবহারকারী।



আইফোন পাল্টে দিয়েছে মোবাইল গেইমিং দুনিয়া
২০০৮ সালে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর লঞ্চ হবার আগ পর্যন্ত মোবাইল গেইমিং মানেই ছিলো নিনটেনডো বা সনির পকেট গেইমিং সিস্টেম। শেষ হয়ে এসছে স্ট্যান্ড অ্যালোন মোবাইল গেইমিং ডিভাইসের যুগ। এক অ্যাপল আইফোনের কাঁধে ভর করেই মোবাইল গেইমিং ইন্ডাস্ট্রি পৌঁছে গেছে সাফল্যের নতুন এক চূড়ায়। অ্যাপলের আগে ২০০৩ সালে নোকিয়া সেল ফোন আর মোবাইল গেইমিং ডিভাইসের সংমিশ্রনে তৈরি করেছিলো এন-গেজ গ্যাজেট। সে সময় অনেক টেক বোদ্ধা মোবাইল গেইমিং প্লাটফর্ম প্লাস সেল ফোন ডিভাইসের যুগ শুরু হচ্ছে বললেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো গেইমাররা। কিন্তু সেটা পুরনো কথা, শুধু দৈনন্দিন জীবন বা পেশাগত কাজে ব্যবহার করার জন্য নয়, বরং গেইমিং ডিভাইস হিসেবেও পুরো বিশ্বের গেইমারদের মন জয় করে নিয়েছে আইফোন। গত ৫ বছরে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে মোবাইল গেইমিংয়ের সংজ্ঞা।


মোবাইল টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রির নতুন যুগ
এমনটা বলাই যায় যে, মোবাইল টেকনোলজির ইতিহাসে ব্ল্যাকবেরি অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছে আইফোন। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে আইফোনের অবদানেই শুরু হয়েছে মোবাইল টেকনোলজি ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়। পুরো মোবাইল ইন্ডাস্ট্রিই বদলে দিয়েছে অ্যাপলের আইফোন। পৃথিবীর সব বড় মোবাইল ফোন নির্মাতাই এখন অনুসরণ করার চেষ্টা করছে অ্যাপল আইফোনের দেখানো পথ। তারপরও আইফোন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিগুলো। আইফোনের অনুকরণেই গুগল তৈরি করছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। শেষ পর্যন্ত চির প্রতিদ্ব›দ্বী মাইক্রোসফটও আইফোনের কাছে হার মেনে নিয়েছে উইন্ডোজ ৮ ওএস দিয়ে। এক কথায় বলতে গেলে বিশ্বব্যাপী ইউজার ফ্রেন্ডলি মোবাইল ফোন তৈরির মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাপল আইফোন।

অনেক টেক বোদ্ধার মতে, আইফোন আর আইপড টাচই হচ্ছে অ্যাপল আইপ্যাড-এর পেছনের মূল অনুপ্রেরণা। টেক বোদ্ধাদের এই বক্তব্য কতোটা নির্ভরযোগ্য এমন প্রশ্ন করেন অনেকেই। কিন্তু আইপ্যাডের পেছনের মূল অনুপ্রেরণা আইফোন হোক বা না হোক মজার ব্যপার হচ্ছে আইফোনের পর এখন ট্যাবলেট পিসির বাজার দখলে আইপ্যাডের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং গুগলের মতো কোম্পানিকে।

৩০ জুন ষষ্ঠ বছরে পা দিলো অ্যাপল আইফোন। গত ৫ বছরে আইফোন শুধু মোবাইল টেকনোলজির জগতটি পুরোপুরি পাল্টেই দেয়নি বরং জন্ম দিয়েছে নতুন এক অধ্যায়ের; অ্যাপল ভক্তদের কাছে যা আইফোন কালচার নামে পরিচিত।

কোচিং বাণিজ্য নীতিমালা অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য বারশ’ টাকার বেশি নয়

সবগুলো বিষয়ে অতিরিক্ত ক্লাস করলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার দুইশ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না।

এ বিষয়টি সংযোজন করে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ সংশোধন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ২০ জুন সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ প্রণয়ন করে সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার দুইশ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। বারশ’ টাকা দিয়েই শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ আটটি বিষয়ে পড়তে পারবে।”

তিনি জানান, অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য মহানগর এলাকায় প্রতি বিষয়ে ১২টি ক্লাসের জন্য ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৫০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে নীতিমালায় বলা হলেও একাধিক বিষয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কত টাকা নেওয়া যাবে সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ ছিল না।

“আমরা নীতিমালায় এ বিষয়টি নির্ধারিত করে দিয়েছি, তবে অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত রয়েছে,” যোগ করেন মন্ত্রী।

জারি করা নীতিমালায় বলা হয়, অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

“কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল, নাম ও শ্রেণী উল্লেখ করে জানাতে হবে।”

শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, “কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা করা হয়েছে। একশ জন ছাত্র পড়ান এমন শিক্ষকেরও খোঁজও আমাদের কাছে আছে।”

কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালাটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হচ্ছে জানিয়ে সচিব আরো বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে নীতিমালাটি পাঠানো শেষ হলেই তদারকি কমিটি মাঠে নামবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসআই/এইচএ/২২৫০ ঘ

