Translate

শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১২

শুরু হচ্ছে গুগল কোড জ্যাম: অংশ নিন আপনিও

শুরু হচ্ছে গুগল কোড জ্যাম: অংশ নিন আপনিও

প্রতি বছরের মতো গুগল কোড জ্যাম-এর নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করলো গুগল। এটি মূলত সৃজনশীল ও প্রতিভাবান প্রোগ্রামারদের জন্য একটি গেম শো। তবে এটি বেশ কঠিন। খবর দি নেক্সট ওয়েবের।

গুগল গত বছরও প্রোগ্রামার ও ডেভেলপারদের জন্য কোড জ্যামের আয়োজন করে। আর কিছুদিন আগেই গুগল তাদের ব্রাউজার গুগল ক্রোমে যে কোনো ত্রæটি বের করার একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করে বিজয়ীদের পুরস্কৃতও করেছে।

গত বছরের আয়োজনের চ‚ড়ান্ত পর্বে চ্যাম্পিয়ন মাকোটো সোজিমাকে বিড়ালদের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করতে এবং তাদের খাবার পরিবেশন করতে বলা হয়েছিল। এর আগে বাড়িটি কী ধরনের হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়া হয়। এমনই অদ্ভূত সব সমস্যার সমাধান করতে দেয়া হয় গুগল কোড জ্যামে। সম্ভবত এ বছরও তেমনই কোনো সমস্যা নিয়ে অপেক্ষা করে আছে গুগল, এমনটাই মতামত দি নেক্সট ওয়েবের।

উল্লেখ্য, কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড থেকে শুরু করে প্রায় সব রাউন্ডই ঘরে বসেই দেয়া যাবে। সাধারণত কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে প্রয়োজন ২৪ ঘণ্টা এবং এর পরের রাউন্ডগুলোতে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট করে সময় বরাদ্দ থাকে। এভাবে বিভিন্ন রাউন্ড শেষে সর্বশেষ ২৫ জন প্রতিযোগী যাবেন গুগলের নিউ ইয়র্ক অফিসে ১০ হাজার ডলার এবং গুগল কোড জ্যাম চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার লক্ষ্যে।

এপ্রিলের ১৩ তারিখ থেকে শুরু হয়ে কোড জ্যামের সর্বশেষ প্রতিযোগিতা গুগলের নিউ ইয়র্ক অফিসে অনুষ্ঠিত হবে জুলাইয়ের ২৭ তারিখে।

গত বছরের কোডজ্যামের চূড়ান্ত সমস্যাটি পড়তে পারবেন এই লিংকে: http://pastebin.com/wZmTNzbd অথবা এর আগের বছরের কোড জ্যাম প্রবলেমগুলোও প্র্যাকটিস করতে পারবেন এই লিংক থেকে- http://code.google.com/codejam/contests.html

এছাড়াও আগ্রহীরা গুগল কোড জ্যামের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এই ঠিকানা থেকে-  http://code.google.com/codejam/contest/registration

'জুম'-এর পর মটোরোলা আনছে 'জিবোর্ড'

'জুম'-এর পর মটোরোলা আনছে 'জিবোর্ড'

মার্কিন ওয়্যারলেস জায়ান্ট মটোরোলা নতুন ব্র্যান্ডের দুটি ট্যাবলেট কম্পিউটার তৈরি করছে বলেই তথ্য ফাঁস হয়েছে। খবর সিনেট-এর।

বর্তমানে বাজারে মটোরোলার তৈরি ‘জুম’ ট্যাবলেট রয়েছে। এবার মটোরোলার তৈরি রেজর ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন থেকে উৎসাহ নিয়ে ‘জিবোর্ড’ নামে দুটি ট্যাবলেট তৈরি করছে বলেই তথ্য ফাঁস হয়েছে।

গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমচালিত এ দুটি ট্যাবলেটের স্ক্রিন সাইজ হবে ৮ ইঞ্চি এবং ১০ ইঞ্চি। ডুয়াল কোর প্রসেসর এবং এনভিডিয়ার তৈরি টেগ্রা প্রসেসর থাকবে ডিভাইসদুটিতে। গরিলা গ্লাস, ক্যামেরা এবং ১ গিগাবাইট র‌্যামযুক্ত ডিভাইসদুটি দেখতে হবে রেজর স্মার্টফোনের মতো।

ডিভাইসদুটির দাম হতে পারে ৬০০ ডলার এবং ৮০০ ডলার। আগামী বছরই এ ডিভাইসদুটি বাজারে চলে আসতে পারে।

৫ ইঞ্চি পর্দার স্মার্টফোন আনছে লেনোভো

এবার স্মার্টফোন বাজারে পা রাখছে ল্যাপটপ নির্মাতা লেনোভো। লেনেভো কর্তৃপক্ষ ৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের একটি স্মার্টফোন তৈরি করছে বলেই খবর রটেছে। খবর ম্যাশএবল-এর।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে স্মার্টফোনের বাজারে স্ক্রিনের মাপে বৈচিত্র্য এসেছে। সবাই এখন বড়ো মাপের স্ক্রিনের দিকেই ঝুঁকছে। এদিকে, ট্যাবলেট কম্পিউটারের আকার আবার ছোটো হচ্ছে। এ দুইয়ের মাঝামাঝি আকারের ডিভাইসগুলোই এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তাই লেনোভো ৫ ইঞ্চি মাপের স্মার্টফোন তৈরির পথ বেছে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাজারে বড়ো আকারের স্মার্টফোন হিসেবে ৪.৭ ইঞ্চি মাপের এইচটিসি টাইটান এবং ৫.৩ ইঞ্চি মাপের স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট স্মার্টফোন দুটি রয়েছে।

লেনোভোর আইডিয়া ট্যাবলেটের ছোটো সংস্করণই হতে পারে ৫ ইঞ্চি মাপের এ ডিভাইসটি। এতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে গুগল অ্যান্ড্রয়েডের সাম্প্রতিক সংস্করণটিই থাকতে পারে।

২০১২ সালের সিইএস মেলায় এ স্মার্টফোনটির ঘোষণা দিতে পারে লেনোভো কর্তৃপক্ষ।








আসছে ৮.৯ ইঞ্চির কিন্ডল ফায়ার

অনলাইন রিটেইল জায়ান্ট অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ার ট্যাবলেটের নতুন সংস্করণের আনছে বলেই খবর রটেছে। নতুন সংস্করণের এ ডিভাইসটির পর্দাম মাপ হবে ৮.৯ ইঞ্চি। বাজারে ৮.৯ ইঞ্চির ট্যাবলেট হিসেবে এটিই হবে প্রথম। খবর সিনেট-এর।

৭ ইঞ্চি মাপের কিন্ডল ফায়ারের পরবর্তী সংস্করণ হিসেবে অ্যামাজন ১০.১ ইঞ্চি মাপের নতুন ট্যাবলেট আনতে পারে বলেই খবর রটেছিলো। কিন্তু ট্যাবলেট বিপননকারীরা নাকি বাজারে থাকা ৯.৭ এবং ১০.১ ইঞ্চি মাপের ট্যাবলেটের আধিক্য থাকায় নতুন সংস্করণের মাপে ভিন্নতা চেয়েছে। তাই, অ্যামাজন কিন্ডল ফায়ারের পরবর্তী সংস্করণ হিসেবে ৮.৯ ইঞ্চি মাপের ট্যাবলেটই তৈরি করবে।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে এ ডিভাইসটি বাজারে আসবে।

খবর রটেছে, অ্যামাজন ট্যাবলেট তৈরি করতে তাউওয়ানিজ যন্ত্রাংশ নির্মাতা ফক্সকনকে পাচ্ছে না। কারণ, অ্যাপল-এর পণ্য তৈরি করতে ফক্সকন ইতোমধ্যে বুক হয়ে রয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাজারে এসেছে অ্যামাজনের ৭ ইঞ্চি মাপের কিন্ডল ফায়ার ট্যাবলেট। মাত্র ১৯৯ ডলারের এ ট্যাবলেটি বিক্রিতে অ্যামজন লসও গুনছে। কিন্তু জনপ্রিয়তার কারণে এবার স্মার্টফোন বাজারেও অ্যামাজনের পা পড়ছে বলেই খবর রটেছে।








এবারে এলো ভিউসনিকের ৭ ইঞ্চি ট্যাবলেট

বাজারে ক্রমশ ৭ ইঞ্চি ট্যাবলেটের প্রচলন তৈরি হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় এবার যুক্তরাষ্ট্রের ভোগ্যপণ্য নির্মাতা ভিউসনিক কর্পোরেশন একটি ৭ ইঞ্চি ট্যাবলেট বাজারে আনলো। নতুন এ ট্যাবলেটটির নাম ‘ভিউপ্যাড ৭ই।’ খবর সিনেট-এর।

চলতি মাসেই এ ডিভাইসটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাওয়া যাবে। দাম পড়বে প্রায় ২০০ ডলার।

৭ ইঞ্চি ডিসপ্লের এ ডিভাইসটিতে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ২.৩ বা জিঞ্জারব্রেড অপারেটিং সিস্টেম। এতে ফিচার হিসেবে রয়েছে থ্রিডি যাকে বলা হচ্ছে হলোগ্রাফিক ভিজুয়াল ইফেক্ট। ১ গিগাহার্টজ প্রসেসর, ৪ গিগাবাইট স্টোরেজ, মাইক্রো-এইচডিএমআই পোর্ট, পেছনে ৩ মেগাপিক্সেল এবং সামনে ০.৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা, ভিডিও চ্যাট, মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট এবং ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত মেমোরি ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।

ডিভাইসটিতে রয়েছে বিল্ট ইন টুইটারসহ বেশকিছু অ্যাপ্লিকেশন। এ ছাড়াও আছে হাইডেফিনেশন টিভি দেখার সুবিধাও।

ভিউসনিকের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল হলস্টেন জানিয়েছেন, মোবাইল মাল্টিমিডিয়া‘র ক্ষেত্রে দারুণ অভিজ্ঞতা দেবে ভিউসনিকের ভিউপ্যাড ৭ই।

উল্লেখ্য, সম্প্রতিই ৭ ইঞ্চি মাপের ‘কিন্ডল ফায়ার’ নামের একটি ট্যাবলেট বাজারে এনেছে অ্যামাজন। এ ডিভাইসটির দামও প্রায় ২০০ ডলার।








গ্যালাক্সি ট্যাব ৭.০ প্লাস আসছে নভেম্বরে

কোরিয়ান ইলেকট্রনিক জায়ান্ট স্যামসাং তাদের পোর্টফোলিওতে নতুন একটি ট্যাবলেট যোগ করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এ ট্যাবলেটটি যোগ হচ্ছে জনপ্রিয় গ্যালাক্সি সিরিজে। ‘গ্যালাক্সি ৭.০ প্লাস’ নামের ডিভাইসটি বাজারে আনার তারিখ এবং ডিভাইসের দামও ঘোষণা করেছে স্যামসাং। খবর সিনেট-এর।

গ্যালাক্সি ট্যাবের নতুন এ সংস্করণটি হবে অ্যান্ড্রয়েড ৩.২ বা হানিকম্বচালিত। ৭ ইঞ্চি ডিসপ্লের এ ডিভাইসটিতে ১.২ গিগাহার্টজ ডুয়াল কোর প্রসেসর, ওয়াইফাই, থ্রিজি, ১৬/৩২ গিগাবাইট স্টোরেজ, ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত মাইক্রোএসডি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। ৩৪৫ গ্রাম ওজনের এ ট্যাবলেটটিতে পেছনের দিকে ৩ মেগাপিক্সেল এবং সামনের দিকে ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাও থাকছে। এতে আরো রয়েছে ইনফ্রারেড ট্রান্সমিটার যা ইউনিভার্সাল রিমোট কন্ট্রোলার হিসেবেও এ ডিভাইসটি ব্যবহারের সুবিধা দেবে।

১৬ গিগাবাইট স্ট্রোরেজ ক্ষমতার ডিভাইসটি ১৩ নভেম্বর বাজারে আসবে। ডিভাইসটির দাম পড়বে প্রায় ৪০০ ডলার। অ্যামাজন, বেস্ট বাই, ফ্রাই, টাইগার ডিরেক্ট নামের অনলাইন রিটেইলারদের কাছে এ ডিভাইসটি পাওয়া যাবে।

৩২ গিগাবাইট মডেলের ডিভাইসটি কবে নাগাদ বাজারে আসবে সে বিষয়ে এখনও জানায়নি স্যামসাং।

তেড়ে আসছে সৌরঝড়

তেড়ে আসছে সৌরঝড়

কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরঝড় শিগগিরই তেড়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। এর ফলে পৃথিবীর বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট নেভিগেশন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি সাময়িক সমস্যায় পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর ম্যাশএবল-এর।

সূত্র মতে, সূর্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ রিলিজ করেছে যা এক প্রকার শক্তিশালী প্লাসমার বিস্ফোরণ। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এর প্রভাব পৃথিবীতে এসে পড়তে পারে।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের প্রধান বব রুটলেজ জানিয়েছেন, ঝড়টি খুব ভীতিকর না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা সৌরঝড়ের মুখোমুখি হয়নি পৃথিবী। তাই এ নিয়ে সরকারের স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার কিছুটা চিন্তিত।

বাজারে আসার আগেই নতুন আইপ্যাড শেষ

ঘোষণা দেয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টা হতে না হতেই কমে আসছে অ্যাপলের ‘নতুন’ আইপ্যাডের স্টক। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১৬ মার্চ বাজারে আসার কথা থাকলেও সেদিনের জন্য সাদা রঙের আইপ্যাড আর স্টকে নেই। খবর দি নেক্সট ওয়েবের।

সূত্র জানিয়েছে, এটিঅ্যান্ডটি ক্যারিয়ারের সাদা রঙের ফোর জি আইপ্যাড প্রিঅর্ডার করতে গেলে ডেলিভারির তারিখ দেখানো হচ্ছে ১৯ মার্চ। এর কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, ১৬ মার্চে ডেলিভারি দেয়ার মতো সব আইপ্যাড বিক্রি শেষ করে ফেলেছে অ্যাপল। তবে ৩২ গিগাবাইটের কিছু কিছু আইপ্যাড এখনো ১৬ মার্চেই পাওয়া যাচ্ছে।

দি নেক্সট ওয়েব জানিয়েছে, সাদা ডিভাইসের প্রতিই ক্রেতারা বেশি আকৃষ্ট। কেননা, সাদা প্রায় সব আইপ্যাড বিক্রি হয়ে গেলেও যেকোনো স্টোরেজ ক্যাপাসিটির কালো আইপ্যাড এখনো পাওয়া যাচ্ছে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই।

নতুন আইপ্যাড: কেন কিনবেন অথবা কিনবেন না


প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অ্যাপল বাজারে আনলো ‘নতুন আইপ্যাড।’ সবাই আইপ্যাড ৩ আশা করলেও অ্যাপল নতুন কোনো ‘যুগান্তকারী ফিচার’ না এনে বরং আগের ফিচারগুলেরই যথেষ্ট উন্নত সংস্করণের আইপ্যাড বাজারে আনার ঘোষণা দিলো। আর এর ফলে প্রযুক্তি বিশ্বে শুরু হয়েছে নতুন এক বিতর্ক। নতুন আইপ্যাড কেনা ঠিক হবে কি-না।

যেসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে নতুন আইপ্যাডের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সেসব বৈশিষ্ট্য এখনই নতুন একটি আইপ্যাড কেনার জন্য যথেষ্ট কি না এ নিয়েই মূলত শুরু হয়েছে এই বিতর্ক।

নতুন আইপ্যাডের অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে এর রেটিনা ডিসপ্লে যার রেজুলিউশন ২০৪৮ বাই ১৫৩৬ পিক্সেল, এ৫এক্স প্রসেসর, কোয়াড কোর গ্রাফিক্স সিস্টেম, ৫ মেগাপিক্সেল আইসাইট ক্যামেরা এবং ফুল এইচডি ভিডিও রেকর্ড করার সুবিধা। কিন্তু এতোকিছুর পরও বিশেষজ্ঞরা বলছেন নতুন আইপ্যাড কেনার আগে কিছু বিষয় যাচাই করে নেয়া উচিত। এমবি ডটকম অবলম্বনে সেসব বিবেচ্য বিষয়গুলোই নিচে তুলে ধরা হলো।


যে কারণে নতুন আইপ্যাড কিনতে পারেন
১. আপনি যদি মুভি বা সিনেমার ভক্ত হন এবং প্রচুর মুভি দেখে থাকেন, তাহলে আইপ্যাডের ৯.৭ ইঞ্চি আকারের রেটিনা ডিসপ্লে এইচডি মুভি দেখার জন্য অতুলনীয় হতে পারে। এইচডি সিনেমা দেখার জন্য এবং অন্য হাই রেজুলিউশনের গ্রাফিক্স প্রয়োজন এমন কাজের জন্য চলতি পথে নতুন আইপ্যাড হতে পারে আদর্শ। এর গ্রাফিক্স প্রসেসর আগের মডেলের তুলনায় চারগুন ক্ষমতাসম্পন্ন।

২. আপনি যদি ট্যাবলেট ডিভাইস ব্যবহার করে ছবি তুলতে পছন্দ করেন এবং তা কম্পিউটারে না পাঠিয়েই ছোটখাটো এডিটিং বা সম্পাদনার কাজ করতে চান, তাহলে নতুন আইপ্যাড আপনার জন্য আদর্শ সঙ্গী হিসেবে কাজে আসবে। এর নতুন শক্তিশালী প্রসেসরের সাহায্যে অনেক কাজ একসঙ্গে খুব সহজেই করা যায়। শখের ফটোগ্রাফাররা খেয়াল রাখুন, নতুন আইপ্যাডে আপনি পাবেন ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন সুবিধা। এর ফলে ছবি তোলা বা ভিডিও করার সময় হাত কেঁপে গেলেও আপনার তোলা ছবিতে বা ভিডিওতে সেই ঝাঁকুনি টের পাওয়া যাবে না।


৩. আপনি যদি অনেক ভ্রমণ করে থাকেন এবং ৪জি প্রযুক্তির ইন্টারনেট সুবিধা পেতে চান, তাহলে নতুন আইপ্যাড আপনার কাজে আসবে। আজ যদি আপনি নতুন আইপ্যাড কেনেন, তবে বাংলাদেশে যখন ফোর জি নেটওয়ার্ক চালু হবে, তখন আপনাকে আর ডেটা স্পিড নিয়ে ভাবতে হবে না। তবে ফোর জি নেটওয়ার্ক না পেলে এটি সহজেই থ্রিজি সংযোগে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। অন্য ট্যাবলেটগুলো যেখানে সর্ব্বোচ্চ ৭.৩ মেগাবিট পার সেকেন্ড ডাউনলোড করতে পারে, সেখানে নতুন আইপ্যাড-এর ডাউনলোড ক্ষমতা ৭৩ মেগাবিট/সেকেন্ড।

৪. আপনি যদি ‘লেটেস্ট ডিভাইস’-এর মালিক হতে পছন্দ করেন, তাহলে নতুন আইপ্যাড কিনতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই নতুন আইপ্যাড কেনার মতো সামর্থ্য থাকলে এবং বন্ধুমহলে তা দেখানোর ইচ্ছে থাকলে নতুন আইপ্যাড কেনা যেতে পারে। কেননা, অনেকেই আরো অনেক কিছু প্রত্যাশা করলেও একেবারেই খারাপ নয় অ্যাপলের নতুন আইপ্যাড।


যেসব কারণে আইপ্যাড কিনবেন না

১. আপনি যদি ইতোমধ্যেই কোনো ট্যাবলেট ডিভাইস ব্যবহার না করে থাকেন এবং যদি মনে হয় যে, ট্যাবলেটের চেয়ে নোটবুক কম্পিউটারেই আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে নতুন আইপ্যাড আপনার জন্য নয়। ট্যাবলেট ডিভাইসে যদি আপনি সহজে কাজ করতে না পারেন, তাহলে নতুন আইপ্যাডও কোনো চমক নয়। কেননা, এতে অন্যান্য ডিভাইস থেকে বৈশিষ্ট্য বেশি থাকলেও কাজ করে বাজারের প্রায় অন্যান্য সব ট্যাবলেট ডিভাইসের মতোই।


২. আপনি যদি অনেক মিডিয়া ফাইল ব্যবহার না করেন, অর্থাৎ খুব একটা মুভি না দেখেন, ছবি না দেখেন, ভিডিও, ক্যাটালগ এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিন না পড়েন, তাহলে নতুন আইপ্যাড আপনার খুব একটা কাজে নাও আসতে পারে। অধিকাংশ মানুষই আইপ্যাডে সাধারণ ব্রাউজিং-এর পাশাপাশি মিডিয়া ফাইল এবং ই-বুক বা ম্যাগাজিন পড়ে থাকেন। বলা যায়, এটি হতে পারে আইপ্যাড কেনার অন্যতম কারণ।

৩. আপনি যদি আগেই কোনো ট্যাবলেটের মালিক হয়ে থাকেন এবং এর ক্যামেরা যদি আপনি খুব একটা ব্যবহার না করেন, তাহলে নতুন আইপ্যাড এখনই কিনলেও খুব একটা কাজে নাও আসতে পারে। কেননা, নতুন আইপ্যাডের অল্প কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হচ্ছে পেছনের ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যা সাপোর্ট করে অ্যাপলের আইসাইট।