‘দুর্নীতি’ বন্ধে মাউশিতে সিসি ক্যামেরা

‘দুর্নীতি’ বন্ধে শিক্ষা ভবন নামে পরিচিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিও শাখা, প্রসাসন, অর্থ হিসাব ও বাজেট, পত্র গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিক সেবাকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোতে ৩২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর-রশীদ শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে অধিদপ্তরে দুর্নীতি ও শিক্ষকদের হয়রানী বন্ধে বড় ভূমিকা রাখবে।”

তিনি বলেন, “কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং কাজে গতি আনতে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।”

সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তদারকি করলে শিক্ষা ভবনে ‘নিয়মানুবর্তীতা’ নিশ্চিত হবে বলেও মনে করেন নোমান।

দুর্নীতি ও অনিয়মের ‘বিশেষ’ অভিযোগ রয়েছে এমন শাখাগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে দুইটি প্লাটফরম থেকে বিশেষ নজরদারি করা হবে বলেও জানান মাউশি মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, “মাউশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সেল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়া অধিদপ্তর প্রধানের কক্ষেও সিসি ক্যামেরা তদারকির ব্যবস্থা রাখা হবে।”

পর্যায়ক্রমে অধিপ্তরের গেট থেকে শুরু করে দুটি ভবনকেই সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে বলেও জানান নোমান।

শিক্ষা ভবনের কর্মচারিদের ‘দুর্নীতি’ কমাতে ‘তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিরা একই শাখায় দেড় বছরের বেশি থাকতে পারবে না’ বলে এর আগে অফিস আদেশ জারি করে মাউশি।

শিক্ষা প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র মাউশিতে দীর্ঘদিন থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি এবং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ দাবি করে মাউশির কর্মচারিরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও ধরাও পড়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসআই/আরএ/১৪৪৯ ঘ.

বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১২

ইন্টারনেট ব্যবহারের মূসক প্রত্যাহারের আহ্বান







ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহারের পক্ষে মত দিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় রূপসী বাংলা হোটেলে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘কিউবি সামার ল্যাপটপ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ দাবি এসেছে।

সকাল ১১টায় মেলার উদ্বোধন করেন প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, “ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ১৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার করলে দেশ কীভাবে উপকৃত হবে আশা করি আমরা তা সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হব।”

প্রতিবেশী দেশ ভারতে মাত্র ৩০ ডলার মূল্যে ছাত্রদের ল্যাপটপ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশেও কম দামে ল্যাপটপ সরবরাহের সুপারিশ করেন।

তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার বলেন, “ইন্টারনেটের উপর ১৫ শতাংশ মূসক কেন আছে তা বোধগম্য নয়। এক লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে এ খাত থেকে আসা টাকা তেমন কিছুই না। তবে এ খাতে ছাড় দেওয়া হলে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে।”

তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কনসালটেন্ট মুনির হোসেন বলেন, “আমাদের ছেলেরা আউটসোর্সিং থেকে দৈনিক এক কোটি টাকা করে আয় করছে। সহযোগিতা পেলে তারা খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ফর্মাল আইটি ফার্মগুলোর সম্মিলিত আয়কে ছাড়িয়ে যাবে।”

এবারের মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কিউবি। সহ-পৃষ্ঠপোষকতায় থাকছে ল্যাপটপ ব্র্যান্ড এসার, আসুস, এইচপি, স্যামসাং ও বিশ্বের বৃহত্তম চিপ নির্মাতা ইন্টেল।

মেলার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, এবিসি রেডিও, আজকের ডিল, এখনই ডটকম, বিডিওএসএন ও ওরাটর পিআর।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান মেকার এবার ১১ জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকার শিক্ষাবৃত্তি দেবে বলে জানান মেলার সমন্বয়ক বিপ্লব ঘোষ রাহুল।

মেলায় ছয়টি প্যাভিলিয়ন, সাতটি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ৪০টি স্টলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কম্পিউটার, ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ডিভাইস ও অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়ার পাওয়া যাচ্ছে। 
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এফএফএস/আরআরডি/এএল/১৭০০ ঘ. 

মূল্যস্ফীতি ৭.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার আশা











 নতুন অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে তিনি এই আশা প্রকাশ করেন।

মুহিত বলেন, “মধ্যমেয়াদে তা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারব বলে আশা করছি।”

বিদায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরে এই হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ মে মাসের হিসাবে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘরে অবস্থান করার পর এপ্রিল মাস থেকে তা এক অংকের ঘরে নেমে আসে।

মে মাসে গড় মূল্যস্ফীতি হার (এক বছরের) দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

নতুন সেনাপ্রধান ইকবাল করিম

 
মোহাম্মদ আব্দুল মুবীনের উত্তরসূরী হিসেবে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়াকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

বঙ্গভবনের একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আদেশে সই করেন।

একইসঙ্গে বর্তমান সেনাপ্রধান আব্দুল মুবীনের চাকরির মেয়াদ আরো ১০ দিন বাড়ানো হয়েছে বলে রাষ্ট্রপতির সচিব শফিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