৪. আপনার যদি ইতোমধ্যেই আইপ্যাড ২ থাকে এবং নতুন আইপ্যাড কেনার মতো টাকা না থাকে, তাহলে এখনই এটি বিক্রি করে নতুন আইপ্যাড কেনার চেষ্টা করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। কেননা, আইপ্যাডের অন্যতম সুবিধা এর ৪জি ইন্টারনেট ক্যাপাবিলিটি থাকলেও ৩জি ইন্টারনেটই কাজ করার জন্য যথেষ্ট। কাজেই, এখনই নতুন আইপ্যাডের জন্য চেষ্টা না করে অপেক্ষা করতে পারেন পরবর্তী আইপ্যাডের জন্য।


অ্যাপলের নতুন আইপ্যাডের সঙ্গে আরো কিছু ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। তারা জানিয়েছে, অ্যাপলের আইফটোতে মাল্টি-টাচের মাধ্যমে ছবি সম্পাদনার কাজ করা যাবে। পাশাপাশি আপডেট করা হয়েছে আইওয়ার্ক এবং আইলাইফ।

সবশেষে যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে নতুন আইপ্যাড কিনবেনই, তাহলে মাত্র ৪৯৯ ডলারে কেবল ওয়াই-ফাই সুবিধা সম্বলিত ১৬ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার ‘নতুন’ আইপ্যাড এখনই প্রিঅর্ডার করতে পারেন। পাশাপাশি একই ধারণক্ষমতার ৪জি সুবিধা সম্বলিত আইপ্যাড কিনতে পারেন ৬২৯ ডলারে।

অবশেষে গ্যালাক্সি এস ২-তে আইসক্রিম স্যান্ডউইচ

সম্প্রতি স্যামসাং জানিয়েছে, প্রতীক্ষা শেষ করিয়ে এবার অ্যান্ড্রয়েডের সর্বশেষ সংস্করণ ৪.০ তাদের গ্যালাক্সি এস ২ স্মার্টফোনে আপডেট করা হচ্ছে। আইসক্রিম স্যান্ডউইচ নামে পরিচিত এই সংস্করণের জন্য দীর্ঘদিন এস ২ ব্যবহারকারীরা অপেক্ষা করে আসছিলেন। খবর বিবিসির।

সূত্র জানিয়েছে, মার্চের ১৩ তারিখ থেকেই কোরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং সুইডেনের গ্যালাক্সি এস ২ ব্যবহারকারীদের আইসক্রিম স্যান্ডউইচ আপডেট দেয়া শুরু হয়ে গেছে। এটি পরে অন্যান্য দেশেও দেয়া হবে যা যুক্তরাজ্যে মার্চের ১৯ তারিখ চালু হতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মোবাইলের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম গুগলের অ্যান্ড্রয়েডের নতুন এই সংস্করণে টাচস্ক্রিনে নতুন সুবিধা ছাড়াও রয়েছে ব্যবহারকারীর ফেইস (মুখ) দিয়ে ফোন আনলক করার প্রযুক্তি।

বিবিসির নেটওয়ার্কে সাইবার আক্রমণ

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পারসিয়ান সার্ভিসে তাদের নেটওয়ার্ক দুর্বল করে দিতে ইরান থেকে সাইবার আক্রমণ করা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ইরানে থাকা বিবিসির দু’টি স্যাটেলাইট ফিড জ্যাম করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই বিফল এই চেষ্টা করা হয়েছিল। খবর বিবিসি অনলাইন।

বিবিসি জানিয়েছে, ডিরেক্টর জেনারেল মার্ক থম্পসন গত মাসে বিবিসির পারস্যের কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ আনেন ইরানের ওপর।

বিবিসির ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ অনুষ্ঠানেও ইরানের সাইবার-আর্মি নিয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়। এরপর সবশেষে বিবিসি অনলাইনে থম্পসনের একটি ব্লগ পোস্ট প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি বিবিসির পারসিয়ান টিভিসহ আন্তর্জাতিক টিভি স্টেশন জ্যাম করে ইরানের সাধারণ মানুষকে তথ্য প্রাপ্তি থেকে বিরত রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।


সনির নতুন টাচস্ক্রিনে স্পর্শও লাগবে না!

টাচস্ক্রিন হ্যান্ডসেটের জনপ্রিয়তা এখনো বেড়েই চলেছে। এমনই এক সময়ে জাপানের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট সনি নিয়ে এলো নতুন এক প্রযুক্তি, যাতে স্পর্শ না করেই টাচস্ক্রিনের মতো কাজ করা যায়, খবর বিবিসির।

সূত্র জানিয়েছে, মোবাইলের স্ক্রিনে স্পর্শ না করে এর উপর আঙুল দোলালেই স্মার্টফোনটি কাজ করবে। সনি এই প্রযুক্তিকে ‘ফ্লোর্টি টাচ’ বা ভাসমান স্পর্শের ইউজার ইন্টারফেস বলছে। জানা গেছে, নতুন এই স্ক্রিনসহ এক্সপেরিয়া সোলা নামের একটি স্মার্টফোন চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাজারে আসতে পারে।

মোবাইল বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, নতুন প্রযুক্তির এই টাচস্ক্রিন আদৌ জনপ্রিয়তা পাবে কিনা।



বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/এআইএস/ওএস/মার্চ ১৫/১২

‘বোঝা নেমে গেল’

ঢাকা, মার্চ ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) 
 প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে শততম শতরান করার পর শচীন টেন্ডলকার বললেন, ৫০ কেজি ওজনের এক বোঝা নেমে গেছে তার মাথা থেকে।

যদিও ১০০ সেঞ্চুরির এই লক্ষ্য তার নিজের নয়, মিডিয়াই বেঁধে দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন ‘লিটল মাস্টার’।

বৃহস্পতিবার এশিয়া কাপের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১৪ রান করেন টেন্ডুলকার। দীর্ঘ ৩৬৯ দিনের প্রতীক্ষা শেষে এই অনন্য রেকর্ড গড়লেন তিনি।

মাশরাফি বিন মর্তুজার বলে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে তার ১৪৭ বলের ইনিংসটি ছিল ১২টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো।

এই অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় টেন্ডুলকার বলেন, “একটা কঠিন সময় গেছে। মৌসুমের শুরুটা ভালোভাবেই হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না।”

তবে শততম শতরানের লক্ষ্যটি তার নিজের ছিল না উল্লেখ করে ইতিহাস গড়া এই ক্রিকেটার বলেন, “আমি এই মাইলফলক নিয়ে ভাবিনি। মিডিয়াই এটা শুরু করেছে। যেখানেই আমি গেছি, রেস্তোরাঁয়, হোটেলে- সবাই শুধু একশতম সেঞ্চুরি নিয়ে কথা বলেছে। অথচ কেউই আমার ৯৯টি শতক নিয়ে কথা বলেনি।”

গত বছর ১২ মার্চ দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে ৯৯তম শতকে পৌঁছান শচীন। এরপর ১০০ তে পৌঁছাতে এই যে দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষা, তার কষ্টটা কেমন ছিল?

শততম সেঞ্চুরির পর বড় একটা বোঝা নেমে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও টেন্ডুলকার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে আরো একটি বিষয়ের জন্য তাকে দীর্ঘ ২২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল; সেটা ছিল বিশ্বকাপ জয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএনএল/জেকে/১৯১৪ ঘ.

টেন্ডুলকারের ইতিহাস গড়ার ম্যাচে বাংলাদেশের জয়

শচীন টেন্ডুলকারের ইতিহাস গড়ার ম্যাচে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শেষ হাসি বাংলাদেশের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে এই জয়ের ফলে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার আশাও বাঁচিয়ে রাখলো স্বাগতিকরা।

২ ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। সমান ম্যাচ থেকে ভারতের পয়েন্টও ৪। ৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে পাকিস্তান। দুই ম্যাচেই হেরে যাওয়া শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট ০।

ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় জয়। এর আগে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে দেশের মাটিতে ১৫ রানে ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ৫ উইকেটে ভারতকে হারিয়েছিলো তারা।

শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে টেন্ডুলকারের ৪৯তম ওয়ানডে এবং শততম আন্তর্জাতিক শতকের সুবাদে ৫ উইকেটে ২৮৯ রান করে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।

জবাবে তামিম ইকবাল, জহুরুল ইসলাম ও নাসির হোসেনের অর্ধশতকের সুবাদে ৪৯ ওভার ২ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। তবে অর্ধশতক না পেলেও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং টেস্ট ও ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দুটো অসাধারণ ইনিংসে স্বাগতিকদের জয়ের সোপান রচিত।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ১৫ রানে বিদায় নেন নাজিমউদ্দিন। তবে দ্বিতীয় উইকেটে জহুরুলের সঙ্গে তামিমের ১১৩ রানের জুটির সুবাদে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। নিজের প্রথম ওয়ানডে অর্ধশতকে পৌঁছে জহুরুল (৫৩) আউট হয়ে গেলেও দেখেশুনে খেলতে থাকেন তামিম। জহুরুলের ৬৮ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও একটি ছক্কা।

মুশফিকের বদলে চার নম্বরে খেলতে নামেন নাসির হোসেন। তৃতীয় উইকেটে তার সঙ্গে ২৮ রানের ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন তামিম। দলীয় ১৫৮ রানে প্রাভিন কুমারের বলে রবীন্দ্র জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ৭০ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস আসে তামিমের ব্যাট থেকে। ৯৯ বলের ইনিংসটিতে ৬টি চার।

তামিমের বিদায়ের পর নাসিরের সঙ্গে মাত্র ৮ ওভারে ৬৮ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন উজ্জ্বল করে তোলেন সাকিব আল হাসান। ৩১ বলে ৫টি চার ও দুটি ছক্কায় সাকিবের ৪৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি শেষ হয়েছে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।

অশ্বিনের বলে তৃতীয় আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগে সাকিবকে স্টাম্পড হওয়ার ঘোষণা করলেও টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গেছে ধোনি স্টাম্প ভেঙ্গে দেয়ার সময় তার পা লাইনের ওপরে ছিলো।

সাকিবের বিদায়ও অবশ্য দমাতে পারেনি বাংলাদেশকে। এরপর নাসির হোসেনের সঙ্গে মাত্র ৭ ওভারে ৬৪ রানের আরেকটি দুর্দান্ত জুটি গড়ে স্বাগতিকদের জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান মুশফিক। জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন নাসির (৫৪)। সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্ল¬াহ রিয়াদকে নিয়ে বাকি কাজ সহজেই সারেন অধিনায়ক মুশফিক।

জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ৩৩ রান প্রয়োজন ছিলো বাংলাদেশের। ইরফান পাঠানের করা ৪৮তম ওভারে দুটি ছক্কাসহ ১৭ রান নিয়ে মুশফিক বাংলাদেশকে নিয়ে যান লক্ষ্যের কাছাকাছি। প্রাভিন কুমারের পরের ওভারে ১৪ রান এলে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিলো মাত্র ২ রান।