পদাতিক বাহিনীর কর্মকর্তা ইকবাল বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল মুবীনের সঙ্গেই ১৯৭৬ সালের নভেম্বরে বিএমএর তৃতীয় কোর্সের ক্যাডেট হিসাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। জাতিসংঘ মিশনে কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

বহুল আলোচিত ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ পর এক পর্যায়ে নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক করা হয়েছিল ইকবাল করিমকে। ২০১০ সালের মে মাসে তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন।

তিন বছর আগে সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ পাওয়া জেনারেল মুবীনের চাকরির মেয়াদ ফুরিয়ে আসার আগে ওই পদের জন্য ইকবালসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় উঠে আসে।

তাদের মধ্যে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেনেন্ট জেনারেল আব্দুল ওয়াদুদ, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ডেন্ট লেফটেনেন্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর, সেনাসদরের চিফ অফ জেনারেল স্টাফ ও অর্ডনেন্স কোরের কর্নেল কমান্ডেন্ট লেফটেনেন্ট জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম।

এদের মধ্যে থেকে দেশের ত্রয়োদশ সেনাপ্রধান হিসেবে কুমিল্লার বাসিন্দা ইকবালকেই বেছে নিল সরকার। আগামী ২৫ জুন তিনি চার তারকা জেনারেল হিসাবে নতুন দায়িত্বে যোগ দেবেন।

মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ইকবালের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে বর্তমানে বাহিনীতে আছেন লেফটেনেন্ট জেনারেল আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কর্মকর্তা। লেফটেনেন্ট জেনারেল ফজলে আকবর গোলন্দাজ বাহিনীর কর্মকর্তা।

এছাড়া ইকবালের এক ব্যাচ জুনিয়র বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেনেন্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম চৌধুরী ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কর্মকর্তা

৫২ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট

 
আগামী অর্থবছরের জন্য ৫২ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।

সেইসঙ্গে চলতি বা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

২০১১-১২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, তা কমিয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ২১৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

বর্তমান মহাজোট সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার আশা করা হয়েছে।

বিকাল সাড়ে ৩টায় সংসদ অধিবেশনে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এর কিছু সময় আগেই সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা এই বাজেট অনুমোদন করে।

গত কয়েকবারে মতো এবারও বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতেই সংসদে মহাজোট সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

অর্থমন্ত্রী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করছেন। তবে তিনি বলেছেন, আরো বড় আকারের বাজেট দেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার।

“আমি চুপিচুপি বলি, আমার ইচ্ছা ছিল ২ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেব। কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে তা না করতে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছি,” বাজেট বক্তৃতায় বলেন মুহিত।

নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকতে নতুন অর্থবছরের জন্য বড় ব্যয়ের বাজেট দিল সরকার, যাতে গুরুত্ব পেয়েছে বিদ্যুৎ, সড়ক যোগাযোগ, বন্দর, ভৌত অবকাঠামো, কৃষি-পল্লী ও মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাত।

নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২ হাজা ৩৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান হিসেবে ধরলে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে অনুদানব্যতীত ঘাটতি ছিল ৪৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৬ হাজার ২২৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা নেওয়া হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে আসবে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ঋণ নেওয়া হবে ১২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর বৈদিশিক উৎস থেকে ২০ হাহার ৩৯৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা যাবে আগের নেওয়া ঋণ সুদ-আসলে পরিশোধে।

গত অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও বছর শেষে তা ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের সমালোচনা করে আসছিল বিরোধী দলসহ ব্যবসায়ী মহলও। তাদের বক্তব্য, সরকার ঋণ বেশি নেওয়ায় বেসরকারি খাত যথেষ্ট অর্থ পাচ্ছে না।

২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা অর্থাৎ আগেরটিই রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে ন্যূনতম করের পরিমাণ ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখেছেন মুহিত।

তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানি পণ্যের উৎস করের হার বাড়িয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ঢাবিতে যৌন হয়রানি ১ মাসে শিকার ২৮ ছাত্রী