মুশফিকের ব্যাট থেকে ৩টি করে চার ও ছক্কাসহ ২৫ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস এলেও জয়সূচক রান আসে মাহমুদুল্ল¬ার ব্যাট থেকে। অশোক দিন্দাকে কাভার দিয়ে চার মেরে মাহমুদুল্লাহই মধুর এক জয় এনে দেন বাংলাদেশকে।

৫৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে প্রাভিন কুমার ভারতের সেরা বোলার।

এর আগে ভারতের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। দলীয় ২৫ রানে বিদায় নেন আগের ম্যাচে শতক করা গৌতম গম্ভীর (১১)। শফিউল ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ঠিক পরের বলেই ফিরতে পারতেন বিরাট কোহলিও। কিন্তু আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এলবিডবি¬উর ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা পান তিনি।

দ্বিতীয় উইকেটে কোহলির সঙ্গে টেন্ডুলকারের ১৪৮ রানের জুটি ভারতের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয়। দলীয় ১৭৩ রানে আব্দুর রাজ্জাকের বলে বোল্ড হয়ে যান কোহলি।

টেন্ডুলকারের ইতিহাস জন্ম দেয়া ম্যাচে ইতিহাসের অংশ হতে পারতেন কোহলিও। প্রথম ভারতীয় ও পঞ্চম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে টানা তিনটি ওয়ানডেতে শতক করার সুযোগ ছিল তার সামনে। কিন্তু আগের দুই ম্যাচে শতক করা কোহলি আউট হয়ে যান ৬৬ রান করে। ৮২ বলের ইনিংসটিতে ৫টি চার।

সম্ভবত øায়ুর চাপের জন্যই শততম শতকের কাছাকাছি গিয়ে ভীষণ সতর্ক হয়ে পড়েন টেন্ডুলকার। তবে অন্য প্রান্তে রানের চাকা সচল রাখার কাজ ভালো ভাবেই করছিলেন সুরেশ রায়না। তৃতীয় উইকেটে টেন্ডুলকারের সঙ্গে ৮৬ রানের চমৎকার জুটি গড়েন তিনি।

মাশরাফি বিন মর্তুজার করা ৪৭তম ওভারের চতুর্থ বলে তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে রায়না করেন ৫১ রান। ৩৮ বলের আক্রমণাত্মক ইনিংসটি ৫টি চার ও দুটি ছক্কায় সাজানো। পরের বলেই মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে রায়নাকে অনুসরণ করেন ১১৪ রান করা টেন্ডুলকার। তার ১৪৭ বলের ইনিংসে ১২টি চার ও একটি ছক্কা।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টেন্ডুলকারের এটাই প্রথম ওয়ানডে শতক। এত দিন ২০০৪ সালের জুলাইয়ে কলম্বোতে করা অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে সেরা ইনিংস ছিলো তার।

টেন্ডুলকারের বিদায়ের পর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ১১ বলে অপরাজিত ২১ রানের সুবাদে তিন শ রানের কাছাকাছি স্কোর গড়ে ভারত।

৪৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে মাশরাফি বাংলাদেশের সেরা বোলার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ২৮৯/৫ (গম্ভীর ১১, টেন্ডুলকার ১১৪, কোহলি ৬৬, রায়না ৫১, ধোনি ২১*, রোহিত ৪, জাদেজা ৪*; মাশরাফি ২/৪৪, শফিউল ১/২৪, রাজ্জাক ১/৪১)

বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ২৯৩/৫ (তামিম ৭০, নাজিম ৫, জহুরুল ৫৩, নাসির ৫৪, সাকিব ৪৯, মুশফিক ৪৬*, মাহমুদুল্ল¬াহ ৪*; প্রাভিন ৩/৫৬, জাদেজা ১/৩২, অশ্বিন ১/৫৬)

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যাচ সেরা: সাকিব আল হাসান।

বাংলাদেশের ভারত বধ!! বাংলাদেশের আই সি সি বধ!! বাংলাদেশের আম্পায়ার বধ!!

বাংলাদেশের ভারত বধ!! বাংলাদেশের আই সি সি বধ!! বাংলাদেশের আম্পায়ার বধ!! জয় বাংলাদেশ!! সাবাশ বাংলাদেশ!!

দেখে নিন আজকের খেলার কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ!!

►► ওভার নাম্বার 5.6: বিরাট কোহলি প্রথম বলেই ক্লিয়ার এল বি ডব্লিউ!! কিন্তু তাকে নট আউট ঘোষণা করলেন আম্পায়ার!!
...
►► ওভার নাম্বার 18.5: শচিন টেন্ডুলকারের বিপক্ষে স্ট্যাম্পিং এর আপীল!! থার্ড আম্পায়ার ডাকা হলো।। নানাভাবে পর্যালোচনা করে নট আউট ঘোষণা!!

এবার দেখি বাংলাদেশের ইনিংসের উল্লেখযোগ্য ঘটনা!!

►► ওভার নাম্বার 38.1: ইরফান পাঠান বোলিঙে এসেই সাকিবকে একটা হাই ফুলটস বল করলেন!! টিভি রিপ্লাইতে দেখা গেলো বলটি কোমরের অনেক উপরে ছিলো!! কিন্তু নো বল দেয়া হলো না!!

►► ওভার নাম্বার 40.4: আবারো সাকিবকে হাই ফুলটস দিলেন পাঠান!! টিভি রিপ্লাইতে দেখা গেলো বলটি নো বল ডাকার যোগ্য ছিলো।। কিন্তু আম্পায়ার এবারো নিরব!! (পকেটে থাকলে টাকা কেমনে হমু বাঁকা!!)

►► ওভার নাম্বার 41.5: আশ্বিনের বলে স্ট্যাম্পিঙের আপীল!! থার্ড আম্পায়ার ডাকা হলো!! আম্পায়ার কিছুক্ষণ দেখে সাকিবকে আউট ঘোষণা করলেন!! এ ব্যাপারে আমি কিছু বলবো না, আসুন দেখে নেই ক্রিকইনফোর আপডেট!!

Cricinfo: Dhoni was very confident, and I think Shakib was a touch unlucky here! The benefit of the doubt should have gone to the batsman, a part of his boot was on the line but one angle suggested a part of it was behind the crease when the bail was off the groove!

►► ওভার নাম্বার 49.2: বাংলাদেশের জয়!!

বাঙালী খেপলে খবর আছে মামা!! যত টাকা ঢালো আর যত বাবারেই হাত করো, রেহাই পাবা না!!

সাবাশ বাংলাদেশ!! টাইগারদের জন্য রইলো অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুভকামনা!!

শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১২

আজ বাংলাদেশের সামনে ভারত

মধুর স্মৃতিটাই মনে রাখে মানুষ। তিক্ত স্মৃতি ভুলে যেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের যেমন মনে আছে, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর সুখস্মৃতি। দুই দলের মধ্যে এরপর আটটি ওয়ানডে হয়েছে এবং আটটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ, এটি যেন ক্রিকেট ইতিহাসের মুছে যাওয়া কোনো অংশ! এশিয়া কাপে আজ আরেকটি বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে সবাই ২০০৭ বিশ্বকাপকেই টেনে আনছে বারবার। বাংলাদেশ তো ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলে...।
দুই দল ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে ২৩ বার, যার মাত্র দুটিতে বাংলাদেশের জয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর আর ২০০৭ সালের মার্চে পাওয়া সেই দুটি জয় তিন ম্যাচের মধ্যে। ‘ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ভালো খেলে’ ধারণাটা ছড়িয়ে পড়ার কারণ সেটাই। অথচ এরপর সময় যত এগিয়েছে, দুই দলের লড়াইয়ে বাংলাদেশের জয় দূরে সরে গেছে ক্রমেই। এখন বরং প্রশ্ন করা ভালো, ভারতকে আর কেন হারাতে পারছে না বাংলাদেশ?
সেই প্রশ্ন কেউ করে না। কাল মুশফিকুর রহিমের সংবাদ সম্মেলনেও ‘বাংলাদেশ তো ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলে’ জাতীয় প্রশ্ন হলো। বাংলাদেশ অধিনায়কও প্রশ্নের মূলভাবটা মেনে নিলেন, ‘অবশ্যই। ভারতের সঙ্গে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি। আমার মনে হয়, তাদের বোলিং পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো অতটা ভালো না। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে, আমরা কালকের (আজ) ম্যাচটা ভালো খেলব। আর ভারতের সাথে তো আমরা বরাবরই ভালো খেলি।’
সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও একই দাবি করে গেছেন আগের দিন। এক দিক দিয়ে ভালোই। এই দলটার বিপক্ষে আমরা ভালো খেলি, এমন বিশ্বাস তো কিছুটা হলেও এগিয়ে দিতে পারে মানসিকভাবে। কাগজে-কলমে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে এই একটা জিনিসই আজ আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে বাংলাদেশের। অবশ্য মুশফিকের সমীকরণে বড় দলের বিপক্ষে জয়টা সব সময়ই গৌণ। আগে আসে সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারা, ‘আমার মনে হয় হারজিতটা আমাদের মতো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বড় দলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা। তাহলেই দেখা যাবে একটা সময় জেতার আত্মবিশ্বাস আসবে।’ উদাহরণ হিসেবে সামনে আনলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচটাকে, যে ম্যাচ হতে পারে ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলার আত্মবিশ্বাসে আরেকটু জ্বালানি।
মিরপুরের রহস্যময় উইকেট এশিয়া কাপে অবিশ্বাস্য রকমের ব্যাটিং-সহায়ক। টুর্নামেন্টের চার দল থেকেই বলা হচ্ছে, এই উইকেটে ব্যাটিং করে অনেক আনন্দ। শ্রীলঙ্কার কালকের ইনিংসটা বাদ দিলে স্কোরকার্ডগুলোও তা-ই বলছে। মিরপুরের উইকেট রহস্যময়তার খোলস থেকে বেরিয়ে আসায় খুশি মুশফিকও, ‘এখানকার উইকেট এমনিতে যে রকম ছিল, বিপিএল থেকে ও রকম হচ্ছে না। ব্যাটিং-সহায়ক উইকেট হচ্ছে। এটা ব্যাটসম্যানের জন্য ভালো, ওয়ানডে ক্রিকেট তো সব সময় ব্যাটসম্যানের জন্যই।’
কিন্তু উইকেটের বন্ধুতা যতই থাকুক, আসল কাজটা তো ব্যাটসম্যানদেরই করতে হবে। গৌতম গম্ভীর বা বিরাট কোহলির মতো কে আছে বাংলাদেশের, যাঁর ব্যাট আজ দেখাবে মিরপুরের উইকেট এখন ব্যাটিং স্বর্গ? কেউই নেই। কিংবা কে জানে, আজ হয়তো জ্বলে উঠবেন কেউ। তবে ভারত থেকে এসে কোহলি এখন পর্যন্ত মিরপুরে যা করেছেন, বাংলাদেশের কেউ এর ধারেকাছেও নেই। এ মাঠে সাত ম্যাচ খেলে ৪৮৩ রান কোহলির, গড় ১২০.৭৫। সেঞ্চুরি তিনটি, যার শেষ দুটি পরপর দুই ম্যাচে।
মিরপুরে আজ সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক করতে চান কি না, সেটি কাল জানা সম্ভব হয়নি কোহলির কাছে। সকালের অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে পেসার বিনয় কুমারকে পাঠানো হয়েছিল। কোহলি কী করতে পারেন, সেটা তো আর বিনয়ের কাছে জানতে চাওয়া যায় না। তবে মিরপুরের উইকেটে জেতার জন্য অন্তত ২৮০-৯০ রান দরকার মনে করছেন বিনয়। মুশফিকের ধারণাও তা-ই। সঙ্গে বিশেষ দ্রষ্টব্যের মতো যোগ করলেন, ‘টেন্ডুলকার দাঁড়িয়ে গেলে ওদের বড় ইনিংস আটকানো কঠিন।’
এশিয়া কাপ ঘুরেফিরে সেই টেন্ডুলকারে এসেই ঠেকছে। টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরি হবে কি না, সেটা আজকের ম্যাচেও বড় আলোচনা। বাংলাদেশ দল অবশ্যই চায় না, সেঞ্চুরিটা তাদের বিপক্ষে হয়ে যাক। তবে এশিয়া কাপেই রচিত হোক শততম সেঞ্চুরির ইতিহাস, এটা যেন সবারই চাওয়া।
শচীন টেন্ডুলকার বোধ হয় এখানেই ব্যতিক্রম। প্রতিপক্ষ হিসেবে সবারই ‘অপছন্দে’র হলেও প্রতিপক্ষ দলে তাঁর ভক্তও কম নয়।

বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

ইউনিসেফের বার্ষিক প্রতিবেদন বস্তির শিশুদের বঞ্চনা সবচেয়ে বেশি

ইউনিসেফ বলছে, বাংলাদেশে শহরের বস্তি এলাকায় শিশুমৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। শহরে হাতের কাছে হাসপাতাল ও জরুরি সেবা থাকলেও দরিদ্র ও বস্তির মানুষ সেসব সেবা গ্রহণ করতে পারছে না। বস্তির শিশুদের পুষ্টি-পরিস্থিতি গ্রামের দরিদ্র পরিবারের শিশুদের চেয়েও খারাপ।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) ‘বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০১২’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেয় ইউনিসেফ। ইউনিসেফের এ বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য ‘নগরজীবনে শিশু’।
অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এ দেশের শহর ও নগরের বস্তির শিশুদের বঞ্চনা ও বিপন্নতার চিত্র তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, প্রতি হাজার জীবিত জন্মে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার শহরে (অবস্তি এলাকা) ৫৫, গ্রামে ৬৬ এবং শহরের বস্তিতে ৯৫। গ্রামের ১৯ শতাংশ নবজাতক জন্মের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা পায়, বস্তিতে পায় ১৫ শতাংশ। শহরে (অবস্তি এলাকা) ও গ্রামে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার যথাক্রমে ২৬ ও ২২ শতাংশ। বস্তিতে এই হার ১৩ শতাংশ। শহর ও গ্রামে ৮০ শতাংশ শিশু পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পৌঁছায়, বস্তিতে পৌঁছায় ৪৮ শতাংশ। ঝরে পড়ার হার শহরে ও গ্রামে ১ শতাংশ, বস্তিতে ৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপনের সময় ইউনিসেফের যোগাযোগ ব্যবস্থাপক আরিফা এস শারমীন বলেন, শহর ও নগরের শিশুদের ব্যাপারে সমন্বিত তথ্য নেই। বস্তির শিশুদের তথ্য পাওয়া কঠিন। এর অন্যতম কারণ, বস্তিতে জন্মনিবন্ধনের হার কম এবং ভূমির মালিকানা না থাকা।
‘বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০১২’ প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বস্তির শিশুরা মোটা দাগে পাঁচ ধরনের বঞ্চনার শিকার। এগুলো হচ্ছে: স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও উন্নত পয়োব্যবস্থা, বাসস্থানের নিরাপত্তা, শিক্ষা ও বিনোদন।
প্রতিবেদনে ৬০টির বেশি দেশের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এইচআইভি ও এইডসে আক্রান্ত দেশগুলোয় সংক্রমণের হার কমে এলেও বাংলাদেশসহ সাতটি দেশে আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। শহরে এইচআইভির প্রকোপ বেশি।
ইউনিসেফ বলছে, রাজধানী ঢাকায় প্রত্যেক বাবা-মা প্রতিটি শিশুর পড়াশোনার জন্য মোট আয়ের ১০ শতাংশ ব্যয় করে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে এই ব্যয় ২০ শতাংশ। শহরাঞ্চলে ৫৩ ও গ্রামাঞ্চলে ৪৮ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে; বস্তিতে করছে ১৮ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফকিরেরপুল বস্তির শিশু মৌসুমী আক্তার বলে, তাদের বস্তিতে ৫০-৬০ জন মানুষের জন্য মাত্র দুটি শৌচাগার ও দুটি চুলা। বড়দের ভিড়ে তারা ঠিকমতো শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে না। বস্তির কিছু যুবক শিশুদের মাদক কেনাবেচায় বাধ্য করে। মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বস্তির জনসংখ্যা ২০১০ সালে ছিল ৭০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ। বিশ্বের ২১টি প্রথম শ্রেণীর মেগাসিটির মধ্যে ঢাকার অবস্থান নবম। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বস্তিবাসী শিশুর সংখ্যা নেই।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী গ্রামাঞ্চলের (৭৮ শতাংশ) চেয়ে শহরাঞ্চলের (৯৬ শতাংশ) মানুষ উন্নত সুপেয় পানির সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু বস্তি এলাকায় ব্যাপক ঘনবসতির সঙ্গে নিরাপদ খাওয়ার পানি ও ন্যূনতম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ না থাকায় পুরো পরিবেশই দূষিত হয়ে পড়ছে। নিম্নমানের সেবার জন্যও বস্তিবাসীকে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি প্যাসকেল ভিলেনোভ বলেন, ‘নীতিনির্ধারকদের কাছে বস্তিতে এবং সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় থাকা শিশুরা প্রায়ই অদৃশ্য থাকে, পরিসংখ্যানের গড় অনুপাতের ভেতর হারিয়ে যায়।’
প্রতিবেদন সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আবুল বারকাত বলেন, প্রতিবেদনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক গড় হিসাবের বাইরে এসে বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের তথ্য দিয়েছে ইউনিসেফ। তিনি বলেন, বস্তির শিশুরা বিপন্ন, বঞ্চিত ও বিচ্ছিন্ন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম।

চিকিৎসক ধর্ষণ করলেন অসুস্থ তরুণীকে

এবার পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক ধর্ষণ করলেন অসুস্থ এক তরুণীকে। তরুণীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই চিকিৎসককে আজ বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে।
গত মঙ্গলবার রাতে বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়ায় ওই তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শ্রবণ ও বাক-প্রতিবন্ধী ওই তরুণীকে তার মা হাসপাতালের চিকিত্সকের কক্ষ থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করেন বলে এনডিটিভির খবরে বলা হয়।
ওই তরুণীর মা বলেন, ‘সেদিন ওই চিকিৎসক আমাদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে আমার মেয়েকে তাঁর কক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আমি ভেতরে গিয়ে যা দেখি, তা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমার মেয়ে ছিল বিবস্ত্র। সে কাঁদছিল। হতবিহ্বল হয়ে আমি চিকিৎসককে প্রশ্ন করেছিলাম, এই আপনার চিকিৎসা?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে ইশারার মাধ্যমে আমাকে বোঝালো যে, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।’
গতকাল বুধবার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ওই তরুণীকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই তরুণীকে পরীক্ষা করছিলেন ওই চিকিৎসক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

সময়ের একগুচ্ছ প্রযুক্তিপণ্য

প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির জগতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য। এসব পণ্য যেমন দারুণ সব বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরি, তেমনি রয়েছে আধুনিক সব সুবিধা। বর্তমান সময়ের এমন কিছু প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে লিখেছেন নুরুন্নবী চৌধুরী

ওষুধদেবে চিপ
নানা ধরনের প্রযুক্তির মধ্যে এবার এসেছে ওষুধ দেওয়ার এক ধরনের চিপ। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক রবার্ট ল্যাঙ্গার এবং মাইকেল সিমা এ চিপটি তৈরি করেছেন।
এমআইটির সঙ্গে এ কাজে যুক্ত হয়েছেন মাইক্রোচিপস ইনকরপোরেটেডের গবেষকেরা। চিপটি এমনভাবে তৈরি, যাতে বেতারপ্রযুক্তি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি) ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে চিপটি রোগীর দেহে ওষুধ দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। রোগীকে ইনজেকশন দেওয়ার মতোই এটি কাজ করবে।এ ছাড়া রোগীকে কখন কোন ওষুধ কী পরিমাণ দিতে হবে, তাও নির্ণয় সম্ভব হবে। চিপটি তৈরির ক্ষেত্রে গবেষকেরা ৬৫-৭০ বছর বয়সী সাতজন নারীর ওপর পরীক্ষা চালিয়েও সফল হয়েছেন। শরীরে যে চিপটি থাকবে তা রোগীর মনেই হবে না। তা ছাড়া যেহেতু চিপটি প্রোগ্রাম করা যাবে, তাই ওষুধ প্রয়োগের সময়সূচি যেমন তৈরি করা সম্ভব, তেমনি বেতারতরঙ্গের ব্যবহার করে প্রয়োজনবোধে দূর থেকে ওষুধ দেওয়া যাবে।

ছোড়াছুড়ির রোবট
নিত্যনতুন সুবিধার পাশাপাশি নানা ধরনের রোবট প্রাত্যহিক কাজে সাহায্য করছে। রোবটকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেসব বিষয়ে প্রতিনিয়তই গবেষণা করে যাচ্ছেন গবেষকেরা। কোনো কিছু ছুড়ে মারার এমনই এক রোবট এসেছে সম্প্রতি। বাস্কেটবল থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কিছু ছুড়ে মারার এ রোবটটি তৈরি করেছেন কর্নেল ইউনিভার্সিটি ও দ্য ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর একদল গবেষক। কিনেটিক অবজেক্ট গ্রিফিং আর্ম (কেওএনএ) নামের এ হাত রোবটটি যেকোনো জায়গা থেকে পণ্য যেমন ছুড়ে মারতে পারবে, তেমনি চাইলে কিছু বহনও করতে পারবে।