অজপাড়াগাঁয়ের ছাত্রী রানী (ছদ্মনাম)। কঠোর পরিশ্রম আর সাধনায় সুযোগ পান ঢাবি’তে। হলে উঠতে সাহায্য নেন পারিবারিকভাবে পরিচিত এক ছাত্রনেতার। এ সাহায্য নেয়াই কাল হয়েছে তার। পরিচয়ের সূত্র ধরে নেতা খাতির জমানোর চেষ্টা করেন রানীর সঙ্গে। এক সময় জীবন সঙ্গী করার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়াতেই শুরু হয় নতুন সমস্যা। প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করা হয় তাকে। এ মাসের শুরুতে শামসুন্নাহার হলের সামনে থেকে নেতা কৌশলে মোটরসাইকেলে তুলে নেয় রানীকে। পরের ঘটনা ভয়াবহ। সেখান থেকে কৌশলে পুলিশের সাহায্যে পালিয়ে আসেন রানী। কেবল রানীর ঘটনা নয়, ঢাবিতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে যৌন হয়রানি। শিক্ষক, বন্ধু, বহিরাগত বা ক্যাম্পাসের ছাত্রনেতা পরিচয়ে বড় ভাইদের কাছেই তারা এ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত মাসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ২৮ জন শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছেই অভিযোগ করেছেন ১৬ জন ছাত্রী। এদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আবার অনেকে প্রেমিকের ছুরির ফলায় বিদ্ধ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রী অপহরণ করে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। গত ১৯শে এপ্রিল প্রেমিককে অস্বীকার করায় তার উপর্যুপরি ছুরির আঘাতে প্রেমিকা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। তাকে বাঁচাতে প্রয়োজন হয়েছে ২৬ ব্যাগ রক্ত। এখনও আশঙ্কামুক্ত নন তিনি।
গত মাসের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় শ্রেয়া (ছদ্মনাম)-কে। ১৩ ঘণ্টা আটক থাকার পরে কৌশলে শিক্ষকদের ফোন করে তাদের সহযোগিতায় পালিয়ে আসতে সক্ষম হন তিনি।
গত শনিবার ১ম বর্ষের ছাত্রী ত্বহা (ছদ্মনাম)-কে তার পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে এক বহিরাগত বিভাগে ঢুকে প্রেম প্রস্তাব করে। অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। গত শনিবার মাস্টার্সের ছাত্রী তামান্না (ছদ্মনাম)-কে স্ত্রী দাবি করে টাকা দাবি করে এক বহিরাগত। স্ত্রী পরিচয় অস্বীকার ও টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাকে ক্যাম্পাস থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে বলেও জানায়। এমনকি অশ্লীল মেসেজ, পিতা-মাতার কাছে নিয়মিত বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে তাকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করে। গত মাসের ১৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করেন ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী তনিমা (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, প্রতিনিয়ত এক শিক্ষার্থী প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে তাকে উত্ত্যক্ত করছে। অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে সমস্যা সৃষ্টি করার হুমকি দেয়।
গত মাসের ২৪ তারিখে বৃষ্টি (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থী তার নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে আবেদন করেছেন। তিনি জানান, এক ছাত্রনেতা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। অথচ সে তার বান্ধবীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করে আসছে। বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায় তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করায় তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে তাকে বিয়ে করতে হবে। আর না হলে বখাটে লেলিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া করা হবে।
গত ১১ই এপ্রিল প্রেমের দাবিতে হামলা করে আহত করা হয় ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী লাবণ্য (ছদ্মনাম)-কে। হামলাকারী একই বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। হামলায় আহত হয়েছেন লাবণ্যসহ তার কয়েকজন বান্ধবী। তিনিও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টরের কাছে আবেদন করেছেন।
এদিকে গত ১৬ই এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন এমফিলের শিক্ষার্থী রাফিয়া (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, প্রেম করে বিয়ে করার পরেও মাস্টার্সের ছাত্র প্রতিনিয়ত অত্যাচার করছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে তোলা অন্তরঙ্গ ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করছে। মারপিট করে আহত করেছে। এমনকি তাকে বোঝাতে গিয়ে তার হামলায় আহত হয়েছেন তার বড় বোনসহ পরিবারের অনেকে।
গত মাসের শুরুতে নাজ (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থীকে প্রেমের দাবি পূরণ না করায় প্রাণনাশের হুমকি দেয় এক শিক্ষার্থী। সেও একই বিভাগের শিক্ষার্থী। সে এর আগে বিভাগের তনিমা (ছদ্ম নাম) নামের এক মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতো। তারা নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে আবেদন করেছেন। এভাবে প্রতিনিয়ত যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে ক্যাম্পাসে। অনেকে মানসম্মানের কথা ভেবে কাউকে বিষয়টি জানায় না। ফলে পরে বখাটেদের হামলায় দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ আলী বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে। তারপরেও মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

হারিয়ে যাওয়া টাইটানিক, খুঁজে পাওয়া টাইটানিক

বলো তো, পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত জাহাজ কোনটা? কেন, টাইটানিক। যে জাহাজটিকে বলা হচ্ছিল কখনোই ডুববে না, সেই জাহাজটিই কিনা ডুবে গিয়েছিল প্রথমবারের মতো সাগরে ভেসেই। টাইটানিক কবে ডুবে গিয়েছিল, মনে আছে? ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল। মানে, এই বছর ১৫ এপ্রিল টাইটানিক ডুবে যাওয়ারও ১০০ বছর হয়ে যাচ্ছে। তবে এ বছর টাইটানিক প্রেমীদের জন্য একটা সুখবরও আছে- এ বছরই টাইটানিকের ডুবে যাওয়া ধ্বংসাবশেষকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। মানে, এখন আর চাইলেই কেউ টাইটানিক দেখতে গিয়ে টাইটানিকের ক্ষতি করতে পারবে না। আর টাইটানিকের মালপত্র সরানো তো যাবেই না।
টাইটানিক হারিয়ে যাওয়ার গল্প
টাইটানিকের গল্প তো তোমরা জানোই, কী বিশালই না ছিল এই টাইটানিক। প্রায় তিন-তিনটা ফুটবল মাঠের সমান। শুধু কী তাই? সেই কবেকার এই জাহাজটিতে ছিল একটা বিশাল সুইমিং পুল, যেখানে গরম পানিরও বন্দোবস্ত ছিল। ছিল আরাম-আয়েশ আর বিলাস-এর সব ব্যবস্থাই। সব মিলিয়ে যাকে বলে এক ভাসমান সুরম্য প্রাসাদ। আর তাই দেখ না, টাইটানিক সিনেমায় যখন জাহাজটিকে দেখ, মনেই হয় না ওটা সেই ১৯১২ সালের জাহাজ। বাজারে তো এমন কথাও রটে গেল, স্বয়ং ঈশ্বরও এই জাহাজকে ডোবাতে পারবেন না, এমনই মজবুত এই টাইটানিক!