পানি-নিরোধক যন্ত্র
প্রযুক্তির নতুন নতুন পণ্য যেমন আসছে, তেমনি এর নিরাপত্তা কিংবা সহজ ব্যবহারের জন্যও চলছে গবেষণা। প্রযুক্তিপণ্যের ক্ষেত্রে পানি বড় একটি আতঙ্কের নাম। এবার পানি-নিরোধক ডিভাইস বাজারে নিয়ে এসেছে জাপানের টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান এনটিটি ডোকোমো। পানি-নিরোধক দুটি অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেট কম্পিউটারে আছে ৪.৫ ইঞ্চি এইচডি গ্লাসফ্রি থ্রিডি পর্দা, ১.২ গিগাহার্টজ ডুয়েল কোর প্রসেসর ইত্যাদি। এ যন্ত্রটি যেমন সাধারণভাবে ব্যবহার করা যাবে, তেমনি পানিতেও এর কোনো ক্ষতি হবে না।

বাতাস ছাড়া টায়ার
এবার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বখ্যাত চাকা নির্মাতা ব্রিজস্টোন বাতাসহীন চাকা তৈরি করেছে। এ চাকায় বাতাসের পরিবর্তে থার্মোপ্লাস্টিক রেজিন ব্যবহার করে চাকার অবকাঠামোকে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, বাতাস না থাকায় চাকাগুলো নিয়ে নেই পাংচার হওয়ার চিন্তা। চাকাটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এগুলোর মাঝে বিশেষভাবে বাঁকানো রয়েছে স্পোক। বাতাসহীন চাকাটি বর্তমানে ১৫০ কেজি বহন করতে সক্ষম।

সবচেয়ে বড় ট্যাবলেট!
ল্যাপটপকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে ট্যাবলেট বাজার। ছোট ও বহনযোগ্য হওয়ায় সহজেই এর ব্যবহারকারী বাড়ছে। সাধারণত ট্যাবলেটের সাইজ হয় সর্বোচ্চ ১০ ইঞ্চি। এ ধরনের ছোট ট্যাবলেট দেখতে অভ্যস্ত সবাই। তবে সবাইকে তাক লাগিয়ে সবচেয়ে বড় ট্যাবলেট তৈরি করেতে যাচ্ছেন ১২ বছর বয়সী জেমস হার্ডম্যান! উইন্ডোজ চালিত ১৭ ইঞ্চি ট্যাবলেট তৈরির কথা জানিয়েছেন সে। বিষয়টি গণমাধ্যমে জানানোর সময় হার্ডম্যান জানায়, বড় আকারের এ ট্যাবলেট তৈরিতে কী কী প্রয়োজন হতে পারে তার সবই জানে সে। ট্যাবলেটটির সাহায্যে ছবি ও ভিডিও সম্পাদনার কাজ করার পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও যাতে লাগানো যায় সে বিষয়টির কথাও জানায় সে। এর হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারগুলোও হবে বেশ শক্তিশালী। মাত্র তিন পাউন্ড ওজনের ট্যাবলেটটির ব্যাটারির স্থায়িত্বকাল হবে প্রায় সাত ঘণ্টা। বিনিয়োগ পেলে চলতি বছরেই ট্যাবলেটটির কাজ শেষ করতে পারবে বলে জানিয়েছে হার্ডম্যান।
সূত্র: পপসাই ডট কম ও ম্যাশঅ্যাবল ডট কম

ঢাকা কলেজ শেখার ছলে জলে-স্থলে ইমাম হাসান

ধেই ধেই করে এগিয়ে চলছে বাস। তার শব্দ ছাপিয়ে যাচ্ছে ডজন চারেক কণ্ঠস্বর। কখনো সুরে, কখনো বেসুরে চলছে গান গাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। দু-চারজন যা-ও বসে ছিলেন, তাঁদের দেখে মনে হলো গানের রিয়েলিটি শোর বিচারকের আসনে তাঁরা। ‘লাইন ভুল, বানান ভুল’ বলে চিৎকার করছে। কে শোনে কার কথা! ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি মোড় নিল দোহারের দিকে। দুই পাশের সবুজ ধানখেত যেন অভিনন্দন জানাচ্ছে তরুণ প্রাণে ভরা এই শিক্ষার্থীদের। পথের উৎসুক লোকগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ি চলে যাচ্ছে আরও সামনে। শিক্ষার্থীদের এই দলটা ছিল ঢাকা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের। তৃতীয় বর্ষের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত আর্থসামাজিক জরিপ করতেই তাঁদের এই যাত্রা। পদ্মার কোল ঘেঁষা বাহ্রা ঘাটে হবে জরিপের কাজ। তারপর সেখান থেকে ট্রলারে চেপে সোজা নতুন একটি চরের উদ্দেশে হবে যাত্রা। জরিপের সঙ্গে জমা দিতে হবে সচিত্র প্রতিবেদন। তাই আলাদা কিছু দেখলেই ফাহাদ ক্লিক করছেন ক্যামেরায়। মোটা চশমার ফ্রেমের মধ্য দিয়ে তাকিয়ে নোট টুকছেন শফিকুল ইসলাম। শ্রীনগরে বাস একটু জিরিয়ে নিতেই সবাই হইহই করে নামলেন নিচে। শিক্ষকদের মধ্য থেকে সালমা খাতুন জানালেন, ‘পাশেই জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়ি।’ সবাই এগিয়ে গেলেন তার সংগ্রহশালা দেখতে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি চলল ইতিউতি। তারপর আবার বাসে উঠে পাক্কা আড়াই ঘণ্টা পর পৌঁছানো গেল বাহ্রা ঘাটে। শিক্ষাসফরের অগ্রবর্তী দল হিসেবে এক দিন আগেই সেখানে পৌঁছান জাহিদ আর ইমরান। তাঁদের আয়োজনেই দুপুরের ভোজ হবে পদ্মার মাঝে অচেনা এক চরে। ‘সব ঠিকঠাক চলছে’, জাহিদের এই গ্রিন সিগন্যালের পর শিক্ষকেরা মোট ৫২ জন শিক্ষার্থীর এই দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে দেন। দলনেতাসহ সবাই বেরিয়ে পড়েন ওই গ্রামের আর্থসামাজিক জরিপে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের নানা বিষয় জেনে তা লিখে নেওয়া। কারও আবার কৌতূহলের মাত্রা অনেকটা বাড়াবাড়ি রকমের বেড়ে গেল। যেমন জিয়া খালিদ। নিজের কাজ করে যেন অনেকটা অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরেছে তাঁর। আর তাই সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন অন্য বন্ধুদের। কাজ শেষে সবাই এবার নির্ধারিত ট্রলারে চাপলেন। তাতানো পেটে যেন চার দিনের ক্ষুধা। ইঞ্জিনের শব্দে আবার সবাই গলা মেলালেন। পদ্মার বুক চিরে ট্রলার এগোচ্ছে সাঁই সাঁই গতিতে। পশ্চিমে হেলান দিয়ে সূর্যটা জলকে করে তুলেছে রুপালি। মিনিট ত্রিশ এগিয়ে ক্ষ্যান্ত দিল ট্রলার। দ্বীপে নেমেই একদল ফুটবলে চালাতে শুরু করল বেধড়ক পিটাপিটি। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ কোর্স শিক্ষক শামসুজ্জামানকে নিয়ে নামকরণ করলেন স্থানটির—নবদ্বীপ। ঝুলিয়ে দেওয়া হলো কাগজে লিখে। দুপুরের গোসল আর সাঁতারে প্রাণোচ্ছল পদ্মা। ততক্ষণে রান্না শেষ। ভূরিভোজের পর আনন্দ আয়োজন। গান, আবৃত্তি, জোকস আর কুপনে ট্রলার আবার সরগরম ফিরতি পথে। মাঝপথে জয় আওয়াজ দিয়ে জানালেন, ‘আমার টি-শার্ট ফেলে এসেছি।’ কিন্তু ততক্ষণে বেলা অস্তপাড়ে। বিভাগীয় প্রধান আক্তার জাহানের তাই কড়া হুঁশিয়ারি, ‘আর ঘোরাফেরা নয়। দ্রুত ফিরতে হবে।’ গাড়িতে উঠেও আবার এক প্রতিযোগিতা। তবে পুরস্কারে ছিল নতুন নিয়ম। সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় এটি। গাড়ি এগিয়ে চলে ঢাকার পথে। হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটি। নেমে পড়েন সবাই। জ্যোৎস্না তখন দুধসাদা। আর তাই শিক্ষক কেয়া বালা ও নায়লা আক্তারের সঙ্গে গলা মেলান বাকিরা, ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে/ বসন্তের এই মাতাল সমীরণে’।

বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ উদ্যোক্তা কাজের কাজি সুমাইয়া নুরুন্নবী চৌধুরী |

বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রভাবশালী ৫০ উদ্যোক্তার মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণী। নাম তাঁর সুমাইয়া কাজি। সম্প্রতি রয়টার্স ও ক্লাউট ওয়েবসাইট জগতে সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০ উদ্যোক্তার যে তালিকাটি প্রকাশ করে, সেখানে ১৬ নম্বরে আছেন সুমাইয়া।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও ক্লাউট সম্প্রতি বিশ্বের সেরা ৫০ উদ্যোক্তার যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সে তালিকায় ১৬ নম্বরে স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সুমাইয়া আন্দালিব কাজি। তবে ভাবার কারণ নেই, এটিই সুমাইয়ার সাফল্যের শুরু। সুমাইয়ার সাফল্যের শুরু বরং অনেক আগে, সেই ২০০৬ সালে। সে বছর বিজনেস উইক ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছিল অনূর্ধ্ব ২৫ বছর বয়সী সেরা উদ্যোক্তাদের এক তালিকা। সে তালিকাতেও সগৌরবে স্থান করে নেয়েছিলেন সুমাইয়া। পেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অভিনন্দন। এ ছাড়া একই বছর উইক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বসেরা ৭৫ নারী উদ্যোক্তার মধ্যেও ছিলেন তিনি। পেয়েছেন সিএনএনের ‘ইয়ং পারসন হু রকস’ এবং কালার লাইট ম্যাগাজিনের সেরা তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার। কিন্তু সুমাইয়ার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প বেশ কয়েক বছর আগে থেকে। তখন ২০০৫ সাল। সুমাইয়া সবে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে থেকে মার্কেটিং অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখা শেষ করে যোগ দিয়েছেন সানমাইক্রোসিস্টেমে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে। পাশাপাশি শুরু করেছেন ‘কালচারাল কানেক্ট ডট কম’ (টিসিসিসি) নামের একটি অনলাইন মিডিয়া প্রতিষ্ঠার কাজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি প্রকাশ করতে শুরু করেন সাপ্তাহিক ‘দ্য দেশি কানেক্ট’, ‘দ্য মিডলইস্ট কানেক্ট’, ‘দ্য লাতিন কানেক্ট’, ‘দি এশিয়া কানেক্ট’ ও ‘দি আফ্রিকান কানেক্ট’ নামের পাঁচটি অনলাইন ম্যাগাজিন। সময় গড়ায় আর সুমাইয়ার এ ম্যাগাজিনগুলোর জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব ম্যাগাজিনের রয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার।
তবে এর মাঝেই সীমায়িত নয় সুমাইয়ার জগৎ। নিজের কর্মজগৎ বিস্তৃত করতে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সুমাজি ডট কম’ (www.sumazi.com)
নামের আরেকটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক মূলত সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য খুঁজে পেতে সহায়তা করে। অল্প সময়ের মধ্যে এই ওয়েবসাইট এতই জনপ্রিয় হয়েছে যে সুমাইয়াকে দুটি দেশের আটটি অঙ্গরাজ্যের ১৮ সিটিতে স্থাপন করতে হয়েছে আলাদা অফিস। ‘বাংলাদেশেও সুমাজি ডট কমের কার্যক্রম সম্প্রসারণের ইচ্ছা আছে আমার। আশা করছি, এর মাধ্যমে অলাভজনকভাবে শিক্ষা, দুর্যোগ, চাকরিপ্রাপ্তি ও বিভিন্ন পরামর্শের ক্ষেত্রে উপকৃত হবে অনেকেই।’ ইউনাইটেড নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডট কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন সুমাইয়া।
শুরু থেকেই নিজের কাজের ওপর আস্থা থাকায় নিজের দলের সদস্যদেরও অনুপ্রাণিত করতে পেরেছেন সুমাইয়া। টেকক্রান্সের একটি কাজ দ্রুত এবং দারুণভাবে সম্পন্ন করার পর পেয়ে যান নিউজ এজেন্সি অমিদইয়ার নেটওয়ার্ক অ্যাওয়ার্ড। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফোরামে আমন্ত্রিত হয়ে নারী উদ্যোক্তা বিষয়ে বক্তব্য দেন তিনি। এসব কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে মানবাধিকার, পরিবেশ, শিক্ষা, রক্তদানসহ নানা ধরনের স্বেচ্ছাসেবী কাজের সঙ্গেও যুক্ত আছেন প্রায় ১০ বছর ধরে। প্রতি সপ্তাহে একদল উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসার আইডিয়ার বিষয়ে দিচ্ছেন পরামর্শ। এক সময়ে চাকরি করা প্রতিষ্ঠান সান মাইক্রোসিস্টেম সুমাইয়াকে ‘সারা বিশ্বের সেরা ২৫ স্বেচ্ছাসেবক’ তালিকার একজন নির্বাচিত করে। নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার শুরুতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন তিনজন কর্মী, যা বর্তমানে অর্ধশতাধিক হয়েছে। এখন স্বপ্ন দেখছেন আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

২.
সুমাইয়া কাজির পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের ফেনী জেলায়। তবে জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। তবে কর্মসূত্রে এখন বসবাস করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোতে। বাবা ড. নিজাম উদ্দিন কাজি, মা মেরিনা কাজি। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সুমাইয়ার অবস্থান শীর্ষে। এখনো বিয়ের পিঁড়িতে বসেননি সুমাইয়া। অবসর কাটে কীভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কাজই আমার অবসর।’ আর কাজের প্রয়োজনেই ইতিমধ্যে আটবার বাংলাদেশে পা রেখেছেন সুমাইয়া। সর্বশেষ এসেছেন বছর দুয়েক আগে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
‘আগামী দু-এক বছরের মধ্যে আবারও বাংলাদেশে আসব আমি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলব এ দেশের নারীদের সঙ্গে। তাদের আমার কর্মক্ষেত্রে যুক্ত করতে চাই।’ বলেছেন সুমাইয়া কাজি ইউনাইটেড নিউজ টোয়েনটি ফোর ডট কমকে।
....জানলেন তো সুমাইয়া কাজিকে। এবার গলা ফাটিয়ে বলুন ‘শাবাশ বাংলাদেশ!’

নারী পুলিশের নেতৃত্ব

রূপসী বাংলা হোটেলের চেহারাটা অন্যদিনের চেয়ে বেশ খানিকটা অন্য রকম। পুলিশের পোশাক গায়ে অনেকের ভিড়। খাকি, লাল, নীলসহ বিভিন্ন রঙের পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশের উপস্থিতি সেখানে। তবে পোশাকে অমিল থাকলেও এক জায়গায় মিল: তারা সবাই নারীপুলিশ। এশিয়া অঞ্চলের প্রথম নারীপুলিশের সম্মেলনে যোগ দিতে সবাই এসেছেন। এদিক-ওদিক চাইতেই পাওয়া গেল পরিচিত এক মুখ। জানা ছিল না, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুটি পুলিশে যোগ দিয়েছেন। সেই বন্ধু সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফাতিহা ইয়াসমিন বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘর, সংসার, সন্তান এসব নিয়েও কথা হলো। তাঁর মতে, এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং পেশায় কাজ করার ফলেই হয়তো তাঁর সন্তানটির দিকে স্বামী, শ্বশুরবাড়ির সবাই একটু বাড়তি নজর দেন। এভাবে সবার সহযোগিতায় কর্মক্ষেত্রে অনেকটাই নিশ্চিন্ত মনে কাজ করছেন তিনি।
৭ ও ৮ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘এশিয়ায় নারীপুলিশের নেতৃত্ব’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘প্রথম এশিয়া অঞ্চল নারী পুলিশ’ শীর্ষক সম্মেলনে মোট ১১টি দেশের ৩৯ জন নারীপুলিশ অংশ নেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে রূপসী বাংলা হোটেলে কথা হয় ফাতিহা ইয়াসমিনের সঙ্গে। এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেনস নেটওয়ার্ক।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল পুলিশ কমিশনার মিলি বিশ্বাস বাংলাদেশ থেকে ২০০০ সালে শান্তিরক্ষী মিশনে প্রথম নেতৃত্ব দেওয়া নারীপুলিশ। তখন মিশনে যাওয়ার জন্য নারীপুলিশ তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। বর্তমানে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের নারীপুলিশদের অবস্থান সবচেয়ে ভালো। শুধু নারীপুলিশদের নিয়ে দুটি দলও গঠন করা হয়েছে।
মিলি বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম পছন্দের তালিকায় নারীরা পুলিশের নাম লিখছে। আগে নারীপুলিশদের শাড়ি পরতে হতো, বর্তমানে নারী-পুরুষ সবাই একই পোশাক পরে কর্মক্ষেত্র সামলাচ্ছেন। সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা ও পেশাদারি মনোভাব কাজ করছে।
নারীপুলিশদের এ ধরনের নেতৃত্বের ফলেই ঢাকায় সম্মেলনটি করা সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত।

সম্মেলন ও অর্জন নিয়ে কিছু কথা
এশিয়া অঞ্চলের নারীপুলিশ সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের বোর্ড অব ডিরেক্টরদের বৈঠকও প্রথমবারের মতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি ১৮টি অঞ্চলে বিভক্ত। এশিয়া হচ্ছে অঞ্চল-১৫-এর সদস্য। ২০১৩ সাল পর্যন্ত অঞ্চল-১৫-এর সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর বিভাগ) উপকমিশনার আমেনা বেগম বলেন, যে দেশ থেকে সমন্বয়কারী নির্বাচিত হন সে দেশের ওপর দায়িত্ব বর্তায় সেই দেশে অঞ্চলটির একটি সম্মেলন করা। এর আগে ভারত সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করলেও সম্মেলন করতে পারেনি। সেদিক থেকে বাংলাদেশের নারীপুলিশ সফলভাবেই একটি সম্মেলন করতে পেরেছে।

কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে
বাংলাদেশে নারীপুলিশদের আজকের অবস্থানে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ১৯৭৪ সালে নারীরা প্রথম পুলিশ হিসেবে নিয়োগ পান। তবে তখন তাঁরা কাজ করতেন বিশেষ শাখায় সাধারণ পোশাকে। তাঁদের দায়িত্ব ছিল শুধু গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নারীদের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করা। ১৯৭৬ সালে নারীরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে নিয়োগ পান। ১৯৮৬ সালে প্রথম এএসপি (সুপারভাইজারি) পদে নারীপুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে সুপারভাইজারি পদে নারীদের বদলে শুধু পুরুষদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালে অষ্টম বিসিএস থেকে ১৭তম বিসিএস পর্যন্ত এ পদে নারীদের নিয়োগ বন্ধ ছিল। ফলে তৈরি হয় বিশাল শূন্যতা, যার জের বহন করতে হচ্ছে এখনো। বর্তমানে চার হাজার ৭১৪ জন নারীপুলিশ কর্মরত, যা মোট পুলিশের মাত্র চার শতাংশ। আরও ৯৩১ জন নিয়োগের অপেক্ষায়। সব মিলে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতে, পুলিশে ১০ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করতে হলেও কমপক্ষে ১৩ হাজার নারীপুলিশ থাকা প্রয়োজন ছিল।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কম
বর্তমানে চার হাজার ৭১৪ জন নারীপুলিশের মধ্যে কনস্টেবল পদেই আছেন চার হাজার ১৭ জন। আইজি এবং এডিশনাল আইজিপি পদে কোনো নারী নেই। ডিআইজি পদে আছেন দুই জন। এডিশনাল ডিআইজি পদে তিনজন, এসপি পদে পাঁচজন, এডিশনাল এসপি পদে ২৯ জন, এএসপি পদে ১০০ জন, ইন্সপেক্টর পদে ২৭ জন, এএসআই পদে ২৮৪ জন নারীপুলিশ কর্মরত। নারীপুলিশদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেনস নেটওয়ার্ক।

সম্মেলনের ঢাকা ঘোষণা
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে পুলিশিং ব্যবস্থাপনা, নারীপুলিশদের অবস্থান, নেতৃত্ব তৈরি, পেশাদারি ও মান উন্নয়ন, পারিবারিক নির্যাতন, নারীপাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রশিক্ষণে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। সম্মেলনের শেষ দিনে ঢাকা ঘোষণায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের প্রেসিডেন্ট জেন টাউনসলি এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ স্কুলের (ডিটিএস) কমান্ড্যান্ট ও নারীপুলিশ নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট রওশন আরা বেগম স্বাক্ষর করেন।
ঢাকা ঘোষণায় নারীপুলিশদের নেটওয়ার্ক জোরদারকরণ ও নেতৃত্ব বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নারীপুলিশদের পেশাদারি ও দক্ষতা বাড়ানোর প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়। নারীনির্যাতন প্রতিরোধ ও বৈষম্য বিলোপ করে নারীর মানবাধিকার রক্ষায়ও অঙ্গীকার করা হয় এ ঘোষণায়। নারীপুলিশ হিসেবে পুরষপুলিশের তুলনায় বেশি সুবিধা না নেওয়ার জন্যও সাবধানবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে এতে। পাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারকরণ, বিভিন্ন দেশের ভালো উদ্যোগগুলো গ্রহণ, নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র তৈরি, অবহেলিত সবার বিচারপ্রাপ্তিতে সহায়তা, নারীপুলিশ কেন প্রয়োজন তা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা ও নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করা, সর্বোপরি জেন্ডার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে এ ঘোষণায় মতৈক্য প্রকাশ করা হয়।