এমন একটা জাহাজ, আর তাতে রাজ্যের যতো বড়লোকরা চড়বে না, তাই কী হয়? রীতিমতো হুড়োহুড়ি করে বিক্রি হল টাইটানিকের প্রথম যাত্রার টিকিট। প্রথম যাত্রার রুট ছিল ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন শহর থেকে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর। ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে রওয়ানা হল তখনকার সবচাইতে বড় আর সবচাইতে বিলাসী জাহাজ। যারা জাহাজটির প্রথম ভ্রমণে যাত্রী হতে পারলো, তাদের তো খুশি আর ধরে না। সারাদিনই যেন জাহাজে পার্টি হচ্ছে, এমন অবস্থা। এমনি করেই পার হয়ে গেল কয়েকটি দিন।

১৪ এপ্রিল, রাত প্রায় ১২টা। আটলান্টিক সাগরের বুকে ভেসে যাচ্ছে টাইটানিক। তখন টাইটানিক আমেরিকার কাছাকাছি চলে এসেছে, গ্র্যান্ড ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ডে। আবহাওয়া খুবই খারাপ; ভীষণ ঠাণ্ডা আর জমাট বাঁধা কুয়াশা। নিউফাউন্ডল্যান্ড পার হয়ে যাওয়া জাহাজগুলো এর মধ্যেই এখানকার ভাসমান বরফ, মানে আইসবার্গ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে টাইটানিককে। কিন্তু টাইটানিকের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ আর অন্যান্য ক্রুরা তো তাদের এসব কথাকে পাত্তাই দেননি। তাদের ভাবখানা এমন- কোথাকার কোন বরফ নাকি টাইটানিককে ডোবাবে! টাইটানিক আগের মতোই ২১ নটিক্যাল মাইলে (২৪ মাইল) চলতে লাগলো। ২১ নটিক্যাল মাইলকে আবার কম ভেবো না; তখন টাইটানিক ছিল অন্যতম দ্রুতগতির জাহাজ, আর তার সর্বোচ্চ গতিই ছিল ২৪ নটিক্যাল মাইল। 
ওদিকে জাহাজের সামনে কোনো বাধা আছে কিনা দেখার জন্য জাহাজের ডেকে একটা উঁচু টাওয়ারের মতো থাকে। সেখানে পালা করে কয়েকজন চোখ রাখে। তখন সেখানে ছিলেন ফ্রেডরিক ফ্লিট। হঠাৎ তিনি দেখলেন, কুয়াশার আড়াল থেকে বের হয়ে এল এক বিশাল আইসবার্গ। আইসবার্গ হল সাগরের বুকে ভাসতে থাকা বিশাল বিশাল সব বরফখণ্ড। এগুলোর সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এগুলোর মাত্রই আট ভাগের এক ভাগ পানির উপরে থাকে। মানে, এর বড়ো অংশটাই দেখা যায় না। আর বরফের রংও তো কুয়াশার মতোই সাদা, তাই ফ্লিটও প্রথমে ওটাকে আলাদা করে চিনতে পারেনি। যখন দেখতে পেল, ততোক্ষণে আইসবার্গটি অনেক কাছে চলে এসেছে।

ফ্লিট তো আইসবার্গ দেখেই খবর দিতে ছুটলো। ফার্স্ট অফিসার উইলিয়াম মারডক শুনেই জাহাজ পিছনের দিকে চালাতে বললেন। আর মুখ ঘুরিয়ে দিতে বললেন অন্যদিকে। যাতে কোনভাবেই বিশাল ওই আইসবার্গটির সঙ্গে টাইটানিকের সংঘর্ষ না হয়। কিন্তু লাভ হলো না। টাইটানিকের স্টারবোর্ডে আইসবার্গ ধাক্কা খেল। আর তাতে টাইটানিকের পানির নিচে থাকা অংশে অনেকগুলো গর্ত হলো। পানি ঢুকতে লাগলো দৈত্যাকার জাহাজের খোলের ভেতর।

কিছুক্ষণের মধ্যেই এটা পরিস্কার হয়ে গেল, লোকজন যে জাহাজকে ভাবছিল কখনোই ডুববে না, সেই জাহাজই ডুবে যাচ্ছে তার প্রথম যাত্রাতেই। এবার যাত্রীদের লাইফবোটে তুলে পার করে দেওয়ার পালা। কিন্তু কেউ তো এ নিয়ে ভাবেই নি। লাইফবোট যা আছে, তা দিয়ে বড়োজোর মোট যাত্রীদের তিন ভাগের এক ভাগকে বাঁচানো যাবে। তখন এক বিশেষ নীতি অনুসরণ করা হলো- শিশু এবং নারীদেরকে প্রথমে লাইফবোটে করে পাঠানো হতে লাগলো।

এমনি করে কোনো রকমে বিশাল টাইটানিকের মোটে ৩২ শতাংশ যাত্রীদের বাঁচানো গেল। মাত্র ঘণ্টা চারেকের মধ্যে ডুবে গেল সুবিশাল টাইটানিক, ১৫ এপ্রিল রাত ২টায়। টাইটানিকের সঙ্গে আটলান্টিকে ডুবে গেল প্রায় ১৫ শ' মানুষ। মানুষের ইতিহাসেই এরকম বড়ো দুর্ঘটনা আর ঘটেছে কিনা সন্দেহ।

টাইটানিক তো ডুবে গেল আটলান্টিকে, কিন্তু আটলান্টিকের বুকে তার কী হলো? কেউ কেউ বললো, টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কেউ বললো, টুকরো টুকরো হবে কেন, দু’ভাগ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু যতো গভীরে আছে, সেখান থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব নয়। উদ্ধার কেন, চিহ্নিত করাই তো অসম্ভব। এমনি করেই আড়ালে চলে গেল হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানির জাহাজটি।
টাইটানিক খুঁজে পাওয়ার গল্প
কিন্তু টাইটানিককে বেশিদিন চোখের আড়ালে থাকতে দিলেন না রবার্ট বালার্ড। ফরাসি এই বিজ্ঞানীর ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল টাইটানিককে খুঁজে বের করবেন। বড়ো হয়ে তিনি সেই কাজেই নামলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি জাহাজ নিয়ে ঘাঁটি গাড়লেন গ্রেট ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ডে, যেখানে ডুবে গিয়েছিল টাইটানিক। সঙ্গে নিলেন নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি। আর্গো নামের একটি আন্ডারওয়াটার ক্র্যাফট পাঠিয়ে দিলেন সাগরতলে। আর্গো সাগরতলের দৃশ্য ভিডিও করে নিয়ে আসতো।

কিন্তু কিছুতেই পাওয়া গেল না টাইটানিককে। হতাশ হয়ে পড়লেন বালার্ড। এদিকে টানা পরিশ্রমে তার শরীরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। একটু বিশ্রাম দরকার তার। কিন্তু কীসের বিশ্রাম! যেই একটু ঘুমুতে গেলেন, অমনি তার ডাক পড়লো। আর্গোর ভিডিওতে মেটাল অবজেক্ট পাওয়া গেছে, যেগুলো শুধু কোনো জাহাজ থেকেই ভেসে আসা সম্ভব। উত্তেজনায় যা ঘুম ছিল, সব চলে গেল বালার্ডের। একটু খোঁজাখুজির পর জাহাজটিকে পাওয়া গেল। হ্যাঁ, এটাই টাইটানিকের দৈত্যাকৃতির ধ্বংসাবশেষ। 
এবার আর্গোকে দিয়ে নানা দিক দিয়ে টাইটানিকের ছবি তুললেন বালার্ড। দেখলেন টাইটানিকের যাত্রীদের নানা স্মৃতিচিহ্ন- বিছানা, সুটকেস, কাপ- প্লেট, আর অসংখ্য জুতো। যেন সাগরতলের এক জাদুঘরের ভিডিও দেখছেন তিনি।

কিন্তু সময় ফুরিয়ে এল। তাকেও ফিরে যেতে হলো। তখনই ঠিক করলেন, আবার আসবেন টাইটানিকের কাছে। পরের বছরই আবার এলেন বালার্ড। এবার আরো প্রস্তুত হয়ে।

ছোট্ট একটা সাবমেরিনে চড়ে এলেন বালার্ড। সাথে নিয়ে এলেন সাগরতলে ঘোরাঘুরি করতে পারে, এমন একটি রোবটও; নাম তার জেজে। বালার্ড অবশ্য ওকে বলতেন- সুইমিং আইবল। জেজের সাহায্যে তিনি দেখলেন পুরো টাইটানিককে; এর বিশাল সিঁড়িটা এখন কেমন আছে, কেমন আছে ওর জিম, চেয়ার, ঘর, সব।
বালার্ডের টাইটানিক আবিষ্কার তো হলো, কিন্তু তিনি জানতে চাইলেন, কীভাবে ডুবে গেল টাইটানিক। আর তা বোঝার জন্য আবারো তিনি গেলেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে, ২০০৪ সালের জুন মাসে। এবার গিয়ে কিন্তু তার মনই খারাপ হয়ে গেল।

বালার্ড টাইটানিক আবিষ্কার করার পর থেকেই মানুষ সাবমেরিনে করে সেখানে ঘুরতে যায়। এই সাবমেরিনগুলো টাইটানিকের যে সব জায়গায় ল্যান্ড করে, সেসব জায়গাতে দাগ তো পড়েছেই, অনেক জায়গায় গর্তও হয়ে গেছে। আর মানুষ জাহাজ থেকে প্রায় ৬ হাজার জিনিস নিয়ে গেছে। এমনকি অনেকে নিয়ে গেছে জাহাজের টুকরোও!