যেতে হবে আরও বহুদূর
১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম এএসপি পদে নিয়োগ পান ফাতেমা বেগম। তিনি বর্তমানে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল। সে সময়ের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ইতিবাচক। তার পরও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতার কারণে নারীপুলিশদের আরও সংগ্রাম করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত। তাঁদের মতে, একজন পুরুষপুলিশের চেয়ে বহুগুণ বেশি পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা দেখানোর সুযোগ পান নারীরা। ও তো নারী, ও কি পারবে, এত বড় ঘটনায় ওকে পাঠানো ঠিক হবে কি না—এ ধরনের ধারণা প্রথম বাধা হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে নারীচিকিৎসক বা অন্য পেশার নারী কর্মক্ষেত্রে রাত-দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করলেও কেউ প্রশ্ন তোলে না তাঁর সংসার কীভাবে চলছে। পুরুষপুলিশ বউ-বাচ্চা-সংসারে সময় দিয়ে কাজ করতে পারলেও নারীপুলিশের বেলায় সবাই আঙুল উঁচিয়ে জানতে চাইছে, সে পরিবারে কীভাবে সময় দেবে।
সাব-ইন্সপেক্টর পদের নিয়োগ বিধিমালায় বিয়েসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞায় নারীরা এ পদে কম আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এরও পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপমহাপরিদর্শক ইয়াসমিন গফুর, মিলি বিশ্বাস বা আমেনা বেগম তাঁদের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে পরিবার ও স্বামীর সহযোগিতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলেন। তাঁদের মতে, পরিবারের সহযোগিতা পাওয়াটা জরুরি। এই তিনজন বর্তমানের প্রতিযোগিতার বাজারে নারীপুলিশ হিসেবে দক্ষতা বাড়ানো ও তা প্রমাণ করার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিলেন। পুলিশের অপরাধ বিভাগ বা পুরষদের জন্য প্রযোজ্য যে বিভাগগুলোকে মনে করা হয় তাতে নারীদের নিজের যোগ্যতাতেই কাজ পেতে হবে এবং টিকে থাকতে হবে।

এখানে সেখানে ওয়ারসো স্মৃতিসৌধ

সমাজতান্ত্রিক দীনতা ঝেড়ে ফেলে এ শহর যেন নতুন রূপ নিয়ে ফুটে উঠছে। আমরা বেশি দূর যেতে পারি না। রাস্তার পাশে একটি সৌধের সামনে এসে আমাদের গাড়ি থেমে যায়। আমাদের তিনজনকে নিয়ে সাইফউদ্দিন ভাইও নেমে পড়েন গাড়ি থেকে। বলেন, ‘নামেন, আপনাদের পোল্যান্ডের স্মৃতিসৌধ দেখাই।’
এটি ওয়ারসো জাগরণের স্মৃতিসৌধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনী যখন কয়েকবার মার খেয়ে পিছু হটতে থাকে, তখন স্বয়ং হিটলার হুকুম দেন ওয়ারসো নগরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে। এর পরই ওয়ারসো নগরের ওপর বুলডোজার চালায় নাৎসি বাহিনী। প্রত্যুত্তরে পোলিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল পোলিশ সাধারণ জনগণ, আবালবৃদ্ধবনিতা। এটিই বিশ্বের ইতিহাসে ‘ওয়ারসো জাগরণ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে।
ওয়ারসো জাগরণে যেসব সেনা ও সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এবং নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে এ ক্রসিনস্কি স্কয়ারে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওয়ারসো নগরের ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে পোলিশ সেনাবাহিনী। ধ্বংসের মধ্যেও মাথা নত না করার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পেছনের খাড়া কলামগুলো।
ওয়ারসো জাগরণ স্মৃতিসৌধের মূর্তিগুলো দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগে ইনসার্জেন্ট ইউনিট। এটি মূলত সে সময়ে পোলিশ সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন এবং যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করছে। আর অন্য অংশটি ‘এক্সোডাস গ্রুপ’। এই অংশে মূলত যেসব সাধারণ মানুষ ওয়ারসো জাগরণের যুদ্ধে নিহত হয়েছেন বা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও এ স্মৃতিসৌধ ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত অবগুণ্ঠিতই রাখা হয়েছিল। কারণ, ওয়ারসো জাগরণ যুদ্ধে সোভিয়েত রেড আর্মির ভূমিকাসংক্রান্ত হিসাব-নিকাশের বিরাট একটা সমস্যা ছিল। সে কারণে যখন ১৯৮৯ সালে সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান হয়, তখন এ স্মৃতিসৌধের অবগুণ্ঠন তুলে দিয়ে তা উন্মুক্ত করা হয় জনগণের সামনে। এখন প্রতিদিনই দেশপ্রেমিক পোলিশরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে যায় সেই বীর সেনানীদের।
ওয়ারসো নবজাগরণের স্মৃতিসৌধ দেখা শেষ। এবার আবার ছুটে চলা। সঙ্গে বাংলা গান। সাইফ ভাইকে বলি, ‘ভাই, আমরা এখন কোথায় যাব?’ সাইফ ভাই বলেন, ‘ডানে-বাঁয়ে দেখুন, পোল্যান্ড কেমন করে প্রতিদিন নতুন হয়ে উঠছে।’
আমরা ছুটতে থাকি নতুন শহরের রাস্তা ধরে। ওয়ারসোর যে অংশকে নতুন শহর বলা হচ্ছে, তার জন্মও কিন্তু অষ্টাদশ শতকে। এসব ভবনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ধ্বংস করা হয়েছিল। ওয়ারসো পুনর্জাগরণের পরে ১৯৫৪ সালের মধ্যে আবার এসব ভবন সংস্কার করা হয়।
১৯৮৯ সালে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদায় নেওয়ার পর পোল্যান্ড দ্রুত পুঁজিবাদের সংস্কৃতি রপ্ত করে ফেলে। তার প্রমাণ এসব অত্যাধুনিক দালানকোঠা। মধ্যযুগীয় স্থাপত্যরীতির দালানকোঠার পাশাপাশি ওয়ারসোর আকাশসীমা দখল করে ফেলছে অত্যাধুনিক স্থাপত্যরীতির দালানকোঠা। এসব দালানকোঠায় নির্মাণসামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ইস্পাত আর কাচ।
নতুন ওয়ারসোর এসব দৃশ্য আমাদের আর টানে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত শুকিয়ে তারা যতই ওপরের দিকে যাক না কেন, আমরা বারবার তাদের সেসব দুঃখজাগানিয়া জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য অধীর হয়ে যাই।
সাইফ ভাই আমাদের কথা বোঝেন। বলেন, ‘আপনাদের আরেকটা স্মৃতিসৌধ দেখাচ্ছি। “ঘেটো”র কথা শুনেছেন? ঘেটো জাগরণের সময় যেসব বীর যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণে বানানো হয়েছে এ সৌধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওয়ারসোর সবচেয়ে বর্ধিষ্ণু এলাকা ছিল এই ঘেটো। সে সময় এ এলাকায় ইহুদিদের বাস ছিল সবচেয়ে বেশি।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হাতে এ এলাকার তিন থেকে চার লাখ লোক প্রাণ হারায়, যাদের অধিকাংশ ছিল ইহুদি। সে সময় এ এলাকার লোকজন হাতে অস্ত্র তুলে নেয় নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেসব অস্ত্রের অধিকাংশই ছিল হাতে তৈরি। এ এলাকার যোদ্ধাদের মধ্যে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল বেশি। সে সময় পুরো ওয়ারসোর সব ইহুদি এক হয়েছিল এ ঘেটো এলাকায়। যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়, তখন এ এলাকায় কয়েকজন ইহুদি জীবিত ছিল। পরবর্তী সময়ে তারাও ইসরায়েলে চলে যায়।
সাইফ ভাই বলেন, এ জায়গাটি শুধু পোলিশদের নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ইহুদিদের একটা বড় শ্রদ্ধার জায়গা। প্রত্যেক ইহুদিই মনে করে, জীবনে একবার এসে যদি এ স্মৃতিসৌধে একটি ফুলের পাপড়ি রেখে যেতে পারে, তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ইহুদিদের প্রতি তাদের কিঞ্চিৎ সমবেদনা দেখানো সম্ভব হয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইহুদিকে ফুল দিতে দেখা যায়।
আমরা আমাদের দেশে একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ বা ষোলোই ডিসেম্বর এলেই শুধু স্মৃতিসৌধে ফুল দিই। এখানে ফুল দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো দিনের অপেক্ষা কেউ করে না, সুযোগ পেলেই এসে ফুল দিয়ে যায়।

‘বাংলাদেশকে ওরা ভালোবেসে ফেলেছে’ নওয়াজীশ আলী খান, উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান), এটিএন বাংলা

আমরা কেউই শিকড়বিহীন নই। প্রতিটি মানুষেরই শিকড় আছে। ২০০ বা ৩০০ বছর পরও কিন্তু মানুষ নিজেদের শিকড়ের খোঁজ করে। আমাদের যে তৃতীয় প্রজন্ম ভিনদেশে বেড়ে উঠছে, তাদের নিজের দেশকে ভালোভাবে জানার তেমন সুযোগ নেই। দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, কীভাবে দেশের মানুষ প্রতিদিন যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে—এসবের কিছুই তারা জানে না। আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো তাদেরকে দেশ সম্পর্কে জানানো। যখন আমাদের প্রতিযোগীদের সঙ্গে আমার পরিচয় হলো, দেখলাম, এরা দেখতে বাঙালি, কিন্তু আচার-আচরণ, কথাবার্তা পুরোপুরি বাঙালিসুলভ নয়। তখন তারা কেউ কেউ ভালো বাংলাও বলতে পারত না।
শুটিং শেষে চলে যাওয়ার সময় কিন্তু এই ছেলেমেয়েগুলোই আমূল বদলে গেল। তারা পরিষ্কার বাংলায় তাদের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছে। আমাদের সবচেয়ে আপ্লুত করেছে যে ব্যাপারটা, তারা প্রত্যেকে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে ফিরে যেতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশকে ওরা ভালোবেসে ফেলেছে। এই ছেলেমেয়েগুলো কিন্তু আবার বাংলাদেশে ফিরে আসবে।
আমাদের মূল সার্থকতা এখানেই।

FSS blog

FSS TSTL Photo Gallery

FSS TSTL Photo Gallery
Pictures

I like it

  • Bangla Song
  • Love
  • Move

what is love?

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

লেবেল

লেবেল

ভূমি (1) sex (6)

Wikipedia

সার্চ ফলাফল