তখন থেকেই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণের দাবি ওঠে। আর এ বছর তো ইউনেস্কো টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষকে আন্ডারওয়াটার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেই ঘোষণা করে দিয়েছে।

১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ, আমাদের ভীষণ আনন্দের দিন। সেদিন তো খুব আনন্দ করবে। কিন্তু পরের দিন মনে করে টাইটানিকের সাথে ডুবে যাওয়া ১৫শ’ মানুষের কথাও স্মরণ করো। ঠিক ঠিক করে বললে ১৫১৪ জন।
 

মানব ভ্রুণের তৈরি ক্যাপসুল!

 
ক্ষিণ কোরিয়া, মে ৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- চীনে মানব ভ্রুণ থেকে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের ক্যাপসুল। আর সেখান থেকে তা দক্ষিণ কোরিয়ায় চোরাচালান হচ্ছে বলে দাবি করেছে দেশটির শুল্ক বিভাগ।

এই ক্যাপসুলগুলোতে সুপারবাগ রয়েছে এবং তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে সতর্ক করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।

মৃত মানব ভ্রুণের গুঁড়া মাংস দিয়ে ক্যাপসুলগুলো তৈরি এবং চীনের উত্তরপূর্বাঞ্চলে এগুলো তৈরি করা হয় বলেই ধারণা করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এ ক্যাপসুল খেলে প্রাণশক্তি বাড়ে- এমন ধারণার ভিত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু চীনা শ্রমিক ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ক্যাপসুলটি খেয়ে থাকে।

দক্ষিণ কোরীয় শুল্ক কর্মকর্তারা গত আগস্টে প্রথম এ ক্যাপসুলের সন্ধান পান।

এরপর থেকে দিন দিনই এগুলোর চোরাচালান বাড়ছে। গত রোববারও বিপুল সংখ্যক ক্যাপসুল আমদানির প্রচেষ্টা ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার শুল্ক বিভাগ জানায়, খদ্দেরদের অনুরোধে চীনের অন্তত ৪ টি নগরী থেকে ক্যাপসুলগুলো পাঠানো হয়। তবে সেগুলো বিমানবন্দরে তল্লাশির সময়ই ধরা পড়ে।

দক্ষিণ কোরিয়া এ ওষুধের উৎস চীন বলে দাবি করলেও বেইজিং কর্তৃপক্ষ এখনো এর কোনো প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানিয়েছে চীন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, “ক্যাপসুলগুলোতে সুপার-ব্যাকটেরিয়াসহ মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়েছে।”

তাই এগুলোর চোরাচালান রোধে আরো কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ-কোরিয়ার শুল্ক বিভাগ।

উচ্চ রক্তচাপের নতুন চিকিৎসা দেশেই

 
নূরুল ইসলাম হাসিব
স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদক

ঢাকা, মে ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রেনাল ডিনার্ভেশন নামে নতুন এক পদ্ধতি ব্যবহার করে ‘জটিল’ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চালু হয়েছে দেশে।

শনিবার জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট রক্তচাপের চিকিৎসার এ পদ্ধতি চালু করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা তিনজন রোগীর উপর নতুন এই কৌশলের সফল প্রয়োগ করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাংলাদেশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ জীবন-যাপনে পরিবর্তন ও পর্যাপ্ত হারে সর্বোচ্চ পরিমাণ ওষুধগ্রহণ করেও এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। চিকিৎসকরা এ অবস্থাকে জটিল উচ্চ রক্তচাপ আখ্যা দিয়েছেন।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ‘একমাত্র’ আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে তিন বছর আগে ইউরোপে নতুন এ পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে। এরকম উচ্চ রক্তচাপের কারণে রোগীরা স্ট্রোক, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া, কিডনি অকেজো হওয়া এবং চোখের জটিল রোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।

নতুন এ পদ্ধতির প্রশিক্ষক ডা. ধীমান বণিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি সরু টিউব বা ক্যাথেটার কুঁচকির ধমনীতে প্রবেশ করানো হয় এবং কিডনির ধমনীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।”

“ওই ক্যাথেটার পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি কিডনির ধমনীতে প্রবেশ করে এবং কিডনির স্নায়ুগুলোকে নিঃসাড় করে দেয়। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিকারী গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলোর পথে বাধা তৈরি হয় যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রক্তচাপ কমাতে শুরু করে।”

ডা. ধীমান বলেন, “এই পদ্ধতি প্রয়োগে মাত্র ৩০ মিনিট সময় প্রয়োজন হয় এবং এক রাতের জন্য হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়।”

উদ্বোধনী দিনে তারা তিনজন রোগীকে বিনা খরচে এই অপারেশন করিয়েছেন বলে জানান তিনি। দামী ক্যাথেটার ও যন্ত্রপাতির কারণে ভর্তুকি দেওয়ার পরেও এ চিকিৎসা নিতে হলে প্রত্যেক রোগীকে দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হবে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ পদ্ধতির চিকিৎসায় বিশ্বের কোথাও কোনো উল্লেখযোগ্য কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।

চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দ্য লাংচেট ২০১০ সালে এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, রেনাল ডিনার্ভেশন পদ্ধতি ‘খুব কার্যকর ও অত্যন্ত নিরাপদ’।

ধরা হয়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত যাদের অধিকাংশই ধনী দেশের মানুষ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে শারীরিক পরিশ্রম বৃদ্ধি, ওজন কমানো ও লবণ খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত

 
ঢাকা, মে ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

তাদের বিক্ষোভের কারণে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ফার্মগেটমুখী সড়ক রোকেয়া সরণীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে অবনমন করা হয়েছে দাবি করে বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই খবরটি ঠিক নয়।

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টার দিকে আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।

দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা তালতলায় তাদের ইনস্টিটিউটের সামনে আসে। দুপুর ১টায় সড়ক ছাড়ে তারা। এরপর গাড়ি চলাচল পুনরায় শুরু হয়।

সারাদেশে পলিটেকনিকে এই অসন্তোষ তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আতোয়ার রহমানকে আহ্বায়ক করে একি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বলেছে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদা পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। একটি ভুল তথ্যের ভিত্তিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন স্থানে ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভোলা প্রতিনিধি জানান, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ভোলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।

এক পর্যায়ে তারা ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ গিয়ে তাদের ঠেকায়।

বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, সকালে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একদল ছাত্র বাসটার্মিনালে যানবাহনে ভাংচুর চালায়। তখন ছাত্রদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ লাঠিপেটা করে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এই ঘটনার পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে আগামী ২৮ মে পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া বরগুনায়সহ কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ করেছে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সকালে গাজীপুরে মডেল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (মিস্ট) ছাত্ররা ক্লাস বর্জন ও মিছিল করেছে। এসময় তারা গাজীপুর-শিমুলতলী সড়কে টায়ার জ্বলিয়ে অবরোধ করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ মৃদু লাঠিপেটা করে।

এ সময় আহত কয়েকজনকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক সিরাজুল হক মোল্লা বলেন, এ ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটি থেকে এক সপ্তাহের জন্য গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেওয়া হয়েছে। আগামি ২ জুন খুলবে।

জয়দেবপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষের সত্যতা স্বীকার করেছেন।

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বরিশালের বেসরকারি ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে। নগরীর সিএন্ডবি সড়কে ইনস্টিটিউটের সামনে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারি পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা তার ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মিছিল করতে উৎসাহিত করে।

এতে ৪০/৫০ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ও একটি অটোরিকশা ভাংচুর করে। পরে খবর পেয়ে সবাইকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

ভাংচুর করা অটোরিকশা মেরামতের জন্য চালককে তাৎক্ষণিকভাবে দুই হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহিদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে চার শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

আটকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, বলেন ওসি।

সর্বোচ্চ শৃঙ্গে দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী

দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট চূড়ায় উঠেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহন করেন বলে তার এক সহযোগী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে।

ঠিক এক সপ্তাহ আগেই গত শনিবার বাংলাদেশি প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছিলেন নিশাত মজুমদার। এরপরই চতুর্থ বাংলাদেশি হিসেবে এই গৌরবের অংশীদার হলেন ২৯ বছর বয়সি ওয়াসফিয়া।

২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহিম। তার পথ ধরে এই গৌরবের ভাগিদার হন এম এ মুহিত ও নিশাত।

সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাত শৃঙ্গ জয়ে ওয়াসফিয়ার প্রচারসঙ্গী ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ তাদের ফেইসবুক পাতায় দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারীর এভারেস্ট চূড়ায় আরোহনের ঘোষণা দেয়।

তারা বলেছে, কোনো সঙ্গী না নিয়ে একাই এভারেস্ট চূড়ায় ওঠেন ওয়াসফিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আমেরিকার গাইড ক্রিস ক্লিঙ্কে এবং দুজন শেরপা নিমা গুরমে দর্জি ও কুসাং শেরপা।

গত ১৯ মে নিশাতের এভারেস্ট জয়ে সঙ্গী ছিলেন এর আগে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা মুহিত। মুহিত ২০১১ সালের ২১ মে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন।

‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ জানিয়েছে, ওয়াসফিয়া এখন নিচে নামতে শুরু করেছেন এবং সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এক বা দুদিনের মধ্যেই তিনি নেমে আসবেন।

এভারেস্ট জয় করা প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত পর্বত থেকে নেমে এখন কাঠমান্ডুর পথে রয়েছেন।

সবচেয়ে কম বয়সী বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে ওঠা ওয়াসফিয়া স্যাটেলাইন ফোনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিটস দল’কে বলেছেন, “আমাদের দেশ স্বাধীন হলেও আমরা নারীরা এখনো স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এ জয় বাংলাদেশের নারীদের জন্য যারা স্বাধীনতা, শান্তি ও সমতার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করছে।”

এভারেস্টজয়ী ওয়াসফিয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুসা ইব্রাহিম। ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’র ফেইসবুক পাতায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেশের প্রথম এভারেস্টজয়ী লিখেছেন, “বাংলাদেশের নারীরা প্রমাণ করেছেন, তারাও পারেন।”

ওয়াসফিয়া সাত মহাদেশের সাতটি চূড়া জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নেমেছেন। হিমালয়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার আগে গত বছর তিনি আফ্রিকার মাউন্ট কিলিমানজারো এবং দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকনকাগুয়ায় আরোহন করেন।